টেবিলে গলা পর্যন্ত ভরা কাঁচের গেলাসটা দেখেই বুকে তৃপ্তি নেমে এল মিলারের। আহ, বড় তেষ্টা পেয়েছিল। ঢকঢক করে জলটা খেয়ে নিলে সে। ভ্যাঁপসা গরম। ফ্যানের হাওয়া গায়ে লাগছে না। গায়ের স্যান্ডো গেঞ্জিও ঘামে ভিজে। কিন্তু খালি গায়ে থাকার অভ্যাস নেই তার। ইজিচেয়ারটায় বসে থাকতে ভালো লাগে। জানালা বন্ধ রাখতে ভালো লাগে। রাস্তা থেকে যেটুকু আওয়াজ বন্ধ জানালা চুইয়ে ঘরের ভেতর এসে পড়ে, তাদের তফাতে মিলার সকালের থেকে বিকেল, বিকেলের থেকে সন্ধ্যা আর সন্ধ্যার থেকে রাত চিনে নেয়।
এখন একটানা বই পড়তে খারাপ লাগে মিলারের। বেখাপ্পা লাগে। কবিতা, গল্প, উপন্যাস। সে খবরের কাগজ পড়ে। আটটা খবরের কাগজ। আর পড়ে দেওয়াল লিখন। দেওয়াল তার, লেখাও তার। কারুর সঙ্গেই প্রায় আজকাল কথা হয় না। মা, বাবা, পিসি, রিটা বা মার্ক এসে মাঝে মাঝে দেওয়ালে লেখা রেখে যায়; "কেমন আছ" গোছের কথাবার্তা। মিলারও লিখে উত্তর দেয়। দেওয়ালে। দেওয়াল ঘিঞ্জি হয়ে আসে। মিলার লেখার কালি পাল্টে ফেলে। দেওয়াল কালচে হয়ে এলে সাদা কালি, তার কিছুদিনের মাথায় সাদা কালি।
দেওয়ালের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকতে থাকতে সে বুঝতে পারে মাথাটা ঝিম্ মেরে আসছে। বড্ড গরম আজকাল। ফ্যানের হাওয়াটা গায়ে লাগে না। গায়ের স্যান্ডো গেঞ্জিও ঘামে ভিজে যাচ্ছে। বড় তেষ্টা পায়। বড়। অথচ এরা জল এত কম দেয়। এক গেলাস জল পেলে যে কী ভালো হত।
ঠিক তখনই টেবিলে গলা পর্যন্ত ভরা কাঁচের গেলাসটা দেখেই বুকে তৃপ্তি নেমে এল মিলারের। আহ, তৃপ্তি। ঢকঢক করে জলটা খেয়ে নিলে সে।
তখনই ঘরে চলাফেরার শব্দ। মার্ক এসেছে। দেওয়ালে মন দিল মিলার। হাতে নিলে পেন্ট ব্রাশ।
- কেমন আছ মিলার?
- অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন।
- তুমি কি বুঝতে পারছ যে তুমি বার বার খালি গেলাসে চুমুক দিচ্ছ?
- তুমি আর তোমার রিয়ালিজ্মের ভাঁওতা মার্ক।
- ভাঁওতা? মিলার তুমি খালি গেলাসে বারবার চুমুক দিয়ে চলেছ।
- আমার তেষ্টা মিটছে অথচ তোমার সেন্স অফ রিয়ালিটিতে আঘাত লাগছে। আমাকে আমার মত নিশ্চিন্তে থাকতে দাও না।
- তোমার সাইকিয়াট্রিস্টরাও তোমাকে নিয়ে বিরক্ত হয়ে পড়ছেন মিলার। তোমার সহযোগিতা দরকার।
- তোমাদের রিয়ালিটি মানছি না বলে?
- গোটা পৃথিবীর মানুষের রিয়ালিটি নিয়ে সওয়াল তুলছ?
- না। তোমারা আমার রিয়ালিটি নিয়ে সওয়াল তুলছ। এবং বিশ্বাস করছ যে তোমরা অসংখ্য আর আমি একা তাই তোমাদের রিয়ালিটি অভ্রান্ত। দ্যাট্স সিলি মার্ক।
- জল খাবে?
- খেয়েছি। পরপর দু গেলাস। গোটা দিনে অন্তত কুড়ি গেলাস।
- এক ছিপি জলও তোমার পেটে যায়নি মিলার। প্লীজ। টেবিলের ওপরের গেলাসটা ফাঁকা।
- একদিন আমার রিয়ালিটি বিক্রি হবে মার্ক। এটাই একদিন সত্যি হবে। লোকে পাগলের মত সেই গেলাসে চুমুক দেবে যেটা তোমার মতে খালি। অথচ লোকে তৃপ্ত হবে।
- দেওয়ালে লিখে কথা বলতে হবে লোকজনের সাথে সেদিন। তাই না মিলার? এই যেমন তোমার সাথে আমি কথা বলছি?
- হে। তাই হবে হয়তো। অন্য রিয়ালিটি। যাকে আজ তুমি মেনে নিতে অস্বীকার করছ, সেই রিয়ালিটি একদিন বিক্রি হবে মার্ক। ইট উইল সেল্। আমি তোমার সুযোগ দিচ্ছি। আমার এই রিয়ালিটি কে বিজনেস আইডিয়া করে দুনিয়া এফোঁড় ওফোঁড় করে দেওয়ার। টেক ইট। অর লিভ মি অ্যালোন উইথ ইট।
- তুমি আমার বন্ধু। তোমার সত্যি কথাটা ঠুসে বলাটা আমার দায়িত্ব মিস্টার মিলার ব্রাউন। তুমি উন্মাদ।
- অফ কোর্স, তুমিও বন্ধু। আমার উন্মাদনা মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে নতুন দিগন্ত খুলে দেওয়ার সুযোগ আছে। সে সুযোগ নেওয়ার দম তোমার আছে মার্ক?
No comments:
Post a Comment