যেখান থেকে মোড়াম ঢালা রাস্তাটা অতর্কিতে নেমে যায়। একটানা ঢাল। সে'খানে সাইকেল দুঃসাহসী। বেপরোয়া। খুনে।
হুশহাশ করে নেমে যাওয়া। ঘন সবুজ রঙের হারকিউলিস সাইকেলে সরু চাকা মোড়ামে খলবল করে। বাঁ পায়ের পাতা হাওয়াই চটির মেজাজে বাঁ প্যাডেলে সোজা নেমে এসে শান্ত হয়ে থাকে একটানা। হ্যান্ডেল ডান হাতের ছোঁয়াতেই বশ মানে। বাঁ হাত? সে তো চুলের ফুরফুর সামলাতে।
ঢাল ধড়াক করে শেষ হয় কালভার্টের গা ঘেঁষে। সিমেন্টের বাঁধানো, দু'জনে লুডোর বোর্ড পেতে বসা যায়। তার গায়ে হলদে কালো পেন্টে লেখা ৫৪। পঞ্চায়েতের হিসেবের কোন নম্বর? অতটাই সরল? নাকি কেউ জানে যে ক্লাস টুয়েল্ভের অঙ্কে চুয়ান্ন পাইয়েদের হাতে বিকেলে বাড়তি সময় থাকে!
- কী রে! ম্যাচ খেলতে গেলি না কাল?
- ইচ্ছে হল না!
- বুম্বাদা রেগে গেছে। পরের ম্যাচে তোকে কীপিং করাবে।
- বয়ে গেছে।
- কী ব্যাপার?
- বিলু!
- বল।
- টাকা আছে?
- কত?
- এই। দশ বারো।
- সুধীরদার পেঁয়াজি?
- আর মুড়ি। অল্প তেলে মেখে দেয় বললে।
- আছে। নিয়ে আসি। তুই বস।
- বিলু!
- বল।
- কাল অপাইদা খেলেছে ওদের হয়ে?
- খেলেছে। বত্রিশ রান করেছে। দু'টো উইকেট নিয়েছে, বুম্বাদাকে বোল্ড করেছে।
- বেশ হয়েছে।
- খেলা দেখতে লোক হয়েছিল?
- হয়নি আবার? উত্তরের গোলপোস্টের পাশে গার্লস স্কুলের ভিড় জমে গেছিল।
- মিতুল ছিল, তাই না?
- পেঁয়াজি আনি।
- বিলু।
- কী?
- মিতুল ছিল, তাই না?
- অপাইদার লম্ফঝম্প যদি দেখতিস। উইকেট নিয়ে। বুম্বাদার উইকেটেই হেরে গেলাম।
- বিলু।
- পেঁয়াজি আনি?
- অপাইদার মায়ের হাতের খিচুড়ি বেগুনভাজা খেয়েছিস? অমৃত!
- মুড়ি মেখে নিয়ে আসতে হবে তো।
- ব্যাপার হল। মিতুলের মা নেই। আমারও নেই। মিতুলের একটা হিল্লে হবে। মা-লেসনেস ঘুচে যাওয়াটা বড় ব্যাপার। মাসীমা বড় ভালো। অপাইদার মাতব্বরির জন্য একটু গা জ্বলে, তবে মাসীমার আচারের বয়ামের কথা ভাবলে রাগ জল হয়ে যায়। এটাই বোধ হয় ভালো হল। অপাইদার জায়গায় গতকাল আমি থাকলেও লম্ফঝম্প দিতাম।
- আসি।
- সুধীরদাকে ঠোঙায় কয়েকটা এক্সট্রা কাঁচা লঙ্কা দিতে বলিস।
- ওউক্কে।
1 comment:
রূপকথা মানে পথে স্বপ্নের সাইকেল
চাকা ঘুরে যায় হাইওয়ে
একবুক স্বপ্নের রঙ-তুলি-ক্যানভাস
আগামীদিনের গান গেয়ে
আকাশের ছবি জুড়ে সেই চেনামুখ
নস্ট্যালজিয়া কালভার্ট সানসেট
Post a Comment