ঘনশ্যাম দাসকে সচরাচর এতটা বিব্রত দেখা যায় না। ঠোঁটের ঝুলন্ত সিগারেটটা ধরাতে ভুলে গেছেন বেমালুম, অকারণে ফিল্টার চিবুতে চিবুতে একটানা পায়চারি করে চলেছেন। দু'এক পশলা বৃষ্টি সবে হয়ে গেছে, বাতাসে মিহি ছ্যাঁতছ্যাঁত; অথচ ঘনশ্যামবাবুর কপাল জুড়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম। সরু গলিটার সান্ধ্য অন্ধকার বা মশাদের মঁমঁকে পাত্তা দেওয়ার প্রয়োজনটুকুও বোধ করছিলেন না তিনি। ক্রমাগত ঘড়ির দিকে তাকাতে হচ্ছিল; সময় যেন কাটতেই চায়না। বুকের ভিতরে এমন বীভৎস ধুকপুকুনি বোধ হয় গেল বার ইকুয়েডোরেও অনুভূত হয়নি।
"ঘনা নাকি?"; এ কণ্ঠস্বর ভুল করার উপায় নেই। চকিয়ে ঘাড় ঘোরাতেই ঘনশ্যামবাবু তাঁকে দেখতে পেলেন। সেই সুপরিচিত ঢলা পাঞ্জাবি আর পাজামা। গায়ে জড়ানো শাল। হুড়মুড় করে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে প্রথমে ঢিপ করে প্রণামটা সেরে নিলেন ঘনশ্যাম।
- "কেমন আছেন স্যার?"।
- "আমি? দিব্যি। ভেবেছিলাম হয়তো আমাকে কারও মনে নেই। কিন্তু এখন দেখছি আর কেউ না হোক, জুনিয়র দাস আমায় ভোলেনি"।
- "ঘনশ্যাম বানান ভুলতে পারি স্যার, কিন্তু আপনাকে ভুলি কী করে? আপনি যে ছিলেন এই গ্রামেতেই। আপনার জন্য সামান্য কিছু এনেছি স্যার। এ চ্যালাকে প্লিজ রিফিউজ করবেন না"।
সিনিয়র দাসের পাঞ্জাবির ঝোলা পকেটে ঘনশ্যামবাবু নিজের সমীহ-কাঁপুনি মাখানো হাতে সিগারেটের সদ্য কেনা প্যাকেটটা গুঁজে দিলেন। অমনি সুখেনবাবুর চওড়া হাসিতে গলির অন্ধকার লোপাট হয়ে গেলো।
No comments:
Post a Comment