- হ্যালো।
- হ্যালো। কে বলছেন?
- অপূর্ব ঘোষাল। মধ্যমগ্রাম থেকে।
- ও। আচ্ছা। তবে আমি কোনও অপূর্ব ঘোষালকে চিনি না।
- স্বাভাবিক। আমিও আপনাকে চিনি না।
- তবে ফোন করেছেন কেন? তাও এই মাঝরাতে।
- এ'টাই আমার সবচেয়ে লম্বা ইন্টার্যাকশন হল গালাগাল না খেয়ে।
- মানে?
- মানে গত চার দিন ধরে অন্তত তিনশো র্যান্ডম ফোন নম্বর ডায়াল করেছি। সকলের ধৈর্য আপনার চেয়ে অনেক কম।
- ও। কিন্তু কেন?
- সে অনেক কথা। আচ্ছা, আপনার নাম?
- রোহণ দত্ত। উত্তরপাড়া।
- রোহণবাবু, একটা জরুরী কথা ছিল।
- আমি কথা না বললে জরুরী কথাটা জানাতেন কী করে?
- অন্য নাম্বারে কল করতাম। আপনার ফোন নম্বরের শেষ চারটে সংখ্যা ফাইভ টু সেভেন এইট ।এর পরেরটা হয়ত ফাইভ টু এইট সেভেনে ডায়াল করতাম।
- ও। এই ভাবে গত চার দিনে ধরে কল করে যাচ্ছেন?
- তিনশোরও বেশি কল। সবাই রিফিউজ করেছে পত্রপাঠ। দু'একজন পুলিশের ধমকি দিয়েছে।
- তবু আপনি দমে যাননি অপূর্ববাবু।
- রাইট।
- আমার গর্ব হচ্ছে আপনার জন্য।
- আপনার ঘুম ভাঙ্গালাম?
- নাহ্। ক্রসওয়ার্ড পাজ্ল সল্ভ করছিলাম।
- একা?
- অবভিয়াসলি। এবারে জরুরী ব্যাপারটা বলুন। ক্রসওয়ার্ডটা একটা ইন্ট্রিগিং পয়েন্টে ফেলে ফোন ধরেছি। তিনের ঘর থেকে ওপর টু নীচটা ক্র্যাক করতে পারলেই চুকেবুকে যাবে।
- ও হ্যাঁ। জরুরী কথাটা। বলেই ফেলি, হ্যাঁ?
- ইয়েস স্যার।
- আমি সুইসাইড করতে চলেছি।
- সে'টাই জরুরী ব্যাপার?
- জরুরী নয়?
- অপূর্ববাবু, আপনি জানেন প্রতি বছর প্রায় দশ লাখ মানুষ সুইসাইড করে।
- দশ লাখ?
- বেশি বই কম নয়। ক্যালকুলেটর আছে হাতের কাছে?
- না।
- আমার কাছে আছে। শুনুন। দশ লাখ ডিভাইডেড বাই তিনশো পঁয়ষট্টি। দিনে প্রায় দু'হাজার সাতশো চল্লিশ জন। সুইসাইড করছেন।
- বলেন কী?
- দু'হাজার সাতশো চল্লিশ ভাগ চব্বিশ। মানে ঘণ্টায় একশো চোদ্দ জন। মানে প্রতি মিনিটে প্রায় পৌনে দু'জন করে...বুঝলেন? মানে এই মুহূর্তেই আপনারই মত কেউ এক গাদা ঘুমের ওষুধ মুঠো করে বসে আছে।
- মাথাটা ঘুরছে রোহণবাবু।
- কাজেই আপনার খবরটা আদৌ জরুরী নয়।
- নয়, না?
- ডেফিনিটলি নয়। তা আপনার এ সাধারণ শখ হল কেন?
- হবে না কেন বলতে পারেন? এ দুনিয়ায় মানুষ বেঁচে থাকে কেন কে জানে। পলিটিকালি কোরাপ্ট, মরালি ব্যাঙ্করাপ্ট, কাওয়ার্ড সোসাইটি। গ্লোবাল ওয়ার্মিং। হ্যান। ত্যান। কত ইস্যু আছে আমাদের পালিয়ে যেতে বাধ্য করার জন্য। বাড়তি পার্সোনাল ক্যালামিটি থাক বা না থাক। সবার উচিৎ সুইসাইডে মন দেওয়া।
- পয়েন্ট। আপনি কি ওই ঘুমের বড়িই...?
- না না, আমি ভি-তে খেলার মানুষ। নড়বড়ে চেয়ার অন খাট। দড়ি খলবল করে ঝুলে নেমে আসছে সিলিং ফ্যান থেকে।
- কিন্তু ফোনটা করার কী দরকার ছিল? এই যে এদ্দিন ধরে পাগলের মত অপরিচিত সমস্ত নাম্বারে কল করে যাচ্ছেন।
- পরিচিত নাম্বার থেকে সিমপ্যাথি আসে মশাই। সব ক্রোকোডাইল টিয়ার্স অবশ্য। কিন্তু তাই বলে বলেকয়ে যাব না সে'টা হয় না।
- হুঁ।
- তবে রোহণবাবু, এই আপনাকে বলতে পেরে বেশ রিল্যাক্সড বোধ করছি।
- তাহলে রাখি?
- হ্যাঁ। রাখতেই পারেন।
- মন খারাপ?
- সে কারণেই সুইসাইড করছি। তবে কন্সট্যান্ট যারা ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে ঘোরে তারা ইউসুয়ালি লো আই ক্যিউ। সেই হ্যাহ্য লেভেলের গাধামো সহ্য হয় না।
- ডিপ্রেশনটাই ন্যাচারাল স্টেট বলছেন?
- ইনসিস্ট করছি।
- কবি কিন্তু বলেছেন আনন্দধারা বহিছে ভুবনে।
- মার্কেট ফোর্সেস কে পাত্তা না দিয়ে তো আর নিজেকে মার্কেট করা যায় না রোহণবাবু। ভদ্রলোক প্রফেশনাল কবি ছিলেন, নিজে ইন্টেলিজেন্ট হলেও বাজারের চাহিদাকে দুয়ো দিতে পারবেন কেন? আর বোকা মানুষদের চাহিদাও বেশি।
- আর আপনি বোকা নন।
- আপনিও বোকা নন। নয়তো আমাদের কথা হচ্ছেই বা কেন।
- ঠিক। অতএব? আপনি অল সেট?
- অল সেট। গলায় ফাঁস দিয়ে চেয়ার ঠেলে দেওয়া। দিব্যি। কপিবুক।
- অল দ্য বেস্ট অপূর্ববাবু।
- থ্যাঙ্কস। তবে আপনার ওই পরিসংখ্যানের কথা শুনে কেমন গা গুলিয়ে উঠেছিল।
- মিনিটে পৌনে দু'জন।
- ভাবতেই কী ভালো লাগছে যে মুহূর্তে পৃথিবীতে অন্য একজন আমারই মত মরে যাওয়ার চেষ্টা করছে। দিব্যি। ছিমছাম। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারলে কী থ্রিলিং ব্যাপার হত ভাবুন। যাক, আমার কাজটা সেরে ফেলি গিয়ে। ওহ হ্যাঁ, আপনার মত খোলতাই মনের একজনের সঙ্গে আলাপ হল বটে কিন্তু মুখোমুখি বসে আড্ডা হলো না। সে আফসোসও যাওয়ার নয়।
- তা ঠিক। তবে চারদিন যখন ডিলে হলই, তখন আর এক দিন অপেক্ষা করে যাবেন নাকি? রাজি থাকলে আগামীকাল দুপুরের কলকাতার কোন রেস্তোরাঁতে আপনার এক ঢিলে দুই পাখি মারার ব্যবস্থা করতে পারি।
- দুই পাখি?
- ওই। আমার মত খোলতাই মনের একজনের সাথে আলাপ আর সঙ্গে আপনার সেই পৌনে দুই নম্বরের সঙ্গে দেখা।
- পৌনে দুই...আ...আপনি...।
রোহণবাবু যখন শুতে গেলেন তখন বাজে রাত পৌনে তিনটে। দুই শিশি ঘুমের বড়ি দেরাজে ফেরত রেখে সামান্য জোয়ানের আরক খেয়ে ঘুমোতে গেলেন তিনি। কাল আবার কলকাতার পিটার ক্যাট রেস্তোরাঁতে লাঞ্চ করতে যাওয়া আছে।