খাট থেকে নেমে পায়ে হাওয়াই চটি গলিয়ে বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেলেন নিশিকান্তবাবু। অন্তত বার তিনেক না উঠলে তার রাত কাটে না। যে বয়েসের যে দোষ। অন্ধকার হাতড়ে সুইচ বোর্ড খুঁজে পেয়ে আলো জ্বালাতেই টের পেলেন তিনি তার বাড়িতে নেই।
কারণ অ্যাকিউট অ্যাম্নেসিয়ার দোষ এটাই যে তার কিছুই মনে থাকার কথা নয়; দেওয়ালে স্যুইচ বোর্ড কোথায় সেটাও নয়। খুঁজে পেয়েছেন মানে এ ঘর তার নয়।
তখনই শোনা গেল কণ্ঠস্বরটা। এমন মিষ্টি পুরুষ কণ্ঠ সচরাচর শোনা যায় না।
- "ব্রিলিয়ান্ট নিশিকান্তবাবু। আপনি সবিশেষ ভুলো কিন্তু আপনার ডিডাকশন পাওয়ার এ জরাগ্রস্ত সময়েও তন্দরুস্ত রয়েছে, ব্রিলিয়ান্ট। সত্যিই এটা আপনার ঘর নয়"।
-" আই সি, এক আমি এখানে এলাম কী করে। দুই এখানের স্যুইচ বোর্ড কোথায় বা আমার হাওয়াই চটি কোথায়; সেটাই বা আমি বুঝলাম কী করে"।
- " বুঝতে পারছেন না কী?"
- " না, বৃদ্ধ মানুষ আমি। হেঁয়ালি অপছন্দ করি"।
-" সুইচ বোর্ড এই নতুন ঘরে ঠিক কোথায় সেটা আপনি জানতেন কারণ জানার দরকার নেই বলে। এ ঘরের ডিজাইন আপনার। আপনার মগজের মধ্যে। আপনার দৈনিক অসুবিধেগুলোর ছেনি হাতুড়িতে কন্সট্রাক্ট করা এই ঘর। আপনি যে দেওয়ালেই যখনই সুইচ বোর্ড খুঁজতে হাত বাড়াবেন অমনি স্যুইচ বোর্ড হাতে পেয়ে যাবেন"।
- " সিলি"।
- "অন দ্য আদার হ্যান্ড। এক্সট্রিমলি রিয়েল"।
- "রিয়েল?"
- "আলো জ্বলল তো?"
-" ইজ ইট আ ড্রিম না আপনি আমায় কিডন্যাপ করেছেন?"
-"স্বপ্ন? না না। কিডন্যাপ? ওয়েল।"।
-" কিডন্যাপ করেছেন? করে এসব আজগুবি আজেবাজে কথা বলছেন ? আপনি কী এক্সপেক্ট করছেন? আমার ছেলেপুলে আপনাকে র্যােনসম দেবে?"
-"নিশিকান্তবাবু, সেই এক্সপেকটেশন আমার নেই।"
-"ওহ, আই সি। চিনতে পেরেছি আপনাকে"।
-"বললাম তো, আপনার ডিডাকশন পাওয়ার ইজ আনপ্যারালাল"।
-"যে যে অসুবিধেগুলো ছিল সবই কেটে গেছে দেখছি। পকেটে চশমা। হাতঘড়ি হাতে। ব্রিলিয়ান্ট। অফ কোর্স এ ডিজাইন আমার। আপনার ভয়েস শুনে অবিশ্যি তখনই সন্দেহ হয়েছিল"।
-"আমি পেরেছি তাহলে বলুন নিশিকান্তবাবু"।
-"হুঁ? ইয়েস। ইয়েস। পেরেছেন। সহজ ছিল না। এইভাবে টেনে আনা। বাহ, জলের গেলাসটাও দেখছি হাতের কাছেই। থ্যাঙ্ক ইউ ফর কিডন্যাপিং মি বাই দি ওয়ে"।
- " ওয়েলকাম টু কোমা নিশিকান্তবাবু। আর আমায় কী আপনিতেই বেঁধে রাখবেন?"
-"আমি নিজেকে ভীষণ রেস্পেক্ট করি, ভীষণ। আপনিই থাক"।
No comments:
Post a Comment