Thursday, March 3, 2016

ভোলু মিত্তিরের কাণ্ড

-          টুবলু।
-          উঁ।
-          দশটা বাজে বাবু। ওঠো এবার।
-          উঁ উঁ।
-          ওঠো।
-          উঁ উঁ উঁ।
-          টুবলু!
-          আর একটু মা!
-          সকাল দশটা বাজে।
-          ডক্টর আঙ্কল বলেছে আমায় ঘুমিয়ে থাকতে। যতক্ষণ পারি।
-          একটু ওঠো টুবলুবাবু। আজ দু’টো সারপ্রাইজ আছে।
-          আজ ইনজেকশন নেই?
-          ওহ। তিনটে সারপ্রাইজ। আজ ইনজেকশন নেই। আর তাছাড়াও আরও দু’টো সারপ্রাইজ আছে।
-          আচ্ছা।
-          শুনবে না আর দু’টো সারপ্রাইজ কী কী?
-          মা।
-          কী টুবলুবাবু?
-          ইনজেকশন না দিলে ব্যথা হবে না? খুব ব্যথা মা। খুব।
-          কাঁদে না বাবু। ব্যথা হবে না। ডাক্তার আঙ্কল আজ ওষুধ দেবে। ইনজেকশন বাদ।
-          মা।
-          বাবু।
-          কষ্ট হচ্ছে।
-          আর একটু বাবু। ব্রেকফাস্ট করে নাও। তারপরেই সেই মজার ওষুধ। ব্যথা ছুমন্তর।
-          ছুমন্তর মানে ভ্যানিশ?
-          ঠিক তা নয়। ছুমন্তর হচ্ছে ভ্যানিশ করে দেওয়ার মন্ত্র।
-          যা কিছু ভ্যানিশ করা যায়?
-          ঠিক মত বলতে জানলে ভ্যানিশ করা যায়। এবার বলি? সারপ্রাইজ কী কী?
-          কী?
-          আজ ব্রেকফাস্টে...।
-          আলু সেদ্ধ? কর্ন ফ্লেক্‌স?
-          ধুস। সে’টা কোন সারপ্রাইজ হল টুবলুবাবু?
-          তাহলে?
-          পিজ্জা!
-          যাহ!
-          অন গড!
-          প্রমিস?
-          প্রমিস!
-          ব্রেকফাস্টে পিজ্জা? আমার ক্লাসেও কেউ কোনদিন খায়নি।
-          তুমি খাবে। আজ।
-          যদি বমি হয়ে যায়?
-          ভেবো না বাবু। হবে না। আমি আছি তো।
-          হবে না?
-          হবে না।
-          বমিও ছুমন্তর?
-          সাবাস টুবলুবাবু।
-          মা।
-          হ্যাঁ বাবু।
-          তুমি তিতলিকে বলে দেবে ফোন করে যে আমি আজ ব্রেকফাস্টে পিজ্জা খাচ্ছি? ও হিংসে করবে। বেশ মজা হবে।
-          তিতলিকে? আচ্ছা বেশ। তুমি খেয়ে নাও। আমি ওকে ফোন করে বলে দেব।
-          তিতলি এ বছর ক্লাস থ্রিতে চলে যাবে জানো? আমি টু’তেই থেকে যাব।
-          অত চিন্তা কিসের টুবলু? আমি প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে গিয়ে কথা বলব যাতে টুবলু বাবুর প্রমোশন হয়ে যায়। কেমন?
-          ধুত। এগজ্যাম না দিলে পাশ করা যায় নাকি?
-          তাই তো। মুশকিল হল।
-          কী আর করা যাবে মা। আরও এক বছর ক্লাস টু’তে পড়তে হবে। তিতলিকে তিতলিদি বলে ডাকতে হবে।
-          তোমার দুঃখ হবে?
-          একটু।
-          একটু একটু দুঃখ কি খারাপ?
-          খারাপ না?
-          অনেক অনেক দুঃখ খারাপ। একটু দুঃখ তো থাকবেই।
-          মা।
-          হুঁ বাবু। 
-   ব্যথা করছে। পেটে। গায়ে। মাথায়।
-          সেকেন্ড সারপ্রাইজটা বলি? ব্যথা কমে যাবে।
-          কী সারপ্রাইজ?
-          ভোলু মিত্তির।
-          ভোলু মিত্তির?
-          দেখবে?
-          কে ভোলু মিত্তির?
-          ইয়াব্বড় ভল্লুক। যে মানুষের মত কথা বলে। নাচে। গায়। জড়িয়ে ধরে। চুমু খায়। আদর করে। গান গায়। বানান ভুল ঠিক করে দেয়।
-          ধুস। তুমি বানিয়ে বলছ!
-          একদম না। গড প্রমিস।
-          মাদার প্রমিস?
-          মাদার প্রমিস!
-          মিথ্যে বললে দাদি মরে যাবে কিন্তু।
-          আই নো।
-          ভোলু মিত্তির কোথায়?
-          ডাক্তার আঙ্কল নিয়ে আসছে।
-          ভোলু মিত্তির বড়?
-          ইয়াব্বড়। বললাম তো। আমার মত লম্বা। আমার মতই মোটা।
-          তোমার মত মোটা? হি হি!
-          আমার চেয়েও বেশি মোটা।
-          দারুণ। জলদি ভোলু মিত্তিরকে আনো। খুব ব্যথা করছে মাথায়। খুব খুব খুব।
-          বাবু। আর একটু।
-          পারছি না মা।
-          আর একটু।
-          ভোলু মিত্তিরকে আনো।

**
-          লিপি।
-          আমি পারব না ডাক্তার।
-          তুমি জানো লিপি। এটাই টুবলুর যন্ত্রণা কমানোর একমাত্র উপায়। সায়েন্টিফিক। মেডিক্যালি প্রুভেন। আর আইনত বাধা নেই।
-          ওর বয়স কী ডাক্তার!
-          সে জন্যেই আইনত এ সিদ্ধান্ত তোমার নিতে হবে লিপি।
-          আই ক্যান নট কিল মাই ওন সান! তিলে তিলে ওকে আমি তৈরি করেছি।
-          টুবলুর হাতে এমনিতেও আর বড় জোড় দুই থেকে তিন সপ্তাহ। ভয়াবহ তিন সপ্তাহ। যন্ত্রণা ছিঁড়েখুঁড়ে নেবে ওর শরীর কে।
-          স্টপ ইট ডাক্তার।
-          শক্ত হও লিপি। টুবলু এটুকু সোয়াস্তি ডিজার্ভ করে। ভোলু মিত্তির অত্যন্ত যত্নে তৈরি রোবট। আ টেকনোলজিকাল অ্যান্ড ইমোশনাল মার্ভেল। চুমুতে আদরে স্নেহে হাসিতে যন্ত্রণা ভুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেবে।
-          ঘুম? শেষ ঘুম। আমার টুবলু। পিজ্জা নিয়ে পাগল টুবলু। বিরাট কোহলিকে নিয়ে পাগল টুবলু। থ্রি স্টুজেসে পাগল টুবলু। ডাক্তার।  
-          শান্ত হও লিপি। ভোলু মিত্তির ইউথ্যানেসিয়াতে ভালোবাসা মেশাতে পেরেছে। আদরে ঘুমোতে ক’জন পারে লিপি? দু’সপ্তাহের জন্য অন্তত টুবলুর যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে।  
-          ডাক্তার। একটা রিকুয়েস্ট ছিল। ভোলু মিত্তির আমায় জড়িয়ে ধরতে পারে না?বড্ড যন্ত্রণা যে। বড্ড যন্ত্রণা।

** 

সূত্র ঃ http://www.pravdareport.com/news/world/07-05-2015/130517-suicide-0/

No comments: