- স্যার।
- হুঁ।
- বলছিলাম যে...।
- যে?
- পাণ্ডুলিপিটা...।
- কীসের?
- আজ্ঞে?
- কীসের পাণ্ডুলিপি?
- আজ্ঞে...কবিতার।
- কার?
- আজ্ঞে?
- কার লেখা?
- আমার। সেই যে। আপনি জমা দিতে বলেছিলেন।
- আমি? জমা দিতে বলেছি?
- আজ্ঞে।
- আমি বলেছি?
- ওই মানে। অবনীবাবুর সংবর্ধনায় আপনাকে প্রণাম করে আমার লেখার কথা বলেছিলাম। গত অগস্টে। আপনি বলেছিলেন অফিসে এসে পাণ্ডুলিপি জমা দিতে। বলেছিলেন পছন্দ হলে ছাপা হবে।
- ছাপা?
- আজ্ঞে।
- আপনার কবিতা?
- আজ্ঞে। যদি আপনার পছন্দ হয়।
- পছন্দ হয়নি।
- হয়নি?
- পড়িনি। তবে পছন্দ হবে না। সে'টা বলেই দিতে পারি।
- না মানে...দু'টো লেখা যদি...যদি পড়ে দেখতেন।
- মাসে অন্তত সত্তরটা নতুন পাণ্ডুলিপি জমা পড়ে। ওই দিকে দেখুন। তাকে বোঝাই করে রাখা আছে। অন্তত সাড়ে পাঁচশো না পড়া পাণ্ডুলিপি রয়েছে।
- আপনার ভালো লাগত মনে হয়...।
- কত কাটবে?
- আজ্ঞে?
- কত বিক্রি হবে?
- না মানে সে'টা তো ঠিক...।
- এগজ্যাক্টলি। সে'টা যেহেতু হলফ করে বলা যাচ্ছে না, সেহেতু আপনি আসুন।
- স্যার প্লিজ...।
- আর ও আই। বোঝেন?
- আর ও আই?
- রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট। পাঁচটাকা ট্যাঁক থেকে বেরোলে মিনিমাম সাড়ে সাত টাকা ট্যাঁকে ফেরত আসা দরকার। নয়া মালকে দমাদম ছেপে দিল আমার পকেটে যে মিসাইল পড়বে ভাইটি।
- মাল? ওহ!
- এবারে আপনি আসুন।
- আমার পাণ্ডুলিপিটা...।
- আবার কী?
- না মানে...যদি ফেরত পাওয়া যেত!
- ওই তাক ঘেঁটে খুঁজে পেলে ভালো। না পেলে আমার দায়িত্ব নয়।
***
ঈশ্বর যখন জীর্ণ পাণ্ডুলিপি হাতে মন্দাকিনী পাবলিশার্সের আপিস থেকে বেরোলেন তখন চোখে মুখে শার্টে ধুলো। যে ময়লা ঘেঁটে পাণ্ডুলিপিটা উদ্ধার করতে হয়েছে তা আর বলার নয়।
মনটা ভার। নাকে ধুলো মেশানো সর্দির সুড়সুড়। চোখে চিড়বিড়ে জ্বালা।
বাসস্ট্যান্ডের দিকে খানিক এগোতেই বাঁ পায়ের চটিটা গেল ছিঁড়ে। ধুস। রাগ জমাট হল। কালচে নীল রঙের বিরক্তি টিপ টিপ করে জমতে জমতে নাভির ওপরের দিকে উঠে যাচ্ছিল।
ধুস। ধুস।
কবিতাগুলো পড়লোও না কোন প্রকাশক। ধুস্! অখাদ্য যত লোকজন।
ময়দান কবিতাটার মধ্যে যে প্যাথোস, বাগবাজার লেখাটা যে ছন্দে বাঁধা, চৌরঙ্গীর লাইনে লাইনে যে এক্সপিরেমেন্ট লুকিয়ে, বা পার্ক স্ট্রিটের মধ্যে যে আবেদন ছড়ানো আছে;
কেউ কোনদিন জানবে না। বুঝবে না। পড়ে "আহ্, বড় আদুরে" বলে চুক্ চুক্ করে উঠবে না কেউ। বইটা বুকে চেপে বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল মেঝেয় বুলোবে না কেউ।
সবচেয়ে বড় কথা, বইপাড়া কবিতাটার মধ্যে যে ভালোবাসা মেশানো ছিল, সে'টা কাউকে টেনে ধরার সুযোগটুকুও পেল না।
অখাদ্য যত সব। আবার আহ্লাদ করে ডাগর হাতের লেখায় পাণ্ডুলিপির প্রথম পাতায় নাম দেওয়া ; বাবু ঈশ্বরের 'কলকাতা'।
ধুস। ধুস। ধুস। নিজের ওপর প্রবল রাগ হল। প্রবল।
বাঁ পায়ের চটি আর পাণ্ডুলিপি; দুইই সপাটে ছুঁড়ে ফেলে বিড়ি ধরালেন ঈশ্বর।
***
দড়াম স্বপ্নের ধাক্কায় ঝটকা দিয়ে তন্দ্রা ভাঙল জোব সাহেবের। চোখ ডলে দেখলেন জাহাজ ডাঙ্গার আশেপাশে এসে ঠেকেছে। তবে সবই জলাজমি আর জঙ্গল। নামা উচিৎ হবে বলে মনে হয় না।
তবে স্বপ্নটার জন্য মনের ভিতরটা কেমন হ্যাঁচোড়প্যাঁচোড় করে উঠলো, কেউ যেন তাকে বলে দিলে এখানেই জাহাজ ভেড়াতে। তবে জাহাজ ভেড়ানোর কথা বলতে গিয়ে এক দিস্তে হিজিবিজি লেখা কাগজ যে কেন সে ছুঁড়ে মারতে গেল! প্রবল অসোয়াস্তি।
কাগজের দিস্তেটা জোব সাহেবের কপালে লেগেছিল; স্বপ্নে। সাহেবের বুক ছ্যাঁত করে উঠলো যখন তিনি টের পেলেন যে কপালের একটা কোণ সামান্য ফুলে রয়েছে।
"হেঁইয়ো, তোরা কে কোথায় আছিস বাপ! জাহাজ এখানেই ভিড়িয়ে দে। দে ভিড়িয়ে"।
1 comment:
eta simply opurbo ! durdanto !!!
Post a Comment