Monday, June 27, 2016

জাগ্রত

মানিব্যাগে টাকার হিসেব কখনও গড়বড় হয়না অনুপমের। পকেটের ভাঁড়ারে আটআনার হেরফেরও তার নজর এড়িয়ে যেতে পারে না।  অতিমাত্রায় হিসেবী বলে তার সামান্য বদনামও রয়েছে। অনুপম অবশ্য গায়ে মাখে না। এ যুগে হিসেবী না হলে পদে পদে ঠকতে হবে। আর ঠকার মধ্যে আর যাই হোক, বুদ্ধিমত্তা নেই।

কিন্তু আজ সামান্য গড়বড় দেখা দেওয়ায় মেজাজটা গেল বিগড়ে। বাসের ভাড়া মেটানোর পর মানিব্যাগে থাকা উচিৎ ছিলো একটা পাঁচশো টাকার নোট, তিনটে একশো টাকার নোট, দু'টো পঞ্চাশ টাকার নোট, একটা কুড়ি টাকার নোট আর আটটা দশ টাকার নোট। সাথে তেরো টাকার খুচরো কয়েন। সাকুল্যে থাকার কথা এক হাজার তেরো টাকা। কিন্তু রয়েছে এক হাজার সতেরো টাকা। অর্থাৎ দু'টো দু'টাকার কয়েন বাড়তি। বোঝো!

চার টাকা এলো কোথা থেকে? কথা চার টাকা নিয়ে নয়। কথা বেশি কম নিয়েও নয়। কথা হচ্ছে, এ'ভাবে হিসবে গড়বড় হবে কেন? নিজেকে চড় মারতে ইচ্ছে হচ্ছিল অনুপমের। আজ চার টাকা বেশি রয়েছে, কাল চারশো টাকা কম থাকবে অথচ সে টেরটিও পাবে না।

ডিনারের পর পড়ার টেবিলে লেটার প্যাড, ডটপেন আর ছোট ক্যালকুলেটর টেনে নিয়ে বসলে সে। এই গড়বড়ের শেষ দেখে ছাড়তে হবেই।

**

বিরক্তির সাথে যখন লেটার প্যাড আর কলম ছুঁড়ে ফেললে অনুপম তখন রাত পৌনে দু'টো। সিগারেট ধরাতেও ইচ্ছে হলো না, বিরক্তির স্বাদটা মুখে একটানা গোঁত্তা খেয়ে চলেছে। চার টাকা! এলো কোথা থেকে?
বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছিলো অনুপম। উপায়ন্তর না দেখে মানতই করে বসলো মনে মনে ,
"মা কালী, এ হেঁয়ালি কাটিয়ে দাও। আগামী কালই চার টাকা অফিসের পাশের মন্দিরের প্রণামীর বাক্সে ফেলে আসবো। লাঞ্চের সময়। মাইরি। বাঁচিয়ে দাও মা। এ সাসপেন্স না কাটলে ব্লাড শুগার বেড়ে যাবে। মা! মা গো!"।

**

ভোর চারটের সময় বাথরুমের যাওয়ার জন্য উঠেই এক ঝটকায় অনুপমের মাথার জট কেটে গেলো। আজ ক্যান্টিনে লাঞ্চ শেষে কী খেয়াল হলো একটা বাড়তি রসগোল্লা কিনে খেয়েছিলেন। পাঁচ টাকার।  কিন্তু ক্যাশে বিল করানোর সময় সে'টা বাদ গেছে।

প্রবলেম সল্ভ হয়েও হলো না। চার টাকার এক্সেস্‌ থেকে এক টাকার ডেফিসিট। মা তারা ফার্মেসির ক্যালেন্ডারের মা কালীর দিকে তাকিয়ে এক রাশ বিরক্তি ছুঁড়ে দিলে অনুপম।

**

তেঁতুলতলা কালীবাড়িতে অন্তত তিরিশ বছর ধরে পুরোহিতগিরি করছেন বিশ্বনাথবাবু। কিন্তু এমন বিদঘুটে কাণ্ড তিনি বাপের জন্মে দেখেননি। ভোরবেলা এসে মন্দিরে ঢুকতেই দেখেন প্রণামী বাক্সের তালা ভাঙা! অথচ সেখান থেকে টাকা পয়সা বিশেষ সরেছে বলে মনে হলো না। শুধু নজরে এলো একটা চিরকুট

"পুরোহিতমশাই,
মা কে জানাবেন এগ্রিমেন্ট মত এক টাকা নিয়ে গেলাম।  ডেফিসিট কম্পেনসেটেড। বুঝতেই পারছেন টাকাটা ইম্পরট্যান্ট নয়, ইম্পরট্যান্ট হলো ব্যাল্যান্স। আপনি বেশি চিন্তা করবেন না। মা জানেন। 
ইতি, জাগ্রত ভক্ত"।

বাবুর ফোন

- ঘুমোলি?
- না।
- ঘুমোবি না?
- ঘুম আসছে না। তুই ঘুমোসনি কেন?
- এই। ফোন রেখেই শোব।
- বাবু!
- হুঁ।
- আমার কিছু হয়ে গেলে?
- কী হবে?
- খুব খারাপ কিছু একটা। আমি কী না একা! খোকার কী হবে?
- তোর কিছু হচ্ছে না আপাতত।
- যদি হয়?
- খোকা আমার কাছে থাকবে।
- বাহ্‌ রে। তুই কত ব্যস্ত।
- খোকা আর আমি কাজ ভাগ করে নেব'খন।
- গান শোনাবি? খোকাকে? আমি না থাকলে?
- বন্ধু তুমকো ইয়ে গানা সুনায়েগা বিকেলবেলা।
- ঘুরতে নিয়ে যাবি? শনিবার বিকেলে? রোব্বার সকালে? খোকা খুব ঘুরতে ভালোবাসে। ।
- রোব্বারে ভিক্টোরিয়ায় লুচি আলুর দম। পুজোর ছুটিতে দার্জিলিং, গরমের ছুটিতে নৈনিতাল। কভি কভি পুরী। মন খারাপে খড়দার গঙ্গা।
- খোকা অঙ্কে কম নম্বর পেলে?
- দু'জনে প্যারামাউন্টে গিয়ে দু'পেগ ডাব শরবতে দুঃখ ভুলবো।
- খোকার জ্বর হলে ওর বায়নার শেষ থাকে না। 
- জলপট্টি আর পান্নালাল। ক্রসিনের বাপ।
- খোকার কাজু কিশমিশ পোলাও বড় প্রিয়।
- খোকা বেলা দে থেকে পড়বে। পোলাও রেসিপি। লাউড্‌লি। আমি স্যান্ডো গেঞ্জি পাজামায় রান্নাঘর দাপিয়ে বেড়াবো।
- বড় চিন্তা রে আমার। খোকার জন্য। সে আমায় ছাড়া ঘুমোতেই চায় না।
- তোর শাড়ি দিয়ে কাঁথায় মলাট দেবো। সে কাঁথা টেনে খোকা আমি ঘুমিয়ে কাদা হবো।
- বাবু।
- হুঁ।
- তুই বড় ভালো। খোকা তোর মত হবে?
- যাস না। তুই গেলে আমরা যদি বখে যাই?

Wednesday, June 22, 2016

অরিন্দমবাবুর প্রত্যাবর্তন

- অরিন্দমবাবু এখানেই থাকেন কী?
- নেমপ্লেটটা দেখেই ডোরবেলটা বাজিয়েছেন আশা করি। 
- আপনিই...?
- দরকারটা বলুন।
- আমি স্বপন চক্রবর্তী। দূর্গাপুর টাইম্‌স থেকে আসছি। 
- দূর্গাপুর টাইম্‌স?
- তেমন ভাবে সাড়া জাগিয়ে  না হলেও, গত বারো বছর ধরে কিন্তু এ কাগজ নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে। এই, এলাকার খবরাখবর নিয়ে। সপ্তাহে দু'দিন। শনি আর বুধ। আমি সেখানেই রিপোর্টিংয়ের কাজ করছি। কিছু কপিও সঙ্গে করে এনেছি। 
- তা দূর্গাপুর টাইম্‌স থেকে আমার বাড়িতে লোক পাঠানোর দরকার পড়লো কেন?
- আসলে চিতার ওপর থেকে ফিরে আসা মানুষ তো খুব একটা পাওয়া যায় না। দূর্গাপুর কেন, গোটা বর্ধমান জেলাতে গত দশ বছরে আপনার মত মিরাকেল ম্যান কেউ এসেছে বলে মনে তো হয় না। 
- এ খবরটা এরই মধ্যে এতটা ছড়িয়ে পড়লো?
- রিপোর্টার মানুষ স্যার। এটুকু খবর না রাখলে তো...। তবে দুম করে অ্যাপয়েন্টমেন্ট না নিয়ে চলে আসাটা আমার অন্যায় হয়েছে। কিন্তু কাইন্ডলি যদি ছোট একটা ইন্টারভিউ দেন এই মিরাকেলটার ব্যাপারে...।
- ইন্টারভিউ?
 - আমরা চাই আপনার এই মিরাকুলাস কামব্যাকটাকে একটু তুলে ধরতে। ক্যালক্যাটা বেস্‌ড মিডিয়া হাউসগুলো তো বেঙ্গলকে প্রোজেক্ট করবে না। আমরাই যতটুকু পারি।
- না মানে...। 
- না বলবেন না স্যার...এমন কামব্যাক...সে'বার সাউথ আফ্রিকায় সৌরভ যখন...।
- ভিতরে আসুন। 
- ওবলাইজ্‌ড স্যার। ওবলাইজ্‌ড। 

**
- কী নাম বললেন যেন আপনার রিপোর্টারবাবু?
- আজ্ঞে স্বপন চক্রবর্তী। 
- চা চলবে?
- না না, আপনি ব্যস্ত হবেন না স্যার। 
- বাঁচালেন। হ্যাঁ বললেই কাজ বাড়ত।
- মোবাইল ফোনের ভয়েস রেকর্ডার অন করলে আপত্তি নেই তো?
- করতে পারেন। তবে আমার আবার আধ ঘণ্টার মধ্যে ডিনারের সময়। সেভেন থার্টির ওপারে গেলেই বদহজম। আর আটটার মধ্যে বিছানায়। এমনিতেও শরীরের ওপর দিয়ে গত আটচল্লিশ ঘণ্টায় যা ধকল গেলো, শ্মশান যাতায়াত তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। 
- এই রেকর্ডার অন করলাম। 
- বেশ। 
- এবারে অরিন্দমবাবু, নিজের ব্যাপারে যদি দু'চার কথা বলেন। 
- নিজের ব্যাপারে আর কীই বা বলার রয়েছে! স্কুল মাস্টারি থেকে রিটায়ার করেছি আজ বছর দশ হলো।  মিসেস্‌ মারা গেছেন গত অগস্টে। এক ছেলে, দুই মেয়ে। ছেলে রয়েছে আমেরিকায়, সফটওয়্যারে রয়েছে। বড় জামাই আর বড় মেয়ে দু'জনেই ডাক্তার, বম্বেতে  সেটল্‌ড। আর ছোট মেয়ে কলকাতায়, সে নিজে প্রফেসর। আনম্যারেড। 
- গত শনিবার, অর্থাৎ গত পরশু সন্ধ্যাবেলা দুর্ঘটনাটা ঘটে তাই তো। 
- দুর্ঘটনা বলতে আচমকা বুকে ব্যথা। পাশের ফ্ল্যাটেই থাকেন ডাক্তার বসু। ফরচুনেটলি তিনিও তখন ফ্ল্যাটেই ছিলেন। আমার বাড়ির কাজের লোক বিকাশ, সে চিৎকার করতেই ডাক্তার হুড়মুড় করে ছুটে আসেন।  কিন্তু ডাক্তার আসার তিরিশ সেকেন্ড মত আগেই বুকের ব্যথাটা অসহ্য হয় আর আমি সংজ্ঞা হারাই। জ্ঞান যখন ফেরে তখন আমি চিতার ওপর শুয়ে। 
- মাই গুডনেস্‌।
- অ্যাকর্ডিং টু ডাক্তার বসু আমার পাল্‌স নাকি কমপ্লিটলি মিসিং ছিল। মারা যাওয়ার সমস্ত সাইন চেক করেই তিনি ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন। 
- রোমহর্ষক! আমার শুনেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে...। 
- তবে আমার বরাত জোর আছে! কপাল জোরে আমার বডি...থুড়ি...আমি শ্মশানে পৌঁছনোর কিছুক্ষণ আগেই ইলেকট্রিক চুল্লিটা খারাপ হয়ে যায়। যদি না হত, তাহলে আর আমার প্রত্যাবর্তন ঘটত না। ইলেকট্রিক চুল্লির ভিতর জ্যান্ত হয়ে আড়মোড়া ভাঙলেও তো সে'টা আর কারুর দৃষ্টিগোচর হত না। 
- মাই গুডনেস! মিরাকেলের বাবা! আচ্ছা অরিন্দমবাবু, প্রথম যখন জ্ঞান  ফিরল, মানে যখন আপনি চিতার উপর টানটান...তখনকার এগজ্যাক্ট অনুভূতিটা যদি আমাদের পাঠকদের একটু খুলে বলেন। 
- জ্ঞান ফিরতেই...ওই দেখো। সাতটা বাজতে চললো, এখন আবার কে কলিং বেল বাজালে! কী মুশকিল! এক মিনিট বসুন স্বপনবাবু!। যেই হোক বিদেয় করে আসি। 

**

দরজাটা খুলতেই অরিন্দমবাবুর গা'টা গুলিয়ে উঠলো। দরজার ও পাশে দাঁড়ানো দু'জন তাঁর বিশেষ ও বিকট ভাবে পরিচিত। 

বজ্রাহত অরিন্দমবাবু অতিথিদের মুখের ওপর সদর দরজা দমাস করে বন্ধ করে এক ছুটে ড্রয়িং রুমে এসে পৌঁছে দেখেন সাংবাদিক স্বপন চক্রবর্তী সোফায় অবিচল চিত্তে বসে নিজের কাগজের কপি পড়ে চলেছেন। 

- কী ব্যাপার অরিন্দমবাবু? এমন উদ্ভ্রান্ত দেখাচ্ছে কেন আপনাকে? 
- এ'সব কী হচ্ছে? কে আপনি? বুড়ো মানুষ ভেবে আমায় চমকাতে এসেছেন? 
- আহ! এত উত্তেজিত হচ্ছেন কেন অরিন্দমবাবু? শান্ত হয়ে বসুন। 
- ইডিয়ট! গেট আউট। 
- আরে যাব কোথায়? আমি তো অলরেডি বাইরে দাঁড়িয়ে আছি, আপনি দেখলেন তো। 
- এ'সব কী? আপনি কে স্বপন বাবু? 
- আপনি যা, আমিও তা! তবে ইন্টারভিউয়ের ব্যাপারটা খাঁটি কথা। আমাদের মত একজন হয়ে ফেরত আসা তো চাট্টিখানি কথা নয় অরিন্দমবাবু! সে'টাও মিরাকেল। কংগ্রাচুলেশনস। 
- আপনাদের মত একজন মানে?
- আন-ডেড্‌। 
- কী?
- অ-মৃত। আন-ডেড। এই যেমন আপনি। চিতা থেকে উঠে এলেন দিব্যি। জেনুইন মড়াই ছিলেন, ট্রাস্ট মি। ডাক্তার বসু বিশেষ ভুল করেননি। 
- আমি ভূত? আ...আপনিও...?
- ভূত? তা ঠিক না। মড়া। জ্যান্ত মড়া। ইংরেজিতে একটা মোক্ষম ইয়ে আছে আমাদের; জম্বি। তবে বিদেশী সিনেমায় যা সব দেখায়, তেমন বিটকেল যে আমরা নই, সে'টা বেশ টের পাচ্ছেন আশা করি।  
- আনডেড? জ্যান্ত নই?

**

"জানো বাবা! আনডেড ইজ বেটার দ্যান লাইফ", লিপির কণ্ঠস্বর ভেসে এলো কিচেনের দিক থেকে। ছোটমেয়ে, যে কলকাতায় থাকে। প্রফেসর। 

"আরে অত কী ভাবছ? প্রফেসারি আমি এখনও করি। এই যেমন তোমার গতকাল পাড়ার ক্লাবে আড্ডা দেওয়া। তুমি চিতা থেকে ফিরেছ। আমি একটা কারক্র্যাশ থেকে ফিরেছি। সে জন্যেই আদত আর বিয়েটা...! যাক গে! তোমার পাশে বসা স্বপনবাবু মাউন্টেনিয়ারিং করতে গিয়ে ফেরত আসতে না পেরেও এসেছেন। সবাই পারে না। আমরা পেরেছি। আমরা অ-মৃত। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার কী জানো? আমাদের চলাচল অবাধ! অবাধ শুধু নয়; এক সাথে একাধিক জায়গায় বিচরণ করাও সম্ভব!  তবে সে'টা  অ-মৃত সমাজের বাইরে কাউকে জানতে দেওয়া যায় না। এখন যেহেতু তুমিও...আমাদেরই একজন...তাই। আর এদ্দিন আমি তোমার কাছে বেশি আসতাম না তোমার ক্রমাগত আমার বিয়ে না করা নিয়ে ঘ্যানঘ্যান অ্যাভয়েড করার জন্য... এখন আমার সে চিন্তা অন্তত গেছে"। 

**

বীভৎস স্বপ্নটা ভাঙতেই অরিন্দমবাবু টের পেলেন তিনি চিতার ওপর শুয়ে! তাঁকে ঘিরে চারদিকে একটা অস্বাভাবিক হৈচৈ। 

**
- আসতে পারি?
- আসুন। 
- আপনিই স্বপনবাবু? দূর্গাপুর টাইম্‌সে এডিটর?
- এডিটর নই। রিপোর্টার। বলুন কী করতে পারি?
- আমি এ শহরেই থাকি। আমার নাম অরিন্দম সামন্ত। নিজের একটা মিরাকুলাস এক্সপিরিয়েন্স শেয়ার করার জন্য আপনাদের অফিসে আসা। যদি আপনারা সে'টা ছাপার যোগ্য মনে করেন...। ক্যালক্যাটা বেস্‌ড মিডিয়া হাউস তো আর মফস্বলকে বিশেষ পাত্তা দেয় না। তাই ভাবলাম আপনারা যদি...।
- কেসটা কী? 
- শুনলে আপনিও উত্তেজিত হবেন বৈকি! তবে...।
- তবে?
- তবে খবরটার ডিটেল্‌স পেতে হলে এখুনি একবার আমার বাড়ি যেতে হবে...আমার সঙ্গে গাড়ি রয়েছে। 

** 

রিপোর্টার স্বপনবাবু এত সহজে রাজী হবেন, সে'টা ভাবা যায়নি। তাঁকে নিয়ে যখন নিজের ফ্ল্যাটের দরজার সামনে পৌঁছলেন অরিন্দমবাবু, তখন সন্ধ্যে পৌনে সাতটা বেজে গেছে। অদ্ভুত থ্রিল হচ্ছিল যখন নিজের সদর দরজার কলিং বেলটা বাজালেন তিনি।

নিজে ফাঁকা ফ্ল্যাট লক করে বেরিয়েছিলেন!

তাঁর চিতার ওপরে শুয়ে হ্যালুসিনেশনটা কি স্বপ্ন ছিল? না কি...! দরজা খোলা না খোলার ওপর সমস্ত নির্ভর করছে।  

বেশিক্ষণ চিন্তা করতে হলো না। কয়েক সেকেন্ডের মাথায় দরজা খুলে অরিন্দমবাবুর মুখোমুখি হলেন অরিন্দমবাবু এবং তৎক্ষণাৎ তাঁর বুকে রাখা বাহাত্তর কিলো ওজনের পাথরটা সরে গেলো। তিনি জানেন ঘরের ভিতর যে ক'জন রয়েছে তাঁর মধ্যে লিপিও আছে। স্বপন ছোকরা বাতেলাবাজ কিন্তু মন্দ নয়, লিপির সাথে মানানসই। মড়া দুটোর একটা হিল্লে হলে তিনি মরে শান্তি পান। এ'টুকুই আশা।  

Sunday, June 19, 2016

মনোময় মিত্তিরের টার্গেট

বালি, রাতের শীতলতায় নরম বালি। ঢেউ ঝাপটে পড়ছে; একটানা। যেমনটা নিয়ম। মাঝে মাঝেই কয়েকটা ঢেউয়ের বাড়তি দাপট ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে বিমলবাবুর পাজামার নিচের দিকটা। পায়ের পাতা ভিজে যাওয়াটা মন্দ লাগছিল না। দু'হাত ভাঁজ হয়ে মাথার নিচের বালিশ হয়েছে। আকাশ কালোয় কালোয় বুকে চেপে বসছিল ক্রমশ, কানে আছড়ে পড়ছিল বঙ্গোপসাগর।

পুরী শহরটা এ প্রান্তে এসে  স্তিমিত হয়ে পড়ে। এখানে বিমলবাবুর চিত হয়ে শুয়ে থাকাটা দৃষ্টিকটু নয় মোটেও। অল্প ঘোর লাগে চোখে, বুকে। 
একটা তারার চিকমিকের অসোয়াস্তিতে চোখ বন্ধ করেন বিমলবাবু। 
খানিকক্ষণ আগে যে খিদে-ভাবটা মাথাচাড়া দিচ্ছিল সে'টাকে দাবিয়ে দেওয়া গেছে। মানি ব্যাগে সাতাশটাকা রয়েছে, দিব্যি রুটি সবজী হয়ে যেতে পারে। তবে হলেই তো হতে দেওয়া যায় না। অবিশ্যি এমার্জেন্সির জন্য ঝোলানো সাইডব্যাগে দু'টো বিস্কুটের প্যাকেট আর আধ বোতল জল রয়েছে। 

পকেট হাতড়ে বিড়ি বের করে আনেন বিমলবাবু। সমুদ্রের হাওয়ার ঝাপটা বাঁচিয়ে বিড়িটা ধরল চার নম্বর দেশলাইরে কাঠিতে। বিড়ি জাতে কড়া কিন্তু চুরুট মাফিক শুধু ফুসফুস পলিউট না করে বুকের আনাচেকানাচে কিছুক্ষণ অন্তত ঘোরাফেরা করে। 

পাজামাটা হাঁটু অবধি যখন ভিজল, তখন বিমলবাবু ঠাহর করতে পারলেন যে রাত বাড়ছে। কালো আকাশটা তখন নিচের দিকে নামতে শুরু করেছে। 

বিড়িতেও খিদে কমে। বিমলবাবু জানেন। 

**

ঝিমটি যখন ভাঙল তখন হাতঘড়িতে সময় রাত পৌনে তিনটে। পিঠ ভিজে গেছে। একরকম হুড়মুড় করে উঠে পড়তে হলো বিমলবাবুকে। পাঞ্জাবির পকেটে রাখা বিড়ির প্যাকেট বড্ড ভিজেছে, মিনিমাম ছ'টা বিড়ি জাস্ট জলে গেলো।  

**
- আসুন। 
- কী ব্যাপার? আমায় এমন ভাবে ধরে আনার মানেটা কী?
- অত রাত্রে বীচে কী করছিলেন?
- শুয়েছিলাম। 
- সে'তো হাবিলদার দেখেইছে। গাঁজা?
- গাঁজা?
- কী টানা হয়? 
- কী টানব?
- ন্যাকামি হচ্ছে?
- কীসের ন্যাকামি? আমি গাঁজা-টাজা টানি না।
- হেরোইন চরস? থাবড়ে কথা বের করে নেবো। 
- আরে কী মুশকিল। 
- মুশকিলের আর দেখলেনটা কী? স্ট্রেট চালান করে দিচ্ছি। তারপর বুঝুন ঠ্যালা। 

**

মনোময় মিত্তির যখন পুরী এক্সপ্রেসের এস-ছয়ের  লোয়ার বার্থটায় বসলেন, তখন তার মুখে স্বস্তির হাসি।

- তাহলে চলি দারোগাবাবু!
- দারোগা বলে আর লজ্জা দেওয়া কেন। গতকালই আমার রেসিগনেশন এক্সেপ্টেড হয়ে গেছে। বিমলবাবু বললেই ল্যাঠা চুকে যায়। 
- বেশ, এবারে তাহলে টাইম টু সে গুডবাই বিমলবাবু। আপনার আতিথেয়তা  ভুলবার নয়। 
- সরি, আপনাকে প্রথম দিন জেলের লপসি খেতে হয়েছিল। 
- আরে সে'সব কবে ভুলে মেরে দিয়েছি।
- তবে মনোময়বাবু, যা দিয়ে গেলেন, তা যে সত্যিই ভুলবার নয়। আমি কী বলে যে আপনাকে...। 
- আমায় সে'বার দিয়েছিলেন জলপাইগুড়ির সমাদ্দার। তিনি পেয়েছিলেন বেনেটোলার দত্ত বলে কারুর থেকে। এভাবেই যুগ যুগ ধরে চলে আসছে।
- আহ, সব পাওয়ার চেয়ে বড় পাওয়া। 
- বটেই তো। আপনাকে এনভি করতে হচ্ছে। 
- আর এনভি করে লাভ নেই! ডিল ইজ আ ডিল। ভদ্দরলোকের এক কথা!  আমার সমস্ত সম্পত্তি একবার এক্সেপ্ট করে নিয়েছেন, আর রিফিউজ করতে পারবেন না। তবে ইয়ে...মিস্টার মিত্তির...আপনার দেওয়াটুকু যে কোনওদিন ভুলবার নয়। রাতের সমুদ্দুর আর নির্ভার পকেট, যে পেয়েছে সেই জানে। 
- আহ! বেশ বেশ! ডিল তো ডিল। তবে মনে রাখবেন। এ আনন্দধারা অরণ্যদেবের বংশের মত। বেনেটোলার দত্ত যেমন দিয়েছিলেন জলপাইগুড়ির সমাদ্দারকে, তার বদলে ধারণ করেছিলেন তাঁর সম্পত্তির বিষ।  বছর দশেক সে মহানন্দ ভোগ করার পর জলপাইগুড়ির সামাদ্দার সে আনন্দ ভাণ্ডার আমায় সঁপে যান, বদলে ধারণ করে নেন আমার যাবতীয় সম্পত্তির বিষ। আমি নিরন্তর এ আনন্দ ভোগ করলাম বছর দশেক। এবার নতুন অরণ্যদেব, থুড়ি, সমুদ্রদেবের পালা; আপনাকে এ অপার আনন্দ ভোগের অধিকার দিয়ে গেলাম। যন্ত্রণা বলতে; আপনার সম্পত্তির গরল নিজের কণ্ঠে ধারণ করে যেতে হচ্ছে, তবে পিছপা হলে তো চলে না। দশ বছর পর আপনাকেও এ আনন্দ অন্য কাউকে সঁপে যেতে হবে। 
- হবেই?
- হবেই। 
- বেশ। সে না হয় দশ বছর পর দেখা যাবে। তদ্দিন তো এ রাত্রে সমুদ্র আমার। আমারই। 
- বিলকুল। যাক দারোগাবাবু...ইয়ে...থুড়ি...বিমলবাবু...আর ট্রেন ঘেঁষে দাঁড়াবেন না। সিগনাল দিয়ে দিয়েছে বোধ হয়। আপনি এবার আসুন। 
- আসি আমি মিত্তিরবাবু। কেমন? এখান থেকে তো সোজা সেই সমুদ্রের ধারে গিয়ে থেবড়ে শুয়ে পড়া, টিল সানরাইজ। অতঃপর মাধুকরী। 
- কেমন? মনে স্ফূর্তির ফ্লো'টা টের পাচ্ছেন তো বিমলবাবু?
- বিলক্ষণ। বিলক্ষণ! 

**

ট্রেন হাওড়ায় ঢুকল আধ ঘণ্টা দেরী করে। অবশ্য সবিশেষ তাড়াহুড়োয় ছিলেন না দুনিয়ার একমাত্র রাত-আকাশ-সমুদ্রের সেল্‌সম্যান মনোময় মিত্তির। এ ব্যবসাকে স্ক্যান্ডালাস্‌ বলে ছোট করতে মনে সরে না তাঁর। 
এ'টা সেল্‌স; যেখানে টার্গেট বলতে দশ বছরে একটা মক্কেল।  

বিমল দারোগার কল্যাণে, দিব্যি আগামী বছর খানেক বিড়ির বদলে চুরুট-মেজাজি করে কাটানো যাবে'খন। 

Saturday, June 18, 2016

ওয়ান ফর দ্য রোড

- ওয়েটার, হুইস্কি লাও।
- সোডা ওয়াটার সাব?
- কাঁহেকা সোডা? কাঁহেকা ওয়াটার? হামকো পাতি বাঙ্গালি সমঝা হ্যায়? বারাফ লাও..বারাফ!
- সাথ মে কুছ স্ন্যাকস মঙ্গাউ সাব?
- স্ন্যাক্স? ইউ মিন চাখনা?
- জী সাব। কেয়া লাউ?
- লাউ চিংড়ি,  মিলেগা ভাইটি?
- জী সাব?
- লাউ চিংড়ি। মিলেগা?
- নহি সাহাব। চিকেন ফ্রাই লাউ?
- যা খুশি দো প্লেট লেকে আনে কা। স্ট্রিক্টলি নন-ভেজ।
- জী সাব।
- আউর সুনো!
- জী সাব?
- আপকা মিউজিক সিস্টেম মে ইয়ে কেয়া গানা বজতা?
- গজল সাব। পঙ্কজ উদাস।
- শ্যামল মিত্তির মাংতা।
- জী সাব?
- শ্যামল মিত্র চলানেকা, আমি চাঁদেরই সাম্পান যদি পাই...যদি পাই...। ঠিক হ্যায়?
- জগজিৎ সিং চলেগা সাব?
- জিন্দেগী ধূপ, তুম ঘনা সায়া?
- জী সাব।

**

- সাব!
- ওয়েটার ভায়া। আউর এক পেগ মাঙতা!
- বার বন্ধ হো গয়া সাব!
- ওহ।
- ইয়ে রহা আপকা বিল সাহাব।
- কেতনা?
- সেভেন্টিন হান্ড্রেড অ্যান্ড থার্টি সাহাব।
- এধর দেখো। এধর।
- কিধর সাব?
- মেরা পাঞ্জাবি কে ডান পকেট। মানিব্যাগ ইধর হ্যায়। নিকালো।
- ইয়ে হ্যায় সাব। মানিব্যাগ।
- উসমে সে চারটে পাঁচশোওলা নোট নিকালনে কা।
- জী সাব।
- আউর সুনো!
- মানিব্যাগ পকেট মে ওয়াপিস রাখনে কা।
- জী সাব। রখ দিয়া।
- আউর সুনো।
- চেঞ্জ ওয়াপিস নহি লানেকা।
- থ্যাংক ইউ সাব।
- ওয়েটার সাব।
- জী সাব?
- আপকা নাম?
- বুলা সিং সাব।
- থ্যাংক ইউ বুলা সিং।
- জী সাব।
- বেস্ট উইকেন্ড বুলা সিং। দি বেস্ট।
- জী সাব।
- থ্যাংক ইউ। ইভিনিং খতম। লেকিন ইয়ে ভালো ফিলিং, উইল নট গো। থ্যাংক ইউ।
- এবারে প্লেট গেলাস সাফ করে নিই বাবা?
- কর লো।
- এখনও হিন্দী?
- চড়ে গেছে রে। তুই যেভাবে বুলা সিংয়ের রোলে সার্ভ করলি। যে ভাবে সোফাটাকে ড্রয়িঙয়ে কনভার্ট করলি। মাস্টারক্লাস। হুইস্কিতে একটা ব্যাপার আছে বুলা সিং। বোতলটা দেখেই মাথায় একটু ঝিম লেগে যায়।
- অনেক হলো। এবার রুহুআফজার বোতলটা ছাড়ো।
- চিকেনটা দিব্যি ভেজেছিলিস।
- থ্যাঙ্ক ইউ সাব।
- হেহ হেহ।
- সোনে চলে সাব?
- ওয়ান ফর দ্য রোড বুলা সিং?
- বার বন্ধ হো গয়া সাব।
- ইউ আর দ্য বেস্ট বুলা সিং।
- ইউ আর দ্য বেস্ট মাতাল বাবা। এভার।
- আই লাভ ইউ বুলা সিং।
- আই লাভ ইউ টু বাবা।
- আই লাভড হার টু বাবু।
- জানি।
- আই অ্যাম সরি, তুই একা আমার পাগলামিতে বড় হলি। নট ফান। আই নো।
- সাব। বার বন্ধ হো গয়া, লেকিন পঁচাশ কা টিপ অউর মিলেগা তো এক পেগ ম্যানেজ হো সকতা হ্যায়।
- তুম লাজওয়াব হো বুলা সিং।
- আপ ভি সাব। আপ ভি।

Thursday, June 16, 2016

ডস ও দাস

ঘনশ্যাম দাসকে সচরাচর এতটা বিব্রত দেখা যায় না। ঠোঁটের ঝুলন্ত সিগারেটটা ধরাতে ভুলে গেছেন বেমালুম, অকারণে ফিল্টার চিবুতে চিবুতে একটানা পায়চারি করে চলেছেন। দু'এক পশলা বৃষ্টি সবে হয়ে গেছে, বাতাসে মিহি ছ্যাঁতছ্যাঁত; অথচ ঘনশ্যামবাবুর কপাল জুড়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম। সরু গলিটার সান্ধ্য অন্ধকার বা মশাদের মঁমঁকে পাত্তা দেওয়ার প্রয়োজনটুকুও বোধ করছিলেন না তিনি। ক্রমাগত ঘড়ির দিকে তাকাতে হচ্ছিল; সময় যেন কাটতেই চায়না। বুকের ভিতরে এমন বীভৎস ধুকপুকুনি বোধ হয় গেল বার ইকুয়েডোরেও অনুভূত হয়নি।
"ঘনা নাকি?"; এ কণ্ঠস্বর ভুল করার উপায় নেই। চকিয়ে ঘাড় ঘোরাতেই ঘনশ্যামবাবু তাঁকে দেখতে পেলেন। সেই সুপরিচিত ঢলা পাঞ্জাবি আর পাজামা। গায়ে জড়ানো শাল। হুড়মুড় করে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে প্রথমে ঢিপ করে প্রণামটা সেরে নিলেন ঘনশ্যাম।
- "কেমন আছেন স্যার?"।
- "আমি? দিব্যি। ভেবেছিলাম হয়তো আমাকে কারও মনে নেই। কিন্তু এখন দেখছি আর কেউ না হোক, জুনিয়র দাস আমায় ভোলেনি"। 
- "ঘনশ্যাম বানান ভুলতে পারি স্যার, কিন্তু আপনাকে ভুলি কী করে? আপনি যে ছিলেন এই গ্রামেতেই। আপনার জন্য সামান্য কিছু এনেছি স্যার। এ চ্যালাকে প্লিজ রিফিউজ করবেন না"।

সিনিয়র দাসের পাঞ্জাবির ঝোলা পকেটে ঘনশ্যামবাবু নিজের সমীহ-কাঁপুনি মাখানো হাতে সিগারেটের সদ্য কেনা প্যাকেটটা গুঁজে দিলেন। অমনি সুখেনবাবুর চওড়া হাসিতে গলির অন্ধকার লোপাট হয়ে গেলো।

আট জন

ব্রজমোহন
বিষ মাখানো ছুঁচের ডগাটা অনেক চেষ্টা করেও নিজের হাতে ফুটিয়ে দিতে পারলেন না ব্রজমোহন।
এত জ্বালা, এত যন্ত্রণা; তবু আত্মহত্যাটা এখনও করা হয়ে উঠলো না। এবারেও হল না। তবে আত্মহত্যা না হোক, সুইসাইডের একটা শেষ চেষ্টায়; ছুঁচটাকে পাশে সরিয়ে রাখলেন ব্রজমোহন।
সান্ত্বনা পুরষ্কারের মত, 
মুখ বেয়ে ওঠা শেষ রক্তধারার মত; 
উত্তেজিত ব্রজমোহনের ঠোঁটের পাশ দিয়ে পানের পিক গড়িয়ে পড়লো।


নির্মল 
মাথার ওপরের গাম্বাট মেঘের ড্যালাটার নাম কোনি দিলেন নির্মল চপওলা।
মুঠো শক্ত করে বলা "ফাইট কোনি ফাইট" যদি মেঘমল্লারের কাজ করে; এ'টুকুই আশা।


পহলাজ
একদিন হয়েছে কী, পহলাজবাবু ডাউন কাটোয়া লোকালের জানালার সিট নিজের রুমাল পেতে দখল নিয়েছেন। কিন্তু মুনমুনদেবী রুমাল রিজার্ভেশন পাত্তা না দিয়ে দিব্যি বসে পড়েছেন সে সিটে।
তাই দেখে পহলাজবাবু তেলেবেগুনে চিড়বিড় হয়ে চিৎকার করে উঠলেন;
"সেন সর, সেন সর, সেন সর, সেন সর"!!!!!


অরুন মার্ফি
চেনা কবিতায় নতুন শব্দরা আবছায়া খুঁজে নিলো।
নতুন কবিতাটা না পড়েই বসে পড়তে হল অরুন মিত্রকে।
কারণ ততক্ষণে;
ফ্লাইট থেকে নেমে কনভেয়ার বেল্টের দিকে হাঁটতে শুরু করেছেন মার্ফি।

বাল্মীকি 
প্রফেসর বাল্মীকি সুকুমার সমগ্রটা বগলদাবা করে টাইম মেশিনে ওয়াপিস যাত্রা শুরু করলেন।
পেজমার্কটা তখন লক্ষণের শক্তিশেলের পাতায় গুঁজে রাখা।


বনলতা
সে'বার।
ফর আ চেঞ্জ।
হাজার বছরের পথ হাঁটলেন সেন বনলতা।

আর হাঁটা শেষ হলে ফস্ করে লিখলেন;
"...থাকে শুধু অন্ধকার, 
মুখোমুখি বসিবার 
রায় সুকুমার"।


অনুপ
ভূতে বিশ্বাস প্র‍্যাক্টিস করছিলেন অনুপবাবু।
টেবিলে ছড়ানো ছিল কিছু ভূতুড়ে গল্পের বই, কিছু তান্ত্রিকপন্থার পুরোনো পুঁথিপত্র আর খান চারেক খুলি।

ঘণ্টা তিনেকের একনিষ্ঠ চেষ্টা করার পরেও যখন বুকে ভূত-বিশ্বাস দানা বাঁধতে শুরু করেনি, তখন একরাশ বিরক্তি নিয়ে টেবিল ছেড়ে উঠে এসে আয়নার সামনে দাঁড়ালেন অনুপবাবু।
আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে না পেয়ে সামান্য ভূত-বিশ্বাস গোছের গন্ধ নাকে এসেছিল বটে; তবে তা টিকলো না।
উপায়ন্তর না দেখে এস-ও-এস হাঁকলেন অনুপবাবু; মিতাকে লেখা না-পোস্ট করা প্রেমের চিঠির গোছাটা তাক থেকে নামালেন তিনি। খান দুই গদগদ লাইন পড়েছেন কি পড়েননি; অমনি ভূতের ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে শুরু করলেন আদিসপ্তগ্রামের অনুপ গোস্বামী।

অমলকান্তি
একটা নরম অমলেট চেয়েছিলেন অমলকান্তি। রোদ রঙা, যার গায়ে অল্প লাল পেঁয়াজ কুচির ছোপ ছোপ।
**
সসপ্যানের বুকে গলগল করে ছড়িয়ে পড়া কুসুমে চিড়বিড় ভালোবাসেন অমলকান্তি।
**
ভেবে দেখলেন অমলকান্তি। শালপাতার দোনার স্পর্শে অমলেটে সুর যোগ হয়।
**
মাখন ভাতের তাপে অমলেটে লজ্জা আসে। আসে কবিতা। মনকলমের খসখসে সে অমলেটের বুকে গল্প জমা হয়।

খুচরো দুই


- ওহ যৌনমিলন, কী গরমটাই না পড়েছে!

- যা বলেছেন। তার ওপর এই যৌনমিলনরত হিউমিডিটি।
- আর তার ওপর অফিসের এই প্রেশার আর বসের ট্যান্ট্রামস। উফ, যৌনমিলনরত জারজ সন্তান!
- বসের ট্যান্ট্রাম? তুমি পাত্তা দাও নাকি? আমি তো একটা উড়ন্ত যৌনমিলনও দিই না।
- কী যে করি! আমার নেচারটাই ও'রকম। পাত্তা না দিয়ে থাকতে পারিনা। আমার জীবনটাকে সম্পূর্ন যৌনসম্ভোগের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।



- ভদকা চলে?
- নো।
- আবসোলুট রয়েছে কিন্তু।
- নো।
- হোয়াই?
- আলুর উলটো ব্যবহার মদে, সোজা ব্যবহার দমে।

মুমিনের স্বীকারোক্তি

- বাবা। 
- কিছু বলবি বাবলু?
- ঘুমোওনি যে!
- এ'টা বলতে রাত্তির দেড়টায় উঠে এলি?
- না।
- তাহলে?
- তোমার মুমিনকে মনে আছে?
- মুমিন?
- মুমিন। সেই যে। হৃষীকেশের সেই ছোট্ট ধাবাটার রাঁধুনি।
- হৃষীকেশ। সে তো অনেকদিন আগেকার কথা। তাছাড়া সেই ট্রিপেই তো এই বীভৎস রোগ জুটিয়েছিলাম। উফ্‌! 
- সতেরো বছর। সে'বার সবে উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছি। মুমিন আমাদের একটা চমৎকার রাজমার সবজী রেঁধে খাইয়েছিল, মনে আছে?
- অস্পষ্ট, তবে ঠাহর হচ্ছে। বয়স্ক, কাঁধ পর্যন্ত নেমে আসা ধবধবে সাদা চুল। তাই তো?
- ঠিক। 
- তা। হঠাৎ তাঁর কথা এত রাত্রে? বৌমার সাথে হৃষীকেশ-লছমনঝুলার দিকে যাওয়ার প্ল্যান করছিস? 
- না তা নয়। 
- তবে? 
- মুমিন এসেছিলো। 
- এসেছিলো মানে? তোর সাথে অফিসে দেখা হয়েছে? রাস্তায়? চিনতে পেরেছিস ঠিক?
- ভুল করছ। তা বলতে চাইনি। মুমিন, এই মাত্র, এইখানে ছিল। 
- শাট আপ। ঘুমোতে যা। 
- সত্যি। আমি ঘুমোইনি কিন্তু। বই পড়ছিলাম। মিলি বরং ঘুমিয়ে গেছিলো আগেই। আচমকা বেড ল্যাম্পের আবছা আলোয় অন্য দেওয়ালে দেখলাম মুমিন। দাঁড়িয়ে। ফ্যালফ্যালে চোখ। সেই আগের মতই। অবিকল। 
- হ্যালুসিনেট করেছিস নাকি?
- মনে হল না। স্পষ্ট কথা বলল মুমিন। 
- তোর সাথে সেই সতেরো বছরের আগের দেখা হওয়া ধাবার রাঁধুনি এসে কথা বলে গেছে। তাই তো?
- ঠিক তাই। 
- বাবলু। তুই নিজে ফিজিক্স নিয়ে পড়েছিস। ইউনিভার্সিটিতে ছাত্র পড়াচ্ছিস। হ্যালুসিনেশনের অবভিয়াস অ্যাঙ্গেল বাদ দিয়ে এ'সব কী আগডুম বাগডুম ভাবছিস? শরীর ঠিক আছে?
- বাবা। 
- কী হয়েছে বাবলু?
- মুমিন...। 
- মুমিন কী?
- মুমিন খানিকক্ষণ আগেই মারা গেছে। 
- হোয়াট?
- বয়স হয়েছিল প্রচুর। নর্মাল ডেথ। তবে মরেই ছুটে এসেছে আমার সাথে দেখা করতে। 
- এ'সব কী বাজে কথা শুরু করেছিস বাবু! দাঁড়া। বৌমাকে ডাকি। 
- না বাবা। এ'সবের মধ্যে ওকে না ডাকাই ভালো। 
- এ'সব মানে? কী'সব?
- মুমিন এসেছিলো ব্যাপারটা জানাতে বাবা। 
- কী জানাতে?
- যে'টা এদ্দিন গোপন রেখেছিলে তুমি। যে'টা তোমার ভয়ে মুমিন নিজের জীবদ্দশায় কাউকে জানাতে পারেনি। কারণ জানালেই তুমি তার ক্ষতি করতে। সে সমস্ত কিছু মুমিন আমায় জানিয়ে গেছে। মারা পড়তেই ছুটে এসে সে আগে আমায় জানিয়েছে। 
- তুই কি উন্মাদ হয়ে গেলি? শুড আই কল ডক্টর পাত্র?
- সে'বার। মুমিন যখন রান্না করছিল, তুমি তাঁর কাছে জানতে চাইলে আশেপাশে টয়লেট আছে কী না। না থাকায় সেই মুমিনই তোমায় নিয়ে যায় ধাবার পিছনে। খাদ ঘেঁষে যাতে তুমি কাজ সারতে পারো। 
- সো?
- তুমি পা পিছলে পড়ে গেছিলে। মুমিন নিজের চোখে দেখেছিল। তোমায় তলিয়ে যেতে খাদে। 
- বাবলু শোন...। 
- তুমি ফিরে আসোনি। তোমার...ইয়ে...ফিরে এসেছিলো...। সেই ইয়ে...মানে এই তুমি...মুমিনকে শাসিয়েছিলে যে এ খবর আমায় জানালে তুমি তাঁর গলা টিপে...।
- বাবলু এ'সব...। 
- মিথ্যে নয়। মিথ্যে রয়েছে অন্য জায়গায়। এই তোমার চামড়ায় এমন কোন বদ-রোগ নেই যা অন্যের সামান্য ছোঁয়ায় তাঁর চামড়াকে বিষিয়ে দেবে। আদতে তোমার ছুঁতে চাওয়াটাই মিথ্যে। রোদে তোমার অদ্ভুতুড়ে অ্যালার্জি নেই। তুমি মেডিকাল মিস্ট্রি নও। 
- বাবলু তুই তখন কত ছোট। তোর মা নেই। আমি এ'ভাবে অন্তত না এলে তুই ভেসে যেতিস। ভেসে যেতিস। 
- এবারে এসো বাবা। প্লিজ। এসো। মিলি ওঠার আগে...চলে যাও...। আশা করি দরজা খুলতে হবে না...। মুমিন বলে গেছে সে ছাতের উত্তর কোণে অপেক্ষা করবে। তোমায় সেই খাদে ফেরত নিয়ে যাবে মুমিন। 
- এমন ভাবে যাওয়াটা...বৌমা যদি...।
- আমি বুঝিয়ে বলবো...।
- বেশ...আমি আসি...আর শোন রাত্রে বাথরুমের বাতিটা নেভাতে আজকাল রোজ ভুলে যাচ্ছিস। ইলেকট্রিক বিলের ব্যাপারে তোকে আর একটু কেয়ারফুল করে তুলতে পারলেই আমার প্যারেন্টিং কমপ্লিট হত। কিন্তু এই মুমিন ব্যাটা সেই টাইমটুকু দিলো না। আসি। কেমন? 

Sunday, June 5, 2016

মিছে



- তোমার জলে বাতি, তোমার ঘরে সাথী..।
- বাবু।
- হুঁ?
- ঝুঠ। বিলকুল।
- আমার তরে রাতি, আমার তরে তারা...।
- ব্যথা। গলার কাছে, জানিস বাবু? দলা দলা।
- তোমার হাতে রয়, আমার হাতে ক্ষয়...।
- পাশে আয়। এসে বস।
- এমনি বহে ধারা...টেলিফোন...তোমার আছে ডাঙা, আমার আছে জল। তোমার বসে থাকা, আমার চলাচল।
- বসবি না? পাশে? আসতে নেই? যা। মর। থাক টেলিফোনে। ওই পাশে।
- মম মন বুঝে দেখো মনে মনে, মনে রেখো করো করুণা...।
- বঁধু? কার? বাবু?
- পাছে আপনারে রাখিতে না পারি, তাই কাছে কাছে থাকি আপনারই....।
- চির জনমের বেদনা? বাবু?
- মুখে হেসে যাই..সে আমারও নহে ছলনা...।
- একবারের জন্য আসবি? আমায় একটি বারের জন্য দেখে যাবি?
- দিনেকেরও দেখা, তিলেকেরও সুখ...।
- বাঁচিয়ে যাবি? এই ধর ঘণ্টা দুই? তার বেশি নয়। তুই বসিস মোড়ায়। মুড়ি খাস, চানাচুর। আমি দেখবো, দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে যাবো। আহ, বাবু! কদ্দিন ঘুমোই না।
- পলকেরও পরে থাকে বুক ভরে চিরজনমের বেদনা...।
- আসবি না?
- বধুঁ। মিছে।
- মর তুই।
- এমনি বহে ধারা।
- মর।
- আমার হাতে ক্ষয়....।
- তোর মনে ভয়। বাবু, তুই এলি না আর।
- মরি?
- মরিস। আগে আমি যাই। আসিস তখন। লাশ পরবঁধু হয় না। তার মিছে রাগ থাকতে নেই।

Saturday, June 4, 2016

বিপ্লববাবুর শনিবার

শনিবারের হাফ অফিসের শেষে বিপ্লব সমাদ্দারের হাফ শার্টের আড়ালে হাফ ডানা গজায়। অবশ্য তার হাঁটাচলায় অল্প উড়ুউড়ু ভাবটা অফিসপাড়ার ভিড়ের মধ্যে কেউ ইন্টারসেপ্ট করতে পারে না।

উইকেন্ডের প্রতি সমীহটা বিপ্লববাবুর মজ্জাগত।

বিকেল চারটে নাগাদ অফিস থেকে বেরিয়েই অজিতের দোকান থেকে একটা গোল্ডফ্লেক। সপ্তাহে ওই একটাই। সামান্য ইনডালজেন্স। বিপ্লববাবু বিশ্বাস করেন যাদের নেশা নেই তাদের উইকেন্ডে ধক্ নেই।

বয়স থাকতে বার দু'য়েক টু পাইস এক্সট্রা খরচ করে বারে ঢুঁ মেরেছেন বিপ্লববাবু, তবে মদের নেশা বয়ে হাওড়া থেকে ভিড় কাটোয়া লোকালে ওঠাটা যন্ত্রণাময়। গত সাতবছর ধরে শনি-সিগারেটের আখরি সুখটান ঝেড়ে ফেলে বিপ্লবপবাবু রিমিকিঝিমিকি মেজাজে এসে দাঁড়ান সুখলাল কচৌরিওলার কাছে। সেখানে ছয় পেগ কচুরি সাথে ডাল-সবজি আর জিলিপির চাখনা।

হাওড়া স্টেশন থেকে সেই কদ্দিন আগে কেনা হিন্দি গজলের বাংলায় লিরিক্স লেখা বই। সেখানে একশো একটা গজল ছিল, বেশির ভাগই জগজিৎ সিংহ বা পঙ্কজ উদাসের গাওয়া। এদ্দিনে প্রতিটা গানই তাঁর প্রায় মুখস্ত। কচুরির সাথে থাকে বিপ্লববাবুর গুনগুন "হম তো হ্যায় পরদেশ মে, দেশ মে নিকলা হোগা চাঁদ"।

এক কচুরি শেষে অন্য কচুরিতে কামড় পড়তেই আসে নতুন গজল; কখনও জিলিপির কামড়ে মিশে যায় ইম্প্রোভাইজেশন;

"এক তুহি ধনবান হ্যায় কচৌরি, বাকি সব জঞ্জাল"।

Friday, June 3, 2016

মধুময়বাবুর ছাদ

মাঝরাতে ছাতে উঠে মনেমনে নিজের নাম পালটে নেন মধুময়বাবু।

**

স্পেসে  এসে এমন কালোজাদুর পাল্লায় পড়তে হবে সে'টা স্বপ্নেও ভাবেননি গ্যাগারিন। অপার ভ্যাকিউমে নয়নতারা, শ্যাওলা আর রাতের কলকাতার গন্ধ আসছে কোথা থেকে?

সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে কিছুতেই রাশিয়ান ভাষায় ভাবতে পারছেন না তিনি, কী সব আগডুম বাগডুম ভাষায় মাথায় চিন্তা ভিড় করছে।  নিজের রাশিয়ান নামটাও কিছুতেই মনে করতে না পেরে নিজের নাম মধুময় রাখলেন গ্যাগারিন।

**

নিচ থেকে গিন্নীর আকাশ ছেঁড়া চিৎকারে চিন্তার সুতো কাটে মধুময়বাবুর।

"বলি এ কেমন ভীমরতি?  মাঝরাত্তিরে ছাদে পায়চারি!  যত্তসব!  তুমি নিচে নামবে  না টেনে নামাবো"?

স্মিত হেসে সাড়া দেন মধুময়বাবু;

"গিন্নীকভস্কভি, অত রাগস্কভ কেনোস্কি? আমি নিচেস্কু আসোকভ! এক্ষুনিস্ক! এক্ষুনিস্ক"।

অঘোরবাবুর মানিব্যাগ

বাস থেকে নামতেই অঘোরবাবু টের পেলেন পকেটের মানিব্যাগ হাওয়া। অবশ্য কত টাকাই বা ছিল সে'টায়।

**

বুকের ধুকুরপুকুর থামতেই চাইছিল না মৃণালের। প্রথম চেষ্টাতেই কিস্তিমাত। আনন্দে ভেসে যেতে চাইছিলে সে। অবিশ্যি বাসের অফিসটাইমের ভিড় কাজটা সহজ করে দিয়েছিল অনেকটা। দু'পায়ে দাঁড়ানোটাই যেখানে চ্যালেঞ্জ, পাশের লোকের মুখটাই যেখানে দেখা দায়; সে'টাই তো আদর্শ পিকপকেটিও পরিবেশ। বারোর সি বাই দুই রুটেই কাল ফের বেরোবে বলে মনস্থ করলে সে।

**

সকালবেলা পাঞ্জাবিটা গায়ে গলাতেই চমকটা টের পেলেন অঘোরবাবু! ডান পকেটে দিব্যি মানিব্যাগের ওজন। তবে কি পকেটমারে ব্যাপারটা উনি ভুল বুঝলেন? তবে কি পকেটে মানিব্যাগটার উপস্থিতি এমন বেমক্কা ভাবে টের পাননি তিনি? তবে  দু'শো বাইশ টাকা ফেরত পেয়ে মন্দ লাগছিল না তার, স্মৃতি বিভ্রমটা বিশেষ গায়ে মাখলেন না অঘোরবাবু।

**

- হ্যাঁ রে মিনু, গোটাদিন থাকিস কোথায়? চেহারার কি অবস্থা হয়েছে দেখেছিস?
- কতবার বলেছি বাবা, পার্টির কাজ। দু'পয়সা আসছে তো।
- কী যে করিস, তুইই জানিস।
- বলছিলাম বাবা,  ভিড় বাসে রোজ যাতায়াত না করে অটো ধরে যেতে পারো তো।
- বাড়তি পাঁচটাকা খরচ...।
- হোক না, আমি কিছু টাকা আয় করছি তো। বারোর সি বাই দুই এবার তুমি ছাড়ো। এ বয়েসে অত ভিড় সহ্য করার মানেই হয় না।
- কিন্তু...।
- কোন কিন্তু নয়...তোমার অটো খরচ আমি দেব।
- তুই সত্যিই আয় করা শুরু করেছিস মিনু?

Wednesday, June 1, 2016

জয়দ্রথ বধ

অর্জুনের মুখ চুন। ঘনঘন হাতঘড়ির দিকে তাকাচ্ছিলেন আর কপালের ঘাম মুছছিলেন। ও'দিকে জয়দ্রথ আড়ালে বসে দিব্যি নখ চিবুচ্ছিলেন আর কিশোরভারতী পড়ছিলেন। ও'দিকে আকশে সূর্য নরম হয়ে আসছিল।

উপায়ন্তর না দেখে ধুতির পকেট থেকে মোবাইল বের করে এয়ারটেল ফোর-জি'তে ইউটিউব চালালেন কেষ্টকুমার। তাতে উত্তমের লিপে হেমন্ত গুনগুন শুরু করছেন;
"সূর্য ডোবার পালা আসে যদি আসুক বেশ তো..."।

অমনি আকাশ থেকে সূর্য হাপিশ।
আর তক্ষুনি জয়দ্রথ গঙ্গম মেজাজে অর্জুনের সামনে এসে লাফালাফি করতে শুরু করলেন। জয়দ্রথকে দেখতে পেয়েই ভিডিও পজ্ করলেন কেষ্টা।

মিচকি হেসে কবচের মধ্যে থেকে লাক্স কোজি গেঞ্জির ডগা টেনে বের করে তাতে একটা আলতো চুমু খেলেন অর্জুন; "গাণ্ডীব ফাণ্ডীভ যাই থাক। আপনা লাক পহেনকে চলাই হচ্ছে বুদ্ধিমানের কাজ"।