তেলচিটে হলুদ রান্নাঘরের দেওয়াল। এক ঘুপচি কোনে দেওয়াল ফুঁড়ে একটা লম্বা বেঁকানো পুরনো পরিচিত পেরেক। সে পেরেকের গায়ে রাবার ব্যান্ডের গোছা; সবুজ গার্ডার, নীল গার্ডার আর লাল গার্ডার। পেরেকের মুখের দিকে সবুজগুলো, মাঝে নীল আর পিছনের দিকে লালগুলো; যত্নে সাজানো।
লাল, নীল আর সবুজ রঙেরই কেন? কারণ নিউ শ্রীকৃষ্ণ কুড়িটাকার মিষ্টির বাক্সের প্যাকেটে এই তিন রঙের গার্ডারই থাকে। সোম টু শনি ভদ্রলোকের অফিসের ঝোলার টুপি থেকে খরগোশের মত বেড়িয়ে আসে সেই মিষ্টির বাক্স; হয় ছানার জিলিপি নয়ত চন্দ্রপুলি। চার টাকার পাঁচ পিস্; তিন পিস ভদ্রলোকের, দুই পিস্ ভদ্রমহিলার। এক পিস্ এক পিস্ খাওয়ার পরে। দু'পিস্ এক পিস্ রাত দেড়টার গল্পের আসরে। ভদ্রলোক সঞ্জীব পাঁচালির ভক্তিতে পড়ে চলেন। ভদ্রমহিলার চোখের ঘুমের ভার, ঠোঁটে ছানার মত নরম হাসি, আঁচলে ফ্যাসফ্যাসে অগোছালো আনন্দ। খোলা জানালার গোলাপি প্রিন্টের জানালা প্যাতপ্যাতিয়ে নড়াচড়া করে চলে।
ভদ্রলোক সঞ্জীব ছেড়ে নারায়ণ দেবনাথ ধরলে ভদ্রমহিলা তন্দ্রা ঝেড়ে ফাঁকা মিষ্টির বাক্স নিয়ে উঠে যান; কাগজের বাক্সটা নিপাত যায় - গার্ডার দু'টো যত্নে ঝুলিয়ে দেন পরিচিত পেরেকে; সবুজে সবুজ, নীলে নীল, লালে লাল।
ভদ্রলোকের অফিসের স্টিল-টিফিন বাক্স তিন তলার; এক তলায় ভাত, দোতলায় সবজি, তিন তলায় ঝোল। তিন ডিব্বাতেই ঢাকনা আলগা, তাই বাড়তি বাঁধনে গার্ডার। ভাতের ডিব্বায় নীল গার্ডার, সবজির ডিব্বায় সবুজ আর ঝোলে লাল।
সেবার নতুন টিফিন এলো। সেবার রান্নাঘর রঙ হল গোলাপিতে।
সেবার ভদ্রমহিলার চোখে জল; "আমায় দেখতে এলে মিষ্টির বাক্স নিয়ে আসতে হয় ?"।
সেবার ভদ্রলোকের কাঁচুমাচু সারেন্ডার; "তোর বর মিষ্টি আনে? তুই গার্ডার জমিয়ে রাখিস?"।
ভদ্রমহিলা ছানার মত নরম হাসেন, "বৌয়ের কানে সঞ্জীব দিস? রেনল্ড পেনে ট্যাটু আঁকিস?"
1 comment:
পর্দা হবে বোধহয় ওটা ।
Post a Comment