স্বপন টার্গেট বেছে নেয় চেহারা দেখে। আজ কুড়ি বছর এই লাইনে রয়েছে সে। প্রথম কয়েক বছর গেছে হাত পাকাতে। তারপর থেকে সামান্য হোঁচটও খেতে হয়নি তাকে।
ভিড় বাসে উঠে পড়ে স্বপন বেছে নেয় টার্গেটকে। সরল আলাভোলা মুখ চিনতে তার ভুল হয় না। পরনের জামা কাপড় দেখে সহজেই বুঝে নিতে পারে যে টার্গেট মানিব্যাগের মিনিমাম ওজন কত হবে। আজ সে উঠেছে নাগেরবাজার লাইনের একটা মিনিবাসে; এ লাইনে রোজ রোজ বাসের লাইন পাল্টানোটা জরুরী। আজ বাসে উঠেই স্বপন অল্প জরীপেই বেছে নিলে ভদ্রলোককে। বেঁটে, গাল ফোলা, পাতলা গোঁফ, টাক মাথা, ফর্সা; কপালটা বিশেষ ভাবে চকচকে। ভিড়ে চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে দাঁড়িয়েও ভদ্রলোকের মুখে নিশ্চিন্ত হাসি। অমায়িক, সরল; এমন আদর্শ টার্গেট রোজ রোজ জোটে না। ভদ্রলোকের পরনের পোশাক নিপাট পরিষ্কার, ইস্তিরি করা- এর মানিব্যাগ হালকা হতেই পারে না। ভদ্রলোকের কাছে এগিয়ে এলে স্বপন। সুবিধে হচ্ছে ভদ্রলোক গেটের কাছেই দাঁড়িয়ে, কাজ হাসিল করে সহজেই সরে পড়া যাবে।
ভদ্রলোকের মোবাইলে একটা কল এল, ফোনে কথা বলতে বলতেই ভদ্রলোক পকেট থেকে কলম চিরকুট বের করে ভিড় ম্যানেজ করে কিছু একটা লিখলেন। পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে চিরকুটটা যত্ন করে রাখলেন ভদ্রলোক। মানিব্যাগের চেহারাটা আড়চোখে দেখে নিশ্চিন্ত হলে স্বপন; মাল ঠিকঠাকই আছে- টার্গেট বাছাইয়ে ভুল হয়নি।
হুড়মুড় করে দরজার দিকে এগিয়ে এলে স্বপন- ভদ্রলোকের গায়ে আলতো ধাক্কা দিয়ে একটা সামান্য সরি বলে বাস থেকে নেমে গেল সে। কাজ হাসিল।
**
সদ্য পকেট সাফ হওয়া মানিব্যাগটা খুলতেই মাথা গরম হয়ে গেল স্বপনের। মানিব্যাগের চেহারা ঝকঝকে হলেও ভিতরটা এক্কেবারে ফাঁকা। একটা টাকাও নেই। এমনকি কোন আইকার্ডও নেই। শুধু সেই চিরকুট যেটা ভদ্রলোক রেখেছিলেন।
চিরকুটটা খুলে দেখলে স্বপন -
"ভাই রে,
পকেটমারের চোখে অমন লোভ থাকতে নেই। পাতি লোকজনের সামনে ভয় নেই, কিন্তু আমার মত বান্দার সামনে সহজে ধরা পড়ে যেতে হয়। আরে ওই ভাবে হ্যাংলার মত পকেট মাপতে আছে?
শুভাকাঙ্ক্ষী,
বটু গোয়েন্দা
পুনশ্চ : রিয়েল স্কিল দেখানোর লোভ সামলাতে পারলাম না। পকেটমারের পকেট মারা পুণ্যির ব্যাপার।"
**
উদ্ভ্রান্তের মত পকেট হাতড়েও নিজের মানিব্যাগটা খুঁজে পেলে না স্বপন।
No comments:
Post a Comment