Thursday, July 28, 2016

ট্র্যাভেল প্ল্যান

- দেবী, শোনো!
- বলো!
- মন দিয়ে শুনতে হবে কিন্তু।
- অফ কোর্স। অফ কোর্স। মন দিয়ে।
- কন্সেন্ট্রেট করতে হবে। কল্পনাকে প্রলিফারেট করতে দিতে হবে।
- হবে। হবে। তাই হবে।
- তার জন্য চোখ বুজে ভাবতে হবে।
- চোখ বুজলাম। আমি কল্পনা-প্রস্তুত। এবার বলো।
- বলি?
- বলো!
- মনে করো...সবুজ ঢেউ খেলানো একটা পাহাড়। পাহাড়ের বুকের কাছে মেঘ জমে। ।
- বাহ্‌। বাহ্‌। চমৎকার! স্পষ্ট দেখতে পারছি।
- সেই পাহাড়ের মাথায় একটা কটেজ! মন খারাপ করা পুরনো গন্ধ সে কটেজের গায়ে। কাঠের মেঝে, স্নেহের জানালা। 
- মিঠে রোদ সে কটেজের বারান্দায় লেজ গুটিয়ে নেমে আসে... তাই না?
-এইতো দেবী। তোমার কল্পনা ফ্লোট করতে শুরু করেছে।
- তারপর?
- সে কটেজ থেকে পঞ্চাশ মিটার মত হেঁটে গিয়ে একটা সবুজ কাঠের বেঞ্চি। সে বেঞ্চি থেকে সামান্য এগোলেই খাদ। 
- দারুণ! আমার হাততালি দিতে ইচ্ছে করছে। 
- চোখ খুলো না তাই বলে! সেই আদুরে বেঞ্চি আলো করে তুমি বসে। তোমার হাতে আশাপূর্ণা দেবী।তোমার হাতে কফির কাপের ধোঁয়াময়তা। 
- আনন্দে গলে যাবো তো গো।
- আরও আছে, সবুজ পাহাড়ের অন্য প্রান্তের সুদূর সফেদ করে দাঁড়িয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা আর তার সাঙ্গপাঙ্গরা। 
- দারুণ! দারুণ! আমার লাফাতে ইচ্ছে করছে!
- দুরন্ত না?
- বিলকুল। 
- তাহলে বাঁধো বাক্স প্যাঁটরা আর চলো কার্শিয়াং। 
- কবে?
- পরশু রাত্রের ট্রেন। 
- টিকিট?
- তৎকাল, ট্র্যাভেল এজেন্ট। জুটে যাবে। 
- থাকা?
- ওই যে! কটেজ! আমার সমস্ত দেখা আছে! না বোলো না! প্লীজ!
- কদ্দিনের জন্য?
- চার দিন দেবী!
- টিকিট, থাকাখাওয়া! সব মিলে, অন্তত দশ হাজার?
- ওই আর কী! হয়ে যাবে। 
- কহা সে? ব্যাঙ্কে তো আড়াই। দু'জনেরই মাইনে পেতে আরও অন্তত এক হপ্তা। 
- সান্যালের থেকে লোন নেবো!
- ধারের কটেজ আর কার্শিয়াং? 
- হোয়াই নট? স্যালারি ইন! লোন ওয়াপিস!
- হে মোর দেবতা!
- দেবী! ডু নট ডিজ্যাপয়েন্ট। টাকা আজ আছে কাল নেই।  
- না না! ডিজাপয়েন্ট করব কেন? আমার বেটার প্ল্যান আছে।
- গ্যাংটক দেবী? 
- না!
- অরুণাচল?
- কচু! আরও ভালো! 
- কী?
- বলবো! কিন্তু চোখ বুজতে হবে। কল্পনাকে খেলতে দিতে হবে। 
- জরুর। জরুর। এই! বুজলাম চোখ! বলে যাও।
- ভাবো! এই ধরো রাত ন'টা! 
- দিব্যি। দিব্যি। অতঃকিম?
- আমাদের ছাদের উত্তর কোণে, নয়নতারার টবগুলো ঘেঁষে; পাতা মাদুর। 
- মনে মনে এই ছিল দেবী?
- চোখ খুললে হবে?
- হবে না?
- কল্পনা তো সবে ফ্লোট করা শুরু করছে। চোখ বুজেই রাখো। আমি বলে যাই। তো, সেই মাদুর আলো করে এক জোড়া পাশবালিশ! 
- হুঁ। গো অন!
- মাদুরের উত্তর মেরুতে ফতুয়াম্যান তুমি, দক্ষিণে আমার শাড়ির লটপট! 
- ঠিক হ্যায়! নট ব্যাড। উসকে বাদ?
- জুঁইয়ের গন্ধে মঁমঁ ছাদ। সে সুবাসে নিচের পরশের দোকান থেকে ডিম তড়কার গন্ধ মিশে গিয়ে ছাদের হাওয়া ভারী করে তুলেছে।
- অহো! দেবী! অহো!
- মাদুরে রাখা একটা স্টিলের বাটি, একটা স্টিলের থালা আর একটা অ্যালুমিনিয়ামের বাটি। সে স্টিলের বাটিতে কিমা ঘুগনি, আর থালায় আলু কাবলি। 
- স্নেহ। দেবী। স্নেহ।
- গোপন প্রেমের মত অ্যালুমিনিয়ামের বাটিতে তালের বড়া।
- মার দিয়া কেল্লা! দেবী! চোখ না খুলেই দাবী রাখি? কল্পনার স্বার্থেই।
- অফ কোর্স। বলো। বলো। আর কী চাই?
- সামান্য ওল্ড মংক। ওই নিপ্‌ হলেই চলবে। চার টুকরো গোল্ডফ্লেক। সন্ধ্যেয় সামান্য সেনসুয়াসনেস্‌ জুড়ে দেওয়া জরুরী। 
- আলবাত। আলবাত। তাই থাকবে!
- শুধু একটাই যা আফসোস! 
- কী?
-  চোখের সামনে কাঞ্চনজঙ্ঘা টিমটিম করবে না। সন্তুদের বাড়ির ব্যালকনিতে পুরনো পেটির ভিড় আর নমিতাদের বাড়ির ছাদে মেলা সায়া ব্লাউজ! ধ্যুত! সে'টা কোনও দৃশ্য হলো? 
- ওকে। কাঞ্চনজঙ্ঘা? সে ব্যবস্থাও হয়ে যাবে!
- এই কসবার বাড়ির ছাদে? কাঞ্চনজঙ্ঘার ব্যবস্থা?
- পার্ফেক্ট সাবস্টিটিউট রয়েছে আমার হাতে!
- কী'রকম?
- ছাদের বাল্বের আলোয় ঝলমলে সুকুমার রচনা সমগ্র। তুম পড়েগা, হম শুনেগা।
- ওহ!
- কেমন? 
-ম্যাজিক। কাঞ্চনজঙ্ঘা লাভ জানতে পারে, আবোলতাবোলের মত লাভ মেকিং সে গ্রিপ করবে কী করে?
- অতএব! হে মোর দেবতা! কার্শিয়াং না ছাদের কোণ? লোন না আলুকাবলি? লাভ না লাভমেকিং?
- হেহ্‌! হেহ্‌! ছাদ গুনে গুনে ছয় গোল দেবে। কার্শিয়াং কে। 

2 comments:

Anonymous said...

Oi ghugni, alu-kabli aar taler borar sathe chai du cup Darjeeling cha, dudh chara, olpo chini deya. Moner moto bhalobashar songi pase thakle,olpei swargo-morttyer tofat ghuche jaay.

Unknown said...

Bhishon shundor laglo. Kichu bolar I nei.