Wednesday, July 29, 2015

প্যারালাল

- লাইফ আফটার ডেথ্‌য়ে বিশ্বাস থাকাটা বিজ্ঞান বিরোধী বলছ?

- অফ কোর্স। যার প্রমাণ নেই, তার অস্তিত্ব নেই।

- এক সময় তো আমাদের পরিচিত ভূমণ্ডলটারও কোন প্রমাণ আমাদের ল্যাবরেটরিতে ছিল না হে।

- সেটা প্রাগৈতিহাসিক সত্য। কিন্তু তার পর থেকে বিজ্ঞানের প্রোগ্রেস্‌ অভাবনীয় গতিতে হয়েছে সেটা ভুললে চলবে না। এখন অন্তত আমাদের কাছে যুক্তির জমিটুকু তৈরি আছে। থিওরি বল আর কল্পনা, সমস্ত সেই জ্ঞানের জমির ওপরেই খাড়া করতে হবে তোমায়। আর মৃত্যুর পরের অস্তিত্ব সম্বন্ধে কোন থিওরি বা কল্পনা সেই যুক্তিগ্রাহ্য জমির ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। 

- কে জানে! সমস্ত সত্যই কী যুক্তির ওপর দাঁড়িয়ে? 

- আলবাত। থাকতেই হবে।

- তর্ক করতে মন চায় না বাপু। 

- তর্কের যে স্কোপ আছে বলে তোমার মনে হচ্ছে, সেটাই আমায় অবাক করছে। এ এক অদ্ভুত প্রেজুডিস্‌।

- আমার প্রেজুডিস? আর তুমি যে গোটা ব্যাপারটাকে একদম হতেই পারে না বলে উড়িয়ে দিচ্ছ, এটাও কী বিজ্ঞানভিত্তিক প্রেজুডিস নয়?

- অর্থাৎ তোমার ধারণা আমরা মারা গেলে নশ্বর দেহ ধারণ করি; এই বোগাস আইডিয়াটা বেস্‌লেস অর্বাচীন নয়?

- আপাত দৃষ্টিতে তাই।

- আপাত দৃষ্টিতে? বটে? আচ্ছা, আজ পর্যন্ত কোন ভূত প্রমাণ দিতে পেরেছে তেনাদের অস্তিত্বের? কিছু বোগাস রটানো ঘটনা ছাড়া ভূতসমাজে কোথাও কখনও মানুষ দর্শনের কোনও অকাট্য প্রমাণ দেখাতে পারা গেছে? তোমাদের মত শিক্ষিতজন যখন এসব বালখিল্যসুলভ তর্ক জুড়ে বস, তখন খারাপ লাগে। 

- কে জানে ভাই। আমরা যেমন মানুষের দেখা পাইনা বলে ভাবি তাঁদের অস্তিত্ব নেই, হয়তো তারাও আমাদের ব্যাপারে একই রকম ভাবে। হয়তো আমাদের প্যারালাল দু'টো দুনিয়া কখনও কোইনসাইড করে না! কে বলতে পারে?

- অসহ্য। তোমাদের এমন অ্যানসায়েন্টিফিক ভাবনাগুলোর জন্যেই আজ দেশের ও দশের এমন দুরবস্থা।

শেল্টার

১। 

কমল মিত্র কণ্ঠ - ডেলি প্যাসেঞ্জারি করবে অথচ কল ব্রে বা ট্যুয়েন্টি নাইন খেলবে না?

উত্তম কণ্ঠ - আমার তাস খেলতে ভালো লাগে না।

কমল মিত্র কন্ঠ - তাস খেলতে কেন ভালো লাগবে! আনসোশ্যাল উজবুকের মত এমপিথ্রি প্লেয়ারের ইয়ার ফোন কানে দিয়ে থাকাটাই তোমার কাছে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।


উত্তম কন্ঠ - ইয়ারফোন আর এমপিথ্রি প্লেয়ার সম্বন্ধে আপনার এ ধারণা ভুল।

কমল মিত্র কণ্ঠ - চুপ কর উজবুক। তোমার লজ্জা করে না আমাদের তাসের আড্ডায় পার্টিসিপেট না করে রোজ রোজ আমাদের এরিয়ার উইন্ডো সীটের শেল্টার নিতে?

উত্তম কন্ঠ - তাহলে আপনি বলতে চাইছেন তাস না খেললে আপনার শেল্টারে থাকা যাবে না?

কমল মিত্র কণ্ঠ - বলতে চাইছি না; বলছি।


২।

-প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে।

-ফুটপাথে শুয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতে বেশ লাগে রে ভাই। গেয়ে যা।

-রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইছি না হে। এই মাত্র দুঃস্বপ্ন দেখলাম একটা। হম আপকে হ্যায় কউন সিনেমার নায়ক চুপচাপ গাড়ি নিয়ে ফুটপাথে উঠে এসে আমাদের বুকের ওপর দিয়ে চলে গেল। তাই বোধ হয় বিড়বিড় করছিলাম।

-প্রেম ফুটপাথে নেমে এলে?

-ডাইরেক্ট। 

-ভেবে লাভ নেই ভাইটি। 

-তা তো বটেই। ইয়ে, আমরা কী ভাসছি?

-আরে তাই তো। ওই যে। নিচে দ্যাখ; ফুটপাথ ওই নিচে। আর ওই যে আমাদের বালিশ।

-ভাইটি! সাদা বালিশের ওয়াড় লাল লতপত কেন? উপুড় হয়ে কারা শুয়ে?

Monday, July 27, 2015

চুপচাপ

- কী রে প্যালা, চুপচাপ একলা বসে? মন ভালো নেই?

- না। নেই।

- কেন? কুমড়োর ঝোল দিয়ে ডিনার সারতে হয়েছে বলে?

- না।

- ছেলে জিওগ্রাফি ক্লাস টেস্টে কম নম্বর পেয়েছে?
- না।
- পুজোর ছুটি ক্যানসেল করতে হয়েছে কোন কারণে?
- না।
- বৌয়ের সাথে ঝগড়া করেছিস?
- না।
- অফিসে মান্থ এন্ড সেল্‌স প্রেশারের ঝামেলা চলছে?
- না।
- মাসীমা বা মেসোমশাইয়ের শরীর-টরীর খারাপ হয়নি তো?
- না।
- কবিতা লিখছিস?
- না।
- আমার বায়প্সি রিপোর্ট হাতে পেয়েছিস?
- আহ! আজকাল তুমি বড্ড বেশি প্রশ্ন কর টেনিদা।

মেনু

- কী ব্যাপার, অত মন দিয়ে কী লিখছিস রে?
- কবিতা
- রিয়েলি?
- ইয়েস মিস চ্যাটার্জী রিয়েলি
- ছন্দ মিলিয়ে না আধুনিক?
- আকাশে মেলেছি খাম, পড়ে আছে নুড়ি পাথর - হিমেল হাওয়ায় বুক জমে প্লাস্টিক
- তো জালি
- অতএব আধুনিক
- সিরিয়াসলি পাপাই বল না, কী লিখছিস
- আবৃত্তি করলাম তো রে ওই আকাশে মেলেছি খাম...
- আরে থাম থাম থাম
- শুনবি? কী লিখছি ?
- বলতে চাইলে বল
- শোন এক নম্বরে নুন দুই নম্বরে লেবু তিন নম্বরে স্যালাড চার নম্বরে সস পাঁচ নম্বরে ফিশ ফ্রাই; জেনুইন ভেটকি ছয় নম্বরে চিকেন পকোড়া সাত নম্বরে সাদা ভাত আট নম্বরে মাছের মাথা দিয়ে মুগের ডাল নয় নম্বরে ফুলকপির রোস্ট দশ নম্বরে বেগুনী এগারো নম্বরে পটল চিংড়ি বারো নম্বরে ভাত রিপিট তেরো নম্বরে ইলিশ ভাপা চোদ্দ নম্বরে পোলাও পনেরো নম্বরে পাঁঠার কষানো ঝোল ষোল নম্বরে পেঁপের প্লাস্টিক চাটনি সতেরো নম্বরে পাঁপড় আঠেরো নম্বরে লেডিকেনি উনিশ নম্বরে কে সি দাস যাচাও কুড়ি নম্বরে এক জোড়া ভীম নাগ একুশে চন্দননগরের মিষ্টি দই বাইশে মিঠে পান তেইশে গরম সাবান জলের নীল সবুজ হলুদ প্লাস্টিক বাটি
- বাবাঃ, এটা কী?
- মেনু আমার বিয়ের
- সে কী! তুই বিয়ে করছিস? কলেজের থার্ড ইয়ারে বিয়ে?
- আজ না করি একসময় তো করতেই হবে
- পাত্রী?
- হোপফুলি এমন কেউ যে আধুনিক কবিতাকে বিয়ে বাড়ির মেনু বলে গুলিয়ে ফেলবে না

প্রেসক্রিপশন

-   কিন্তু আপনি এই সমস্যাটা নিয়ে আমার কাছে এলেন কেন মলয়বাবু?

-   বলে রাখি, আপনি আমার সাইকিয়াট্রিস্ট বলে আপনার কাছে এসেছি; তেমনটি ভাববেন না ডাক্তার সেন। আমি এসেছি কারণ আপনি স্মার্ট, ইন্টেলিজেন্ট, প্র্যাক্টিক্যাল। আমায় অনেকদিন ধরে চেনেন। অনেক কাছ থেকে চেনেন। আপনি জানেন যে আমি আপনার কাছে আসি মাথার ব্যারাম নিয়ে নয়, সমস্যা নিয়ে। আপনার কাউন্সেলিংয়ের ওপর আমার ভরসা আছে।

-   আমার কখনও মনে হয় না আপনার মাথার ব্যামো আছো।

-   সেটাই আমায় নিশ্চিন্ত করে। তাই এবারের সমস্যাটাও আপনাকে এসে বলেই ফেললাম।
-   টেকনিক্যালি। এটা সমস্যা নয়। একটা প্রসেস নিয়ে কন্‌সাল্ট করতে এসেছেন মাত্র।তাই তো মলয়বাবু?

-   তা ঠিকই বলেছেন। আই জাস্ট নিড আ ডিফারেন্ট অ্যান্ড গ্র্যাজুয়াল প্রসেস।

-   কিন্তু এ ব্যাপারে অভিজ্ঞতা যে আমার একদমই নেই মলয়বাবু। আফটার অল আমি কোনদিন নিজে এর আগে সুইসাইড অ্যাটেম্পট্‌ করিনি। কিছু সুইসাইডাল টেন্ডেন্সি বয়ে বেড়ানো মানুষের সাথে আগে কথা হয়েছে সেটা ঠিক। কিন্তু সুইসাইড করার সহজ ও গ্র্যাজুয়াল প্রসেস; এ ব্যাপারে কী আমি পারব আপনাকে গাইড করতে?

-   আপনি পারবেন। আপনার মত শার্প লোক না পারলে আর কে পারবে? আমার দৃঢ় বিশ্বাস সুইসাইড করার দিকে মন দিলে আপনি একটা ক্ল্যাসিকাল আত্মহত্যার ব্লু-প্রিন্ট বানিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতে পারতেন। আমায় প্লীজ রিফিউজ করবেন না ডাক্তার সেন। আই নিড ইওর হেল্প।

-   হুম। ব্যাপারটা গুরুতর।

-   বটেই তো।

-   মনস্থির করেই ফেলেছেন ? সুইসাইডের ব্যাপারটা নিয়ে আপনি সিওর তো?

-   হান্ড্রেড পারসেন্ট ডাক্তার। আমি তৈরি। উইল-টুইল রেডি রেখেছি। আমার আর জীবনে কোনও ইন্টারেস্ট নেই। সেভেন্টি ট্যু ইস রাইপ্‌ এনাফ।

-   আবার এদিকে ঝটকায় মরতেও চাইছেন না, তাই তো? সময় নিয়ে তারিয়ে তারিয়ে আত্মহত্যাটা ঘটবে, তেমনটাই ইচ্ছে?

-   প্রিসাইস্‌লি। একটা গ্র্যান্ড প্রসেস্‌ হওয়া দরকার। সবাই জানবে যে আমি সুইসাইড করে চলেছি; কয়েক মাস ধরে চললে তো অউর ভি অচ্ছা। প্রেস কনফারেন্স-টনফারেন্স করত হতে পারে আমায়। লঙ্গেস্ট সুইসাইডাল অ্যাটেম্পটের গিনিস রেকর্ড-টেকর্ড চেক করতে হবে এই বেলা।

-   স্লো পয়জন?

-   বিষ ব্যাপারটাও ভারী অর্থডক্স ডাক্তার। বড়খোকা সাজেস্ট করেছিল। ওর ভায়রা ভাই বড় কেমিস্ট; নানান সব মারণ সলিউশন তার নখ দর্পণে। কিন্তু আমি ওই থোড় বড়ি খাড়া প্রসেসে যেতে চাইছি না। গায়ে আগুন, দশতলা থেকে ঝাঁপ; এসব বড্ড এক ঘেয়ে। ইউ ক্যান্‌ নট হিট আনন্দবাজার ফ্রন্ট পেজ উইথ দ্যাট।

-   তা ঠিক।

-   আর তাছাড়া প্রসেসটা বাড়াবাড়ি রকমের পেইনফুল না হওয়াটাই কাম্য। বুঝতেই পারছেন, কষ্টের বয়স আর নেই। একসময় অনেক কষ্ট করেছি; ট্রেন ধরে বারুইপুর থেকে শেয়ালদা, সেখান থেকে বাস ধরে ডালহৌসি। দৈনিক আসতে আড়াই ঘণ্টার অফিস যাতায়াত। এখন টু পাইস ব্যাঙ্কে আছে। ছেলেরা দাঁড়িয়েছে; কষ্ট করে মরতে চাই না। লেট ইট বি স্লো অ্যান্ড পেইনলেস্‌।

-   বুঝলাম। আমি আপনাকে সঠিক উপায় বলে দিচ্ছি। চিন্তা করবেন না।

-   থ্যাঙ্ক ইউ ডক্টর সেন। আমি গ্রেটফুল থাকব আপনার কাছে।

-   প্রেসক্রিপশনে লিখে দিচ্ছি প্রসেস্‌টা, কেমন? তবে ইয়ে, কাউকে এই প্রেসক্রিপশনটা দেখাবেন না প্লীজ মলয়বাবু। সুইসাইডের পন্থা বাতলানোর কাজটা ভালোই তবে আমাদের সমাজ ব্যাপারটাকে ভালো চোখে দেখবে না। আমার প্র্যাক্টিস করে খেতে হয় যে।

-   আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। ও জিনিষ আমার কাছেই থাকবে। কোন ব্যাটা জানতে পারবে না।

-   এই নিন। লিখে দিয়েছি। ওষুধের দরকার নেই। স্পেশ্যাল ডায়েট লিখে দিয়েছি। সুইসাইডাল ডায়েট।তাতেই হবে। ছ’মাস থেকে দু’বছরের মধ্যে কাজ হাসিল হয়ে যাবে।

-   রিয়েলি? থ্যাঙ্ক ইউ। আপনি ছিলেন বলে এ যাত্রা বেঁচে গেলাম ডাক্তার সেন।  এবার সুইসাইডটা ভালোয় ভালোয় মিটলে শান্তি পাই।

-   ইউ আর ওয়েলকাম। ইয়ে, আমার ফিজটা গতকাল থেকে বেড়ে দেড় হাজার হয়েছে মলয়বাবু।

**

-   বাবা, এটা কী হচ্ছে?

-   কী ব্যাপার ছোটখোকা?সকাল সকাল চিৎকার করছিস কেন?

-   তুমি পঞ্চুর মাকে বলেছ তোমার জন্য জলখাবারে, দুপুরে আর রাতে নিরামিষ বিরিয়ানি বানাতে? তাও সপ্তাহে সাত দিন ধরে?

-   শুধু সাত দিন না, গোটা মাস, গোটা বছর আমি তাই খাব।

-   সে কী? কিন্তু কেন?

-   ডাক্তার বলেছে।

-   ডাক্তার সেন এটা বলেছেন? কেন?

-   একটা বিশেষ পারপাস আছে। সে পারপাস শুধু ভেজ বিরিয়ানি খেলেই হাসিল হতে পারে। তুই শুধু দেখে যা; ছ’মাস থেকে দু’বছরের মধ্যেই কেল্লা ফতে। আর তদ্দিনে তোদের বাপ একজন সেলিব্রেটি।

Sunday, July 26, 2015

রবিন ও সোমলতা

রবিনবাবুকে ফোনটা ধরতেই হল।

-হ্যালো।

-কী ব্যাপার রবিন? ফোন ধরছ না কেন?

-সোমলতা প্লীজ। কেন এভাবে বারবার ফোন করছ?

-আমি আসছি। আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আসছি।

-জানি তো আসছ। জানি আমায় শেষ করে দিতে আসছ। কিন্তু এই শেষ কয়েক ঘণ্টা অন্তত আমায় আমার মত থাকতে দাও।

-আমায় ভুলে থাকবে?

-কয়েক ঘণ্টা; প্লীজ সোমলতা।

-আমি যে তোমাকে আমায় ভুলে থাকতে দেব না সোনা।

-এখন প্রায় বেলা বারোটা সোমলতা, আর তো মাত্র বারো ঘণ্টা। এরপর সবটুকুই তো তোমার।

-জানি। তবু। এই কয়েক ঘণ্টায় তুমি আমার কথা ভাববে না এ কী করে হয় রবিন?

-ভয় হচ্ছে সোমলতা।

-প্রতি হপ্তায় মরেও মৃত্যু ভয়? 

-হপ্তায় হপ্তায় মারা যাওয়া তো তোমারও অভ্যাস সোমলতা।

-হাউ স্যুইট অফ ইউ টু থিঙ্ক সো রবিন। আমিই সমস্তটুকু, সেটা জানো না? আমি মরতে পারি না যে। আমি মরার ভান করি যাতে হপ্তায় হপ্তায় তোমায় কফিন থেকে টেনে তুলতে পারি গো! আর তোমার এই সন্ত্রস্ত দেহটাকে বারবার কফিনে শুইয়ে দিয়ে যে আমি কতটা মজা পাই; তা তো তুমি জানোই। 
-সোমলতা প্লীজ।
-আর বারো ঘণ্টা রবিন। আমি আসছি।    

Saturday, July 25, 2015

শনিবারের ডেট্‌

- তুই ভাবতে পারছিস? কাল আমাদের বিয়ে?

- নাঃ!

- তুই এত আনরোম্যান্টিক কেন রে? সবসময় কাঠ কাঠ উত্তর।

- এমনিই।

- কাল আমাদের বিয়ে অর্ঘ্য। বিয়ে!!!!!!! এটা আমাদের শেষ শনিবারের ভিক্টোরিয়ার বেঞ্চিতে বসে বাদাম চেবানো ব্যাচেলর ডেট! তুই একটানা গুম মেরে থাকবি?
-হুম!
- তুই অসহ্য।
- জানি।
- প্লীজ কথা বল না রে। সময় চলে যাচ্ছে।
- বলছি তো।
- কই বলছিস? অমন গুম মেরে থাকিস না রে!
- তাই তো। গুম মেরে থাকাটা অনুচিত।
- কথা বল। প্লীজ বল। হাত ধর। যেমন রোজ চুমু খাওয়ার বায়না করিস আজও কর না। আমি যেমন রোজ মুখে বেঁকিয়ে না করি, তেমন আজও করব।
- পারব না আজ।
- তোর চোখে জল?
- কেন? তোর মত হাউ হাউ করে সিন ক্রিয়েট না করলে চলছে না?
- আজ কেঁদে সময় নষ্ট করতে চাইছি না রে। চুমু খাওয়ার বায়না কর না প্লীজ। আজ হয়তো রিফিউজ করব না?
- কাল বিয়ে বলে?
- হয়তো। তুই এমন গুমোট হয়ে বসে থাকিস না।
- আসলে কোইন্সিডেন্সটা বড় ডিস্টার্বিং রে। কাল আমাদের বিয়ে। কিন্তু বিয়ে হচ্ছে দু'পিস। চার সেট মালা। এক পিস এক্সট্রা বৌ, এক পিস এক্সট্রা বর। কোনও মানেই হয় না। জাস্ট কোনও মানে হয় না।

শনিবারের অফিস

- স্যার, একটা কথা ছিল।

- আবার কী কথা শুভ্র? আই টোল্ড ইউ। গেট দ্য এম-আই-এস রেডি এস্যাপ।

- না মানে...কথা তেমন নয়। জাস্ট একটা চিঠি দেওয়ার ছিল।

- চিঠি? হোয়াট চিঠি?

- ওই। রেসিগনেশনের।

- রেসিগ...? হোয়াট? চালাকি করছ নাকি?

- না স্যার। সিরিয়াস।

- কী ব্যাপার? টেল মি ক্লিয়ারলি। আই ডোন্ট হ্যাভ টাইম ফর দিস ননসেন্স।

- না মানে। এই ভাবে প্রতি উইকেন্ডে আপনি অফিসে ডেকে নেবেন। আমার একটা ফ্যামিলি লাইফ আছে স্যার। এটা চলতে পারে না।

- হোয়াট দ্য হেল ইজ দ্যাট সাপোজ্‌ টু মিন শুভ্র? আমিও অফিস আসি উইকেন্ডে।

- আপনি আসেন কারণ আপনার ফ্যামিলি অন্য শহরে থাকে। ইউ হ্যাভ নাথিং টু ডু হিয়ার সিন্স ইউ আর আ ফোর্সড ব্যাচেলর। কিন্তু আমার ফ্যামিলি আমার সাথে থাকে। অদরকারী কাজের জন্য হুড়মুড় করে শনি রবি অফিস আসা। টূ মাচ স্যার। 

-ইউ আর অ্যান ইডিয়ট। আমার আর কিছু বলার নেই। তোমার মত লোক আসবে যাবে, কোম্পানি ডাজন্‌ট বদার। যদি তুমি ভেবে থাক যে আমায় ব্ল্যাকমেল করবে দেন লেট মি টেল ইউ ইউ আর মেসিং উইথ দ্য রং পার্সন।

- মেস্‌ টেস্‌ করছি না স্যার। যাক। কথায় কথা বাড়ে। আপনি অকারণে উত্তেজিত হচ্ছেন। আপনার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে দেখছি। আপনি তো আবার হাইপার টেনশনে ভোগেন। অত এক্সাইটেড হবেন না। 

- শাট আপ অ্যান্ড গেট আউট। নাউ।

- যাচ্ছি যাচ্ছি। শুধু আমার রেসিগনেশন লেটারটা দু'কপি দিয়েছি। এক কপি যদি সই করে অ্যাকনলেজ করে দিতেন স্যার। 

- এই নাও, আই হ্যাভ পুট মাই ইনিশিয়ালস। নাউ গেট আউট!

- একবারও চিঠিটা না পড়ে অ্যাকনলেজ করে আমার মুখে ছুঁড়ে মারাটা কী ঠিক হল স্যার? 

- তোমার মত কর্পোরেট স্কামের ঘ্যানঘ্যানে চিঠি পড়ার চেয়ে আই হ্যাভ বেটার থিংস টু ডু মিস্টার শুভ্র দাসগুপ্তা।   তোমার হালত রাস্তার কুকুরের মত হবে, ডু ইউ নো দ্যাট?  এই এস্টাব্লিশ্‌ড চাকরী ছেড়ে কী করবে ভেবেছ?

- একটা বিজনেস প্ল্যান ছিল। প্রায় তৈরিই ছিল।

- প্ল্যান? রিয়েলি?

- টোটালি। সমস্ত কিছু রেডি রেখেছিলাম। কিন্তু আর করা হল কই।

- হোয়াট ডু ইউ মিন?

- আরে বাইকে অফিস আসছিলাম আজ। এত বৃষ্টি হয়েছে সকালের দিকে স্যার; রাস্তায় জল থই থই। ক্রমাগত আপনি মোবাইলে তাড়া দিচ্ছিলেন। ওই। সামান্য অন্যমনস্ক হতেই বাইকটা স্কীড করল। আর তখনি পিছন থেকে একটা স্টেট বাস এসে পিষে দিয়ে গেল বুঝলেন। স্পটেই চলে যেতে হলে। বডিটা মর্গের দিকে রওনা হতেই আমি চলে এলাম, আফটার অল লাইফের শেষ ইম্পরট্যান্ট কাজটা পেন্ডিং ছিল; রেসিগনেশন লেটারটা আপনাকে অফার করে যাওয়া। এখন আমি ঝাড়া হাত পা। অবিশ্যি, হাত পা আর এগজ্যাক্টলি নেই।

-শুভ্র...শুভ্র...ইউ...ইউউউউউউউ...

-ও কী! কী হল স্যার। এ কী! আপনার মুখ দিয়ে  গ্যাঁজলা বেরোচ্ছে কেন? এত নার্ভাস হচ্ছেন কেন স্যার! কী হল!

**   

" মিস্টার সাহা শুধু একজন বস্‌ ছিলেন বললে ভুল হবে। হি ওয়াজ আ মেন্টর টু। ওনার কাজের ধরণ, ওনার এমপ্লয়ি ওয়েলফেয়ারের প্রতি ফোকাস; এক কথায় যাকে বলে ইন্সপায়ারিং। ওনার এই আচমকা চলে যাওয়া এই কোম্পানির যে প্রবল ক্ষতি হল, তার পূরণ হওয়ার নয়। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে আমার যে ক্ষতি হল, সেই ব্যথা হয়ত আরও অনেক বেশী ইন্টেন্স; আমার বারবার মনে হচ্ছে আমি দ্বিতীয় বারের জন্য পিতৃহারা হলাম। মিস্টার সাহার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা যতটা না বস ও সাবর্ডিনেটের; তার চেয়েও বেশী ছিল পিতা ও পুত্রের। ইট আজ অ্যান ইরিপেরেব্‌ল পার্সোনাল লস। মারা যাওয়ার দিনই কয়েক ঘণ্টা আগে আমায় ডেকে পাঠান। ওনার নিজের সই করা আমার এই আচমকা প্রমোশনের চিঠিটা আমাকে দিয়ে আমায়  বুকে জড়িয়ে ধরেন তিনি।  তিনি আমায় বলেছিলেন যে আমি নাকি দ্য বেস্ট গাই টু লিড দ্য মার্কেটিং টিম। এত বড় জাম্প আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। আশা করি আমি ওঁনার বিশ্বাসের মর্যাদারক্ষা করতে পারব। খবরটা পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে সেদিন আমি স্বার্থপরের মত অফিস ছেড়ে বেরিয়ে গেছিলাম আমার বাড়িতে সেই খবরটা জানাতে; ইন ফ্যাক্ট মিস্টার সাহাই আমায় বলেছিলেন "শুভ্র, শনিবারে অফিসে বসে না থেকে শেয়ার দ্য বিগ নিউজ উইথ ইওর ফ্যামিলি ইন পার্সন"। আমি ওনাকে প্রণাম করে বেরিয়ে এসেছিলাম। আর সেদিনই বিকেলের দিকে এই বীভৎস খবরটা পাই। আমার এত আফসোস হয়; মনে হয় আমি যদি সেই শনিবারের ফাঁকা অফিসে মিস্টার সাহাকে একলা ফেলে বাড়ি চলে না গিয়ে ওঁর সঙ্গে থাকতাম- তাহলে হয়তো ওঁর ওই হার্ট অ্যাটাকের সময় কিছু একটা করতে পারতাম। কিন্তু আমি থাকতে পারিনি। ডেস্টিনি ক্যান বি সো সো ক্রুয়েল। ওঁনার আত্মার চিরশান্তি কামনা। ডিয়ার কলিগ্‌স, আসুন আমরা মিস্টার সাহার স্মৃতিতে দু'মিনিট নীরবতা পালন করি"।