ডাকবাক্সে পোস্টকার্ডটা গলিয়ে দিলেন মিহির। সেখান থেকে অল্প এগিয়েই দুলালের চায়ের স্টল। এক কাপ লিকার চা ডাব্ল চিনি, দু'টো বাসন্তী বিস্কুট আর একটা বিড়ি; দৈনিক। নিয়মের নড়নচড়ন হওয়ার উপায় নেই।
বিড়ির শেষটানটা দিয়ে হুড়ুমুড় করে উঠে পড়েন তিনি। রোজ। কনসাইনমেন্ট নিয়ে অফিস যেতে হবে যে। চটপট সেই ডাকবাক্সের কাছে ফেরত গিয়ে বাক্সের তালা খুলে একমাত্র চিঠিটা বের করে আনেন মিহির। ঝোলায় একমাত্র চিঠিটা ফেলে সাইকেলে রওনা দেন পোস্টঅফিসে। স্টাম্প করে, পোস্টমাস্টারের খাতায় এন্ট্রি করে তারপর সে চিঠি নিয়ে বেরোনো ডেলিভারি করতে। ফাঁকি ব্যাপারটা মিহিরের সহজাত নয়, হাতের কাজ সে ফেলে রাখতে পারে না।
মিহির পোস্টম্যানকে নিয়ে তবু মুকুন্দপাড়ার সক্কলের ভারী দুঃখ। বড় কারখানার বিষ গ্যাস লিক করে গাঁয়ের সক্কলে নিকেশ হল শুধু মিহির ভূতের মত একা একা বেঁচে রইল। গ্রামটা আগাছার জঙ্গলে আর ভূতের দঙ্গলে হারিয়ে গেল, শুধু মিহির চিঠি আর পোস্টঅফিস ভুলতে পারল না। তাই পোস্টমাস্টার সেদিন দুলালকে আক্ষেপ করে বলছিলেন, "মাথার ব্যামো কী বিপজ্জনক ভাবো, খালি ভাঁড়ে চুমুক দিয়ে সে ব্যাটা ভাবে যে চা খাচ্ছে, কাঠি ফুঁকে বিড়ি খায়। আপদটা আবার পোস্টঅফিসে এসেও কাজ করার তম্বী করে। আর পাগলকে আমরা তোল্লায় দিয়ে চলেছি। এই তোমায় বলে রাখলাম দুলাল, একদিন সে মিহিরের ব্যাটা বুঝবে, পাগলের মত আত্মহারা হয়ে বেঁচে থাকার থেকে ভূতের নিরিবিলি জিন্দেগী অনেক বেশি সুখের। মাঝে মাঝেই ইচ্ছে হয় দি মটকে। তবে এমন ভাবে গুড মর্নিং বলে পেন্নাম করে রোজ! বল পাই না! থাক যে কটা দিন আছে! দু'দিন বই তো নয়।"
No comments:
Post a Comment