সমস্ত শেষে।
সমস্তটার শেষে।
একটা উঠোন পড়ে থাকবে। নতুন ইমারতের অবজ্ঞার ছায়ায়, খিড়কীর অন্ধকারে পড়ে থাকা শ্যাওলা-ঘাস মেশানো মাটির উঠোন। নোনা ইটের ভাঙা পাঁচিলে তিন দিক ঘেরা। শুধু পশ্চিম কোণে একটা পুরনো ভাঙা টালির ঘর। বাড়ির পুরনো রান্নাঘর। ফেলে আসা রান্না ঘর; এখন ভেঙ্গেচুরে টুটি-ফাটা। তার আধভাঙা দরজায় পুরনো সবুজ, লোহার শিকলে মরচের তালা। সে ঝুরঝুরে রান্নাঘরের গায়ে ভাঙা ফিক হাসির একটা জানলা।
উঠোনময় আগাছা আর ভাঙা ইট। উত্তরের দেওয়াল ঘেঁষে দু'টো নারকোল গাছ আর একটা সুপুরি গাছ। পূব দিকে জাম গাছ। ঝাঁকড়া। ছায়া মাখানো। আর মধ্যেখানে পাশাপাশি দু'টো গাছ। একটা জামরুল। অন্যটা গন্ধরাজ।
গন্ধরাজ গাছটা পাকিয়ে উঠে গেছে। সে ফুলের গন্ধে, ঘাস শ্যাওলার মেজাজ মিশে যায়। তাতে চোখ ছলছলেও মিঠে স্বাদ মিশে যায়; এমনি সে সুবাস। সে গাছে আধো-হেলান দিয়ে দু'জনে দাঁড়ানো যায়। পাশাপাশি। আলতো গা ঘেঁষে।
- বাবু! বড় কষ্ট! বমি থামছে না।
- জল মুড়ি।
- হোয়াট?
- জল মুড়ি। খা। পেট ঠাণ্ডা করবে। মনও।
- বাঙাল শালা।
- তোর পায়ে আলতা এমন মানায়। তোর মুখে শালা কেন?
- ন্যাকাচন্দ্র খাসনবীশ। এদিকে আমি মরছি নিজের জ্বালায়, আর উনি বলেন জল মুড়ি।
- বেশ। মোহনবাগানি বমি চালিয়ে যা।
- আবার পাচ্ছে।
- ডেলিভার কর। ডেলিভার কর আর নুন চিনির জল ঢকঢক করে গিলে যা। অল্টারনেট সাইকেলে।
- বাবু! আর পারছি না। শরীরটা দুমরে-মুচড়ে যাচ্ছে।
- স্টেডি বমিকুমারী। স্টেডি।
- পাশে বস।
- আসছি।
- তুই বলিস, তুই আসিস কই?
- এই আসি।
- আয়। আসি বলিস। আসিস না।
- মোহনবাগানের সংসার। ইস্টবেঙ্গলের সংসার। মাঝে মিনিমাম ন'হাজার মাইলের গ্যাপ। গ্যাপ হজম করতে সময় লাগবে না? এই এসে পড়লাম বলে।
- এসে পাশে বসিস বাবু।
- জরুর বয়ঠেগা।
- মাথায় হাত বুলিয়ে দিবি?
- দিবে। হামি আশীর্বাদ দিবে। আমি বড়। আশীর্বাদ দিতেই পারি।
- ধুর শালা।
হাজার হাজার মাইল মোমের মত গলে পড়ে। থিতিয়ে যায় মোমদানির পেটে। ন্যাকাচন্দ্র আস্তে হাঁটেন কী না।
ওদিকে।
বমিদেবী গন্ধরাজ গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে। বিরানব্বুই পেরিয়ে তার বয়স পনেরোয়।
ন্যাকাচন্দ্র ক্লান্ত। পায়ে ফোস্কা, মুখে ল্যাতপ্যাতে হাসি। তিরানব্বুইয়ের মায়া কাটিয়ে তার বয়স তখন ষোল।
মোহনবাগানের কাঁচা হাতের হলুদ শাড়ির কুচির মত অগোছালো ইস্ট বেঙ্গলের চুল।
- বাবু। এসেছিস?
- বমি বমি ভাবটা আর আছে?
- তুই এলি। কেটে গেল।
- বাষট্টি বছর বমিভাব বয়ে বেড়ালি? তোর ন্যাকামিতে আমার বমি আসছে।
- বেশ। আমি তাহলে নেকিকুমারী। আর তুই বমিচন্দ্র পরামানিক।
- তোর চোখে জল।
- গাধা। আমার পায়ে আলতা।
- তোর পায়ে আলতা মানায়।
- আমরা এই গাছের নিচে দিব্যি মানিয়ে যাই। বল?
- এবার। মাথায় হাত রাখ।
- চেঞ্জ অফ মাইন্ড। তোর পায়ের কাছে বসি।
- আলতা হাভাতে।
- শাড়ির কুচি এবড়ো খেবড়ো তোর।
- ধরে দে। ঠিক করে নিই।
- ধরে দে বললে শাড়ির কুচি ধরা যায় না।
- ধরে দাও।
- যো হুকুম।
- তুই বড় পাকা হয়েছিস বাবু।
সমস্তটার শেষে।
একটা উঠোন পড়ে থাকবে। নতুন ইমারতের অবজ্ঞার ছায়ায়, খিড়কীর অন্ধকারে পড়ে থাকা শ্যাওলা-ঘাস মেশানো মাটির উঠোন। নোনা ইটের ভাঙা পাঁচিলে তিন দিক ঘেরা। শুধু পশ্চিম কোণে একটা পুরনো ভাঙা টালির ঘর। বাড়ির পুরনো রান্নাঘর। ফেলে আসা রান্না ঘর; এখন ভেঙ্গেচুরে টুটি-ফাটা। তার আধভাঙা দরজায় পুরনো সবুজ, লোহার শিকলে মরচের তালা। সে ঝুরঝুরে রান্নাঘরের গায়ে ভাঙা ফিক হাসির একটা জানলা।
উঠোনময় আগাছা আর ভাঙা ইট। উত্তরের দেওয়াল ঘেঁষে দু'টো নারকোল গাছ আর একটা সুপুরি গাছ। পূব দিকে জাম গাছ। ঝাঁকড়া। ছায়া মাখানো। আর মধ্যেখানে পাশাপাশি দু'টো গাছ। একটা জামরুল। অন্যটা গন্ধরাজ।
গন্ধরাজ গাছটা পাকিয়ে উঠে গেছে। সে ফুলের গন্ধে, ঘাস শ্যাওলার মেজাজ মিশে যায়। তাতে চোখ ছলছলেও মিঠে স্বাদ মিশে যায়; এমনি সে সুবাস। সে গাছে আধো-হেলান দিয়ে দু'জনে দাঁড়ানো যায়। পাশাপাশি। আলতো গা ঘেঁষে।
- বাবু! বড় কষ্ট! বমি থামছে না।
- জল মুড়ি।
- হোয়াট?
- জল মুড়ি। খা। পেট ঠাণ্ডা করবে। মনও।
- বাঙাল শালা।
- তোর পায়ে আলতা এমন মানায়। তোর মুখে শালা কেন?
- ন্যাকাচন্দ্র খাসনবীশ। এদিকে আমি মরছি নিজের জ্বালায়, আর উনি বলেন জল মুড়ি।
- বেশ। মোহনবাগানি বমি চালিয়ে যা।
- আবার পাচ্ছে।
- ডেলিভার কর। ডেলিভার কর আর নুন চিনির জল ঢকঢক করে গিলে যা। অল্টারনেট সাইকেলে।
- বাবু! আর পারছি না। শরীরটা দুমরে-মুচড়ে যাচ্ছে।
- স্টেডি বমিকুমারী। স্টেডি।
- পাশে বস।
- আসছি।
- তুই বলিস, তুই আসিস কই?
- এই আসি।
- আয়। আসি বলিস। আসিস না।
- মোহনবাগানের সংসার। ইস্টবেঙ্গলের সংসার। মাঝে মিনিমাম ন'হাজার মাইলের গ্যাপ। গ্যাপ হজম করতে সময় লাগবে না? এই এসে পড়লাম বলে।
- এসে পাশে বসিস বাবু।
- জরুর বয়ঠেগা।
- মাথায় হাত বুলিয়ে দিবি?
- দিবে। হামি আশীর্বাদ দিবে। আমি বড়। আশীর্বাদ দিতেই পারি।
- ধুর শালা।
হাজার হাজার মাইল মোমের মত গলে পড়ে। থিতিয়ে যায় মোমদানির পেটে। ন্যাকাচন্দ্র আস্তে হাঁটেন কী না।
ওদিকে।
বমিদেবী গন্ধরাজ গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে। বিরানব্বুই পেরিয়ে তার বয়স পনেরোয়।
ন্যাকাচন্দ্র ক্লান্ত। পায়ে ফোস্কা, মুখে ল্যাতপ্যাতে হাসি। তিরানব্বুইয়ের মায়া কাটিয়ে তার বয়স তখন ষোল।
মোহনবাগানের কাঁচা হাতের হলুদ শাড়ির কুচির মত অগোছালো ইস্ট বেঙ্গলের চুল।
- বাবু। এসেছিস?
- বমি বমি ভাবটা আর আছে?
- তুই এলি। কেটে গেল।
- বাষট্টি বছর বমিভাব বয়ে বেড়ালি? তোর ন্যাকামিতে আমার বমি আসছে।
- বেশ। আমি তাহলে নেকিকুমারী। আর তুই বমিচন্দ্র পরামানিক।
- তোর চোখে জল।
- গাধা। আমার পায়ে আলতা।
- তোর পায়ে আলতা মানায়।
- আমরা এই গাছের নিচে দিব্যি মানিয়ে যাই। বল?
- এবার। মাথায় হাত রাখ।
- চেঞ্জ অফ মাইন্ড। তোর পায়ের কাছে বসি।
- আলতা হাভাতে।
- শাড়ির কুচি এবড়ো খেবড়ো তোর।
- ধরে দে। ঠিক করে নিই।
- ধরে দে বললে শাড়ির কুচি ধরা যায় না।
- ধরে দাও।
- যো হুকুম।
- তুই বড় পাকা হয়েছিস বাবু।
No comments:
Post a Comment