বিকেলের শেষ নরম রোদের কণাটা যখন নরম পায়ে দিনের চৌকাঠ পেরিয়ে গায়েব হয়ে যায়, মাধবীলতার উঠোন নিকোনো ঠিক তখনই শেষ হয়। প্রতিদিন।
সদ্য নেমে আসা অন্ধকারে গা ভাসিয়ে মাধবীলতা বাড়ির পিছনের পুকুরে গিয়ে গা ধুয়ে আসে। এসে নতুন কাপড় গায়ে জড়িয়ে রাধামাধবের সামনে প্রদীপ আর ধুনো জ্বেলে দুদণ্ড বসা তার। নরম মিহি সুরে কোনওদিন হয়তো গেয়ে ওঠে "শ্রী রামচন্দ্র কৃপালু ভজ মন"। কোনদিন বা গলায় থাকে সামান্য কাঁপুনি; "বাপরে নিমাই আমার, যাইও না যাইও না"। মাধবীলতার শাঁখের শব্দে তার অন্ধ প্রতিবেশিনী বৃদ্ধা সৌদামিনীর আঙুল মন্ত্রমুগ্ধতার নিয়মে কপালে এসে ঠেকে; বৃদ্ধা অসময়ে শিউলির গন্ধ পান। নিয়মিত।
সন্ধ্যার শেষ প্রান্তে প্রদীপ হাতে যখন উঠোনের দিকে হেঁটে যায় মাধবীলতা; তখন তার পায়ের আলতা ভেজা-ঘাস-মাটির সুবাসে আরও স্বপ্নালু হয়ে ওঠে হয়তো।
তুলসী মঞ্চের কাছে এসে এক মুহূর্তের জন্য তারার হিসেব বুঝে নেওয়ার ভঙ্গিতে আকাশের দিকে চেয়ে থাকে সে। প্রতিদিন। সন্ধ্যা তখন সমাহিত। পরমুহূর্তেই ব্লাউজের ভিতর থেকে বের করে আনা প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে প্রদীপের আলোয় জ্বেলে নেয় মাধবীলতা। অপেক্ষার ধোঁয়া উড়িয়ে তুলসী মঞ্চে হেলান দিয়ে তার দাঁড়িয়ে থাকা আর ভাবা; "ভালোবাসায় এত অপেক্ষা কেন?"।
গ্রামের অন্য কোন প্রান্তের ট্রান্সিস্টরে; বিবিধভারতীর ফ্রিকুয়েন্সি তখন হয়তো জানান দিচ্ছে; "চুরা লিয়ে হ্যায় তুমনে যো দিল কো"।
No comments:
Post a Comment