ক্যারমের বেস যায় না।
রঙের চার তাস হাতে পেয়েও ট্যুয়েন্টি নাইনে খেলা ধরা হয় না।
ক্রসওয়ার্ড পাজ্লে মন বসে না।
বিপ্লববাবু যথেষ্ট বিব্রত বোধ করেন। গতবছর ঠিক এই দিন থেকে এ অসুবিধের শুরু। কিছুতেই মন বসে না। কিছুই ভালো লাগে না। যন্ত্রের মত অফিস গিয়ে ফাইল ঠেলে আসা। ততটাই যান্ত্রিকতায় সন্ধ্যের ক্লাবে গিয়ে গুলতানি। আর তারপর একরাশ মন ভার নিয়ে বাড়ি ফিরে আসা। মনে অস্বস্তিটা অবশ্য কাউকেই খুলে বলা হয় না; না অফিসের সহকর্মীদের, না ক্লাবের বন্ধুদের। আর এরা ছাড়া তাঁর তিনকুলে আর আছেটা কে?
একা মানুষের পক্ষে এই যন্ত্রণা বয়ে বেড়ানো মামুলি ব্যাপার নয়। তিনি যে ঠিক নিজের মধ্যে নেই, সে'টাই কাউকে বলা হয়ে উঠছে না। আর বলবেনই বা কী করে? গতবছরের এই দিনের ঘটনাটা কি সহজে কাউকে বলা যায়? যায় না। কিছুতেই যায়না।
আর এ'টা যেমন তেমন ঘটনা তো নয়। সেই সে'দিন; পাক্কা এক বছর আগে।
ভোরের দিকের আনন্দবাজারটা চোখের সামনে মেলে ধরতেই বুকের ভিতর একবার ধড়াস করে উঠে সমস্ত চুপচাপ। নেহাত তাঁর বাড়িটা পাড়ার বেয়াড়া কোণে আর আশেপাশেই কোনও পড়শি নেই; তাই বাঁচোয়া।
তারপর থেকে অবিশ্যি বাড়িতে আর ঠিক তিনি একা নন। তবে একা না থাকার সঙ্গীটিও তো ঠিক তেমনই অস্বস্তিকর। সে ঠায় চেয়ারে বসে থাকে একবছরের পুরনো কাগজ হাতে;
অফিসে বেরোবার সময় কী ফেরার সময়,
ক্লাবে যাওয়ার সময় কী রাতে বাড়ি ফিরে,
সর্বক্ষণ সে ঠায় বসে ড্রয়িংরুমের ইজি চেয়ারে।
এ এক বছরে অবশ্য তাঁর সব গিয়ে শুধু হাড়গোড় পড়ে রয়েছে। তবু বাড়িতে সর্বক্ষণ খবরের কাগজ হাতে নিজের কঙ্কালকে দেখতে কেমন লাগে বিপ্লববাবুর। একটা প্রবল পেট খালি করা অসোয়াস্তি। শুধু সাহস করে কাউকে বলা হয় না।
সত্যি কথা বলতে কি এমন বিদঘুটে ব্যাপার কাউকে বলা যায় নাকি?
1 comment:
কাফকার কি তবে পূর্ণজন্ম হয়েছে? বাঙ্গালী হয়ে!
Post a Comment