Sunday, October 23, 2016

নবাব ও বেগমজান

১.

সিলিং ফ্যান থেকে দড়ির মত করে ঝোলানো শাড়ি। ফাঁসটাও পোক্ত। নিখুঁত ব্যবস্থা।

খাটের ওপর মচমচে চেয়ারটা রেখে বেশ তৃপ্ত বোধ করছিলেন বিপাশা। চেয়ারে দাঁড়িয়ে সবে ফাঁসটা গলায় জড়াতে যাবেন..অমনি খচখচটা মাথায় এলো। বালুচরি কাঞ্জিভরম থাকতে সস্তা ছাপায় ঝুলবেন? সবচেয়ে ভালো হত আসাম সিল্কে ঝুললে।  অপূর্ব, যেমন খোলতাই সবুজ তেমন মসৃণ। কিন্তু এমন দরকারি দিনেই সে'টা নেই। কী কুক্ষণেই না লন্ড্রি কাচাতে দিয়েছিলেন।

২.

নন্দবাবুর মেজাজ গেল নিমতেতো হয়ে। একটা সুইসাইড করতে এত টালবাহানা, ভাবা যায়? গত হপ্তায় পুড়ে মরার প্ল্যানটা ক্যানসেল হল কলকাতায় বড্ড গরম পড়েছে বলে।
আজ ঝুলে মরার প্ল্যান ক্যানসেল হলো আসাম সিল্কের শাড়ি রাধাগোবিন্দর লন্ড্রিতে দেওয়া আছে বলে।
বৌকে নিয়ে এ এক মহাফাঁপর।

৩.

- আচ্ছা, জলে ডুবে মরলে কেমন হয়?
- কোথায়? গঙ্গায় যাবে?
- গেলে গঙ্গাই ভালো গো। আত্মহত্যার পাপ লঘু হবে।
- কাল অফিস যাওয়ার পথে ঘাটে নামিয়ে দিয়ে যাই। লাঞ্চের পরপরই ফেরত আসব, কেমন?

৪.

- আজ কী হল?
- মন কেমন করলো গো!
- মন কেমন?
- আর চাইলাম আর মরে গেলাম! তাও হয়? আমার মরব মরব গা করলো আর আমি অমনি সরে পড়লাম, খোলামকুচি নাকি? ও'দিকে তারপর তোমার গেরস্থালী মাথায় উঠুক।
- এমন উদ্ভট শখ পোষার সময় মনে ছিল না? সতেরো বছর ধরে ভেবে আসছি; তুমি মরবে আর আমি এই হারামির গাছ অফিসের মুখে লাথি মেরে বেরিয়ে আসব। বাড়িতে ঠোঙা বানাবো। রাজার হালে থাকব। সতেরো বছর ধরে তোমার খালি টালবাহানা আর টালবাহানা। এ'দিকে আমি রইলাম ঝুলে।
- এক কাজ করি চলো, পুরী ঘুরে আসি। কেমন? তা'তে তোমার আমার মন ভালো হবে। ফিরে এসে নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়ব'খন। ইঁদুরের বিষে অসাধ্য সাধন হয় শুনেছি। দিন সাতেক ঘুরে আসি পুরী, তারপর না হয় তুমি আমায় কয়েক প্যাকেট এনে দিও, কেমন?
- সতেরো বছরে এ নিয়ে বত্রিশ নম্বর পুরী ট্রিপ।
- টিকিট দেখো।
- সেই ভালো।

No comments: