- বাঙালির প্রেম?
- ইয়েস।
- এই নিয়ে তোকে লিখতে বলছে পচা?
- ফরমাইস এসেছে মামা। ফ্রম আ বিগ মিডিয়া গ্রুপ।
- ইংরেজিতে?
- ইয়েস। অল ইন্ডিয়া ক্রাউড ক্যাপচার করতে হবে। বাঙালিজ্ম নিয়ে আজকাল ন্যাশনাল লেভেলে বেশ একটা ইয়ে আছে কি না।
- ইয়ে আছে মানে?
- কিউরিওসিটি। ইন্টারেস্ট।
- বটে?
- আলবাত।
- বাঙালির প্রেম আবার কী রে পচা? ছো:। ওসব লেখা ছাড়। বরং অ্যাক্রস্ দ্য বেঙ্গল আলু সেদ্ধর ভ্যারিয়েসন নিয়ে রিসার্চ করে একটা কিছু জমাটি করে লেখ দেখি।
- আরে। মালগুলো চেয়েছে বাঙালির প্রেম নিয়ে লেখা। আমি লিখবো আলু সেদ্ধ নিয়ে?
- অফ কোর্স। আলুসিদ্ধ দিয়ে বাঙালির চরিত্র ঢের ভালো চেনা যায় দ্যান প্রেম।
- তুমি না মামা!
- আমি ছিলাম বলে তোকে এসব স্ক্যান্ড্যাল থেকে বাঁচিয়ে দিই। ছাড় ছাড়। বাঙালির প্রেম নিয়ে লিখবে। বাঙালির কি লেজ আছে না এক্সট্রা কলজে আছে যে তাদের প্রেমের ধরন আলাদা হবে?
- বাঃ রে! তুমি তো কত হাবুডুবু খাও নলবনে প্রেম, শেষের কবিতা নিয়ে। দেলখোশার কেবিনে মামীর সাথে দেখা করা আর ফিশ কবিরাজি নিয়ে কত গপ্প বলো। সেগুলোই তো বাঙালি প্রেমের অ্যাপিল!
- শাট আপ পচা। নলবন কী বাঙালি? পৃথিবীর অন্য কোন প্রান্তে কী কেউ পার্কে বসে দহরমমহরম করছে না? তামিলনাড়ুতে রেস্টুরেন্টে বসে কেউ ডেট করে না? দেলখোশা বাঙালির পরিচয় হলে গেঞ্জি খুলে মাদুলি দ্যাখানো তাহলে বাঁ হাতি ব্যাট্সম্যানদের পরিচয়। হ্যাঁ। শেষের কবিতা আমি মাঝে মাঝে কোট করি। তবে সেটা খিল্লি করে। যারা প্রেম করতে জানে না তারা অমিত রে’র বাজে বাতেলা টুকে রোয়াব ঝাড়ে।
- হোয়াট আর ইউ সেয়িং মামা! বাঙালির প্রেমে কত রসগোল্লার রস। কত পান্তোর আমেজ। কত সন্দেশের নরম স্পর্শ...।
- থাম থাম থাম রাস্কেল। এসব ক্লিশে ঝেড়ে তুই বাঙালিকে অ্যাসেস করবি? আলুসিদ্ধকে ইন্টারপ্রেট করতে শেখ পচা। শুধু ওই আইটির চাকরি করে আর আনন্দমেলা পড়ে আর বরফি ব্যাক্সি সিনেমা দেখে বাঙালিবাজি করতে যাস না।
- চিলেকোঠার চুমু। বাঙালির প্রেম ছাড়া কোথায় পাবে?
- চিলেকোঠা কী বিভূতিভূষণ? বাংলা ছাড়া যার ভাবাবেগ আঁচ করা যায় না? চিলেকোঠায় একটা জাপানী মেয়েকে চুমু খেয়ে দ্যাখ, একই রকম বাত।
- তুমি মামা একটা যাতা লেভেলের জয় কিলার। সুমন কত দরদ দিয়ে গাইলে “প্রথম প্রেমে পড়ার পর সবাই পস্তায়, হন্যে হয়ে ক্লাস পালিয়ে ঘুরেছি রাস্তায়”। আর তুমি বলছো বাঙালির প্রেমের আলাদা ফ্লেভার নেই?
- বাঙালি ল্যাদপ্রিয় জাত। ওকে। ইন্ডাস্ট্রি-ফিন্ডাস্ট্রি আমাদের ধাতে সয় না। তাই বলে ওই লাইনে বাঙালির প্রেম কোথায় আছে পচাকুমার? সুমন ইজ রেফারিং টু ল্যাং খেয়ে কলকাতার রাস্তা ফেউ ফেউ করে ঘোরা। সাদা সাহেব কালো সাহেব মাদ্রাজি গুজরাতি সবাই প্রেমে লেঙ্গি খেয়ে খেয়ে পাগল হয়। আর কলকাতার রাস্তায় উদ্ভ্রান্ত হয়ে ঘোরা নিয়ে চাপ খাস না। ক্যালক্যাটা ইজ নট বেঙ্গল। জাস্ট লাইক বাঙালি মানেই ইসবগুল বা জেলুসিল স্পেকট্রামে বাস করে, এমন ভাবাটা ভুল শুধু নয়, ঠাট্টা হিসেবেও যথেষ্ট অপরিণত।
- শীতের দুপুরে ভিক্টোরিয়ায় বসে প্রেম করতে পারোনি বলে এই যে তুমি মাঝে মাঝেই হাহাকার কর, সেটা কী কোন অবাঙ্গালী করবে মামা?
- ডিয়ার অপোগণ্ড। ফের বলছি। মুর্শিদাবাদে বসে কেউ কী ভাববে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে বসে প্রেম করার কথা? কলকাতা কলকাতা করে বাঙালি গেঁজে গেল। শোন পচা। সাহেবের সাদা বাড়ির বাগানে ছায়া দেখে চুমু খাওয়ার সঙ্গে বাঙালি হওয়ার কোন লিঙ্ক নেই। ধুর ধুর।
- বাঙালি কবির জাতি। আর বাঙালির প্রেম নিয়ে আলাদা করে লেখা হবে না? এটা কোন কথার কথা হল মামা?
- বাঙালি কবির জাতি? কে বললে? তোকে? আনন্দবাজার?
- যা:। এটা তো অবভিয়াস ফ্যাক্ট।
- আমি যদি তোকে বলি যে বেশির ভাগ বাঙালি ভান করে কবিতা লিখতে পারার। আসলে সব টেক্সটবুক ধরে গাইড বই মেনে বাইশ পিস কবিতা পড়া হিপোক্রিট? আধুনিক কবিতার নামে সবাই খোঁচা দাড়ি আর কফি হাউসের আড়ালে লুকিয়ে বাতেলা ঝাড়ে?
- তুমি কী বাঙালিদের খিস্তি দিচ্ছ মামা?
- না। রিয়েলিটি চেক দিচ্ছি। আর যে খালিফারা বাঙালির প্রেম নিয়ে লেখা চায় তারা বেসিক্যালি বাঙালির ঠ্যাং ধরে খিল্লি করতে চায় পচা। এরপর বলবে বাঙালির হাই তোলা নিয়ে লেখা দাও। বাঙালি ঘামাচি নিয়ে এস্যে লেখো। তারপর সেসব ল্যাজে গোবরে ক্লিশে মালগুলো তারা রস্গুল্লা আর মিষ্টি দহীর সঙ্গে গাণ্ডেপিণ্ডে গিলবে আর ‘হামি জল খাবে’ বলে হজম করবে। লিখে দে বঙ্গালিজ এক্সপ্রেস দেয়ার লাভ বাই সেয়িং “এ না চলবে এ না চলবে”, দ্যাখ বংস্টাররা হেসে হেসে অক্কা পাবে। কিন্তু এসব লিখে কী হবে পচা?
- হুম! মোদ্দা কথা হচ্ছে যে তুমি বলছো যে বাঙালির প্রেম নিয়ে লেখা সম্ভব নয়।
- তোর পক্ষে লেখা সম্ভব নয়।
- মানে?
- মানে বাঙালির প্রেম নিয়ে লিখতে হলে যে সব জটিল নুয়ান্সেস ঘাঁটতে হবে, তা তোর কম্ম নয়।
- যেমন?
- যেমন তেলাকুচা বিভূতিভূষণকে ফ্যাসিনেট করেছিল। তেলাকুচাকে কে নিয়ে লেখাটার কী ভীষণ রোম্যান্টিক ভ্যালু আছে জানিস? বাঙালির প্রেম সেই খানে।
- তেলাকুচা?
- এক ধরনের লতা জাতীয় উদ্ভিদ। তা জানবে কেন! তোরা জানবি বঙ্গালী মতলব উত্তমকুমার কা হাসি আছে। রবীন্দ্রনাথের মৃতদেহ থেকে দাড়ি খুবলে নিয়েছিল ভক্তেরা। সুভ্যনির হিসেবে। এখানে প্রেম নেই বলছিস?
- এহেঃ! গ্রস। ছিঃ।
- হুঁ হুঁ বাবা। বাঙালির প্রেম। এত সহজে মাপবে? সেদিন গড়িয়াহাটে দেখলাম। মাঝবয়েসী ভদ্রলোক প্যাচপ্যাচে গরমে ভরদুপুরে বৌকে চৈত্র সেল এক্ট্রাভ্যাগানজা চাখাতে পান্ডুয়া থেকে নিয়ে এসেছেন। বউয়ের পিছন পিছন হাসি মুখে ঘুরছেন সর্বত্র। ছাপোষা ভালোমানুষ। ট্যাঁফোঁ শেখেননি। তার বগলে রোল করে রাখা একটা পুরনো এক কপি নবকল্লোল। বউ যেই শাড়ি বাছতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে অমনি ভদ্রলোক টুক করে একটু পত্রিকাটা পড়ে নিচ্ছেন। দ্যাট মাই ফ্রেন্ড ইজ লাভ। জীবনের প্রতি বাঙালির প্রেম।
- ধুর মামা। ছড়াচ্ছ।
- আরে শোন পচা। প্রেমিকার আঙুল ধরে চিত্রহার মার্কা কাব্যি যে কেউ ঝাড়তে পারে। কীট্সও পারে, কুমার শানুও পারে। তার জন্যে বাঙালি হওয়ার দরকার নেই। বাঙালির প্রেম পাশবালিশ মাদুর কম্বিনেশনে আছে। বাঙালির আবোল তাবোল আছে, সেখানে রয়েছে প্রেমের থ্রিল পচা; শেষের কবিতায় নয়। শেষের কবিতা আদেখলাদের জন্য। বাঙালি খোকা নিজেকে মনে মনে আফ্রিকা দাপানো শঙ্কর বলে ভেবে চাঁদের পাহাড় পড়বে, প্রেম সেখানে রয়েছে।
- বোরলিনে ভক্তি?
- স্টিরিওটাইপ্।
- উফফ!
- বাঙালির প্রেমের প্রাইম এগজাম্পেল শুনবি? ফেলুদার বেশির ভাগ গপ্পই গোয়েন্দা গল্পের নিরিখে প্লট ফোকলা। কিন্তু ফেলুদা নিজে প্রত্যেক বাঙালির কাছে ক্যারিস্মার মশাল আর লালমোহন হচ্ছে অনাবিল স্নেহের উৎস। এ কোনদিন পালটাবার নয়। ফেলুদার আতিপাতি কোন গল্পই বাঙালির কাছে কোনদিন একঘেয়ে হবে না। বাঙালির প্রেম সেখানে। এটাকে এলাবোরেট করতে পারবি তোর বাঙালির প্রেম প্রবন্ধে? পারবি বোঝাতে কোন জাদুতে টেনিদার মোটা দাগের থ্যাবড়া ঠাট্টাগুলোকে আমরা এত স্নেহের সঙ্গে নিজেদের মনের ঝুড়িতে তুলোয় মুড়িয়ে রেখে দিয়েছি? ভালোবাসা পচা। ভালোবাসা। যে ভালোবাসা অন্ধ নয়, সে ভালোবাসার দাম কতটুকু? আর অন্ধ হয়ে থাকতে বাঙালির জুড়ি নেই। সে ভালোবাসার কথা লিখতে পারবি পচা?
- বুঝলাম মামা।
- কী বুঝলি পচা?
- যে বাঙালির প্রেমের ওপর আর্টিক্ল লেখার ক্ষমতা আমার নেই।
- গুড বয়। তাহলে আলু সেদ্ধ নিয়ে স্টাডিটা করছিস তো? প্রাইমারি ইনপুট আমিই প্রোভাইড করবো। চিন্তা নেই। কী রে, চলে যাচ্ছিস নাকি? অ্যাই পচা শোন শোন...
- ইয়েস।
- এই নিয়ে তোকে লিখতে বলছে পচা?
- ফরমাইস এসেছে মামা। ফ্রম আ বিগ মিডিয়া গ্রুপ।
- ইংরেজিতে?
- ইয়েস। অল ইন্ডিয়া ক্রাউড ক্যাপচার করতে হবে। বাঙালিজ্ম নিয়ে আজকাল ন্যাশনাল লেভেলে বেশ একটা ইয়ে আছে কি না।
- ইয়ে আছে মানে?
- কিউরিওসিটি। ইন্টারেস্ট।
- বটে?
- আলবাত।
- বাঙালির প্রেম আবার কী রে পচা? ছো:। ওসব লেখা ছাড়। বরং অ্যাক্রস্ দ্য বেঙ্গল আলু সেদ্ধর ভ্যারিয়েসন নিয়ে রিসার্চ করে একটা কিছু জমাটি করে লেখ দেখি।
- আরে। মালগুলো চেয়েছে বাঙালির প্রেম নিয়ে লেখা। আমি লিখবো আলু সেদ্ধ নিয়ে?
- অফ কোর্স। আলুসিদ্ধ দিয়ে বাঙালির চরিত্র ঢের ভালো চেনা যায় দ্যান প্রেম।
- তুমি না মামা!
- আমি ছিলাম বলে তোকে এসব স্ক্যান্ড্যাল থেকে বাঁচিয়ে দিই। ছাড় ছাড়। বাঙালির প্রেম নিয়ে লিখবে। বাঙালির কি লেজ আছে না এক্সট্রা কলজে আছে যে তাদের প্রেমের ধরন আলাদা হবে?
- বাঃ রে! তুমি তো কত হাবুডুবু খাও নলবনে প্রেম, শেষের কবিতা নিয়ে। দেলখোশার কেবিনে মামীর সাথে দেখা করা আর ফিশ কবিরাজি নিয়ে কত গপ্প বলো। সেগুলোই তো বাঙালি প্রেমের অ্যাপিল!
- শাট আপ পচা। নলবন কী বাঙালি? পৃথিবীর অন্য কোন প্রান্তে কী কেউ পার্কে বসে দহরমমহরম করছে না? তামিলনাড়ুতে রেস্টুরেন্টে বসে কেউ ডেট করে না? দেলখোশা বাঙালির পরিচয় হলে গেঞ্জি খুলে মাদুলি দ্যাখানো তাহলে বাঁ হাতি ব্যাট্সম্যানদের পরিচয়। হ্যাঁ। শেষের কবিতা আমি মাঝে মাঝে কোট করি। তবে সেটা খিল্লি করে। যারা প্রেম করতে জানে না তারা অমিত রে’র বাজে বাতেলা টুকে রোয়াব ঝাড়ে।
- হোয়াট আর ইউ সেয়িং মামা! বাঙালির প্রেমে কত রসগোল্লার রস। কত পান্তোর আমেজ। কত সন্দেশের নরম স্পর্শ...।
- থাম থাম থাম রাস্কেল। এসব ক্লিশে ঝেড়ে তুই বাঙালিকে অ্যাসেস করবি? আলুসিদ্ধকে ইন্টারপ্রেট করতে শেখ পচা। শুধু ওই আইটির চাকরি করে আর আনন্দমেলা পড়ে আর বরফি ব্যাক্সি সিনেমা দেখে বাঙালিবাজি করতে যাস না।
- চিলেকোঠার চুমু। বাঙালির প্রেম ছাড়া কোথায় পাবে?
- চিলেকোঠা কী বিভূতিভূষণ? বাংলা ছাড়া যার ভাবাবেগ আঁচ করা যায় না? চিলেকোঠায় একটা জাপানী মেয়েকে চুমু খেয়ে দ্যাখ, একই রকম বাত।
- তুমি মামা একটা যাতা লেভেলের জয় কিলার। সুমন কত দরদ দিয়ে গাইলে “প্রথম প্রেমে পড়ার পর সবাই পস্তায়, হন্যে হয়ে ক্লাস পালিয়ে ঘুরেছি রাস্তায়”। আর তুমি বলছো বাঙালির প্রেমের আলাদা ফ্লেভার নেই?
- বাঙালি ল্যাদপ্রিয় জাত। ওকে। ইন্ডাস্ট্রি-ফিন্ডাস্ট্রি আমাদের ধাতে সয় না। তাই বলে ওই লাইনে বাঙালির প্রেম কোথায় আছে পচাকুমার? সুমন ইজ রেফারিং টু ল্যাং খেয়ে কলকাতার রাস্তা ফেউ ফেউ করে ঘোরা। সাদা সাহেব কালো সাহেব মাদ্রাজি গুজরাতি সবাই প্রেমে লেঙ্গি খেয়ে খেয়ে পাগল হয়। আর কলকাতার রাস্তায় উদ্ভ্রান্ত হয়ে ঘোরা নিয়ে চাপ খাস না। ক্যালক্যাটা ইজ নট বেঙ্গল। জাস্ট লাইক বাঙালি মানেই ইসবগুল বা জেলুসিল স্পেকট্রামে বাস করে, এমন ভাবাটা ভুল শুধু নয়, ঠাট্টা হিসেবেও যথেষ্ট অপরিণত।
- শীতের দুপুরে ভিক্টোরিয়ায় বসে প্রেম করতে পারোনি বলে এই যে তুমি মাঝে মাঝেই হাহাকার কর, সেটা কী কোন অবাঙ্গালী করবে মামা?
- ডিয়ার অপোগণ্ড। ফের বলছি। মুর্শিদাবাদে বসে কেউ কী ভাববে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে বসে প্রেম করার কথা? কলকাতা কলকাতা করে বাঙালি গেঁজে গেল। শোন পচা। সাহেবের সাদা বাড়ির বাগানে ছায়া দেখে চুমু খাওয়ার সঙ্গে বাঙালি হওয়ার কোন লিঙ্ক নেই। ধুর ধুর।
- বাঙালি কবির জাতি। আর বাঙালির প্রেম নিয়ে আলাদা করে লেখা হবে না? এটা কোন কথার কথা হল মামা?
- বাঙালি কবির জাতি? কে বললে? তোকে? আনন্দবাজার?
- যা:। এটা তো অবভিয়াস ফ্যাক্ট।
- আমি যদি তোকে বলি যে বেশির ভাগ বাঙালি ভান করে কবিতা লিখতে পারার। আসলে সব টেক্সটবুক ধরে গাইড বই মেনে বাইশ পিস কবিতা পড়া হিপোক্রিট? আধুনিক কবিতার নামে সবাই খোঁচা দাড়ি আর কফি হাউসের আড়ালে লুকিয়ে বাতেলা ঝাড়ে?
- তুমি কী বাঙালিদের খিস্তি দিচ্ছ মামা?
- না। রিয়েলিটি চেক দিচ্ছি। আর যে খালিফারা বাঙালির প্রেম নিয়ে লেখা চায় তারা বেসিক্যালি বাঙালির ঠ্যাং ধরে খিল্লি করতে চায় পচা। এরপর বলবে বাঙালির হাই তোলা নিয়ে লেখা দাও। বাঙালি ঘামাচি নিয়ে এস্যে লেখো। তারপর সেসব ল্যাজে গোবরে ক্লিশে মালগুলো তারা রস্গুল্লা আর মিষ্টি দহীর সঙ্গে গাণ্ডেপিণ্ডে গিলবে আর ‘হামি জল খাবে’ বলে হজম করবে। লিখে দে বঙ্গালিজ এক্সপ্রেস দেয়ার লাভ বাই সেয়িং “এ না চলবে এ না চলবে”, দ্যাখ বংস্টাররা হেসে হেসে অক্কা পাবে। কিন্তু এসব লিখে কী হবে পচা?
- হুম! মোদ্দা কথা হচ্ছে যে তুমি বলছো যে বাঙালির প্রেম নিয়ে লেখা সম্ভব নয়।
- তোর পক্ষে লেখা সম্ভব নয়।
- মানে?
- মানে বাঙালির প্রেম নিয়ে লিখতে হলে যে সব জটিল নুয়ান্সেস ঘাঁটতে হবে, তা তোর কম্ম নয়।
- যেমন?
- যেমন তেলাকুচা বিভূতিভূষণকে ফ্যাসিনেট করেছিল। তেলাকুচাকে কে নিয়ে লেখাটার কী ভীষণ রোম্যান্টিক ভ্যালু আছে জানিস? বাঙালির প্রেম সেই খানে।
- তেলাকুচা?
- এক ধরনের লতা জাতীয় উদ্ভিদ। তা জানবে কেন! তোরা জানবি বঙ্গালী মতলব উত্তমকুমার কা হাসি আছে। রবীন্দ্রনাথের মৃতদেহ থেকে দাড়ি খুবলে নিয়েছিল ভক্তেরা। সুভ্যনির হিসেবে। এখানে প্রেম নেই বলছিস?
- এহেঃ! গ্রস। ছিঃ।
- হুঁ হুঁ বাবা। বাঙালির প্রেম। এত সহজে মাপবে? সেদিন গড়িয়াহাটে দেখলাম। মাঝবয়েসী ভদ্রলোক প্যাচপ্যাচে গরমে ভরদুপুরে বৌকে চৈত্র সেল এক্ট্রাভ্যাগানজা চাখাতে পান্ডুয়া থেকে নিয়ে এসেছেন। বউয়ের পিছন পিছন হাসি মুখে ঘুরছেন সর্বত্র। ছাপোষা ভালোমানুষ। ট্যাঁফোঁ শেখেননি। তার বগলে রোল করে রাখা একটা পুরনো এক কপি নবকল্লোল। বউ যেই শাড়ি বাছতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে অমনি ভদ্রলোক টুক করে একটু পত্রিকাটা পড়ে নিচ্ছেন। দ্যাট মাই ফ্রেন্ড ইজ লাভ। জীবনের প্রতি বাঙালির প্রেম।
- ধুর মামা। ছড়াচ্ছ।
- আরে শোন পচা। প্রেমিকার আঙুল ধরে চিত্রহার মার্কা কাব্যি যে কেউ ঝাড়তে পারে। কীট্সও পারে, কুমার শানুও পারে। তার জন্যে বাঙালি হওয়ার দরকার নেই। বাঙালির প্রেম পাশবালিশ মাদুর কম্বিনেশনে আছে। বাঙালির আবোল তাবোল আছে, সেখানে রয়েছে প্রেমের থ্রিল পচা; শেষের কবিতায় নয়। শেষের কবিতা আদেখলাদের জন্য। বাঙালি খোকা নিজেকে মনে মনে আফ্রিকা দাপানো শঙ্কর বলে ভেবে চাঁদের পাহাড় পড়বে, প্রেম সেখানে রয়েছে।
- বোরলিনে ভক্তি?
- স্টিরিওটাইপ্।
- উফফ!
- বাঙালির প্রেমের প্রাইম এগজাম্পেল শুনবি? ফেলুদার বেশির ভাগ গপ্পই গোয়েন্দা গল্পের নিরিখে প্লট ফোকলা। কিন্তু ফেলুদা নিজে প্রত্যেক বাঙালির কাছে ক্যারিস্মার মশাল আর লালমোহন হচ্ছে অনাবিল স্নেহের উৎস। এ কোনদিন পালটাবার নয়। ফেলুদার আতিপাতি কোন গল্পই বাঙালির কাছে কোনদিন একঘেয়ে হবে না। বাঙালির প্রেম সেখানে। এটাকে এলাবোরেট করতে পারবি তোর বাঙালির প্রেম প্রবন্ধে? পারবি বোঝাতে কোন জাদুতে টেনিদার মোটা দাগের থ্যাবড়া ঠাট্টাগুলোকে আমরা এত স্নেহের সঙ্গে নিজেদের মনের ঝুড়িতে তুলোয় মুড়িয়ে রেখে দিয়েছি? ভালোবাসা পচা। ভালোবাসা। যে ভালোবাসা অন্ধ নয়, সে ভালোবাসার দাম কতটুকু? আর অন্ধ হয়ে থাকতে বাঙালির জুড়ি নেই। সে ভালোবাসার কথা লিখতে পারবি পচা?
- বুঝলাম মামা।
- কী বুঝলি পচা?
- যে বাঙালির প্রেমের ওপর আর্টিক্ল লেখার ক্ষমতা আমার নেই।
- গুড বয়। তাহলে আলু সেদ্ধ নিয়ে স্টাডিটা করছিস তো? প্রাইমারি ইনপুট আমিই প্রোভাইড করবো। চিন্তা নেই। কী রে, চলে যাচ্ছিস নাকি? অ্যাই পচা শোন শোন...
2 comments:
awsaaaadharon lekha.
pore valo laglo :)
Post a Comment