কলেজ স্ট্রিটের শেষ ট্রামের ঘরঘর গায়ে মেখে রাত চুইয়ে নামছে মেসের সরু চৌকি বেয়ে। মাথার নিচে নরম হয়ে আসা পেট পাতলা বালিশ, মাথার পাশে ফিলিপ্সের ছোট রেডিও। রাতের মিশমিশে মিশে যাওয়া ভালো লাগা জানুয়ারির রাত জুড়ে। জানুয়ারিই হবে। বা ডিসেম্বর। কারণ লেপ ছিল। আর পেতলের পুরনো কলের মুণ্ডু ঘুরিয়ে টেনে আনা তিরতিরে জলের দাগের মত; রেডিও থেকে রিমঝিমে আদর হয়ে ভেসে এসে ছিলেন কবীর সুমন স্বয়ং।
চেনা গান সেদিন অচেনা হয়ে ভালোবাসা হয়েছিল, অথবা ধুলো ঝাড়া প্রিয় বই যেমন। প্রিয় বন্ধুর নাম লেখা লেবেল আঁটা স্কুলের নোটবই যেমন।
লেপ আরও মখমলে মেজাজে চেপে ধরেছিল।
“বড় বেরঙিন আজকাল কাছাকাছি; কোন রং পাই না তাই;
দিতে পারি না কিছু”।
সুমন গানে নয়, স্মৃতিতে বিঁধেছিলেন। নোনতা অব্যক্ত রক্তে ভিজেছিল বালিশ। না দেওয়া’দের দল সেজেগুজে শাড়ি পরে দরজার সামনে সারি বেঁধে দাঁড়িয়েছিল। ভূতগ্রস্ত আমি বিড়বিড়ে মন্ত্র পাঠ করেছিলাম
“এই মলিন আর এ ধূসর পথ চাওয়া
এ চাওয়ার রং নাও তুমি
না পাওয়ার রং নাও তুমি
আগামীর রং দাও তুমি”।
গানটা শামিয়ানা হয়ে দুনিয়া ঢেকে দিয়েছিল। রাত বাধ্য বেড়ালের মত লেজ নেড়ে খাটের তলে এসে বসেছিলে। সে বেড়ালের চোখের মত ভালোবাসার আঁচ। সুমন ধূসর নীলাভ তারার রং ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। দরজা খুলে বেরিয়ে যাওয়ার আগে, কৈশোর একবারের জন্য পিছন ফিরে তাকিয়েছিল। আমার কী না ঝাপসা, তাই সম্যক ঠাহর হয়নি।
1 comment:
ভীষণ ভালো হয়েছে। তোমার মনটা যেন এমনই থাকে আর তুমি যেন আজীবন এমন ভাবেই লিখতে পারো, এই কামনাই করি।
মঙ্গল হোক।
Post a Comment