দু'চামচ ছাতু। হাফ চামচ নুন। অল্প পেঁয়াজ কুচি। একটা লঙ্কা কুচোনো।
এক গেলাস জলে ফেলে ঘটঘট করে গুলে নেন অরূপ সমাদ্দার। ছাতু ব্যাপারটা পেটে লাস্ট করে, চোঁয়া ঢেকুরের চান্স থাকেনা। পেটাই চেহারার পালোয়ানরা লিটার লিটার ছাতুর সরবত খেয়ে থাকেন।
অরূপ সমাদ্দার অবশ্য পালোয়ান নন। তার দেখনাই বাইসেপ নেই। অভাব আছে। ছাতু ডিনারটা হেল্থ চয়েস নয়, অনলি অপশন। মাসে পাঁচ কিলো ছাতু আনেন সমাদ্দার। মাসের ষাটখানা মেজর মিল; তার মধ্যে তিরিশবার ছাতু, তিরিশবার ভাত। ভাতে অনেক হ্যাপা। ডাল চাই রে, আলু সেদ্ধ চাই রে। হিসেবের বাইরে দাঁড়িয়ে যায়। তিরিশ দিনের ডাল আলু সেদ্ধ ভাত কে কাটছাঁট করে নিয়ে সমস্ত ডিনার ছাতুতে কনভার্ট করেছেন অরূপ সমাদ্দার আর সমস্ত লাঞ্চকে আপগ্রেড করেছেন ভাত ডাল অমলেটে।
এক মনে ঘটঘট করে ছাতু গুলতে গুলতে অরূপ সমাদ্দার প্ল্যান করছিলেন বড়দিনের লাঞ্চে স্রেফ পোল্ট্রির মুর্গির ডিম না খেয়ে হাঁসের ডিমের অমলেট বানাবেন। ছুটির মেজাজ আর কী।
এমন সময় ডাক এলো। মাথা কিনে নিয়েছে যেন - বিরক্ত হয়ে ভাবলে অরূপ সমাদ্দার। একটানে ছাদ সরিয়ে তক্ষুনি ঝুপঝাপ করে বেরিয়ে আসতে হল তাকে - ছাতুর সরবতের গেলাস একলা পড়ে রইল।
ফোঁদল থেকে বেরিয়েই উদয় হয়ে সেলাম করতে হল আলাদীনকে। হ্যান চাই ত্যান চাই। ইয়ে করকে লাও, উয়ো উঠাকে লাও। হাজারো হ্যাপা।
**
- এ প্রজেক্টে আপনি জয়েন করবেন না?
- সম্ভব নয়।
- বিশ্বের সেরা বৈজ্ঞানিক বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টে থাকবে না? শানিত মগজখানা নিয়ে গত দশ বছরে কোন কাজ আপনি করেননি সমাদ্দারবাবু। চিরকাল ছাতু গুলে খেয়ে কাটাতে চাইছেন?
- কী মুশকিল! আপনি কেন বুঝতে চাইছেন না। আই অ্যাম অলরেডি এমপ্লয়েড। আর এসব প্যারালাল ওয়ার্ল্ড নিয়ে ছেলেখেলা লেভেলের গবেষণার প্রজেক্টে টাকা ঢালার মানে হয় না। সরকার-বাহাদুরকে বুঝিয়ে বলুন।
- মানে হয় না কথাটার মানেটা কী।
- কতবার বলব। ও দুনিয়া আমি দেখে নিয়েছি।
- তাহলে খোলাখুলি জানিয়ে দিচ্ছেন না কেন? প্রমাণ সহ!
- জানাচ্ছি তো। তবে প্রমাণ দিতে পারব না তো! কী করে দেব? চাকরী করছি যে।
- চাকরীই যদি করবেন তবে ছাতু খেয়ে থাকতে হচ্ছে কেন?
- মাইনে নেই। এদিকের চাকরী নয়তো। ওদিকের চাকরী।
- ওদিকের চাকরী?
- আরে ইউনিভার্স ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে দেখি যে এ দুনিয়া...মানে এই যে ব্রহ্মাণ্ড আর কী! আসলে ইজ ইন আ শেপ অফ আ বোতল।
- বোতল?
- আজ্ঞে। বোতল। সে বোতলের ছিপি খোঁজাটাই আপনার এই নতুন প্রজেক্টের কাজ বুঝলেন। তবে খুঁজে লাভ নেই। ও ঠিকানা আমি পেয়ে গিয়েছি। ছিপি খুলে গিয়েওছি ওপারে।
- হোয়াট ননসেন্স।
- ওই দ্যাখো। এ জন্যেই তো বলি না। ছিপি খুলে ওপারে গেলে আবার লিমিটলেস্ ক্ষমতা মশাই। আক্ষরিক অর্থে লিমিটলেস্।
- কী বলছেন!
- ওই দ্যাখো। ঘটে ঢুকছে না তো। তাই বলছি আমায় বাদ দিন। আর শুনুন, একটা আবিষ্কার করেছি। সে বিজ্ঞানের বাইরের চিজ।
- এতই যখন বললেন, সেটাও বলুন।
- অ্যাবসোলিউট পাওয়ার ইজ দ্য হাইয়েস্ট ফর্ম অফ পরাধীনতা।
- হোয়াট?
- বোঝা গেল না?
- না। পাগলের প্রলাপ যত। প্রজেক্টে কাজ করবেন না, বলে দিলেই মিটে যায়।
- পাগলের প্রলাপ তো মনে হবেই সাহেব। আপনি তো আর বোতলের ছিপির ওপারে যেতে পারেননি। ওই! ওই ফের ব্যাটা ডাকছে। চলি। ছিপি খুলতে হবে।
5 comments:
Brilliant moshai. .....
আমাকেও ছাতু খেয়ে থাকতে হবে এখন থেকে।।
দারুন।।
ছাতু খাওয়া প্র্যাকটিস করতে হবে....
অ্যাবসোলিউট পাওয়ার ইজ দ্য হাইয়েস্ট ফর্ম অফ পরাধীনতা ....... perhaps true.
Post a Comment