নদীর মত তিরতিরিয়ে বয়ে চলা একটা গলিচ হাফ কিলোমিটারের মত লম্বা। তারপরেই বড় রাস্তার সমুদ্দুরে গিয়ে ঝপাৎ।
গলি জুড়ে একটাই ল্যাম্পপোস্ট লাইটহাউসের দম্ভে দাঁড়িয়ে। তার আলো ঘোলাটে। ফলত গলিটার বেশিরভাগটা জুড়েই আবছায়া।
আবছায়াটা নিয়মিত উপভোগ করেন অমিতাভ। রাত্রে খাওয়ার শেষে তার হাঁটতে বেরোনো, তার দু'টো সিগারেট। গলি বরাবর কয়েক পাক।
সান্যালবাবুর রেডিও এ সময়টা রোজ খেয়াল খুঁজে নেয়।
তিন্নির এ সময়টা কাটে ভূগোল বা ইতিহাস বই দুলেদুলে রিডিং পড়ে।
মজুমদারের অল্প বয়েস, নতুন বিয়ে। ওদের বন্ধ জানালাটা ফিসফিসে ভরে থাকে, অমিতাভ তা দ্রুত পেরিয়ে আসেন।
মোহন সমাদ্দারের বাড়ি চিড়বিড় করে টিভি সিরিয়ালের কচকচে শব্দে।
নিমাই মল্লিকের প্রেসের মেশিন পুরনো, লিফলেট ছাপা ছাড়া কোন কাজ হয় না- তার ঘট ঘটাং চলে অনেক রাত পর্যন্ত।
শ্যামলী বৌদি ঠিক এই সময়টাই রোজ মিতুলকে ঘুম পাড়ান; অতুলপ্রসাদী তার কণ্ঠে হতে বড় মায়া মেখে নিঃসৃত হয়। অমিতাভ দুই সিগারেটের মাঝে সে অতুলপ্রসাদে আটকে থাকেন মিনিট পাঁচেক।
মোড়ের দিকে এগিয়ে গেলে বিশু বুড়োর বিড়বিড় ভেসে আসে; আনন্দবাজারকে কবিতার মত সুর করে পড়ে চলেন তিনি, অনবরত। ইনসমনিয়া আর ছিট; দুয়ে মিলে অতি ভয়ানক কম্বিনেশন।
মোড়ের মাথার রকটা এ সময় ছোকরাদের আড্ডা থেকে মুক্তি পেয়ে শ্বাস নিয়ে বাঁচে। সেখানে ঘুমিয়ে থাকে রামনরেশ; পাশে তার রিক্সা লাগানো থাকে। কোনদিন যদি রামনরেশ জেগে থাকে; তার সাথে চাট্টি গপ্প সেরে নেন অমিতাভ; ছপরার আর কলকাতার মাঝে যে মেঘলা অবকাশটুকু আছে- সেটুকু তাদের দু'মিনিটের গল্পে সরব হয়ে ওঠে।
এমন ভাবেই কেটে যায় আধ ঘণ্টা। অমিতাভবাবু মোড়ের মাথা থেকে ইউটার্ন নিয়ে ফিরে যান গলির অন্তরে। বড় রাস্তার রাতটুকুও কর্কশ, অতিআলোয় আক্রান্ত।
গলির নিঝুম শেষে পরিচিত সবুজ দরজায় এসে পকেট থেকে চাবি বের করেন অমিতাভ। গদরেজ তালাটা খোলার সময় কানে স্পষ্ট ভেসে আসে মিঠুর হুকুম - "কাল ছেলের স্কুলে ডেকেছে, প্যারেন্ট টিচার মিটিং না কী যেন। আমি ইংরেজি-টেজি বলতে পারব না। তোমায় কিন্তু হাফ ছুটি নিতেই হবে"। বাপনের হইহই করে পেশ করা "স্কুল ফেরত আইসক্রিম"য়ের দাবীর সরবতাও কানে আসে অমিতাভর।
গলির চেনা আবছায়ার আশ্রয় ছেড়ে ঘরের টিউবলাইটের অপরিচিত আলোর ব্যথায় ঝলসে ওঠেন তিনি। কিছুতেই ঘরের রেডিওর চ্যানেল ঘুরিয়ে অতুলপ্রসাদ বা খেয়ালের নিশ্চিন্দি খুঁজে পান না অমিতাভ।
1 comment:
এতো দেখছি ক্লাসিকের সাথে ধাক্কা লাগার উপক্রম করে ফেললেন মশাই্।
Post a Comment