- এতক্ষণ লাগল আসতে?
- আসলে আশেপাশে তেমন দোকান-টোকান পেলাম না। একটু দূরে যেতে হল।
- খিদেয় পেট চুঁইচুঁই করছে। এদিকে বাবু বাহানা দিচ্ছে, আশেপাশে দোকান পেলাম না। ন্যাকা চণ্ডী কোথাকার।
- মাথা ঠাণ্ডা রাখুন না। এনেছি তো।
- উদ্ধার করেছেন। তা কী এনেছ শুনি? পটলের চোখা আর পাউরুটি?
- রুটি। সাথে মাংসের ঝোল।
- মাংস বলতে আবার চিকেন নয় তো?
- কী যে বলেন।
- যাক সে আক্কেলটুকু আছে। বলি দাঁড়িয়ে দেখছ কী? চটজলদি রান্নাঘর থেকে প্লেট বাটি নিয়ে এসে সার্ভ করে দাও টেবিলে। না কী অপেক্ষায় আছ যে হরেন দারোগা এসে পাতে বেড়ে দেবেন!।
- বলছিলাম, জাস্ট দু'মিনিট। দু'টো পেঁয়াজ কেটে নি। রান্নাঘরে আছে। দেখে নিয়েছি। মানে পেঁয়াজটা থাকলে জমত আর কী।
- তাহলে নিরেট দাঁড়িয়ে না থেকে যাও। বলি তোমায় তো আর খুন করতে হয়নি। করতে হয়েছে আমায়। কাজেই আমার পেটের ছুঁচোর বাউল তুমি কী করে অ্যাপ্রিশিয়েট করবে বাছা?
**
- না হে মাধব। ভালোই জোগাড় করে এনেছিলে। ঝোলে টেস্ট ছিল। ক'টা রুটি খেলাম যেন? চোদ্দটা।
- সে'সব কী আর গুনতে আছে। ওই চোদ্দ-পনেরো কী পঁয়ত্রিশ হবে।
- মনে ভরে গেল। আসলে নৃপাদেবীকে থ্রট্ল করতে এত এনার্জি ব্যয় করতে হবে ভাবিনি। সত্তরেও যা তেজ, বাপ রে।
- গায়ে গতরেও তো কম ছিলেন না। ।
- তা ঠিক। তা ঠিক। যাক। কাজ হাসিল। ভাগ্যিস মাসীমা একা থাকতেন। তাই ডিনারটা সেরে যেতে পারলাম। ট্রেন ক'টায়?
- আঙুল আরাম করে চাটতে পারেন। ঘণ্টা খানেক সময় আছে এখনও। স্টেশন তো হাঁটা পথ।
- টুথপিক্ আছে?
- তার আছে। তালা খোলার।
- তাই দে। তা হ্যাঁ হে মাধব, বলি লাশটা ফেললে কোথায়?
- ওসব নিয়ে ভাববেন না। নয় নয় করেও এ লাইনে বাইশ বছর।
- সে জন্যেই তো তোমায় এত মাথায় করে রাখা বাবা। যাক গে। সময় যখন আছে একটু গড়িয়ে নিই। চোখ লেগে এলে...।
- আমি ডেকে দেব। ঘুমোন না। ঘুমোন।
**
দু'হাতে পেট চেপে ড্রয়িং রুমের কার্পেটের ওপরে পাঁঠা কাটার মত ছটফট করছিলে ওস্তাদ। মাধব কী করবে বুঝে উঠতে পারছিল না।
**
- ওরে বাবা রে। মরে গেলাম রে। ওরে মাধব হারামি। পেট ফেটে যাচ্ছে রে।
- বাথরুমে গিয়ে দেখবেন নাকি একবার?
- এ বিশ্রী ব্যথা। অন্যরকম। মরে যাব। মরে যাব। এই গেল ফেটে।
- কীরকম।
- শস্স্স্...।
- কী ওস্তাদ?
- শস্স্স্। শোন।
- ক...কী শুনব?
- পে... পেটে।
**
ওস্তাদের পেটে কান রাখতে গিয়ে মাধব খেয়াল করলে যে শার্টের নাভির জায়গাটা রক্তে অল্প ভিজে উঠছে। পেটে কান রেখেই ফ্যাসফ্যাস শব্দটা চিনতে একটুও ভুল হল না মাধবের।
মাসীমার কণ্ঠ চাপা স্বরে অনবরত বলে চলেছে, "বাতাপির নাম শুনেছ? বাতাপির নাম? বাতাপির নাম শুনেছ? বাতাপির নাম?"।
No comments:
Post a Comment