- কিন্তু আপনি এই সমস্যাটা নিয়ে আমার কাছে এলেন কেন মলয়বাবু?
- বলে রাখি, আপনি আমার সাইকিয়াট্রিস্ট বলে আপনার কাছে এসেছি;
তেমনটি ভাববেন না ডাক্তার সেন। আমি এসেছি কারণ আপনি স্মার্ট, ইন্টেলিজেন্ট,
প্র্যাক্টিক্যাল। আমায় অনেকদিন ধরে চেনেন। অনেক কাছ থেকে চেনেন। আপনি জানেন যে আমি
আপনার কাছে আসি মাথার ব্যারাম নিয়ে নয়, সমস্যা নিয়ে। আপনার কাউন্সেলিংয়ের ওপর আমার
ভরসা আছে।
- আমার কখনও মনে হয় না আপনার মাথার ব্যামো আছো।
- সেটাই আমায় নিশ্চিন্ত করে। তাই এবারের সমস্যাটাও আপনাকে এসে
বলেই ফেললাম।
- টেকনিক্যালি। এটা সমস্যা নয়। একটা প্রসেস নিয়ে কন্সাল্ট
করতে এসেছেন মাত্র।তাই তো মলয়বাবু?
- তা ঠিকই বলেছেন। আই জাস্ট নিড আ ডিফারেন্ট অ্যান্ড
গ্র্যাজুয়াল প্রসেস।
- কিন্তু এ ব্যাপারে অভিজ্ঞতা যে আমার একদমই নেই মলয়বাবু।
আফটার অল আমি কোনদিন নিজে এর আগে সুইসাইড অ্যাটেম্পট্ করিনি। কিছু সুইসাইডাল
টেন্ডেন্সি বয়ে বেড়ানো মানুষের সাথে আগে কথা হয়েছে সেটা ঠিক। কিন্তু সুইসাইড করার
সহজ ও গ্র্যাজুয়াল প্রসেস; এ ব্যাপারে কী আমি পারব আপনাকে গাইড করতে?
- আপনি পারবেন। আপনার মত শার্প লোক না পারলে আর কে পারবে?
আমার দৃঢ় বিশ্বাস সুইসাইড করার দিকে মন দিলে আপনি একটা ক্ল্যাসিকাল আত্মহত্যার
ব্লু-প্রিন্ট বানিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতে পারতেন। আমায় প্লীজ রিফিউজ করবেন না
ডাক্তার সেন। আই নিড ইওর হেল্প।
- হুম। ব্যাপারটা গুরুতর।
- বটেই তো।
- মনস্থির করেই ফেলেছেন ? সুইসাইডের ব্যাপারটা নিয়ে আপনি সিওর
তো?
- হান্ড্রেড পারসেন্ট ডাক্তার। আমি তৈরি। উইল-টুইল রেডি
রেখেছি। আমার আর জীবনে কোনও ইন্টারেস্ট নেই। সেভেন্টি ট্যু ইস রাইপ্ এনাফ।
- আবার এদিকে ঝটকায় মরতেও চাইছেন না, তাই তো? সময় নিয়ে তারিয়ে
তারিয়ে আত্মহত্যাটা ঘটবে, তেমনটাই ইচ্ছে?
- প্রিসাইস্লি। একটা গ্র্যান্ড প্রসেস্ হওয়া দরকার। সবাই
জানবে যে আমি সুইসাইড করে চলেছি; কয়েক মাস ধরে চললে তো অউর ভি অচ্ছা। প্রেস
কনফারেন্স-টনফারেন্স করত হতে পারে আমায়। লঙ্গেস্ট সুইসাইডাল অ্যাটেম্পটের গিনিস
রেকর্ড-টেকর্ড চেক করতে হবে এই বেলা।
- স্লো পয়জন?
- বিষ ব্যাপারটাও ভারী অর্থডক্স ডাক্তার। বড়খোকা সাজেস্ট
করেছিল। ওর ভায়রা ভাই বড় কেমিস্ট; নানান সব মারণ সলিউশন তার নখ দর্পণে। কিন্তু আমি
ওই থোড় বড়ি খাড়া প্রসেসে যেতে চাইছি না। গায়ে আগুন, দশতলা থেকে ঝাঁপ; এসব বড্ড এক
ঘেয়ে। ইউ ক্যান্ নট হিট আনন্দবাজার ফ্রন্ট পেজ উইথ দ্যাট।
- তা ঠিক।
- আর তাছাড়া প্রসেসটা বাড়াবাড়ি রকমের পেইনফুল না হওয়াটাই
কাম্য। বুঝতেই পারছেন, কষ্টের বয়স আর নেই। একসময় অনেক কষ্ট করেছি; ট্রেন ধরে
বারুইপুর থেকে শেয়ালদা, সেখান থেকে বাস ধরে ডালহৌসি। দৈনিক আসতে আড়াই ঘণ্টার অফিস
যাতায়াত। এখন টু পাইস ব্যাঙ্কে আছে। ছেলেরা দাঁড়িয়েছে; কষ্ট করে মরতে চাই না। লেট
ইট বি স্লো অ্যান্ড পেইনলেস্।
- বুঝলাম। আমি আপনাকে সঠিক উপায় বলে দিচ্ছি। চিন্তা করবেন না।
- থ্যাঙ্ক ইউ ডক্টর সেন। আমি গ্রেটফুল থাকব আপনার কাছে।
- প্রেসক্রিপশনে লিখে দিচ্ছি প্রসেস্টা, কেমন? তবে ইয়ে,
কাউকে এই প্রেসক্রিপশনটা দেখাবেন না প্লীজ মলয়বাবু। সুইসাইডের পন্থা বাতলানোর
কাজটা ভালোই তবে আমাদের সমাজ ব্যাপারটাকে ভালো চোখে দেখবে না। আমার প্র্যাক্টিস
করে খেতে হয় যে।
- আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। ও জিনিষ আমার কাছেই থাকবে। কোন ব্যাটা জানতে পারবে না।
- এই নিন। লিখে দিয়েছি। ওষুধের দরকার নেই। স্পেশ্যাল ডায়েট
লিখে দিয়েছি। সুইসাইডাল ডায়েট।তাতেই হবে। ছ’মাস থেকে দু’বছরের মধ্যে কাজ হাসিল হয়ে
যাবে।
- রিয়েলি? থ্যাঙ্ক ইউ। আপনি ছিলেন বলে এ যাত্রা বেঁচে গেলাম
ডাক্তার সেন। এবার সুইসাইডটা ভালোয় ভালোয়
মিটলে শান্তি পাই।
- ইউ আর ওয়েলকাম। ইয়ে, আমার ফিজটা গতকাল থেকে বেড়ে দেড় হাজার
হয়েছে মলয়বাবু।
**
- বাবা, এটা কী হচ্ছে?
- কী ব্যাপার ছোটখোকা?সকাল সকাল চিৎকার করছিস কেন?
- তুমি পঞ্চুর মাকে বলেছ তোমার জন্য জলখাবারে, দুপুরে আর রাতে
নিরামিষ বিরিয়ানি বানাতে? তাও সপ্তাহে সাত দিন ধরে?
- শুধু সাত দিন না, গোটা মাস, গোটা বছর আমি তাই খাব।
- সে কী? কিন্তু কেন?
- ডাক্তার বলেছে।
- ডাক্তার সেন এটা বলেছেন? কেন?
- একটা বিশেষ পারপাস আছে। সে পারপাস শুধু ভেজ বিরিয়ানি খেলেই
হাসিল হতে পারে। তুই শুধু দেখে যা; ছ’মাস থেকে দু’বছরের মধ্যেই কেল্লা ফতে। আর
তদ্দিনে তোদের বাপ একজন সেলিব্রেটি।