কিছু গান ফ্রেমে বাঁধাই হয়ে থাকে কথায় নয়, সুরে নয়, এমনকি গায়কীতেও নয়। চলকে ওঠা মুহূর্তে আটকে থাকে কিছু গান; কাঁচা নীল রঙে আটক পড়া ছোট্ট সবুজ পোকাটা যেমন। তেমন।
তখন বোধ হয় ক্লাস ফাইভ। বা সিক্স। সহজে বলতে গেলে হাফপ্যান্টই তখন নিয়ম। মামাবাড়ি।
সন্ধ্যাবেলা।
হাত পা ধুয়ে এসে বসেছি টিভির ঘরে। দাদু আনন্দবাজারের শব্দ-ছক কষছেন। দিদা ঘরে ঢুকলেন, হাতে স্টিলের ঢাউস বাটি। বাটি ভরা দুধ; তাতে মুড়ি আর আম। পাশেই ঠাকুরঘর থেকে ভেসে আসা ধূপের গন্ধ আর হিমসাগর মিলে মন ভারী করা ব্যাপার। টিভিতে তখন বাংলা সিনেমা। সাগরিকা। গানের সিকুয়েন্স। উত্তম অত্যন্ত কাঁচা ভাবে পিয়ানো বাজানোর চেষ্টা করে চলেছেন। পিয়ানোর ওপরে ফুলদানি; উত্তমের মুখে তার চেয়েও দৃষ্টিকটু ভাবে সাজানো হাসি।
“সেই রূপকথারই দেশে, যে রং আমি কুড়িয়ে পেলেম প্রাণে; সুর হয়ে তাই ঝরে আমার গানে
তাই খুশির সীমা নাই, বাতাসে সে তার মধুর ছোঁয়া পাই
জানি না আজ হৃদয় কোথায় হারাই বারে বারে
সাত সাগরের পাড়ে আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা থাকে”।
ঠিক সেই সময়। ঠিক সেই সময়। পাশের বাড়ি থেকে স্বাতীদি এসেছিলে দিদার কাছে ছুঁচ চাইতে। ছুঁচ। ডেফিনিটলি মনে আছে। স্বাতীদি পাশের বাড়ির স্বপনমামার মেয়ে। দিল্লীতে থেকে পড়াশোনা করত। গ্র্যাজুয়েশন। সম্ভবত ইকনমিক্সে। বয়েসে কত বড়। কত ভালো। কী ভালো লাগার হাসি স্বাতীদির। স্বাতীদি সেদিন নীল স্কার্ট পরে এসেছিল। জ্বলজ্বল করছিল স্বাতীদি, হিমসাগর, ধূপের গন্ধের মিশেলের দেমাককে ঠাণ্ডা করে দিয়েছিল নিমেষে। বুকে ভুরভুর ভালো লাগা গন্ধ। সে মুহূর্তে মনে হয়েছিল দুধ মুড়িতে চিনি কম পড়েছে বোধ হয়। সে মুহূর্তে মনে হয়েছিল একটা পিয়ানোর বড় দরকার।
“বাবু কত বড় হয়ে গেছিস”, বলে স্বাতীদি গাল টিপে দিয়েছিল। হিমসাগর, ভারতদর্শন ধূপে স্বাতীদির গন্ধ আছে। আজও।
“আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা”র সুরে স্বাতীদি আছে। আজও।
শ্যামল মিত্রের কণ্ঠে একটা সঞ্জীবে মেজাজ আছে কী?
No comments:
Post a Comment