- ধরো, একটা সবুজে সবুজ ঢেউ খেলানো প্রান্তর।
- সবুজে সবুজ ডাক্তার?
- এক্সপ্রেশনে বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে?
- সবুজে সবুজ ব্যাপারটা এগজ্যাক্টলি কী?
- মানে পোয়েটিকালি স্পিকিং আর কী। ওই। সবুজে সবুজ তুমি নীলিমায় নীল।
- ওহ। আই সি। বেশ বলে যাও।
- হ্যাঁ। সবুজে সবুজ ঢেউ খেলানো প্রান্তরটা হেলান দিয়ে রয়েছে চুইয়ে নামা নীলে। সবুজে নীলে মিলে একটা অপরূপ প্রাণবন্ত ক্যানভাস তৈরি করেছে। অমিয়, তুমি এ মুহূর্তে সেই ক্যানভাসটা দেখতে পাচ্ছ।
- দেখার চেষ্টা করছি কিন্তু মা তারা ফার্মেসির ক্যালেন্ডারটা চোখের সামনে এমন খচর খচর করে নড়ছে, যে সবুজ নীলের কল্পনাটাকে ঠিক জার্মিনেট করানো যাচ্ছে না।
- ক্যালেন্ডার। সে কী! চোখ বুজে কল্পনা করতে হবে। এলিমেন্টারি।
- প্রিলিমিনারি ইন্সট্রাকশনে তেমনটাই ছিল?
- অফ কোর্স। চিৎ হয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করবে। তারপর নিজের ভাবনার ঘোড়ার রাশ আমার হাতে ছেড়ে দেব।
- হ্যাঁ। হ্যাঁ। মনে পড়েছে। কিন্তু ডাক্তার...।
- ফের কী হল?
- একটা মাইনর প্রশ্ন। আমার ভাবনা যদি ঘোড়ার মত না হয়ে একটা টুকরো এলেবেলে মেঘের মত হয়? অথবা শাড়ির আঁচলের মত ফস্ফসে?
- ঘোড়া পোষ্য। কিন্তু মেঘ? না। আর শাড়ির আঁচল? কভি নহি। আমি সাইকিয়াট্রিস্ট যখন, তখন অন্যের মন ও তার মধ্যেকার চিন্তাভাবনাগুলোকে পোষ না মানাতে পারলে যে আমার মুসিব্বত।
- আচ্ছা বেশ বেশ! এই চোখ বুজলাম। সবুজ ঢেউ খেলানো প্রান্তর গিয়ে মিশছে ঘন নীল আকাশে। বেশ।
- দেখতে পারছ?
- ঘাসের গন্ধ এসে ঠেকছে নাকে ডাক্তার।
- ভালো করে দেখো। ভালো করে। বাতাসে মিহি শীত ছড়িয়ে রয়েছে। জামার ওপরের খোলা বোতামটা এই বারে আটকে নেওয়ার সময়।
- হ্যাঁ। বেশ মনোরম। সুদিং।
- খেয়াল করে দেখ অমিয়, ওই উত্তরের দিকে...।
- রাইট। টুওয়ার্ডস নর্থ।
- ও'দিকটা আচমকা ঢলে পড়েছে নদীতে।
- খরস্রোতা। স্পার্ক্ললিং ওয়াটার।
- ঠিক। নদীর উচ্ছলতা কান পর্যন্ত পৌঁছচ্ছে অমিয়?
- কানের মধ্যে...কানের মধ্যে...।
- কানের মধ্যে কী? অমিয়?
- নদীর কুলকুল...না ঠিক কুলকুল নয় ডাক্তার...ছলছলিয়ে বয়ে চলা নদী...কান বেয়ে তুলতুল করে চলে যায়। পাখির ডাক। আহা!
- কেমন লাগছে অমিয়?
- বিউটিফুল ডাক্তার। বিউটিফুল। শেষ এতটা ফ্রেশ এয়ার ব্রিদ করেছিলাম হিমাচলে।
- নদীর কাছে যদি এগিয়ে যাও...।
- দাঁড়াও। আগে জুতো মোজা খুলি, প্যান্টটা হাঁটু পর্যন্ত গুটিয়ে নিই ডাক্তার।
- পাহাড়ি নদীর ব্যাপারে তোমার উইকনেসটা পুরনো অমিয়।
- ডাক্তার...তুমি আসবে না?
- নদীর দিকে? চলো। ইয়ে, অমিয়।
- কী?
- ওদিকে দেখো।
- কোথায়?
- ওই, বড় পাথরটার পাশে। ওই, পশ্চিমে।
- দু'জনে দেখি দিব্যি আড্ডা জমিয়েছে। ওঁরা কারা? আরে, সাথে দেখছি...।
- স্কচ। মন্দ কী আর। বিকেলে বেলাটা বেশ সেপিয়া হয়ে পড়ছে। তোমার ভালো লাগছে তো অমিয়?
**
- অন দ্য রক্স ব্যাপারটা এখানে কত সাবলাইম লেভেলে আছে ভাবো ডাক্তার।
- নদী ঘেঁষা পাথরে বসে স্কচ পান; অন দ্য রকস। দিজ মাই ব্রাদার, ইজ লাইফ।
- বাতাসে একটা ভালো লাগা ছড়িয়ে আছে, জানো ডাক্তার?
- জানি।
- ডাক্তার? অপর্ণাকে বলেছো?
- অপর্ণাকে?
- ওকে বলেছো?
- কী?
- যে তুমি ওকে ভালোবাসো?
- তোমার কি মাথা খারাপ হল অমিয়? হ্যাভ আনাদার ড্রিঙ্ক।
- আই অ্যাম শিওর দিজ ইজ জাস্ট নট আবাউট লাস্ট। সপ্তাহে একবার লুকিয়ে চুরিয়ে শোয়ার জন্য এত কিছু রিস্ক করার লোক তুমি নও। অপর্ণাও নয়।
- শাট আপ। সাধে তুমি একটা টেরিব্ল সিজোফ্রেনিক কেস? আমি তোমার থেরাপিস্ট। আর বন্ধু। তুমি আমায় সন্দেহ করো? নিজের বৌকে সন্দেহ কর?
- এ জন্যেই আমার তোমাকে ঘেন্না হয় ডাক্তার। এই শেষ বিন্দু পর্যন্ত অভিনয়টাকে সত্যি প্রতিপন্ন করার আপ্রাণ প্রচেষ্টা। ঘেন্না করি তোমায় ডাক্তার।
- শাট আপ।
- ইউ শাট আপ। লেচার কোথাকার। স্কাউন্ড্রেল।
- ও কী! ওই পাথর ছুঁড়ে মারবে নাকি? তুমি কী পাগল হলে অমিয়?
**
- অপর্ণা দেবী।
- বলুন ইন্সপেক্টর।
- আপনার সন্দেহ অমূলক। আপনার স্বামী খুনি নন। হ্যাঁ এটা ঠিক যে খুন হওয়ার সময় একমাত্র উনিই ছিলেন ডাক্তার দত্তর চেম্বারে। কিন্তু সে সময় উনি ছিলেন অজ্ঞান অবস্থায়। সম্ভবত হিপনোটাইজ্ড।
তাছাড়া ভারী কিছু ছুঁড়ে মারা হয় ডাক্তার দত্তর মাথা লক্ষ্য করে। তাতেই ইন্টারনাল হেমোরেজ ও মৃত্যু। অথচ ওর চেম্বারে বা আশেপাশে তেমন কোন ভারী বস্তু খুঁজে পাওয়া যাইনি।
- তবে ডাক্তার দত্ত কি কোন ভোজবাজীতে মারা গেলেন ইন্সপেক্টর? আই নো মাই হাসব্যান্ড। ও একটা শেয়াল। ও সব পারে...।
- কিন্তু এ খুন উনি করেননি অপর্ণা দেবী। করতে পারেন না।
- তাহলে কে...?
- আই অ্যাম সরি বাট দিস ইজ গোয়িং টু রিমেন অ্যাজ আ মিস্ট্রি। এ ফাইল আমরা ক্লোজ করছি।
**
ঝাড়া দু'মাস হিমাচলের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত চষে ফেলতে হয়েছিল অমিয়বাবুকে। শেষে লাহুল-স্পীতির এ অঞ্চলটায় এসে ঠাহর হল; এই সেই জায়গা। সবুজে সবুজই বটে, নীলিমায় নীল। ছলছলে বয়ে চলা নদী। ওই পশ্চিমের দিকে বড় পাথর, দিব্যি দু'জনে মিলে তার ওপর বসে গপ্পগুজব করা যায়।
সে পাথরের আশেপাশে গিয়ে খানিক খুঁজতেই পাওয়া গেল হাতঘড়িটা। সত্তর কি বাহাত্তরের এইচএমটি। অমিয়বাবুর বড় প্রিয়। ব্যান্ডটা ক্ষয়ে গেছিল, তাই পাথরটা তুলে ছুঁড়ে মারার সময় হাত থেকে খুলে পড়ে গেছিল।
প্রিয় ঘড়িটা খুঁজে পেয়ে অনেক নিশ্চিন্ত বোধ করলেন তিনি। বুকের ঢিপঢিপটাও গায়েব।
আহ! আর বাতাসে বেশ একটা বেশ মনোরম ভালো লাগা ছড়িয়ে রয়েছে।