বাপন বানান ভুলে জর্জরিত। জ্যেঠুর ধমক, ছোটকার মারে তটস্থ। ণত্ববিবিধান ষত্বববিধানের টিপ খেয়ে খেয়ে তার পেট ফুলে থাকে; এই দশ বছর বয়েসেই খিদে গেছে মরে।
"বাঙালি হয়ে বাঙলা বানান ভুল করবি কেন?", বাবার গমগমে গলায় কেঁপে ওঠে সে মাঝেমাঝেই।
সেদিন দুপুরেও বাপন ছটফট করছিল, একটা পেল্লায় মূর্ধন্য ণ তাকে ক্রমাগত ঠেলে চলেছিল আর একটা বিশ্রী দেখতে দীর্ঘ ঈ তার মাথায় গাঁট্টা কষিয়ে যাচ্ছিল। শশব্যস্ত হয়ে বাপন খাট থেকে গড়িয়ে পড়লে।
পড়লে তো পড়লে সপাট বালির ওপর গড়াগড়ি।
আচ্ছা মুশকিল। চারিদিকে শুধু বালি আর বালি। আকাশ ঝকঝকে নীল আর গনগনে সূর্য। মরুভূমি। কী কাণ্ড। মরুভূমিতে সে এলো কী ভাবে?
- আমি নিয়ে এলাম।
- তুমি কে?
- সরস্বতী।
- ঠাকুর?
- ওই আর কী।
- হাঁস কই?
- এখানে সে আসবে কী করে? জল কই?
- তাই তো। তা তাহলে তুমি এলে কেন? আমায়ই বা আনলে কেন?
- আমি কি সাধ করে এসেছি? তুমিই তো টেনে এনে ফেললে!
- আমি? যা! আমি তো ক্লাস ফাইভে পড়ি।
- এনেছই তো।
- কী করে? যাহ!
- সত্যি কথা।
- যাহ!
- সরস্বতী মিথ্যে বলে?
- ওহ তাই তো। কিন্তু আমি তোমায় মরুভূমিতে আনলাম কী করে?
- বাহ রে। ছোটকা তোমায় সরস্বতীপূজা নিয়ে রচনা লিখতে বললে। আর তুমি বাহাদুরি করে লিখলে বিনাপানি। দীর্ঘ ঈ নেই, মূর্ধন্য ণ নেই। জল নেই বিলকুল। স্ট্রেট এনে ফেললে মরুভূমিতে।
ছোটকা অফিস থেকে ফেরার আগে বানানগুলো ঠিক করে নিল বাপন, ডিকশনারি... থুড়ি...অভিধান হাতে মিলিয়ে।
"ইংলিশ মিডিয়ামে পড়লেই বাংলায় কাঁচা হতে হবে ; তার দিব্যি কেউ দেয়নি"; ছোটকার সেই লেকচার অন্তত শুনতে হবে না।
No comments:
Post a Comment