Friday, November 4, 2016

খুনের গল্প

- ক'টা?
- কী ক'টা?
- বন্দুকে গুলি। ক'টা বাকি?
- চারটে। দু'টো চুনোপুঁটিতে নষ্ট হল।
- লাশ ইজ লাশ, তাঁকে চুনোপুঁটি বলে ছোট করতে নেই।
- যে আজ্ঞে।
- এ'বার শোন। এই যে চারটে গুলি, বুঝলে জনার্দন, সাবধানে খরচ করবে।
- আজ্ঞে।
- একটা আমার ডান কানে, একটা বাঁ কানে। বাকি দু'টো আমার মুখে নল গুঁজে। ইন দ্যাট অর্ডার। কেমন?
- আজ্ঞে।
- আর শোনো বাবা, আমার সিকুইরিটি দু'টোকে মাত্র দু'টো বুলেটেই নিকেশ করেছ বলে ভেবোনো যে আমার মত স্টলওয়ার্ট বডিতে মাত্র একটা বুলেট নিয়ে নিকেশ হবে। চারটেই আমার চাই, ডায়রেক্ট মগজে।
- আজ্ঞে দু'টো কানের মধ্যে দিয়ে আর দু'টো মুখের ভিতর দিয়ে।
- বাহ। বেশ ব্রাইট খুনি তো হে তুমি জনার্দন।
- উচ্চমাধ্যমিকে সেকেন্ড ডিভিশন ছিল আজ্ঞে।
- বেশ। তাহলে চালাও গুলি।
- আজ্ঞে, তার আগে একটা প্রশ্ন ছিল। যদি অনুমতি দেন।
- তোমার হাতে পিস্তল। আমার ঘাড়ে সিঙ্গেল মাথা। অনুমতি দিলাম।
- টাকা দিয়ে নিজেকে খুন করাচ্ছেন কেন?
- গুরুর আদেশ।
- গুরু সুইসাইড করতে বলেছেন?
- আলবাত। ঠিক এখনই, এই টুবয়েন্দাগো তিথিতে।
- টুবয়ে...য়ে...য়ে।
-  টুবয়েন্দাগো তিথি। আমার গুরু তিব্বতের মানুষ কিনা। তিনি এ'দেশে এসে রয়ে গেছেন স্রেফ মাটনের ঝোলের কোয়ালিটির জন্য। নয়তো বছর কুড়ি আগেই নাকি তার আজারবাইজানে চলে যাওয়ার কথা।
- তিনি সুইসাইড করতে বলেছেন?
- আত্মহত্যা মহাপাপ নরকে গমন, শুনিসনি? এ'টা তো খুন, তুই খুন। অতএব তুই পাপী। আরে দু'কানে একটা করে গুলি আর মুখে দু'টো বুলেট নেওয়া মৃত্যু অতি পবিত্র।
- আজ্ঞে, গুরুমশাই তেমনটা বলেছেন?
- আলবাত। তেমন ভাবে মারা গেলে পরজন্মে রোজ রোজ এবেলা ওবেলা ইলিশভাত। চোরাকারবার না করেও।
- পরজন্মে রোজ ইলিশ খাওয়ার জন্য নিজেকে খতম করছেন?
- তুমি কি ইলিশের আদত মূল্য আজও অনুধাবন করতে পারোনি জনার্দন? আমার বারোটা সিন্দুক ভরা হীরেতেও এ যুগে এবেলাওবেলা ইলিশ জোটানো যাবে ভেবেছ? বাজারের দরদামের খবর রাখো বাবা জনার্দন?

**

দীনবন্ধু শেঠ অতি ধুরন্ধর ক্রিমিনাল। চোরাকারবার, স্মাগলিং, তোলাবাজি; তিনি সর্বত্রস্থিত। তাঁর তিরিশ বছরের দৌরাত্ম্যে পুলিশও রাশ টানতে পারেনি। অথচ সমাজকে তাঁর শয়তানির মাশুল নির্মম ভাবে গুনতে হত অনবরত।

পুলিশের ব্যর্থতায় তিতিবিরক্ত বটু গোয়েন্দা বুঝেছিলেন যে তাঁকেই কিছু করতে হবে। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ায় অবশ্য তাঁর ঘোর আপত্তি কিন্ত দীনবন্ধুকে নিকেশ করায় বিলম্বটাও অসহ্য ঠেকছিল।

অতএব,
লড়াইয়ে মাঠে নামো রে।
তুখোড় মেকাপে সাধু সাজো রে।
শেঠের অশিক্ষা আর অন্ধবিশ্বাসে খেলে তাঁকে বশ করো রে।
ইলিশের লোভে তাকে সুইসাইডের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাও রে।

সেদিন সন্ধ্যেবেলা মেকআপ রিমুভ করার সময়ই টিভি নিউজে শেঠ দীনবন্ধুর খুনের খবর পেলেন বটুগোয়েন্দা।
"টুবয়েন্দাগো তিথির আইডিয়া বটু গোয়েন্দা ছাড়া কার মাথায়ই বা আসতো"?।
এ'সব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে হেসে খানিক গড়িয়ে পড়লেন বটু।

No comments: