Monday, October 24, 2016

একটা সোমবার ও সাহাবাবু

***
সোমবার, সকাল পৌনে ন'টা।
***
- একটু শুনুন! প্লীজ।
- আমায় বলছেন?
- আজ্ঞে। এই কলমটা আপনার? আপনার সীটের পাশে পড়েছিল। দেখুন, রেনল্ডসের ডট।
- না।
- ও। আচ্ছা, এই স্টেটসম্যানটা আপনার?
- না। এ'টাও আমার সীটের পাশে পড়েছিল?
- আজ্ঞে। আর এই পাঁচটাকার কয়েনটা? এ'টাও ওই। সীটের পাশে।
- বাসের এ সীটের পাশে চাইলে রবীন্দ্রনাথের দাড়িও পাবেন বোধ হয়। ফাজলামো থামান তো মশাই। রুবি আসতে এখনও আধ ঘণ্টা। ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাবেন না। 

***
সোমবার দুপুর একটা পনেরো
***

- স্যার, এ'খানে একটা সিগনেচার করে দিন প্লীজ।
- আমার পেনটা আবার ফাউন্টেন। লীক করছে। আপনার কাছে ডট আছে সাহাবাবু?
- সরি স্যার।
- ধ্যুত। কিছু চাইলেই সরি স্যার। আপনাদের মত ওল্ডটাইমারদের এই এক সমস্যা। নড়তেচড়তে আঠারো মাস। এই যদি অফিসের কোনও ইয়ং টার্ক, যেমন দত্তর কাছে ডটপেন চাইতাম সে ফস করে বের করে দিতো। বসকে দিয়ে কাগজ সই করাতে এসেছেন অথচ সঙ্গে পেন নিয়ে আসেননি?

***
সোমবার দুপুর সোয়া তিনটে
***

- সাহাবাবু!
- আজ্ঞে স্যার?
- আজকের স্টেটসম্যানে একটা জরুরী বিজ্ঞাপন বেরিয়েছে সাতের পাতায়। জোগাড় করুন দেখি।
- স্টে...!
- স্টেটসম্যান!  নাম শোনেননি নাকি?
- না মানে, এত বেলায় স্যার। কাগজের স্টলেও বোধ হয়...।
- সেই এক দোষ! কোনও কিছু চাইলে আপনার কাছে পাওয়া যায় না। যাই দত্তকেই বলি স্টেটসম্যান জোগাড় করতে। আপনার কাছে কিছু চাওয়াটাই ভুল। এ'দিকে সামনের হপ্তায় প্রমোশনের সময় আপনার বদলে লিস্টে দত্তর নাম থাকলে মুখ হাঁড়ি করে বসে থাকবেন।
- প্রমোশন? সামনের হপ্তায়?
- লিস্ট বেরোচ্ছে। যাক গে, দত্তকে বলি স্টেটসম্যান জোগাড় করতে।

***
সোমবার বিকেল সাড়ে চারটে।
***

সাহাবাবু নিশ্চিত ছিলেন। এমন কিছুই একটা হবে।
বিকেলের সিগারেট বিরতি বস ও দত্তর সাথেই নেন তিনি। তিনজনে অফিস থেকে বেরিয়ে নগিন্দর পানওলার দোকানের সামনে এসে দাঁড়ান। বসই রোজ তিনটে সিগারেট কেনেন সকলের হয়ে।
আজই পাঁচটাকার খুচরো কম পড়েছিল বসের পকেটে।
আজই সাহাবাবুর পকেটে একদম খুচরো ছিল না।
যথারীতি দত্ত হিপপকেট থেকে একটা পাঁচের কয়েন বের করেন নগিন্দরের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে; একটা জ্বলন্ত দেশলাই কাঠি বসের সিগারেটের ডগার দিকে এগিয়ে দিলে।
যথারীতি বসের মুখে "আমি জানতাম" গোছের বাঁকা হাসি।

***
সোমবার সন্ধ্যে পৌনে সাতটা
***

রুবির মোড়ের মুখেই হয়েছিল অ্যাক্সিডেন্টটা। সাহাবাবু অফিস ফেরতা জ্যামে ফেঁসে নাজেহাল। তবে বাস থেকে নেমে অকুস্থলে ঢুঁ মারতে ইচ্ছে হল না তার, অন্য কয়েকজনের অত্যুৎসাহির মত। এমনিতেও দিনটা বড় গোলমেলে গেছে কিনা। সকালের বাসের সেই অদ্ভুত ভদ্রলোককে আর একবার পেলে হয়!

সে অদ্ভুত ভদ্রলোকের দেখা অবিশ্যি সাহাবাবু পেতেই পারতেন, যদি তিনি বাস থেকে নেমে দুর্ঘটনাস্থলের দিকে যেতেন ।  বাসচাপা পড়া লাশের বুকপকেটে থ্যাঁতলানো সস্তা রেনল্ডসের পেন,এক হাতে ধরা রক্তমাখা স্টেটসম্যান। সে লাশে দেখে সাহাবাবু হলফ করে বলতে পারতেন যে লাশের পকেটে কোথাও একটা পাঁচটাকার কয়েন নিশ্চই আছে যা নগিন্দর পানওলার সামনে দাঁড়িয়ে থাকার সময় তাঁর কাছে ছিল না।

সবার সব সয় না। আর সইলেই যে সব পেতে হবে, তেমন মাথার দিব্যি কেউ দিয়েছে কি?