Friday, July 29, 2016
রাজার দুঃখ
Thursday, July 28, 2016
ট্র্যাভেল প্ল্যান
Wednesday, July 27, 2016
ঘিলুপাড়ার পোস্টমাস্টার
মৃণালবাবুর শেষ স্বপ্ন
নমস্কার। আমি মৃণাল দত্ত।
আমি ঠিক আপনার সাথে কথা বলছি না। নিজের মধ্যে বিড়বিড় করছি। ওহ, বলে রাখা ভালো যে আমি নিজের মধ্যেই রয়েছি। এই যে লাল দেওয়ালের ঘর দেখা যাচ্ছে, এটা আমার সাবকনশাস্। এই সোফাটা, যেটায় আমি বসে আছি; সে’টা সম্ভবত সিমলার পি ডাবলু ডি গেস্ট হাউসের ড্রয়িং রুমে রাখা ছিল; কালো চামড়ার, বড় আরামের। নাইনটি সিক্সে ঘুরতে গেছিলাম; সেখানকার সোফা যে এইভাবে মরমে পশেছিল সেটা আজ মালুম হচ্ছে।
যাক সে’সব নিয়ে ভেবে লাভ নেই। হাতে সাত মিনিট আছে স্বপ্নে জীবন রিভিউ করার জন্য। আচ্ছা আমি কি বলেছি যে আমি মারা গেছি? এই জাস্ট! ভুগছিলাম। এক্সপেক্টেড ছিল। কিন্তু সে’সব এখন আননেসেসারি ডিটেইলস। মোদ্দা কথা হচ্ছে মগজের একদম ভেতরটা এখনও সক্রিয় রয়েছে। থাকবে আরও সাত আট মিনিট। সে জন্যেই এই সোফা আর লাল দেওয়াল। ওই সাদা আলোর ফোকাসের সোর্সটা ধরতে পারছি না; চোখে পড়ছে বটে কিন্তু অস্বস্তি হচ্ছে না। সাবকনশাসে মনে হয় সিগারেটের প্রয়োজন নেই। পকেটে বাক্স নেই দেখলাম।
যাক গে। হাতে যে কয় মিনিট আছে তাতে জীবনকে রিভিউ করে দেখে নিতে হবে। ইন দ্য ডিপেস্ট ড্রিম। না, না! এটা আমার শখ নয়। সায়েন্স। সাইকোলজি। বিভিন্ন আর্টিকেলে আমিও পড়েছিলাম। মরণোত্তর মগজের ভিতর স্বপ্নের সিনেমা রোল হয়, হাই লাইট্স চলে। একশো ওভারের ম্যাচ কয়েক মিনিটে। ইম্পর্ট্যান্ট শটগুলো, উইকেট আর টার্নিং পয়েন্টস।
কথায় সময় নষ্ট করছি কেন তাও বুঝতে পারছি না। হাতে সময় যখন এত কম। আর এত লম্বা জীবন ফিরে দেখার আছে। বিয়াল্লিশ বছর। চাট্টিখানি কথা নয়।
অবশ্য বুঝতে পারছি না বলা ভুল। স্মৃতি রোমন্থন ঠিকঠাক শুরু করতে পারছি, যার জন্যই এই আজেবাজে বকে মনকে বাগে আনার চেষ্টা।
কিছুতেই পারছি না। মন কে বাগে আনতে পারছি না। অবশ্য এটা তো আমার সাবকনশাসের মেজানাইন ফ্লোর। আমি কথা বলছি নিজের সঙ্গে। বৌ নেই, পাশের সিটে সহযাত্রী নেই; ভয়টা কীসের আমার!
বলছি।
উফ। গুছিয়ে বলতেও বা পারছি কই! সেই একই দৃশ্য ড্যালা পাকিয়ে ভেসে উঠছে। ইন ফ্যাক্ট সাদা আলোর ফোকাসও দৃশ্যটাকে ভাসিয়ে দিতে পারছে না।
আসলে হল কী; মরার ঠিক আগের মুহূর্তে বুকে অসহ্য যন্ত্রণা। যাকে বলে অসহ্য। চারিদিকে থেকে সক্কলে আমার ওপর ঝুঁকে। আমার বৌ রুমা, ডাক্তার সামন্ত, ছেলে অনিন্দ্য, আমার পিসতুতো বোন ইন্দু আর প্রতিবেশী দাসগুপ্তবাবু। সবাই কান্নাকাটি চিৎকার চ্যাঁচামেচি করছিল। দিব্যি যেমন হয় আর কী। এই গেল, সেই গেল একটা ইয়ে। কেউ মারা গেলে যেটুকু হইহইরইরই হয় সেটুকুই হচ্ছিল!। দিব্যি ছিল সব কিছু। আমি হন্যে হয়ে সক্কলের মুখের দিকে চাইছিলাম। ব্যথা বাড়তে বাড়তে পাঁচ সেকেন্ডের মাথায় ভিতরটা জাস্ট ঠাণ্ডা হয়ে এলো। আচমকা। নো যন্ত্রণা, নাথিং।
তারপর থেকে আমি এই ঘরে। থুড়ি। সাবকনশাসে। স্পষ্ট টের পাচ্ছি এই ঘরটা আবছা হতে শুরু করেছে। স্বপ্নকে এই বেলা রোল না করালেই নয়। তবু। পারছি না। সমস্ত আটকে আছে ওই এক মুহূর্তে।
মরার আগে ডেস্পারেটলি সবার মুখের দিকে তাকালাম, শেষ দেখাটুকু খামচে নেওয়ার জন্য। অথচ এখন টের পাচ্ছি সে সময়ের কারুর মুখই মনে নেই। মনে আছে একটা মাত্র দৃশ্য, মৃত্যুর ঠিক আগের মুহূর্তের দেখা। এ সোফায় এসে বসার আগে টেরও পাইনি যে সে দৃশ্য মনে আদৌ দাগ কেটেছে। সাবকনশাসের বাইরে গিয়ে দাঁড়ালে সে দৃশ্যের কথা বলতেও পারব না, তবে এ সোফায় বসে কিছু এসে যায় না।
এক কী দুই সেকেন্ড বড় জোর। বড় জোর। ঘর জুড়ে সবে হাহাকার উঠেছে, সবাই আমার ওপর ঝুঁকে পড়েছে; ঠিক সেই সময়। ঠিক সেই সময়, ইন্দুর বুক থেকে হলুদ সবুজ পেড়ে তাঁতের আঁচল খসে গিয়েছিল। সবুজ ব্লাউজের অসতর্ক উঁকিতে বেরিয়ে এসেছিল ক্লিভেজ। ক্লিভেজের বাংলা অবিশ্যি আনন্দবাজার বলে বক্ষ-বিভাজিকা, তবে আমার মনে হয় এর ট্রান্সলেশন দাঁড়ায় না। মরার আগে সব কিছু এত ঝাপসা ছিল অথচ সোফায় বসে স্পষ্ট টের পাচ্ছি যে ওর ব্লাউজের প্রথম হুকের স্টিল-চমক থেকে বিভাজিকা নদীর শুরুতে রাখা অসংলগ্ন তিল পর্যন্ত; সমস্ত কিছু মনে স্পষ্ট গেঁথে রয়েছে। তিলে খয়েরী কম ছিল, লালচে আভা বেশি। তিলটা এতই ছোট যে আমার মাইনাস ছয় পাওয়ারের চোখের গোচরে আসা উচিৎই না। তবে এই সোফার বসে বুঝতে পারছি চোখের নাগাল পাওয়া অপথ্যালমোলজিস্টের কম্ম নয়।
কী? ইন্দু আমার চেয়ে সাত বছরের ছোট? আমার নিজের পিসির মেয়ে? অফ কোর্স। আমি জানি। স্পষ্ট জানি। জীবনে এক ইঞ্চি গড়বড়ে চিন্তাও ইন্দুর হয়ে মনে ঢুকে পড়েনি কোনদিন। আমি নিশ্চিত।
হ্যাঁ। আমি নিশ্চিত। আর নয়তো এ সোফায় বসে নিজের সঙ্গে তর্ক জুড়ব নাকি? যত্তসব। ইট ইজ জাস্ট আ সিচুয়েশন। জাস্ট আ সিচুয়েশন।
যাকগে। হাতে সময় কম। এখন জীবনটাকে একটু গুটিয়ে দেখে নিয়ে হাওয়ায় ভাসিয়ে দেওয়ার দরকার।
বিহারের কটিহারে রেলের কোয়ার্টারে বাবার চাকরী সূত্রে কিছুদিন ছিলাম। লাল দেওয়ালের বাড়ি। বড় সুন্দর ছিল সমস্ত কিছু। ইন্দুর বুকের তিলটাও লালচে, বড় সুন্দর।
এই। এই হচ্ছে গণ্ডগোল। কটিহার ভাবতে গিয়েই ভুলটা করলাম। ননসেন্স। এদিকে সময় কম। মরণোত্তর স্বপ্ন যে এখনও শুরুই করতে পারলাম না।
দাদু। দাদুর কথা ভাবা দরকার। মানুষটা কত ভালো কোয়ালিটি আমার মধ্যে ইঞ্জেক্ট করে গিয়েছিলেন। নিজে ছিলেন সৎ পরিশ্রমী স্কুল মাস্টার। আমার মধ্যে গল্পের বইয়ের নেশা তো উনিই ঢুকিয়েছেন। ঋষি-সুলভ সারল্য তাঁর চেহারায় সর্বক্ষণ লেগে থাকত। তাঁকে চিরকাল দেখেছি ধবধবে সাদা ফতুয়া আর সাদা ধুতিতে। এমনকি দাদুর মাথার চুলও ধবধবে সাদা ছিল, অন্তত আমি যবে থেকে দেখছি তাঁকে। ইন্টারেস্টিংলি, ইন্দু আজ এতটাই অসাবধান ছিল যে সাদা ব্রায়ের স্ট্র্যাপ যে ব্লাউজ ছাপিয়ে সামান্য বেরিয়েছিল সেটাও খেয়াল করেনি।
ধুস।
ডিসগাস্টিং। না, না। অপরাধ বোধ নয়। আমি বদ নই, আমার কাছে ইন্দু কত স্নেহের। কিন্তু সময় এত কম। কত কিছু ভাবার রয়েছে। কত ছুঁয়ে যাওয়া সব স্মৃতি। সে’সব স্মৃতিকে ছুঁয়ে দেখারেই তো শেষ সুযোগ এ'টা। কত গনগনে দুঃখের দুপুর সহ্য করতে হয়েছে।
সেই যে দুপুর। আমার উচ্চমাধ্যমিকের শেষ পরীক্ষা। মা পাটনার হসপিটালে মারা গেলেন। মনে হয়েছিল সমস্ত ভেসে যাবে। সমস্ত আলগা হয়ে যাবে। বাবাকে দেখে মনে হয়েছিল আমার চেয়ে উনি বেশি অসহায় বোধ করছেন। মাকে যখন ওয়ার্ড থেকে বের করে হসপিটালের উঠোনে শোয়ানো হল, তখন মনে হয়েছিল বুকের ভিতর কেউ যেন গরম আলকাতরা ঢেলে দিয়েছে। হসপিটাল বাড়ির সেই হলুদ দেওয়ালের বিভীষিকা আজও মনে তাজা। অথচ ইন্দুর খসে পড়া তাঁতের আঁচলের হলুদে সামান্য ভয়ও ছিল না; ছিল সাবলীল এক মায়া। যে মায়াকে বুকে টেনে নিতে হয়, কিন্তু বাঁধতে নেই।
বোঝ। বোঝ। বোঝ কাণ্ড।
এহ! এবারে আমার রীতিমত খারাপ লাগছে। রীতিমত। হাতে আর সময় নেই। বিলকুল নেই। একদমই নেই। ঘেন্না হচ্ছে নিজের গোঁয়ার্তুমির জন্য। ইন্দুর বুক থেকে আঁচল খসে পড়াটাই যেন সব! ষোল বছর বয়েসে ভনতওয়াং ঝর্না দেখাতে নিয়ে গেছিল ছোটমামা। ছোটমামা তখন মিজোরামে ফরেস্ট অফিসার। আহ! সে কী দৃশ্য। দু’পাশে সবুজে সবুজ চিরে নেমে আসছে চঞ্চলা, যেন তার মায়ায় ভেসে যাওয়াটাই জীবনের লক্ষ। দু’দিকের পাহাড়কে স্তিমিত করে গভীরে হারিয়ে যাচ্ছে ঝর্নার মাতানো গতি। ইন্দুর বুকের খাঁজও বেহিসাবি ভনতওয়াংয়ের মত অতলে টেনে নিচ্ছে যেটুকু যা মনে আছে, দু’পাশে অনাবিল আকাশচুম্বী স্তব্ধতা। তন্বী বলতে অভিধান যা বোঝে, ইন্দু তার চেয়ে সামান্য বেশিই স্পষ্ট।
ঠিক সে মুহূর্তেই সোফা থেকে গড়িয়ে পড়তে হল। টের পেলাম। সোফাটা আর নেই। তার জায়গায় এসে গিয়েছে একটা প্রকাণ্ড স্টিলের ব্লাউজের হুক। প্রকাণ্ড।
সাবকনশাসে বমি করার রেওয়াজ বোধ হয় নেই। তবে একটা ঝড় এসে সাদা আলোর ফোকাসটাকে তছনছ করে ফেলেছে দেখছি।
যাক, স্বপ্নের টালবাহানাটাকে পাশ কাটানো গেল। লাল দেওয়াল ততক্ষণে ভেঙ্গে পড়তে শুরু করেছে।
Tuesday, July 26, 2016
নতজানু
Friday, July 15, 2016
ফেরত
ভরদুপুরের গন্ধটা মনে করার চেষ্টা করছিল দীপু। কাজটা সহজ তো নয়। এখন রাত। ছাদে পাতা মাদুরে বছরের এ'সময়টা দানা দানা শিরশির জমতে শুরু করে। বাতাসে ইতিউতি ভাসে পাশের বাড়ির মুসুরির ডালের ফোঁড়ন আর নিচ থেকে উড়ে আসা রিক্সার ক্যাঁচরম্যাচর পোঁপাঁ।
এ সময়ে এ মাদুরে গা এলিয়ে মনের মধ্যে দুপুর টেনে আনা চাট্টিখানি কথা নয়। তবু। দীপু চেষ্টা করছিল। ছোটমামার পাল্লায় পড়ে গত আড়াই মাস ধরে যোগব্যায়াম করছে দীপু। দিনে আধঘণ্টা করে। যোগার্জিত যাবতীয় কন্সেন্ট্রেশন মুঠো করে ধরে রাতের ছাদে দুপুর নামাতে চাইছিল দীপু।
রাতের ছাদের শীতমনস্কতা অনেকটা পাশ কাটিয়ে দিতে পেরেছিল সে। বিলুদের মেজানাইন ফ্লোরের ঘরটার রোদ্দুর পিঠ অনুভব টানতে চাইছিল দীপু।
আনন্দবাবু কেমিস্ট্রির মাস্টার হলেও, মিস্ট্রিতে তার মাস্টারি কম ছিলনা। তিনি বলেছিলেন "স্মৃতির বাজার! বুঝলে হে দীপুকুমার। বাপ মা বন্ধুরা সেখানে আনাজপাতির মত ঝুড়িতে ঝুড়িতে গিজগিজ করছে। এ মুহূর্ত হাঁকছে 'ইধর আইয়ে, ফ্রেশ হ্যায় সব কুছ"। তো ও মুহূর্ত স্মৃতির আনাজে জল ছিটিয়ে বলে "এদিকে আসেন কত্তা। দ্যাখেন! দ্যাখেন! টাটাকা কাকে বলে"। সে বাজারে। বুঝলে দীপুকুমার, সেই স্মৃতিবাজারে, সেরা বাজারের থলি হচ্ছে দুপুর"।
দীপু দুপুর টানছিলে। যোগবল অতি তাগড়াই জিনিস। এ রাতেও দুপুরে রোদের চিড়বিড় অনুভূত হতে শুরু হয়েছিল তার স্যান্ডো গেঞ্জি ভেদ করে।
ছাতের অবয়ব পালটে অন্যমনস্ক বারোয়ারী তলা ভেসে উঠছিল। দীপু ধুকপুক টের পাচ্ছিল। ছোটবেলা আর পরিপাটি শাড়ির কুচির অমিল চড়াত চড়াত করে ঝিলিক মারছিল গলা বুক দিয়ে। আজকের হঠাৎ দুপুর দিব্যি রাতের ছাদের প্ল্যাঞ্চেটে গোঁত্তা খাচ্ছিল।
বেমক্কা টেনে ধরা আঙুলের ডগায় অঙ্ক পরীক্ষার হলের বেয়াদপি সুবাস টের পাচ্ছিল দীপু।
"আমি এদ্দিন পর এলাম। এসেই দুপুর পালিয়ে দেখা করতে এলাম তোর সাথে। তুই খুশি হসনি বাবু?"।
দীপু অসহায় অর্জুনের মত নীল গোলাপি আঁচলের ফুরফুরের দিকে তাকিয়ে নতজানু বোধ করে।
হাওয়ায় তিরতির ভেসে যায়
"তুই খুশি হসনি বাবু?"
"তুই খুশি হসনি বাবু?"
অর্জুন না দেওয়া চিঠির গাণ্ডীবে মুখ ঢাকে, তার বলা হয়ে ওঠে না যে "এদ্দিন পরে আসা"র গাছ-আকাশ-পাখি তার দেখতে নেই। দীপার্জুনের শ্যেনচক্ষুতে রয়ে যায় শুধু অব্যক্ত "রিটার্ন টিকিট কবে? রিটার্ন টিকিট কবে?"।
বাতাসে ওদিক গামছা নরমে ভেসে বেড়ায়
"তুই খুশি হসনি বাবু?"
"তুই খুশি হসনি বাবু?"।
Thursday, July 14, 2016
সেল্স
Sunday, July 10, 2016
অর্ডার
স্পেশ্যাল স্কিল্স
Sunday, July 3, 2016
মাসাজ
নবরত্ন তেল দিয়ে পাড়ার সেলুনে মাথা মাসাজ করাচ্ছিলেন দত্তবাবু।
বিধুর হাতের তালু আর আঙুলে তালবোধ আছে, মাথা থেকে আরাম উপচে ঘাড় বেয়ে নেমে আসে।
প্রত্যেক শনিবার সন্ধ্যের রুটিন।
দত্তবাবুর শুধু মনে হয় বিধুর বডি আর দুই হাতের সঙ্গে মাথাটাও যদি আসতো এ পোড়ো সেলুনে, তবে বেশ হতো।
ওদিকে বিধুর আবার ঘোর আফসোস, দত্তবাবু শুধু নিজের ঘাড় মাথা নিয়েই দুলতে দুলতে হাজির হন ফি শনিবার। বডি আনলে কী এমন ক্ষতি হত? মালিশ করতে করতে ঘাড় থেকে দিব্যি পিঠে নেমে আসা যেতো।
**
নিমতলা বাজারের স্টাইলিশ জেন্টস সেলুনের মালিক বিধু দত্ত রেলে এমন ভাবে কাটা পড়েছিলেন যে মুণ্ডু উড়ে পড়েছিল দেড়শো মিটার দূরে। ফলে সে মুণ্ডু খুঁজে পাওয়া যায়নি, চিতায় চড়েছিল মুণ্ডুলেস ধড়।
**
শেষ কাস্টোমারের খেউরি করে মাথা মালিশ করছিলেন বিধু দত্ত, তখনই বুকটা হুহু করে উঠলো।
"আহা, কেউ আমায় যদি এমন নবরত্ন তেল দিয়ে মালিশ করে দিত হপ্তায় একবার। এমনটাই। যত্ন করে"।
বুকের হুহু তাড়িয়ে মালিশে মন দিলেন বিধু দত্ত। আজ সকালে আবার তাড়াহুড়োয় বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় টর্চটা ফেলে এসেছেন তিনি, ফেরার সময় অন্ধকার রেলগেট পেরোতে বড় ঝকমারি।
Saturday, July 2, 2016
মাসকাবারি
- হ্যালো।
- কী ব্যাপার? কল করেছো কেন?
- নিপা! আ স্মল হেল্প!
- আমি রাখছি।
- না, প্লীজ! এক্স ওয়াইফ হয়ে এতটুকু হেল্প করবে না?
- সদ্য এক্স হাজব্যান্ড হয়ে তোমার এত সাহস হয় কোথা থেকে?
- মাইরি। এসেনশিয়াল।
- কী ব্যাপার?
- বলছিলাম। ইয়ে। মানে মাসকাবারির গতমাসের ফর্দটা জেরক্স করিয়ে রেখেছিলাম। জানতাম এ মাসে দরকার হবে, সব আইটেম কোয়ান্টিটিতে ডিভাইডেড বাই টু করে নিলেই হলো। কিন্তু গতকাল পিক পকেট হয়ে সমস্ত প্ল্যান গড়বড় হয়ে গেলো বুঝলে!
- বাই!
- প্লিজ কেটো না।
- লিস্ট হারিয়েছো! তো আমি কী করবো?
- বেসিকগুলো বলে দাও। প্লীজ।
- শাট আপ। আমি এখনও অফিসে। কোয়ার্টারলি রিভিউ। ফোন রাখো।
- মাইরি। আমি ভেসে যাবো।
- বাঁচব। তুমি ভেসে গেলে।
- ক'কিলো চিনি? আড়াই? বারো? বাইশ?
- বাহাত্তর।
- হাতি কাদায় লটপট করছে বলে হ্যাটা করবে?
- দিন দিন হাতিই হচ্ছ!
- আর অরিন্দম কী? নীল তিমি?
- সে অন্তত মাসের জন্য বাইশ কিলো চিনি বয়ে বাড়ি আসবে না!
- বেশ করব বাইশ কিলো নেবো। আমি বত্রিশ নেবো।
- নাও। তোমার মহুয়াকে এক স্যুইমিং পুল চিনি গুলে সাঁতার কাটিও।
- আমার পুল, আমার চিনি। মহুয়া তানিয়া যাকে পাবো তাকে চুবনি খাওয়াবো। তারা কেউ অন্তত অরিন্দমের মত ফাঁপা কলসি নয়।
- ইডিয়ট!
**
- আজ ডিনারে কী?
- চিনির পোলাও, চিনি কষা আর চিনির স্যুফলে।
- শোনো। একটা লিস্ট হোয়াটস্যাপ করেছি। কালকে নিয়ে নিও।
- পেয়েছি। থ্যাঙ্ক ইউ।
- কোয়ান্টিটিগুলো ডিভাইডেড বাই টু না করলেও চলবে।
- হুঁ।
- রাখি?
- যেমন রাখবে, তেমনটাই রহেগা।
- গুড নাইট।
- সেই।