বিকেল থেকে মেজদাকে নিয়ে হইহইরইরই কাণ্ড।
কী ব্যাপার? মেজদার রাগ কমছে না।
কেন রাগ? ব্যাপারটা সে'খানেই। রাগের কারণ কেউ জানে না, মেজদাও না।
মোদ্দা কথাটা হল মেজদার রাগ কিছুতেই কমছে না। ওর চোখমুখ আগুনে লাল, মাথার চুল এতটাই উষ্কখুষ্ক যে হাজার চিরুনির র্যাফ নামিয়েও বাগে আনা যাবে না। মেজদা শুধু দরদর করে ঘেমে চলেছে আর হুড়মুড় করে পায়াচারী করে চলেছে। কণ্ঠস্বর মেজাজের উত্তাপে জড়ানো, কাঁপা কাঁপা।
বাবার হোমিওপ্যাথি, বড়দাদুর নার্ভের ওষুধ, মায়ের তৈরি লেবু সরবত, বড়দার আবৃত্তি, এমনি তুনুপিসির মাথায় বরফ ঘষার আইডিয়াতেও সে ভীমরাগ বশে এলো না। বরং মেজদার পায়চারীর স্পীড উত্তরোত্তর বেড়েই চলল। ওদিকে প্রেশার বোধ হয় সিলিং ছাড়িয়ে ছাদে গিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে।
মেজদার অজানা ওজনদার রাগের খবর পাড়াময় হতে সময় লাগেনি, ঘনঘন ওকে দেখতে লোক আসছে। বাবলামামা পরের বার ইলেকশনে দাঁড়াবে, সে এসে খোঁজখবর নিয়ে গেলো। তিন্নি কলেজে ওঠার পর থেকেই খুব উড়ে বেড়াচ্ছে, সে এসেছিলো মেজদার লাগামহীন রাগে চোবানো মুখের পাশে পাউট করা মুখ রেখে ছবি তুলবে বলে। আরও কতজন। সবাই চোখ কপালে তুলে মেজদাকে দেখে যাচ্ছে, আর যে যার মত টোটকা উপদেশ দিয়ে যাচ্ছে। এমনকি অঘোর কাকা নিজের সেলুন বন্ধ করে এসে মেজদাকে দেখে একটা স্পেশ্যাল মাদুলি দিয়ে গেলো।
কিন্তু কোনও কিছুতেই কিছু নয়। মেজদা নিজের রাগের কড়াইতে ক্রমশ ভাজা ভাজা হয়ে পড়ছিল। ভাবগতিক দেখে বাবা হাসপাতাল আর আনন্দবাজারের অফিসে ফোন করে খবর দিয়ে রাখল। ব্যাপারটা কোনদিকে গড়াবে কিছুই বলা যাচ্ছিল না।
তবে অ্যাম্বুলেন্স বা সাংবাদিক আসার আগে ইউরেকা ঘটালো ছোটকা। "দেখি শেষ চেষ্টা করে" বলে হঠ করে মেজদার হাত থেকে মোবাইল ফোনটা কেড়ে নিয়ে মেজদাকে ফেসবুক আর ট্যুইটার থেকে লগ-আউট করিয়ে দিল।
কাজ হলে মন্ত্রের মত। মেজদার মুখে গন্ধরাজের সুবাস মাখানো হাসিটা ফিরে এলো, সে জানালে তার আচমকা খুব ছানার জিলিপি খেতে ইচ্ছে করছে।
খুব সম্ভবত "আনন্দবাজারের ফিফ্থ পেজটা মিস হলো" বলে বাবা সামান্য চুকচুক শব্দ করেছিলেন।
No comments:
Post a Comment