-
গরমটা কেমন ঝুপ
করে পড়ে গেল দেখেছেন?
-
হুম। তাই তো।
-
সবে তো
ফেব্রুয়ারি। তাতেই রেগুলেটর চারে না দিলেই দরদর করে ঘাম।
-
ঠিক। চিন্তার
ব্যাপার।
-
গ্লোবাল
ওয়ার্মিং। বুঝলেন?
-
হুম। আচ্ছা
সামন্তদা, বার্ন্স অ্যান্ড মারের বিলগুলো প্রসেস হয়েছে?
-
আর বার্ন্স! সবে
বিলগুলো নিয়ে বসেছি। লাঞ্চের পর। অমনি বড়বাবু এসে অমুক কনসাইনমেন্ট তমুক
কনসাইনমেন্ট করে এমন ব্যতিব্যস্ত করে তুললে না! টুথপিক আছে?
-
না।
-
সেফটিপিন?
-
ইয়ে। না।
-
দাঁতে সোয়াবিনের
রোঁয়া ঢুকে গেছে। তখন থেকে অস্বস্তি হচ্ছে।
-
দু’বার তাগাদা
পড়ে গেছে ইতিমধ্যেই।
-
তাদের অফিস থেকে
ফোন করেছিলে?
-
না। তারা এখনও
করেনি। উত্তমবাবু জানতে চাইছিলেন।
-
আর এই হয়েছেন এক
উত্তমবাবু। বার্ন্স অ্যান্ড মারের প্রতি ওনার যে এত কীসের পিরিত।
-
অ্যাকাউন্টটা
উনিই সার্ভিস করেন তো। তাই হয়তো...।
-
এতটা নাইভ হয়ে যে
আপনি কী করে সার্ভাইভ করছেন মিস্টার মুন্সী।
-
নাইভ?
-
ভীষণ। আরে মশাই
এই উত্তম দত্ত কি একটা অ্যাকাউন্ট সামলাচ্ছে? কই, কোনদিন দেখেছেন শ্যামা ট্রেডার্স
বা গুজরালের হয়ে দু’টো কথা বলতে এসেছে।
-
বার্ন্স অ্যান্ড
মারে বড় মাছ বোধ হয়। বড় বিজনেস।
-
রাখুন মশাই বড়
বিজনেস। সাধে আপনাকে নাইভ বলি? শুনুন। এই মাছ ফাছ কিচ্ছু নয়। বার্ন্স অ্যান্ড মারে
হচ্ছে হাঁস।
-
হাঁস?
-
ওই উত্তম দত্তের
সোনার হাঁস। বার্ন্স অ্যান্ড মারে মাসে একটা করে সোনার ডিম এনভেলপে করে ওই
উত্তমবাবুর ড্রয়ার পর্যন্ত পৌঁছে দেন।
-
সে’টা আপনি
দেখেছেন?
-
ধুর মশাই। সব কি
আর দেখে বুঝতে হয়? এ ইন্ডাস্ট্রিতে সাতাশ বছর শুধু তো ঘাস সেদ্ধ করে কাটাইনি। ফিশি
ব্যাপার সেন্স করতে পারি।
-
ও। তবু। এবারে
ওদের বিলগুলো সত্যিই অনেকদিন দেরী হল প্রসেসিংয়ে।
-
কী এমন দেরী?
-
না মানে, তিরিশ
দিনের ইন্টারেস্ট ফ্রি ক্রেডিট। তারপর সাড়ে সাত পারসেন্টে ইন্টারেস্ট চার্জ করার
কথা। তেত্রিশ দিন হয়ে গেছে।
-
আজকের
আনন্দবাজারে দেখলাম পাঁচ লাখে তিন বেডরুমের ফ্ল্যাট। ইয়াব্বড় বড় অক্ষরে বিজ্ঞাপন।
খুঁটিয়ে পড়ে জানলাম আসল কাণ্ডটা। ওটা হচ্ছে জাস্ট ডাউন পেমেন্ট। কেমন ধড়িবাজ
বিজ্ঞাপন বলুন!
-
যা যুগ পড়েছে। সত্যিই
তো। ধড়িবাজই।
-
তাই তো বলছি।
ফেরেব্বাজির যুগ। একটু আলগা দিয়েছেন কি কেউ পকেটে ছুঁচো ছেড়ে দিয়ে ফুর্তি দেখবে।
-
বার্ন্সের
বিলগুলো যদি...।
-
ও নিয়ে চিন্তা
কীসের। বার্ন্সের সজলবাবুর মাই ডিয়ার মানুষ। ও আমি বলে দেব’খন।
-
না মানে।
উত্তমবাবু যদি বড়সাহেবকে কমপ্লেইন করে দেন। ওই বিলগুলো কিন্তু দু’হপ্তা ধরে পড়ে
রয়েছে।
-
কদ্দিন হল?
-
আজ্ঞে?
-
এ চাকরীতে কদ্দিন
হল?
-
পাঁচ বছর। ইয়ে।
বিলগুলো একটু যদি চোখ বুলিয়ে সার্টিফাই করে দেন সামন্তবাবু। আমি না হয় পাঞ্চ করে
দিচ্ছি। পনেরো মিনিটের বেশি লাগবে না।
-
মশাই। পনেরো
মিনিটকে অমন খাটো করে দেখতে নেই। ওইটুকু সময়ের মধ্যেই আলোর রশ্মি সূর্য থেকে দু’বার
পৃথিবীতে আব্বুলিশ করে চলে যাবে। কাল থেকে ভাবছি টুথপিকের ডিবেটা অফিসে নিয়ে আসব
বুঝলেন?
-
বিলগুলো...।
-
অনাবিল বিকেলটা
চিনতে শিখুন। চাট্টি মুড়ি বেগুনী আনান। কমলকে তো আপনারা ফাইল বইয়েই খতম করে দিলেন।
বেচারি বলছিল ওয়ার্ক প্রোফাইলে নিয়ে সে বেশ অসন্তুষ্ট। তাই বলছিলাম, ওকে দিয়ে মাঝে
মাঝে মুড়ি বেগুনী আনান। ও এনগেজ্ড ফিল করবে। আপনারও বিকেল হলেই বিল বিল বাতিকটা
যাবে।
-
বড়সাহেব
কিন্তু...।
-
ওহ্ হো।
বড়সাহেবের কথায় মনে পড়ল। আপনাকে ভাই আমার একটা কাজ করে দিতে হবে।
-
কী কাজ
সামন্তবাবু?
-
আমার একটু
তাড়াতাড়ি বেরোবার আছে। গিন্নী সিনেমা দেখতে চাইছে। উইকেন্ডে আবার টিকিটের দাম
বেশি। তাই ভাবলাম। কিন্তু ইয়ে। দু’ঘণ্টা আগে বেরোনোর না করলেই সাহেবের আবার মুখভার
হয়ে যায় কী না।
-
না মানে, আমি কী
করব?
-
আমি বেরোবার পর
ওনার চেম্বারে গিয়ে মুখ কালো করে জানিয়ে আসবেন যে আমার বনবন করে মাথা ঘুরছিল।
ভার্টিগো গোছের কিছু। আপনি আমায় কোন রকমে ট্যাক্সিতে বসিয়ে বিদেয় করেছেন। দেখবেন
গুলিয়ে ফেলবেন না যেন।
-
ওহ। আচ্ছা।
বিলগুলো তবে...।
-
বার্ন্স বাবাজীকে
চোরাগোপ্তা একটু খবর চালান করে দিন এবার।
-
খবর চালান?
-
শুধু কনসাইনমেন্ট
পাঠিয়ে হদ্দ হলে হবে?
-
কী খবর?
-
যে আমরা মধ্যম
হতে পারি। অধম বললেও আপত্তি নেই। তবে সোনালি কুসুম রাঙা বিটনুন গোলমরিচ ছড়ানো পোচ প্লেট
থেকে চেটে খেতে আমরাও ভালোবাসি। ডেফিনিটলি ভালোবাসি।
-
পোচ?
-
চলি। পাঁচটার শো।
আবার ওদিকে গিন্নী একা নয়, সাথে শ্যালিকাটিও আছে। আর ভায়রা। সময় মত না পৌঁছুতে
পারলে কান কাটা যাবে যে।