আমাদের রাগ যতটা বেড়েছে, রাগ লিপিবদ্ধ করার ভাষা তার সাথে তাল রাখতে পারেনি। রাগ লক্ষ্মী। দোষ রাগের নয়।
আমাদের মেজাজের পাত্র কানায় কানায় পূর্ণ; সামান্য দুলুনিতেই চলকে ওঠে। জাতি হিসেবে মেজাজ হারানোর ছেলেখেলার সময় আমরা বহু আগেই পেরিয়ে এসেছি। ক্ষোভে ফেটে আদ্যোপান্ত ভাবে রাজনৈতিক হুঙ্কার; ও'তে রাগের তেষ্টা মেটে না। আমাদের বিরক্তিও ভাষার কাঁচের ছাত ভেঙ্গে ফেলেছে অবলীলায়। বঙ্কিমি বা সঞ্জীবি সারকাজ্মের ব্লেডে আজকাল বড় জোর বইয়ের মলাটের কাগজ কাটা যায়, ও ব্লেডে দাড়ি কাটলে টেবিল চাপড়ানো মেজাজের গালে সেপ্টিক। লে হালুয়া সারকাজ্মের মাখনে ছুরি হয়ে ঢুকতে পারছে না আর।
আমাদের রাগ প্রাপ্ত বয়স্ক হয়েছে। আজকাল রাগ-বিরক্তি-সারকাজ্ম "গাঁড় মেরেছে" না লিখলে ঠিক আউটলেট পায় না। অবশ্য আমরা শান্তিনিকেতন ভালোবাসি। কাজেই সফিস্টিকেশনের দাবীতে "মার গেঁড়েছে" লিখলে স্টাইলটা দাঁড়ায় ভালো।
অসুবিধে হল; লেখার বাংলা, পড়ার বাংলা যথেষ্ট স্মার্টলি ইভল্ভ করে পারেনি। যে ভাষা রাগতে পারে না, তার আবার আই-কিউ আছে নাকি? মুজতাবা টু শীর্ষেন্দু যে লঞ্চিং প্যাড দিয়েছেন, তাতে ভাষা ঠিক সহজে মার গাঁড়তে পারছে না। আমাদের অসুবিধে হচ্ছে। গলার কাছে এসে ইমোশনগুলো দলা পাকিয়ে যাচ্ছে, ভাষার অভাবে লাফিয়ে বেড়িয়ে এসে ভিন্ন মতাবলম্বীদের গলার টুঁটি টিপে ধরতে পারছে না।
খিস্তিকে শুধু কথার প্রয়োজনে বাঁধলে চলবে? লুঙ্গি পরে যদি পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে চায়ের ভাঁড় হাতে আড্ডা দেওয়া যায়, লুঙ্গি পরে তবে টেস্ট ম্যাচ খেলা যাবে না কেন? এ ন্যাকামিতে আধুনিক বাঙালির এসে যাওয়া উচিৎ নয়; থুড়ি...এ ন্যাকামিতে আমাদের বাল ছেঁড়া যাওয়া উচিৎ...থুড়ি...লাব ছেঁড়া যাওয়া উচিৎ।
যে রাগে ফেসবুক স্টেটাস মার গেঁড়েছে বলে গুমরে উঠতে পারে না; সে রাগ আর যারই হোক বাঙালির নয়।
পুনশ্চ - সাহেবদের ভাষায় সারকাজ্মের সাবলীলতা অনন্য এবং অন্য। উডি এলেনের স্ক্রিপ্টের বাংলা অনুবাদ বোধ হয় হওয়া উচিৎ নয়। তবে তাদের সারকাজ্মে একটা হাতে গরম মজাদার ফাঁক যখন পাওয়া গেছে, সে ফাঁককে বাঙলায় গড়েপিটে না নেওয়ার কোন মানে হয়?
1 comment:
খিস্তি খেউড় ছাড়াও রাগ প্রকাশ করার 'শ্লীল' ভাষা আছে,সতর্কতার সাথে ব্যবহার করলেই হল
Post a Comment