- বাবা।
- কিছু বলবি বাবলু?
- ঘুমোওনি যে!
- এ'টা বলতে রাত্তির দেড়টায় উঠে এলি?
- না।
- তাহলে?
- তোমার মুমিনকে মনে আছে?
- মুমিন?
- মুমিন। সেই যে। হৃষীকেশের সেই ছোট্ট ধাবাটার রাঁধুনি।
- হৃষীকেশ। সে তো অনেকদিন আগেকার কথা। তাছাড়া সেই ট্রিপেই তো এই বীভৎস রোগ জুটিয়েছিলাম। উফ্!
- সতেরো বছর। সে'বার সবে উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছি। মুমিন আমাদের একটা চমৎকার রাজমার সবজী রেঁধে খাইয়েছিল, মনে আছে?
- অস্পষ্ট, তবে ঠাহর হচ্ছে। বয়স্ক, কাঁধ পর্যন্ত নেমে আসা ধবধবে সাদা চুল। তাই তো?
- ঠিক।
- তা। হঠাৎ তাঁর কথা এত রাত্রে? বৌমার সাথে হৃষীকেশ-লছমনঝুলার দিকে যাওয়ার প্ল্যান করছিস?
- না তা নয়।
- তবে?
- মুমিন এসেছিলো।
- এসেছিলো মানে? তোর সাথে অফিসে দেখা হয়েছে? রাস্তায়? চিনতে পেরেছিস ঠিক?
- ভুল করছ। তা বলতে চাইনি। মুমিন, এই মাত্র, এইখানে ছিল।
- শাট আপ। ঘুমোতে যা।
- সত্যি। আমি ঘুমোইনি কিন্তু। বই পড়ছিলাম। মিলি বরং ঘুমিয়ে গেছিলো আগেই। আচমকা বেড ল্যাম্পের আবছা আলোয় অন্য দেওয়ালে দেখলাম মুমিন। দাঁড়িয়ে। ফ্যালফ্যালে চোখ। সেই আগের মতই। অবিকল।
- হ্যালুসিনেট করেছিস নাকি?
- মনে হল না। স্পষ্ট কথা বলল মুমিন।
- তোর সাথে সেই সতেরো বছরের আগের দেখা হওয়া ধাবার রাঁধুনি এসে কথা বলে গেছে। তাই তো?
- ঠিক তাই।
- বাবলু। তুই নিজে ফিজিক্স নিয়ে পড়েছিস। ইউনিভার্সিটিতে ছাত্র পড়াচ্ছিস। হ্যালুসিনেশনের অবভিয়াস অ্যাঙ্গেল বাদ দিয়ে এ'সব কী আগডুম বাগডুম ভাবছিস? শরীর ঠিক আছে?
- বাবা।
- কী হয়েছে বাবলু?
- মুমিন...।
- মুমিন কী?
- মুমিন খানিকক্ষণ আগেই মারা গেছে।
- হোয়াট?
- বয়স হয়েছিল প্রচুর। নর্মাল ডেথ। তবে মরেই ছুটে এসেছে আমার সাথে দেখা করতে।
- এ'সব কী বাজে কথা শুরু করেছিস বাবু! দাঁড়া। বৌমাকে ডাকি।
- না বাবা। এ'সবের মধ্যে ওকে না ডাকাই ভালো।
- এ'সব মানে? কী'সব?
- মুমিন এসেছিলো ব্যাপারটা জানাতে বাবা।
- কী জানাতে?
- যে'টা এদ্দিন গোপন রেখেছিলে তুমি। যে'টা তোমার ভয়ে মুমিন নিজের জীবদ্দশায় কাউকে জানাতে পারেনি। কারণ জানালেই তুমি তার ক্ষতি করতে। সে সমস্ত কিছু মুমিন আমায় জানিয়ে গেছে। মারা পড়তেই ছুটে এসে সে আগে আমায় জানিয়েছে।
- তুই কি উন্মাদ হয়ে গেলি? শুড আই কল ডক্টর পাত্র?
- সে'বার। মুমিন যখন রান্না করছিল, তুমি তাঁর কাছে জানতে চাইলে আশেপাশে টয়লেট আছে কী না। না থাকায় সেই মুমিনই তোমায় নিয়ে যায় ধাবার পিছনে। খাদ ঘেঁষে যাতে তুমি কাজ সারতে পারো।
- সো?
- তুমি পা পিছলে পড়ে গেছিলে। মুমিন নিজের চোখে দেখেছিল। তোমায় তলিয়ে যেতে খাদে।
- বাবলু শোন...।
- তুমি ফিরে আসোনি। তোমার...ইয়ে...ফিরে এসেছিলো...। সেই ইয়ে...মানে এই তুমি...মুমিনকে শাসিয়েছিলে যে এ খবর আমায় জানালে তুমি তাঁর গলা টিপে...।
- বাবলু এ'সব...।
- মিথ্যে নয়। মিথ্যে রয়েছে অন্য জায়গায়। এই তোমার চামড়ায় এমন কোন বদ-রোগ নেই যা অন্যের সামান্য ছোঁয়ায় তাঁর চামড়াকে বিষিয়ে দেবে। আদতে তোমার ছুঁতে চাওয়াটাই মিথ্যে। রোদে তোমার অদ্ভুতুড়ে অ্যালার্জি নেই। তুমি মেডিকাল মিস্ট্রি নও।
- বাবলু তুই তখন কত ছোট। তোর মা নেই। আমি এ'ভাবে অন্তত না এলে তুই ভেসে যেতিস। ভেসে যেতিস।
- এবারে এসো বাবা। প্লিজ। এসো। মিলি ওঠার আগে...চলে যাও...। আশা করি দরজা খুলতে হবে না...। মুমিন বলে গেছে সে ছাতের উত্তর কোণে অপেক্ষা করবে। তোমায় সেই খাদে ফেরত নিয়ে যাবে মুমিন।
- এমন ভাবে যাওয়াটা...বৌমা যদি...।
- আমি বুঝিয়ে বলবো...।
- বেশ...আমি আসি...আর শোন রাত্রে বাথরুমের বাতিটা নেভাতে আজকাল রোজ ভুলে যাচ্ছিস। ইলেকট্রিক বিলের ব্যাপারে তোকে আর একটু কেয়ারফুল করে তুলতে পারলেই আমার প্যারেন্টিং কমপ্লিট হত। কিন্তু এই মুমিন ব্যাটা সেই টাইমটুকু দিলো না। আসি। কেমন?
- কিছু বলবি বাবলু?
- ঘুমোওনি যে!
- এ'টা বলতে রাত্তির দেড়টায় উঠে এলি?
- না।
- তাহলে?
- তোমার মুমিনকে মনে আছে?
- মুমিন?
- মুমিন। সেই যে। হৃষীকেশের সেই ছোট্ট ধাবাটার রাঁধুনি।
- হৃষীকেশ। সে তো অনেকদিন আগেকার কথা। তাছাড়া সেই ট্রিপেই তো এই বীভৎস রোগ জুটিয়েছিলাম। উফ্!
- সতেরো বছর। সে'বার সবে উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছি। মুমিন আমাদের একটা চমৎকার রাজমার সবজী রেঁধে খাইয়েছিল, মনে আছে?
- অস্পষ্ট, তবে ঠাহর হচ্ছে। বয়স্ক, কাঁধ পর্যন্ত নেমে আসা ধবধবে সাদা চুল। তাই তো?
- ঠিক।
- তা। হঠাৎ তাঁর কথা এত রাত্রে? বৌমার সাথে হৃষীকেশ-লছমনঝুলার দিকে যাওয়ার প্ল্যান করছিস?
- না তা নয়।
- তবে?
- মুমিন এসেছিলো।
- এসেছিলো মানে? তোর সাথে অফিসে দেখা হয়েছে? রাস্তায়? চিনতে পেরেছিস ঠিক?
- ভুল করছ। তা বলতে চাইনি। মুমিন, এই মাত্র, এইখানে ছিল।
- শাট আপ। ঘুমোতে যা।
- সত্যি। আমি ঘুমোইনি কিন্তু। বই পড়ছিলাম। মিলি বরং ঘুমিয়ে গেছিলো আগেই। আচমকা বেড ল্যাম্পের আবছা আলোয় অন্য দেওয়ালে দেখলাম মুমিন। দাঁড়িয়ে। ফ্যালফ্যালে চোখ। সেই আগের মতই। অবিকল।
- হ্যালুসিনেট করেছিস নাকি?
- মনে হল না। স্পষ্ট কথা বলল মুমিন।
- তোর সাথে সেই সতেরো বছরের আগের দেখা হওয়া ধাবার রাঁধুনি এসে কথা বলে গেছে। তাই তো?
- ঠিক তাই।
- বাবলু। তুই নিজে ফিজিক্স নিয়ে পড়েছিস। ইউনিভার্সিটিতে ছাত্র পড়াচ্ছিস। হ্যালুসিনেশনের অবভিয়াস অ্যাঙ্গেল বাদ দিয়ে এ'সব কী আগডুম বাগডুম ভাবছিস? শরীর ঠিক আছে?
- বাবা।
- কী হয়েছে বাবলু?
- মুমিন...।
- মুমিন কী?
- মুমিন খানিকক্ষণ আগেই মারা গেছে।
- হোয়াট?
- বয়স হয়েছিল প্রচুর। নর্মাল ডেথ। তবে মরেই ছুটে এসেছে আমার সাথে দেখা করতে।
- এ'সব কী বাজে কথা শুরু করেছিস বাবু! দাঁড়া। বৌমাকে ডাকি।
- না বাবা। এ'সবের মধ্যে ওকে না ডাকাই ভালো।
- এ'সব মানে? কী'সব?
- মুমিন এসেছিলো ব্যাপারটা জানাতে বাবা।
- কী জানাতে?
- যে'টা এদ্দিন গোপন রেখেছিলে তুমি। যে'টা তোমার ভয়ে মুমিন নিজের জীবদ্দশায় কাউকে জানাতে পারেনি। কারণ জানালেই তুমি তার ক্ষতি করতে। সে সমস্ত কিছু মুমিন আমায় জানিয়ে গেছে। মারা পড়তেই ছুটে এসে সে আগে আমায় জানিয়েছে।
- তুই কি উন্মাদ হয়ে গেলি? শুড আই কল ডক্টর পাত্র?
- সে'বার। মুমিন যখন রান্না করছিল, তুমি তাঁর কাছে জানতে চাইলে আশেপাশে টয়লেট আছে কী না। না থাকায় সেই মুমিনই তোমায় নিয়ে যায় ধাবার পিছনে। খাদ ঘেঁষে যাতে তুমি কাজ সারতে পারো।
- সো?
- তুমি পা পিছলে পড়ে গেছিলে। মুমিন নিজের চোখে দেখেছিল। তোমায় তলিয়ে যেতে খাদে।
- বাবলু শোন...।
- তুমি ফিরে আসোনি। তোমার...ইয়ে...ফিরে এসেছিলো...। সেই ইয়ে...মানে এই তুমি...মুমিনকে শাসিয়েছিলে যে এ খবর আমায় জানালে তুমি তাঁর গলা টিপে...।
- বাবলু এ'সব...।
- মিথ্যে নয়। মিথ্যে রয়েছে অন্য জায়গায়। এই তোমার চামড়ায় এমন কোন বদ-রোগ নেই যা অন্যের সামান্য ছোঁয়ায় তাঁর চামড়াকে বিষিয়ে দেবে। আদতে তোমার ছুঁতে চাওয়াটাই মিথ্যে। রোদে তোমার অদ্ভুতুড়ে অ্যালার্জি নেই। তুমি মেডিকাল মিস্ট্রি নও।
- বাবলু তুই তখন কত ছোট। তোর মা নেই। আমি এ'ভাবে অন্তত না এলে তুই ভেসে যেতিস। ভেসে যেতিস।
- এবারে এসো বাবা। প্লিজ। এসো। মিলি ওঠার আগে...চলে যাও...। আশা করি দরজা খুলতে হবে না...। মুমিন বলে গেছে সে ছাতের উত্তর কোণে অপেক্ষা করবে। তোমায় সেই খাদে ফেরত নিয়ে যাবে মুমিন।
- এমন ভাবে যাওয়াটা...বৌমা যদি...।
- আমি বুঝিয়ে বলবো...।
- বেশ...আমি আসি...আর শোন রাত্রে বাথরুমের বাতিটা নেভাতে আজকাল রোজ ভুলে যাচ্ছিস। ইলেকট্রিক বিলের ব্যাপারে তোকে আর একটু কেয়ারফুল করে তুলতে পারলেই আমার প্যারেন্টিং কমপ্লিট হত। কিন্তু এই মুমিন ব্যাটা সেই টাইমটুকু দিলো না। আসি। কেমন?
2 comments:
One of the finest thing I have ever read!! Ki kore likhlen jani na? But Apnar sottyiii kolpona soktir bahoba na diye parchi na! Keep up the good work. Erom bhalo lekha chaliye jan.
Amar golpo aaapnara pelen kothay ,??
Post a Comment