- অন্দর আইয়ে।
- দীপকবাবু পাঠালেন। দীপক চ্যাটার্জী। পিরামিড ইঞ্জিনিয়ার্স থেকে।
- বইঠিয়ে।
- ধন্যবাদ। আমি অনির্বাণ দাস।
- ম্যায়নে পুছা আপকা নাম?
- ও। না।
- টু দি পয়েন্ট বোলিয়ে।
- আজ্ঞে।
- ইহা পে চায় কফি অফার নহি কিয়া যাতা হ্যায়। পানি পিয়েঙ্গে?
- না ঠিক আছে।
- বোলিয়ে।
- কী বলব?
- পারপাস অফ ইওর ভিসিট। বি স্পেসিফি।
- একটা মালের ব্যাপারে...।
- ইধর এক হি মাল মিলতা হ্যায়। বি স্পেসিফিক। হাউ মাচ?
- আজ্ঞে?
- কিতনা চাহিয়ে?
- ওহ। আড়াইশো গ্রাম।
- সেভেন্টি থাউজ্যান্ড।
- মিস্টার চ্যাটার্জি বলছিলেন যদি একটু ডিসকাউন্ট..।
- টেল হিম নট টু ওয়েস্ট লালওয়ানিজ টাইম।
- আমি কিন্তু ক্যাশ এনেছি।
- ফির ইতনা ফালতু বাত কিউ করতে হ্যায়?
****
পকেটে প্যাকেটটা পুরে অনির্বাণ যখন বেরিয়ে এলে তখন রীতিমত ঘামছে। মেট্রোর কাছে রীতা দাঁড়িয়েছিল। ওকে দেখে অনেকটা স্বস্তি নেমে এলো যেন বুকে।
***
- সত্তর পড়ল।
- চশমখোর শালা। যাকগে। কত বাঁচল?
- পাঁচ। পঁচাত্তর দিয়েছিলেন।
- আড়াই নিজের কাছে রেখে বাকিটা ক্যাশে ফেরত দিয়ে দিন।
- বলছিলাম যে, যদি কিছু মাইন্ড না করেন স্যার।
- কী!
- মানে। এ কাজটা আমায় দিয়ে না করালেই ভালো হয়।
- আচ্ছা? হঠাৎ?
- জিনিসটা তো ইলিগ্যাল।
- সো?
- আমি ঠিক...।
- আপনি ঠিক?
- অস্বস্তি হয়।
- অনেস্টি?
- ভয়ও। তাছাড়া আমি এখানে অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবে জয়েন করেছি। আপনার নেশার বস্তু যোগার দেওয়া আমার কাজ নয় মিস্টার চ্যাটার্জী।
- রাইট। ইউ হ্যাভ আ পয়েন্ট। শুনুন। আমি ক্যাশে আদকবাবুকে বলে দিচ্ছি। আপনার ফাইনাল সেটলমেন্ট করে দেবে। কাল থেকে আপনি বরং কোন গ্রামের স্কুলে ছাত্র পড়ানোর চাকরী খুঁজে নেবেন!
- মিস্টার চ্যাটার্জী। আমার সামনের মাসে বিয়ে।
- আপনার সামনে বিয়ে। আর আমার সামনে স্পাইনলেস অথচ আইডিয়ালিস্ট ঢ্যামনা। আমার হালত আপনার চেয়ে বেশি খারাপ।
- মিস্টার চ্যাটার্জি!
- মেয়েটার নাম রীতা, তাই না? বেশ। চকমকে।
- শাট আপ।
- ওহ আই অ্যাম সরি। আই মেন্ট শি ইজ রিয়েলি বিউটিফুল। এবার আপনি আসুন।
****
শুভদৃষ্টির ধুকপুকটা চারগুণ বেড়ে গেছিল রীতার। অনির্বাণের চোখ কি ছলছলে? ওর দিক থেকে অবশ্য তক্ষুনি চোখ সরিয়ে নিয়েছিল রীতা। দীপকের চোখে মন দিল সে, আজ ওর চোখটা একটু বেশি লাল।
****
- স্যার। এই যে। মালটা।
- অনির্বাণ, ফুলশয্যার রাত্রে লালওয়ানির মাল নিয়ে নেশা করব? নট নিডেড। প্যাকেটটা তোমার কাছেই থাক। হনিমুন থেকে ফিরে এসে বরং...হে হে।
****
স্বপ্নটা ভেঙে যাওয়ায় বড় দু:খ পেলেন লালওয়ানি। বড় ভালো লাগছিল ভাবতে যে ক্লায়েন্টরা তার অফিসে এসে মাল কেনার জন্যে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকে। ভেবে ভালো লাগছিল যে তার গলাতেও রোয়াব আসে।
****
ঘড়ঘড়ে শেষ ট্রামের শব্দে নড়েচড়ে ওঠেন কলকাতা। মেট্রোর সামনে ভেজা হাফ শার্টের ছেলেটির আর হলুদ শাড়ির মেয়েটির হাসিহাসি দেখা হওয়াটা তার স্বপ্নে রিপ্লে হয়। চুকচুকটা অস্ফুটে বেরিয়ে আসে হাওড়া ব্রীজ শনশনানো হাওয়ায়।
*****
রীতার উড়ে আসা চুল মুখে ঝাপাটা দিতে ঘুম ভাঙল অনির্বাণের। স্বপ্নটাও গেল মাঝপথে। স্বপ্নে চ্যাটার্জির মুখের ওপর রেসিগনেশনটা ছুঁড়ে মারার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল সে। বেশ হত। দামী ফ্ল্যাটটা থাকত না। কিন্তু রীতা হয়তো আরও ভালো থাকত। আরও। বড্ড নিরিবিলির অভাব বোধ করে অনির্বাণ। বড্ড।
*****
স্বপ্নটা ভেঙে যাওয়ার বেশ পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছিল রীতা। অনির্বাণ তখনও ঘুমিয়ে কাদা। অনির্বাণের ওপর এত বছরের চাপা রাগটা ছিটকে বেরিয়ে এসেছিল স্বপ্নে। ওর মেরুদণ্ডের লতানে ভাবটার প্রতি ঘৃণা। নরম পিঠের মানুষের থেকে শয়তান ভালো, বাবা বলতেন। সেই চ্যাটার্জী শয়তানটাও তো তার পিছনে কম ঘুরঘুর করেনি। বেশ হত তার সাথেই গেলে, অনির্বাণের একটা উচিত শিক্ষা হত। ছাইপাঁশ চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে রোববার বিকেলের চা বানাতে গেল রীতা।
*****
সিলিংটা ভেসে ভেসে নিচে নেমে আসছিল। হলুদ রঙের সিলিং। বাতাসে বমির গন্ধটাও স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। দীপক বুঝতে পারলেন স্বপ্নটা ভেঙেছে। রীতাকে বিয়ে করার স্বপ্ন। রীতাকে বিয়ে করলে বোধ হয় এই আপদ নেশার থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যেত। হনিমুন থেকে ফিরে এসে বোধ হয় আর এ মারণ নেশায় গা ডোবাতে ইচ্ছে হত না তার। বোধ হয়। বোধ হয়। বোধ হয়। সিলিঙটা জড়িয়ে ধরে দীপক চ্যাটার্জিকে।
No comments:
Post a Comment