-
টুবলু।
-
উঁ।
-
দশটা বাজে বাবু।
ওঠো এবার।
-
উঁ উঁ।
-
ওঠো।
-
উঁ উঁ উঁ।
-
টুবলু!
-
আর একটু মা!
-
সকাল দশটা বাজে।
-
ডক্টর আঙ্কল
বলেছে আমায় ঘুমিয়ে থাকতে। যতক্ষণ পারি।
-
একটু ওঠো
টুবলুবাবু। আজ দু’টো সারপ্রাইজ আছে।
-
আজ ইনজেকশন নেই?
-
ওহ। তিনটে
সারপ্রাইজ। আজ ইনজেকশন নেই। আর তাছাড়াও আরও দু’টো সারপ্রাইজ আছে।
-
আচ্ছা।
-
শুনবে না আর
দু’টো সারপ্রাইজ কী কী?
-
মা।
-
কী টুবলুবাবু?
-
ইনজেকশন না দিলে
ব্যথা হবে না? খুব ব্যথা মা। খুব।
-
কাঁদে না বাবু।
ব্যথা হবে না। ডাক্তার আঙ্কল আজ ওষুধ দেবে। ইনজেকশন বাদ।
-
মা।
-
বাবু।
-
কষ্ট হচ্ছে।
-
আর একটু বাবু। ব্রেকফাস্ট
করে নাও। তারপরেই সেই মজার ওষুধ। ব্যথা ছুমন্তর।
-
ছুমন্তর মানে
ভ্যানিশ?
-
ঠিক তা নয়।
ছুমন্তর হচ্ছে ভ্যানিশ করে দেওয়ার মন্ত্র।
-
যা কিছু ভ্যানিশ
করা যায়?
-
ঠিক মত বলতে
জানলে ভ্যানিশ করা যায়। এবার বলি? সারপ্রাইজ কী কী?
-
কী?
-
আজ
ব্রেকফাস্টে...।
-
আলু সেদ্ধ? কর্ন
ফ্লেক্স?
-
ধুস। সে’টা কোন
সারপ্রাইজ হল টুবলুবাবু?
-
তাহলে?
-
পিজ্জা!
-
যাহ!
-
অন গড!
-
প্রমিস?
-
প্রমিস!
-
ব্রেকফাস্টে
পিজ্জা? আমার ক্লাসেও কেউ কোনদিন খায়নি।
-
তুমি খাবে। আজ।
-
যদি বমি হয়ে যায়?
-
ভেবো না বাবু।
হবে না। আমি আছি তো।
-
হবে না?
-
হবে না।
-
বমিও ছুমন্তর?
-
সাবাস টুবলুবাবু।
-
মা।
-
হ্যাঁ বাবু।
-
তুমি তিতলিকে বলে
দেবে ফোন করে যে আমি আজ ব্রেকফাস্টে পিজ্জা খাচ্ছি? ও হিংসে করবে। বেশ মজা হবে।
-
তিতলিকে? আচ্ছা
বেশ। তুমি খেয়ে নাও। আমি ওকে ফোন করে বলে দেব।
-
তিতলি এ বছর
ক্লাস থ্রিতে চলে যাবে জানো? আমি টু’তেই থেকে যাব।
-
অত চিন্তা কিসের
টুবলু? আমি প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে গিয়ে কথা বলব যাতে টুবলু বাবুর প্রমোশন হয়ে
যায়। কেমন?
-
ধুত। এগজ্যাম না
দিলে পাশ করা যায় নাকি?
-
তাই তো। মুশকিল
হল।
-
কী আর করা যাবে
মা। আরও এক বছর ক্লাস টু’তে পড়তে হবে। তিতলিকে তিতলিদি বলে ডাকতে হবে।
-
তোমার দুঃখ হবে?
-
একটু।
-
একটু একটু দুঃখ কি
খারাপ?
-
খারাপ না?
-
অনেক অনেক দুঃখ
খারাপ। একটু দুঃখ তো থাকবেই।
-
মা।
-
হুঁ বাবু।
- ব্যথা করছে। পেটে। গায়ে। মাথায়।
- ব্যথা করছে। পেটে। গায়ে। মাথায়।
-
সেকেন্ড
সারপ্রাইজটা বলি? ব্যথা কমে যাবে।
-
কী সারপ্রাইজ?
-
ভোলু মিত্তির।
-
ভোলু মিত্তির?
-
দেখবে?
-
কে ভোলু মিত্তির?
-
ইয়াব্বড় ভল্লুক।
যে মানুষের মত কথা বলে। নাচে। গায়। জড়িয়ে ধরে। চুমু খায়। আদর করে। গান গায়। বানান
ভুল ঠিক করে দেয়।
-
ধুস। তুমি বানিয়ে
বলছ!
-
একদম না। গড
প্রমিস।
-
মাদার প্রমিস?
-
মাদার প্রমিস!
-
মিথ্যে বললে দাদি
মরে যাবে কিন্তু।
-
আই নো।
-
ভোলু মিত্তির
কোথায়?
-
ডাক্তার আঙ্কল
নিয়ে আসছে।
-
ভোলু মিত্তির বড়?
-
ইয়াব্বড়। বললাম
তো। আমার মত লম্বা। আমার মতই মোটা।
-
তোমার মত মোটা?
হি হি!
-
আমার চেয়েও বেশি
মোটা।
-
দারুণ। জলদি ভোলু
মিত্তিরকে আনো। খুব ব্যথা করছে মাথায়। খুব খুব খুব।
-
বাবু। আর একটু।
-
পারছি না মা।
-
আর একটু।
-
ভোলু মিত্তিরকে
আনো।
**
-
লিপি।
-
আমি পারব না
ডাক্তার।
-
তুমি জানো লিপি।
এটাই টুবলুর যন্ত্রণা কমানোর একমাত্র উপায়। সায়েন্টিফিক। মেডিক্যালি প্রুভেন। আর
আইনত বাধা নেই।
-
ওর বয়স কী
ডাক্তার!
-
সে জন্যেই আইনত এ
সিদ্ধান্ত তোমার নিতে হবে লিপি।
-
আই ক্যান নট কিল
মাই ওন সান! তিলে তিলে ওকে আমি তৈরি করেছি।
-
টুবলুর হাতে
এমনিতেও আর বড় জোড় দুই থেকে তিন সপ্তাহ। ভয়াবহ তিন সপ্তাহ। যন্ত্রণা ছিঁড়েখুঁড়ে
নেবে ওর শরীর কে।
-
স্টপ ইট ডাক্তার।
-
শক্ত হও লিপি।
টুবলু এটুকু সোয়াস্তি ডিজার্ভ করে। ভোলু মিত্তির অত্যন্ত যত্নে তৈরি রোবট। আ
টেকনোলজিকাল অ্যান্ড ইমোশনাল মার্ভেল। চুমুতে আদরে স্নেহে হাসিতে যন্ত্রণা ভুলিয়ে
ঘুম পাড়িয়ে দেবে।
-
ঘুম? শেষ ঘুম।
আমার টুবলু। পিজ্জা নিয়ে পাগল টুবলু। বিরাট কোহলিকে নিয়ে পাগল টুবলু। থ্রি
স্টুজেসে পাগল টুবলু। ডাক্তার।
-
শান্ত হও লিপি।
ভোলু মিত্তির ইউথ্যানেসিয়াতে ভালোবাসা মেশাতে পেরেছে। আদরে ঘুমোতে ক’জন পারে লিপি?
দু’সপ্তাহের জন্য অন্তত টুবলুর যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে।
-
ডাক্তার। একটা
রিকুয়েস্ট ছিল। ভোলু মিত্তির আমায় জড়িয়ে ধরতে পারে না?বড্ড যন্ত্রণা যে। বড্ড
যন্ত্রণা।
**
সূত্র ঃ http://www.pravdareport.com/news/world/07-05-2015/130517-suicide-0/
No comments:
Post a Comment