Wednesday, January 6, 2016

সিঁড়ির খেলা

- তাকিয়ে দেখুন। মন দিয়ে দেখুন সিঁড়িটাকে। 
- পেল্লায়। 
- সাইজটা দেখনাই। স্পেশ্যালিটিটা নোটিস করুন। 
- স্পে...স্পেশ্যালিটি? 
- আপনি এখন কীসের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন? 
- আপনার উঠোনে।
- উঠোনটা তো প্ল্যাটফর্ম। কিন্তু জায়গাটার থ্রি ডি আস্পেক্টটা ঠাহর করতে পারছেন তো?
- বিলক্ষণ। সাপ-লুডোর ছক তো। 
- কারেক্ট। তবে টু-ডি তে নয়। থ্রিডি তে।
- স্পষ্ট। 
- এই আপনি দাঁড়িয়ে রয়েছেন একের খোপে। এক থেকে দশের খোপ; এটা গ্রাউন্ড। ঠিক? 
- ঠিক। জলের মত। 
- এই যে দেখছেন...। 
- এই টুলটা?
- ও'টা টুল নয়। ছক্কা। 
- ছক্কা? রিয়েলি?
- ধরেই দেখুন। গড়িয়ে দিলেই চাল দেওয়া হয়ে যাবে। 
- বিউটিফুল মশায়। সাধে বলি, আপনার বৈজ্ঞানিক মগজের জবাব নেই।
- শুধু বিজ্ঞান কেন? রবীন্দ্রনাথ, হেমিংওয়ে, কাফকা, দালি। কে নেই মগজে? যাক। বোর্ডে ফেরত আসুন। 
- এলাম। 
- তো এই ছক্কা চেলে আপনি এগোবেন। কেমন ?
- ঠিক। 
- দশ পেরোলেই উঠলেন এক ধাপ। পাঁচ মিটারের ধাপ তৈরি করেছি। 
- আশি ছাড়ালে তো মাথা ঝিমঝিম করবে মশায়। 
- করতে পারে। এবার বলুন। কোন অ্যানোম্যালি নজরে আসছে? 
- আসছে। 
- কী'রকম?
- শুধু মই দেখছি। সাপ দেখছি না। 
- মোক্ষম। সাপ দেখছেন না তার কারণ আছে। এটা তো ফিজিক্যাল ডেমো। এখানে যাহা মই, তাহাই সাপ। যে মই দিয়ে উঠবেন, সে মই দিয়েই তরতর করে নেমে আসবেন। 
- ওহ। তাহলে, বুঝব কী করে মই বেয়ে নামতে হবে?
- মইয়ের গোঁড়ায় গিয়ে পড়লে উঠবেন। আগায় পড়লে কানটি ধরে নেমে আসা। উঠেই নামা নেই। নেমেই ওঠা নেই। 
- জলের মত। 
- কিন্তু এ'সবই তো দেখনাই। 
- দেখনাই?
- দেখনাই। আসল আবিষ্কারটুকুর ডেমো দেওয়ার জন্য। 
- কী আবিষ্কার। 
- সবচেয়ে বড় সিঁড়িটা। দেখুন দেখি কোনটা। 
- ওই তো। তিনের ঘর থেকে স্ট্রেট একান্ন। 
- ঠিক। ওতে কী হবে?
- তিনে ল্যান্ড করলে উঠে যাব একান্নয়। একান্নতে গিয়ে পড়লে দুদ্দাড় করে নেমে আসা তিনে। 
- তেমনই হওয়ার কথা। তবে এ সিঁড়ির ব্যাপারটা একটু অন্যরকম। 
- অন্যরকম?
- উঠুন। 
- উঠবো? 
- এই মই বেয়ে। তিনের ঘর থেকে। উঠুন। 
- ছক্কা? চালব না?
- দরকার নেই। উঠুন। 
- উঠবো? 
- সোজা উঠে যান।
- আচ্ছা।

**
- ও মশাই, একান্নয় এসে গেছি তো। 
- ভিউটা কেমন লাগছে?
- দারুণ। এবার নেমে আসি?
- ওখানেই মুশকিল। 
- মুশকিল?
- দেখুন না। নেমে কী হয়। 
- মানে?
- নেমে দেখুন। নামার চেষ্টা করুন। 

**

- ও মশাই। সিঁড়ি বেয়ে নামছি তো। 
- কারেক্ট।
- কিন্তু একান্নর ঘর থেকে বাষট্টিতে এলাম কী করে?
- ওটাই তো। আবিষ্কার। 
- আজ্ঞে?
- আবিষ্কার। 
- কী'রকম?
- আইডিয়াটা আসে অরণ্যের দিনরাত্রি থেকে। ওই যে, সৌমিত্রবাবুর স্বগতোক্তি; "যত উঠব তত নামব"। থিওরিটা উলটে নিয়েছি। চমৎকার জিনিস এ সিঁড়ি, বুঝলেন? 
- পেটের ভিতরটা কেমন করছে। 
- ব্ল্যাক হোলের কনসেপ্টটা বোঝাতে পারলে আপনার মগজের ভিতরের জটটা আলগা হয়ে যেত। পেটের গুড়গুড়টাও কেটে যেত। তবে আপনার তো বোধ হয় পল সায়েন্সে অনার্স, তাই না?
- বৈজ্ঞানিক মশাই। অনেক হল। এবার ওয়ে আউটটা বলুন দেখি। নামি কী করে? সিঁড়ি বেয়ে ওপরে যাব? 
- ওপরে যাওয়া তো ওপরে যাওয়াই। তবে এ সিঁড়িতে নিচে নামা মানেও ওপরে যাওয়া। এটাই তফাৎ। ও হ্যাঁ, বলা হয় নি, এ সিঁড়ি একশোর ঘরে গিয়ে থামে না। 
- আজ্ঞে? 
- রাবণের সিঁড়ির কনসেপ্ট শুনেছেন?
- সেই যে স্বর্গ পর্যন্ত সিঁড়ি বানাতে চেয়েছিলে?
- আজ্ঞে। এও তাই। 
- এ কী বাজে মস্করা। 
- মস্করা? রিয়েলি? ল্যাবরেটরিতে মন দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে গেলে সামান্য শব্দ বা গন্ধ বেরোলেও আপনি পুলিশে কমপ্লেইন করেন। বলুন করেন না? কেমন বেআক্কেলে বিজ্ঞান বিরোধী প্রগতি বিরোধী প্রতিবেশী মশাই আপনি! যাক, একটা পার্মানেন্ট হিল্লে করে দিলাম আপনার। আর শুনুন, আপনি এখন নামতে নামতে বাষট্টি থেকে একশো বারোর খোপে চলে গেছেন। একশো পেরোলে আর আওয়াজ পৃথিবীতে ফেরত আসার কথা নয়। চিৎকার করছেন কী ? করে লাভ নেই। দুগ্‌গা দুগ্‌গা!  

2 comments: