"ওদিকের জানালাটা আমার বেশ প্রিয় জানো অপর্ণা! জানালাটার ওপারে একটা পুরোনো বাড়ি যা এক কচি খোকা দিনরাত হাসিকান্নায় মাথায় করে রেখেছে। সে বাড়ির পাশ দিয়ে সরু ইট বাঁধানো রাস্তা গিয়ে মিশেছে আকাশে। আকাশটা অমন মরচে মাখানো সাদা কেন, তাই ভাবছ? আর সাদার গায়ে ছোপ ছোপ কেন?
ক'দিন থাকো এখানে। তারপর বুঝতে পারবে। ওই যে'টাকে ফ্যাকাশে সাদা আকাশ ভাবছ, সে'টা আসলে পুরোন বইয়ের পাতা। কালো ছোপ ছোপগুলো হচ্ছে ছাপার অক্ষর। ছাপা ছেতরে গেছে কেন তাই ভাবছ? আসলে মেয়েটা ঘুরে ফিরে এ পাতাটায় ফেরত আসে, উদ্ভ্রান্তের মত পড়ে আর ফিরে যায়। বড় মায়া আছে মেয়েটার চোখে। ভেজা। বালিশে আর বইয়ের পাতায় সে ভেজা ভাব মিশে যায় বারবার।
অবিশ্যি মায়া মেয়েটার মধ্যে না তার চোখের জলে ভেজা বালিশে তা বলতে পারিনা। তবে সে বালিশে যখন এ পাতায় খোলা বইটা উপুড় করে রাখে মেয়েটা, তখন ওই ডান দিকের লাগোয়া ছাতে বৃষ্টি নামে; আমি বেরিয়ে ভিজে আসি বেবাক। বেশ লাগে।
এখন কিনা বইটা বন্ধ করে রাখা, তাই আকাশ অমন ফ্যাকাসে। তাই হয়তো তোমার অমন গুমোট লাগছে। মেয়েটা মন খারাপে পড়লেই এ বই বিছানায় নিয়ে এসে সপাট চলে আসে এ পাতায়। সেদিন আকাশ জুড়ে শুধু মেঘ, সে মেয়ের চোখের মেঘকালো আনচান। মন খারাপের রঙ আর মন ভালোর গন্ধ মেশানো।"
***
বারবার এ পাতায় ফিরে আসা। বারবার। তবু এদ্দিন অপুকে ডিঙিয়ে অপর্ণাকে ছুঁতে পারেনি সুমি। কিন্তু আজ কেমন করে যেন ঝরঝর করে অপর্ণা বয়ে চলে এলো। পুরোনো ভালো লাগা বইকে নতুন করে চেনা যে কী আনন্দের। বিষন্নতা মন্দ নয়, সুমির তাই ভেবে হাসি পেলো। মন ভালো করা হাসি। ভেজা হাসি।
***
অপর্ণা বুঝলে বৃষ্টির ভিজে যাওয়ার বড় আদরের। আর বৃষ্টির আদর বড় লজ্জার। সংসারে ভেজা মাটি আর বইয়ের গন্ধ খুঁজে পায় সে। অপুর ঠোঁট আবডাল দেখে তার বৃষ্টি ভেজা গালের কাছে নেমে এলে সে ফিসফিসিয়ে ওঠে "প্রতি বৃষ্টিতে একটা করে, কথা দিয়েছ কিন্তু"।
2 comments:
osombhom valo laglo..dhnnobad
Osomvob valo laglo
Post a Comment