Saturday, December 31, 2016

আলু, পাঁঠা, লাউ

"অ্যালকেমি না জানলে আলুকে আলুপোস্তয় কনভার্ট করা সম্ভব নয়"।

- পাঁঠা আর মাটন এক নয়।
- হুঁ? ওহ। পাঁঠা জ্যান্ত! মাটন নয়।
- প্রিসাইস হল না।
- তবে?
- মাটন উড়ন্ত। পাঁঠা নয়।

- তরকারিতে লাউ? এহ্ হে। লাউসি।
- লাউ? আচ্ছা বউ, তুমি লাউ আলাউ করো না জেনেও আমি লাউ দেব রান্নায়?
- লাউ আছে। লাউড অ্যান্ড ক্লীয়ার। পোলাউয়ের সাথে লাউ। এহ্। ম্যাগোহ্।
- বিশ্বাস করো, এ তরকারি তে লাউ নেই। তবে আই লাউ ইউ।
- কেলাউন কোথাকার। মিথ্যে কথা বলছ।
- মিথ্যে? আমি? দরকার হলে লাউ ডিটেক্টর টেস্টে বসতে আমি রাজি।

নেতা ও জমিদার

- নেতা, কথায় কথায় কীসের এত প্রতিবাদ তোমাদের?

- জমিদারমশাই, প্রতিবাদ কি আর সাধে করি? ক্ষেতে জল নেই, পেটে দানা নেই। আমাদের দরকার খালের। আপনার দাদুর মূর্তি আপনি যে টাকায় বানাবেন, তা'তে অন্তত দশটা খাল খুঁড়ে ফেলা যাবে।

- তোমরা বড় পেছন পাকা। ফেসবুক পেয়ে সাপের পাঁচ পা দেখেছে। নিজের মাথাও গেছে, আর পাঁচটা লোকের মাথাও চিবিয়ে মরলে।

- দেখুন, খালি পেট কার্বাইডের ডিপো। পিছন না পেকে উপায় নেই।

- আমার দাদু, ঈশ্বর রায়বাহাদুর শিবরাম হালদারের পত্তন করা এই গ্রাম। তার একটা আড়াই মানুষি মূর্তি বানানো নিয়ে তোমরা এত কেচ্ছা করবে? দূর দূর থেকে মানুষ এসে সে মূর্তি দেখে যাবে। গাঁয়ের সুনাম করবে। তা সহ্য হচ্ছে না? তখন থেকে খালি খাল খাল করে খাল খিঁচে নিলে। উফ।

- জমিদারবাবু। করের টাকা দিয়ে ও মূর্তি গড়া পাপ হবে।  খাল না হয়ে পরে হবে'খন। ও টাকা আপনি জমিদারির কাজে খরচ করুন। মানুষের দরকারে খরচ করুন। মূর্তি গড়লে প্রতিবাদ হবেই।

- জ্বালিয়ে মারলে। ঠিক আছে। মূর্তি হবে না। ও টাকা প্রজা স্বার্থেই ব্যয় হবে।

- কথা দিচ্ছেন?

- যদুনাথ হালদার কথার খেলাপ করে না। এ টাকা আমি প্রজাদের পিছনেই ঢালব। খাওয়ার চেয়েও দরকারি কী জানো নেতা?

- কী?

- সুরক্ষা। গাঁয়ের সুরক্ষা। দশের সুরক্ষা।  সরকার বাহাদুর আমাদের গাঁয়ের প্রতি সদয়। তাতে আর চারটে জমিদারির লোকের গা জ্বলে। কে জানে, দেখ তারাই আমাদের খাল থেকে জল চুরি করে হয়তো।

- জল চুরি?

- কতটুকু জানো তুমি নেতা? বেশ। এ টাকায় মূর্তি হবে না। ও টাকা দিয়ে আমি আরও দু'শো লেঠেল পুষব আর বর্মা থেকে দু'হাজার পালিশ করা লাঠি আনাবো।

- লাঠি?

- দেশের জন্য। দশের জন্য। বুঝলে নেতা?

- না মানে, মূর্তির আইডিয়াটা একেবারে ফেলনা ছিল না জমিদারমশাই।

- মাইরি বলছ? নেতাকুমার?

অসোয়াস্তি

- ভাই পলাশ।
- কী ব্যাপার দাদা?
- শরীরটা কেমন করছে।
- সে কী দাদা, কাজের প্রেশার?
- ফাইলের স্তুপ তো দেখতেই পাচ্ছ ভাই। তবে তার জন্য নয়।
- জ্বর জ্বর?
- না। বুকে চিনচিন।
- হার্ট?
- অ্যাটাক ফ্যাটাক না।
- বদহজম?
- খানিকটা।
- ইনো দেবো? আমার ড্রয়ারে আছে বোধ হয়।
- ওতে হবে না ভাই। এ বুকজ্বালার নেচার অন্য।
- কীরকম?
- মোবাইলে ইন্টারনেট প্যাকটা শেষ হয়ে গেছে।
- তার জন্য বুক চিনচিন?
- আসলে অনেকক্ষণ ধরে অনেকটা ক্রিটিসিজম জমে দলা পাকিয়ে আছে বুকের কাছটায়। এদিকে অফিস পিসিতেও ফেসবুক ব্লক করা।
- সে কী!
- তোমার তো জিওর সিম। খোলামকুচি। টিথারিংয়ে ছড়িয়ে দাও। আমি একটু লগ ইন করি। নয়তো হাল দেখেছো তো, ডিসেম্বরেও ঘামছি।

ষোলোর শেষে

- শেষ।
- শেষ।
- স্যাট্ করে এলো...।
- আর ফ্যাট্  করে চলে গেল।
- মাইরি।
- রিজোলিউশন?
- ভুঁড়ি কে এক্সেপ্ট করতে শিখব।
- এটা রিজোলিউশন?
- দায়সারা মেনে নেওয়া নয়। ভালোবাসব। পরিচর্যা করব।
- ভুঁড়ির?
- মাইরি। যেটুকু আছে, সেটুকুর সঙ্গে সেন্স অফ অ্যচিভমেন্ট মিশিয়ে দিতে না পারলে আর করলামটা কী।
- তা অবিশ্যি ঠিক। আমিও ভাবছি প্রমোশন না পাওয়াটা সেলিব্রেট করব।
- প্রমোশন পেয়ে কেউ ইতিহাস বইতে ঢুকতে পেরেছে? কখনও পড়েছিস যে দু'হাজার বত্রিশ বিসিতে কেউ ডাবল প্রমোশন পেয়ে ব্রাঞ্চ হেড হয়েছে?
- এগজ্যাক্টলি। প্রমোশন রিজেক্ট করলে স্কচ খাব।
- প্রেমটেমের ব্যাপারে কিছু ভেবেছিস?
- সতেরোয়? প্রীতুর আশা এ বছর ত্যাগ করব।
- জিন্তা?
- ওহ। তুই তো আবার সারনেম জুড়ে ডাকিস।
- নতুন কেউ? এবারেও কি মুম্বই?
- নাহ। অদ্বিতীয়া দাসগুপ্ত। অফিসে নতুন এসেছে।
- তোর কলজে আছে?
- কলেজে থাকতে ছিল। তবে দেখি। সতেরোয় কিন্তু বেশ একটা ফীলগুড ওয়েদারের আভাস পাচ্ছি।
- ষোলোর শুরুতেও তাই বলেছিলি ভাই।
- এক বছর আগের আমি তো শিশু রে। ও বয়সে জাজমেন্টে স্ট্রেন্থ থাকে না।
- হ্যাঁ রে...।
- হুঁ?
- কিছুতেই কিছু না, না?
- ছাদ ব্যাপারটাকেও কিছু না বলবি? এই মাদুর পেতে রঙ মিলান্তি। এফ এমে রফি। অ্যাসাইলাম বলতে এটুকু তো রইলোই।
- ট্রু। "ছাদে চ'" ইজ দ্য ক্লোজেস্ট সাবস্টিটিউট টু "মা কাল পোস্ত কিন্তু"।
- অল দ্যাট ইজ লেফট।
- নেহ্। হরতনে হরতন।

চিঠি

একবার হয়েছে কী, এক বদখত চিঠি একের পর এক মানুষকে দলা পাকিয়ে ওয়েস্টমানুষ বাস্কেটে ছুঁড়ে ফেলছিল।

দিব্যি চলছিল।
দলা পাকাও আর ছুঁড়ে ফেলো।
দলা পাকাও আর ছুঁড়ে ফেলো।
গোটা ঘর লাশে পরিপূর্ণ।

এমন সময় চিঠির নজরে এলো এক ভদ্রলোক। তিনি কাকভেজা হয়ে বাসস্টপে দাঁড়িয়ে। কাঁধে অফিস ফেরতা ব্যাগ, মুখে "মা কই, মা কই" বিহ্বলতা।

চিঠি তাকে সযত্নে ভাঁজ করে সুকুমার সমগ্রের মাঝে রেখে দিলে।

Friday, December 30, 2016

ক্লিওপেট্রা

- এইয্যো। শুনুন।
- আমায় ডাকলেন ম্যাডাম?
- আপনার পিছনে আছে বলতে ওই গোবেচারি ল্যাম্পোস্ট। আপনিও যে গোবেচারি নন তা অবশ্য বলছি না, তবে ল্যাম্পপোস্ট আদৌ নন।
- কোনও দরকার আছে? ম্যাডাম?
- সে কী! দরকার আমার?
- মা...মানে?
- অমন ঘুরঘুর করছেন। পিছন পিছন। সেই কবে থেকে। আর দরকার নাকি আমার! বোঝো!
- আমি কিছুই বুঝছি না।
- সতেরো নম্বর বাস।
- আসলে...।
- শৈলেনবাবুর কাছে রেওয়াজ করতে যাই। বুধ, শুক্রু, রবি; সেখানে।
- হয়েছে কী...।
- মঞ্জুলাদের বাড়ির সামনের ফুটপাথে দাঁড়ালে আমাদের রিহার্সাল স্পষ্ট দেখা যায়, তাই না?
- বিশ্বাস করুন...।
- জানেন, আমি মেজদাকে জানালে ও আপনাকে জুতোপেটা করবে?
- কিন্তু আমি তো...।
- আপনি তো কী?
- আমি না...।
- আপনি ঘুরঘুর করেন না?
- ন...না।
- বেশ। তাহলে আমি জুতোপেটা করব।
- কী?
- ঘুরঘুরিয়া হলে মেজদা জুতোপেটা করবে। না হলে আমি। বেছে নিন।
- মেজদা..গোঁফটা বাদ দিলে বেশ অমায়িক।

অতঃপর নায়ক জুতোপেটা ফ্লেভারের মেঘে ভাসতে ভাসতে ল্যাম্পপোস্টের ডগার ওপারে গ্র‍্যাভিটির মায়া কাটিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলেন।

এদিকে মেজদার ডাইরেক্ট করা নাটক থেকে অচানক বাদ পড়লেন নায়িকা। নায়িকাকে আচমকা ফিক্ হাসি রোগে পেয়েছে। ডায়লগ পড়তে গিয়ে হাসছে, প্রম্পট শুনে হাসছে, মেজদার ইন্সট্রাকশন শুনে গড়িয়ে পড়ছে। ক্লিওপেট্রার অমন ফিচেল হলে চলে না।

বাপ্

- বাবা।
- কী হল?
- এই। ফেসবুকে বাবাদের ব্যাপারে কিছু মুভিং কোটস পড়ছি।
- যেমন?
- যেমন। বাবা কে? যে নিজে ছেঁড়া জামা পরে থেকেও সন্তানের জন্য প্লে-স্টেশন কিনে আনে।
- বলছিস?
- লাইক অ্যান আইডিয়াল ফাদার। বা এই দেখো। বাবা কে? যে নিজে পটলের ঝোল খেয়ে ছেলেকে দামী রেস্তোরাঁয় খাওয়ার টাকা দেয়।
- রিয়েলি?
- রিয়েলি। এই হচ্ছে আইডিয়াল প্যারেন্টিং। বুঝলে বাবা?
- আই সি।
- তোমার কোর্স করেকশন প্রয়োজন। এই একটা কোটেশনও তোমার ক্ষেত্রে খাটছে না। এই কিছুক্ষণ আগেই আমায় দিয়ে চা করালে আর নিজে সোফায় পা নাচিয়ে শ্যামল মিত্তির শুনে গেলে।
- ধৃতরাষ্ট্র নিজে যাবতীয় খিস্তি হজম করে ছেলেকে জুয়া খেলার লাইসেন্স দিয়েছিল রে। তার চেয়ে ছেলের ঠ্যাঙ নিজেই কুপিয়ে দিলে দুর্যো বেচারির হিউমিলিয়েশন কম হত।
- কী রিডিকুলাস এগজ্যাম্পেল।
- শোন, ছেলেবেলায় গোটা দুনিয়া যখন তোকে অবন ঠাকুর, উপেন্দ্রকিশোরের বেবিস্টেপে ভুলিয়ে রাখতে চেয়েছিল, তখন আমি নিজের পরশুরাম সমগ্র পেজমার্কে স্থগিত রেখে তোকে স্বপনকুমার পড়ে শুনিয়েছি। বাজপাখি সিরিজ। রক্তে কেরোসিন দেশলাই দেওয়া উত্তেজনা। ক'টা বাপ তেমনভাবে স্টেপ আউট করে রে?
- পয়েন্ট। বাবা কে? যে নিজের পরশুরাম সমগ্র তুলে রেখে ছেলেকে স্বপনকুমার রিডিং পড়ে শোনায়।
- আহা, আদর্শ। আদর্শ। বেড়ে বলেছিস। এই কোটেশনটাও লেখা আছে বাবু? ফেসবুকে?

Wednesday, December 28, 2016

মনোজ মাহাতোর ডায়েরি

পুরনো ডায়েরি। ১৯৭২ সালের। মাছের বাজারে কী'ভাবে এলো তা ঈশ্বরই জানেন। শোল মাছ দর করার সময় পায়ের কাছে নজরে এসেছিল। আশেপাশে কারুর নয়। এদিকে ডায়েরির প্রতি আমার একটা বিশেষ টান আছেই। তুলে সামান্য উলটো পালটে দেখলাম যে সে ডায়েরিতে ধোপার হিসেব নয়, বরং রীতিমত রোজনামচা লেখা রয়েছে। বাংলা হাতের লেখাটা মুক্তোর মত। শোল মাছের বদলে ডায়েরি আর হাফ ডজন হাঁসের ডিম নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। বাড়িতে একা মানুষ, খবরের কাগজের বাইরে নতুন কিছু পড়ার পেলে অবজ্ঞা করি না কখনও।

২.

নাহ্। গাঁজাখুরির একটা সীমা আছে। ডায়েরিটা মনোজ  মাহাতোর। মনোজবাবু ১৯৭২ সাল জুড়ে এই ডায়েরি লিখেছিলেন। ঝরঝরে নির্ভুল ভাষা। চমৎকার ভাবে গতিশীল। বেশ তরতর করে পড়ে যাওয়া যায়। সে'সবে সমস্যা নেই।

সমস্যা হল মনোজবাবু নিজেকে মাছ বলে মনে করেন। না, গল্প লেখার চেষ্টা নয়। সিরিয়াস আত্মজীবনী। আমতলা গ্রামের হরিহর দাসের পুকুরের  বেড়ে ওঠা বাইশ কিলোর রুই মাছের জীবনচরিত।

আপত্তির মূল জায়গা অন্য। আমতলাতেই আমাদের দেশের বাড়ি। হরিহর দাস আমার পিতামহ।

এ'টা কি কারুর বেআক্কেলে ঠাট্টা? কিন্তু তিনকুলে কেউ আর বেঁচে নেই। আমতলা, হরিহর দাসের খবর কেউ পাবে কী করে?

তাছাড়া ডায়েরি বেশ জীর্ণ আর লেখার কালি সত্যি বহু পুরনো।

৩.

এখন রাত দু'টো বেজে কুড়ি মিনিট। ঘুম গায়েব। মূল অসোয়াস্তি অন্য জায়গায়। ঠাকুমা গল্প করতেন যে আমার জন্মের দিন ঠাকুরদা আনন্দে আত্মহারা হয়ে পুকুরের সবচেয়ে বড় মাছটা পাকড়াও করেছিলেন।

আমার জন্মে তেইশে ডিসেম্বর। ১৯৭২।
এ ডায়েরির শেষ এন্ট্রি বাইশে ডিসেম্বর।

এ'দিকে ঘরময় মাছের আঁশটে গন্ধ বেড়ে চলেছে।

বারান্দায় বসেও দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম।

৪.

অজ্ঞান হয়েছিলাম বোধ হয় ভোর চারটে নাগাদ। জ্ঞান যখন ফেরে তখন আমার ঘর বারান্দা সব হাওয়া। দিন তিনেক লেগে গেল বুঝতে যে আমি মাছে পেটের এক কোণে রয়েছি।

মারা গেছি বলে মনে হচ্ছে না তবে খিদে তৃষ্ণা বিলকুল গায়েব। ঘুমটুমও পাচ্ছে না।
এ'খানে আসবাব বলতে একটা টেবিল আর চেয়ার। সে টেবিলে রাখা একটা ডায়েরি আর খান চারেক কলম।

এই ডায়েরিটা অবিকল মাছের বাজারে খুঁজে পাওয়া ডায়েরিটার মত। শুধু এ'টা আনকোরা নতুন।

এখানে আমার ডায়েরি লেখা ছাড়া কোনও কাজ নেই। আর এক অবাক কাণ্ড! মাছের পেটে এসে আমার হাতের লেখাটা দিব্যি শুধরে গেছে।

Monday, December 26, 2016

এক্সমাস ২০১৬

রাত গভীর।
ক্রিসমাসবাবু দিব্যি ঘাটে থেবড়ে বসে ছিলেন। এগরোল শেষ হয়েছে খানিক আগে। হাতে এখন লেবু সরবতের গেলাস। মনে ফুরফুর। মুখে নদীর শীত মাখানো হাওয়ার ঝাপটা।
গলায় থেকে থেকে সুর খেলে যাচ্ছিল;
"আমার মন চলে আগে আগে,
আমি পড়ে রই রে বন্ধু..."।
চিন্তায় কচাত করে কাঁচি পড়লো পিঠে আলতো চাপড়ে। ঘুরে তাকাতেই হলো।
- কী রে, ক্রিসমাস! চিনতে পারছিস?
- চেনা চেনা লাগছে...।
- নামটা ভুলে গেছিস, তাই তো? সেই আগের মতই রয়ে গেছিস ভাই।
- একদম ভুলে গেছি। সরি।
- আমি দত্ত। সোমবার দত্ত। থার্ড ডিগ্রী। এ'বার মনে পড়েছে?

সব ভালো যার



সব ভালো যার শেষ ভালো।

**
মনোজ বটব্যাল মাসের শেষে খুঁজে পান ব্ল্যাকহোলিও গোপন পকেটে রেখে ভুলে যাওয়া তিনটে কড়কড়ে একশো টাকার নোট।

**
ধানবাদে পোস্টিং পাওয়া সমর দত্ত। ভদ্রেশ্বর থেকে আসা ইনল্যান্ড লেটারে খোকার স্কুল টিউশনির খবরের ফিরিস্তি শুনে হন্যে হতে হতে, চিঠির শেষ প্রান্তে এসে ভদ্রলোক খুঁজে পান লিপস্টিকের দাগ। টকটকে ছ্যাঁতছ্যাঁতে লাল।

**
বছরের শেষে এসে জিমে ভর্তি হয়ে হাঁফ ছাড়েন জিকো হালদার।  ডিসেম্বরের শেষ তিন সপ্তাহে তেত্রিশ গ্রাম হাওয়া। জাস্ট হাওয়া। বত্রিশ বছরে ভুঁড়ি ভ্যানিশ হয়ে যাওয়ার কথা। 

**
আলোয় আলোর শেষে কোলাহল থেমে যায়। হুল্লোড় ঝিমিয়ে আসে। সে আলোয় অনিন্দ্য সুলেখার হাত টেনে নেন।

- শাদি করেগা মুঝসে?
- করেগা নয়। করোগি।
- ধ্যাত্তেরি। উইল ইউ ম্যারি মি?
- বাঙলায় বলো না ভাইটি।
- বাঙালি প্রপোজ করে না। চিঠি লেখে, পোস্ট করে না।
- ন্যাকা।
- উইল ইউ?
- আর ক'বার করব?
- এক বার ইয়েস বোলকে দেখো। আর বাঙালি বিয়ে করব না।
- দেন?
- বাইকে চেপে আসব। হারলে।
- জিতলে?
- ধ্যেত্তের। ডেভিডসন। থুঁতনিতে বেল্ট আঁটা টোপর।
- রিয়েলি? ছেলেবেলায় তোমায় হারকিউলিস সাইকেলে দেখেছি।
- তুমি সাদা গাউন। সাহেবি বিয়ে। ডু ইউ টেক হার অ্যাজ ইওর বর অর বৌ? ইয়েস আই ডু। ইয়েস আই ডু। তারপর আংটি। তারপর চকাম, সবার সামনে।
- হীরের আংটি?
- আড়াইশো গ্রামের এক পিস হীরে। তোমার আঙুল টনটন করবে। 
- সী বীচে?
- সানরাইজের সময়। বিদেশী সমুদ্র। ক্যালেন্ডারি নীল। ও'দিকে চারিদিকে দামী শ্যাম্পেনের ফোয়ারা। 
- মন্দ না। তবে সাহেবী বিয়ে হলেও, রাতে ফিশ ফ্রাই, মাংস কষা আর বাসন্তি পোলাও। রাখবে তো?
- ওবামারা কেমন স্পাইসি খাওয়ার প্রেফার করে দেখতে হবে। দালাই লামার জন্য ভেজ অপশন রাখতে হবে কি?
- বটে? ভেবে দেখি।
- সো? উইল ইউ ম্যারি মি?
- ইয়েস।
- একটা কথা।
- কী?
- এই ব্যাটাচ্ছেলে ডাক্তারের তোমার প্রতি নজর আছে।
- কোন ডাক্তার?
- সেন। যে তোমায় অপারেট করবে। মতিগতি ভালো না। অতি বদ নজর। 
- সামান্য পালটা নজর আমিও দিয়েছি যে। 
- স্যুইটহার্ট। তোমায় যদি অপারেশন টেবিলে থেকেই ইলোপ করে?
- টূ টল, টূ হ্যান্ডসাম টূ রিফিউজ। নীল সমুদ্র, ওবামাদের বাসর জাগা নটউইথস্ট্যান্ডিং।
- হোয়াট দ্য হেল।
- নাও ফিরতে পারি অপারেশন থিয়েটার থেকে।
- ইয়েস। নাও ফিরতে পারো। হারামি ডাক্তার সেন।
- এ'টা দামী শ্যাম্পেন খাইয়ের ভাষা?
- ইউ সেড ইয়েস। ভদ্রলোকের এক কথা।
- দেখি,যদি ডাক্তার সেনের চার্ম কাটিয়ে ফিরতে পারি।
- হনিমুনে  আর পুরী নয়। প্রমিস। সেশেল্স। বা মরিশাস। বা মাসাই মারা।
- ডাক্তার সেনের চান্স আর একটু কমল।
- হেহ্।

সব ভালো যার, শেষ ভালো।

Friday, December 23, 2016

মিহিরবাবুর সন্ধ্যে

অন্ধকার নেমে এলেই দেরাজ খুলে বোতল আর গেলাস বের করে জমিয়ে বসেন মিহিরবাবু।
মাদুর। সস্তা মদ। পাশে চানাচুরের বাটি। আর রেডিওর মিনমিনে ক্রিরিরিরি।
চার নম্বর গেলাসের মাথায় মৃণ্ময়ীর ভূত এসে পাশে বসে। ঘাসের গন্ধ পায়ের আলতায় মিশে ছ্যাঁতছ্যাঁত তৈরি করে, সে'টা টের পান মিহিরবাবু।
দু'টো ভালো কথা বলে ঘন হয়ে বসে মৃণ্ময়ী। পুরনো দুপুর টেনে কথা বলে, মাসকাবারির লিস্ট সাজাতে বসে। ভূত, তবু। মৃণ্ময়ী বই তো নয়। শাড়ির খসখসে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যান মিহিরবাবু।
ছ'নম্বর গেলাসের শেষে মাদুরে এলিয়ে পড়েন মিহির গুপ্ত। রোজকার মত।
আর রোজকার মত মৃণ্ময়ী সে বোতোলে কুঁজোর জল আর ছাতিমের সুবাস পুরে দেরাজে তুলে রাখে। প্রতিদিন।

ভূতেরা কী না পারে, আর মাতাল কী সহজে না ভাসে। এক মুঠো হাসিতে রোজ ভোর রাতের বাতাসে মিলিয়ে যায় মৃণ্ময়ী।

Thursday, December 22, 2016

নরহরির দুঃখ

ব্রজলাল সরবতের গেলাসটা টুলের ওপর রেখে ইজিচেয়ারের মাথার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। নরহরি মল্লিক গা এলিয়ে শুয়ে ছিলেন; কপালে চশমা, বুকে ভাঁজ করা বই।

- দাদাবাবু।
- সরবত এনেছিস?
- আজ্ঞে।
- বস।
- আজ্ঞে। একটা কথা ছিল দা'বাবু।
- ছুটি?
- আজ্ঞে।
- ক'দিনের?
- আর ফিরব না।
- ছেড়ে যাবি?
- আর কদ্দিন দাদাবাবু। আমারও বয়স হলো। শ্যামলীর মা রয়েছে, দুলাল রয়েছে। আপনার যত্নের ত্রুটি হবে না।
- সেবাশুশ্রূষার লোকের অভাব নরহরি মল্লিকের হবে না। কিন্তু হ্যাঁ রে ব্রজ, তুই কি শুধু আমার কাজের লোক?
- না, তা কেন?
- পুরনো রাগ এখনও পুষে রেখেছিস ব্রজ?
- না গো দা'বাবু। কিন্তু...।
- কিন্তু কী?
- শ্যামলীর মা আর দুলাল।
- ওরা কিছু বলেছে?
- না। বলেনি। তবে, ওরা আমায় দু'চক্ষে দেখতে পারে না।
- আসলে তুই আমার এতটাই কাছের...যাক। তোর মন যখন চেয়েছে, তখন আর জোর করে আটকে রাখব না। কবে যাবি?
- আজকের দিনটা থাকি। কাল সন্ধ্যের দিকে...।
- যাওয়ার আগে একটা কথা মন থেকে বলে যা ব্রজ, অদ্দিন আগেকার রাগ পুষে রাখিসনি তো?
- কবেকার কথা, সে'সব বাদ দিন দাদাবাবু। তারপর থেকে কত ভালোই না বাসলেন এ চাকরবাকর মানুষটাকে।
- ক্ষমা করতে পেরেছিস তো ব্রজ?
- লজ্জা দেবেন না দাদাবাবু। রাগের মাথায় একটা কাজ করে ফেলেছিলেন, তার জন্য কতদিন আর অনুতাপ করবেন?
- কুড়িটা বছর হয়ে গেছে রে, তবু নিজেকে ক্ষমা করতে পারিনি। 
- আমি ভুলে গেছি দা'বাবু। আপনিও এ'বার ভুলে যান।
- ব্রজ! সামান্য একটা ফুলদানি ভাঙার জন্য খুন হওয়ার দুঃখ তুই ভুলতে পারিস, কিন্তু আমার সে পাপবোধ আগামী বিশ বছরেও যাওয়ার নয়।

Thursday, December 15, 2016

সুচরিতা

- গুড মর্নিং জগা।
- বিট্টা। তুই চুমু খেয়েছিস? কোনওদিন?
- হঠাৎ এ প্রশ্ন?
- না মানে, কাল রাত্রে। বুঝলি কিনা, স্পষ্ট দেখলাম। সে..।
- সে?
- সে আমায় জড়িয়ে চুমু খেলে। অন গড।
- সে? কে সে?
- সুচরিতা।
- দত্ত? ইকনমিক্সের?
- স্বপ্নে। দিব্যি এসে। স্মুচ। বুঝলি কি না। তাই তোকে জিজ্ঞেস করছিলাম। তুই রিয়েল লাইফে কোনওদিন...।
- রোম্যান্টিক চুমু?
- হুঁ।
- প্রেমিক টু প্রেমিকা চুমু?
- হ্যাঁ। সুমির সাথে মাস খানেক ঘুরেছিলিস তো।
- এক মাস বাইশ দিন।
- খেয়েছিস?
- হুঁ।
- অ্যাফার্মেটিভ? সুমি?
- খেয়েছি রে জগা। তবে সুমি নয়।
- অন্যকেউ? ই...ইলিসিট?
- অলমোস্ট।
- কে...কে রে? 
- সুচরিতা।
- দ...দত্ত? ইকনমিক্স? মাইরি? ও..ও তো... ও তো অপ্সরা!
- জানি।
- গুল মারছিস।
- না।
- গা ছুঁয়ে বল।
- এই তোর গা ছুঁয়ে বলছি। আমি সুচরিতাকে চুমু খেয়েছি।
- মাথা ঝিমঝিম করছে। তুই শিওর?
- জড়িয়ে। বুকে টেনে এনে। জাপটে ধরে। জিভের স্বাদ এখনও জিভে জ্বলন্ত। 
- মা...মা...মাইরি বিট্টা..।
- মাইরি। অধর থেকে ওষ্ঠে, ভিজে, মাখামাখি। শুধু আচমকা উইথড্র করতে হল।
- উইথড্র? কেন? কেন কেন?
- গোঁফ। জিভে গোঁফ ঠেকলো।
- গোঁ...?
- ঘুমটা ভেঙে যেতে দেখলাম আমি তোকে জাপটে স্মুচ করছি। ডাইরেক্ট। কাল রাত্রের গাঁজার ডোজটা বড্ড বেশি হয়ে গেছিল রে।
- উফ্। বিট্টা, বিট্টা রে...আমার সুচরিতার চুমু...ম্যাগো...।
- স্যুইটহার্ট।
- হারামি।

মোহর


এক পিস্‌ জয়নগরের মোয়া হাতে বারান্দার ইজিচেয়ারটায় বসেছিলেন বিপ্লববাবু।
মরশুমের প্রথম। অফিসের আশুতোষ সমাজপতি অফার করেছিলেন লাঞ্চে। রাত্রে বাতাসে ঠাণ্ডা বাড়বে, তখন মোয়ায় কামড় বেশি আরামদায়ক। তাই লাঞ্চ টেবিলে তৎক্ষণাৎ মুখে না দিয়ে, মোয়াখানা টিফিন বাক্সে ঢুকিয়ে বাড়ি নিয়ে এসেছিলেন বিপ্লববাবু।
ডাল, পেঁয়াজকলি ভাজা আর ডিমের অমলেট দিয়ে রাতের খাওয়া সেরে গায়ে শাল জড়িয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। হাতে টিফিন বাক্স থেকে বের করে আনা মোয়া।
মোয়াটার দিকে অনেকক্ষণ একমনে তাকিয়ে ছিলেন বিপ্লববাবু। কেমন একটা ভালোলাগা ভর করছিল যেন তাঁর মনে। যেমন নিটোল চেহারা মোয়াটার, তেমনই সুবাস। আহা। কামড় বসাতে মন বসলো না বিপ্লববাবুর। কামড় বড় জান্তব একটা ব্যাপার। উগ্র। ঝাপটাঝাপটি।
রাতের ফুরফুরে হাওয়ায় পৌষের ধার রয়েছে বেশ। আহা। এই তো সময় মোয়ায় স্বাদে ভেসে যাওয়ার। মরশুমের প্রথম মোয়া। আহা। এ জয়নগরের মোয়াটি বড় নরম। বড় কমনীয়। আদুরে। চুমুর আশ্রয়ে নিলেন আশুতোষ, আগ্রাসন বলতে শুধু আলতো জিভের ডগা। ***
পরের দিন অফিসে কিছুতেই মন বসছিল না বিপ্লববাবুর। মোয়াটা খাওয়া হয়নি গতকাল। আর হয়ত খেতে পারবেনও না। মোয়াটা আর পাঁচটা মোয়ার মত নয়। ও মোয়ায় মায়া আছে। একবাক্স মোয়া আজ কিনে ফিরবেন অবশ্য, খাওয়ার জন্য। কিন্তু মোহরকে তিনি খেতে পারবেন না। গতকালের ওই জয়নগরের মোয়ায় স্পন্দন টের পেয়েছেন বিপ্লববাবু, মোহর নামটাও নিজের অজান্তেই দিয়ে ফেলেছেন। একটা চুমুর জন্য ছটফট করছিলেন তিনি। বিয়েথা সংসার আজ পর্যন্ত করা হয়ে উঠল না, বাড়ি ফেরার আগ্রহও বিশেষ থাকে না। অফিসের পর ক্লাবে রামি খেলে রাত করে বাড়ি ফেরাটাই তার কাছে নিয়ম। কিন্তু আজ মোহরের টানেই বোধ হয়, অফিস থেকে হাফ সিএল নিয়ে লাঞ্চের পরেই বেরিয়ে পড়লেন বিপ্লববাবু।
*** সাত দিন কেটে গেছে। মোহরের চেহারার জৌলুস খুব একটা কমেনি। সকালে একটা চুমু, অফিস থেকে ফিরে একটা চুমু। নিয়ম করে। মোহরটা বড় আদুরে , বড় নরম, বড় তুলতুলে। বড্ড সাবধানে রাখতে হয় ওকে। গত তিনদিন অফিস কামাই করেছেন বিপ্লববাবু। *** মোহরের গায়ে গন্ধ জমতে শুরু করেছে। কিন্তু এত সহজে পচন ধরা তো উচিৎ নয়। একটানা ফ্রীজে রাখা থাকে। বিপ্লববাবুর ঘুমখাওয়া নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। মোহরের কিছু হবে না তো? মোহর যদি না থাকে? মাথা ঝিমঝিম করতে শুরু করে বিপ্লববাবুর। ***
"স্যার, ইন্সপেক্টর হালদার বলছি! বডি নামিয়েছি। সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলেছিল গামছার প্যাঁচে। এই গতকাল ভোর চারটে নাগাদ। আজ্ঞে হ্যাঁ। ছবিটবি তুলে নিয়েছি। ফোরেনসিকও কাজে লেগে গেছে। চিঠি? সুইসাইড নোট? নাহ্‌, তেমন কিস্যু পাওয়া যায়নি স্যার। ক্লু? তেমন প্রামাণ্য কিছু নয়, তবে ইয়ে; ওই মানে- যে ফতুয়া ভদ্রলোকে পরে ছিলেন, তার বুক পকেটে একটা পচা জয়নগরের মোয়া পাওয়া গেছে। থ্যাবড়ানো, গায়ে কালচে ছোপ আর রীতিমত দুর্গন্ধযুক্ত; এতটাই পচা। অমন রামপচা মোয়া বুকে ভদ্রলোক কী করছিলেন, সে'টা একটা মিস্ট্রি।

Wednesday, December 14, 2016

বালিশবাবুর অফিসে - ৩

- তাহলে আপনি ভগবান। 
- সে কথা আমি নিজের মুখে বললেই বা কী, না বললেই বা কী। 
- সত্যিটা কী?
- এভারেস্ট আড়াই মিটার বাড়িয়ে দিচ্ছি। পরের বছরই। 
- ভগবান?
- পেঙ্গুইনদের কিছু জেনেটিক অ্যাডজাস্টমেন্ট দরকার। যা গরম পড়ছে আজকাল। শ'দেড়েক বছরের মধ্যেই কিছু একটা করে ফেলতে পারি। 
- তাহলে আপনিই। 
- আমিই। আনফরচুনেটলি। 
- আনফরচুনেটলি কেন?
- থ্যাঙ্কলেস জব! তা ছাড়া, ম্যাসিভ ভল্যুম। ম্যাসিভ। কিছুতেই গ্রিপে আনা সম্ভব নয়। 
- ভগবান মানুষের মত দেখতে?
- না। মানুষ ভগবানের মত দেখতে। 
- মানুষ শ্রেষ্ঠ বলে?
- আপনি জানেন আমি কী সাংঘাতিক ধরণের ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্সে ভুগি?
- রিয়েলি?
- মানসিক অবসাদ। সিজোফ্রেনিয়া। অম্বল গলা জ্বালা। কী নেই? ঘেন্না হয় নিজেকে। আমার মেজাজ সর্বক্ষণই খারাপ থাকে। কিন্তু সে'বার যখন সুইসাইডাল হয়ে কয়েক দিন কাটিয়েছিলাম, তখনই মানুষ সৃষ্টি করেছিলাম। নিজের মত করে। সুইসাইডাল। 
- আপনি আত্মহত্যার কথা ভেবেছেন?
- অনবরত। এখনও মাঝে মাঝেই মনে হয়...মনে হয় নিজেকে কোতল করি। কিন্তু। ওই। আনফরচুনেট। আমি ভগবান। ও'টা আমার দ্বারা পসিবল না। এত অসহায় লাগে...। 
- অসহায়? ভগবান হয়ে আপনার অসহায় লাগে?
- ভগবান বলে কি মাথা কিনে নিয়েছি নাকি? আমার নিজেকে কেরোসিনে ছেড়ে দেওয়া মাছ মনে হয় মাঝেমাঝে। 
- কিন্তু আপনার এত ক্ষমতা...। 
- লেবার মানুষের আবার ক্ষমতা। মহাকাশকে স্টেডি রাখো রে, 'খানে প্রাণের সাপ্লাই, ওখানে মহামারি...তবে...।
- তবে?
- লজ্জার কথা আর কী বলব, আমি বড়জোর সতেরো পারসেন্ট কাজ করে উঠতে পারি। বাকিটা র‍্যান্ডম চান্সের খেলে যা হওয়ার হচ্ছে। 
- তিরাশি পারসেন্ট আপনার কন্ট্রোলের বাইরে?
- চাইলে কন্ট্রোল করতে পারি কিন্তু অম্বলটা আজকাল এত ট্রাবল দিচ্ছে। তাছাড়া ওই, থ্যাঙ্কলেস জব। গা জ্বলে যায় প্রতি মুহূর্তে। 
- কর্ম-ফল ম্যানেজ করাটা বোধ হয় খুব টাফ। 
- দেখুন। কনটেক্সটটা বোঝার চেষ্টা করুন। গ্র্যাভিটি সামলাতে হচ্ছে। অণু পরমাণুর অঙ্ক এক চুল এদিক ওদিক হতে দেওয়া যাবে না। জেনেটিক মিউটেশন। ইভোলিউশন। এ সমস্ত কিছু ম্যানেজ দিতে হচ্ছে। এর বাইরেও কাজের অভাব নেই। তা সে'সব জরুরী কাজই ১৭%য়ের বেশি করতে পারছি না। কর্ম-ফলটল আবার কী?
- সে কী, পাপ করলে পাপের শাস্তি পেতে হবে, এই সিম্পল ইকুয়েশন ইজ নট ওয়ার্কিং?
- আপনার বাড়াবাড়ি স্পীডে চালানো মোটোরসাইকেলের চাকার তলায় একটা কুকুরছানা চাপা পড়ে মারা গেল। তক্ষুনি আপনার একটা বুলডোজারের নীচে চাপা পড়া উচিৎ। কিন্তু আপনি পড়বেন না। টেক দ্য হিন্ট।
- অমন সোজা সাপটা হিসেব না হলেও...।
- কুকুরছানা চাপা দিয়ে মেরে ফেলার জন্য কারুর প্র্মোশন মিস করায় আমার কোনও ভূমিকা নেই। সে’টা কর্মফল নয়।
- ওহ্‌। আই সি। নাহ্‌, আমি ভেবেছিলাম প্রসেসটা অনেক বেশি কমপ্লিকেটেড।
- কমপ্লিকেশনের কিস্যু নেই। সমস্তটাই হেল-ব্রেকিং-লুজ গোছের। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে, যে যার মত পারছে কুড়িয়ে নিচ্ছে। ডিপ্রেসিং। অন্ধকার। বদ গন্ধ চারিদিকে। আমি আবার গলায় আঙুল দিয়ে বমি করতে পারি না। ।
- পরিস্থিতি এতটা খারাপ?
- যন্ত্রণা। যন্ত্রণা।
- উপায়?
- গ্লোবাল ওয়ার্মিং বাড়িয়ে দিয়ে দেখি। একটু যদি বেটার লাগে।
- সে’টা স্যাডিস্ট হবে তো।
- আত্মহত্যার প্রবণতা আর স্যাডিজম। রুমালি রুটি আর মুর্গির চাপের মত।
- হুঁ। আর কী কী স্যাডিস্ট কাজকর্ম করে থাকেন?
- খোকাখুকিদের বেসুরো বাপ দিয়ে থাকি।
- হুঁ?
- খোকাকে কোলে নিয়ে বাপ খড়খড়িয়ে গেয়ে যায় “আমার হৃদয়, তোমার আপন হাতের দোলে...”। খোকা অন্তর থেকে ক্ষয়ে যায়। বাবা হামলে পড়ে ধরেন “জীবনপুরের পথিক রে ভাই”। খোকা ককিয়ে কেঁদে ওঠে। বাবা বিটকেল মেজাজে ধরেন “ওই যে দেখছি আবছায়াটাই লাগছে ভালো”, কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত খোকা ডিফেন্স মেকানিজম ফলিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। বাবা ভাবেন “বাহ্‌, কী চমৎকার গাইলাম! গানের মিহি আরামে খোকা ঘুমিয়ে পড়লো”। এ’দিকে খোকা ঘুমিয়ে নিজের প্রাণ বাঁচালে। গানের গুঁতো বড় গুঁতো।  যার তেমন বাপ আছে, সেই জানে।
- ভগবানবাবু...আপনি...আপনি...।
- কী হল বালিশবাবু? শরীর খারাপ লাগছে?
- ওই ভদ্রলোকের গলা থেকে অমন করাতের সুর আপনিই বের করেন?
- হ্যাঁ মানে...ওই যে বললাম...আমি বড় ক্লান্ত...কী করলে যন্ত্রণা কমবে ভেবে পাই না...।
- তাই বলে আমার এই সাত মাস বয়সে আমায় অমন গান শুনতে হবে? এর চেয়ে মাথার ওপর একটা ধূমকেতু ফেলে দিতে পারতেন!
- যন্ত্রণা। যন্ত্রণা। যন্ত্রণাই এক মাত্র রিয়ালিটি বালিশেন্দ্রকুমার।
- ধ্যাত্তোর। এথেইস্ট হওয়ার অ্যাপ্লিকেশন ফর্মটা দিন। ট্রিপ্লিকেটে ফিল আপ করতে হবে কি?

Friday, December 9, 2016

অপূর্ববাবুর ফোনকল


- হ্যালো

- হ্যালো কে বলছেন?

- অপূর্ব ঘোষাল মধ্যমগ্রাম থেকে

- আচ্ছা তবে আমি কোনও অপূর্ব ঘোষালকে চিনি না

- স্বাভাবিক আমিও আপনাকে চিনি না

- তবে ফোন করেছেন কেন? তাও এই মাঝরাতে

- 'টাই আমার সবচেয়ে লম্বা ইন্টার‍্যাকশন হল গালাগাল না খেয়ে

- মানে?

- মানে গত চার দিন ধরে অন্তত তিনশো ্যান্ডম ফোন নম্বর ডায়াল করেছি সকলের ধৈর্য আপনার চেয়ে অনেক কম

- কিন্তু কেন?

- সে অনেক কথা আচ্ছা, আপনার নাম?

- রোহণ দত্ত উত্তরপাড়া

- রোহণবাবু, একটা জরুরী কথা ছিল

- আমি কথা না বললে জরুরী কথাটা জানাতেন কী করে?

- অন্য নাম্বারে কল করতাম আপনার ফোন নম্বরের শেষ চারটে সংখ্যা ফাইভ টু সেভেন এইট এর পরেরটা হয়ত ফাইভ টু এইট সেভেনে ডায়াল করতাম

- এই ভাবে গত চার দিনে ধরে কল করে যাচ্ছেন?

- তিনশোরও বেশি কল সবাই রিফিউজ করেছে পত্রপাঠ দু'একজন পুলিশের ধমকি দিয়েছে

- তবু আপনি দমে যাননি অপূর্ববাবু

- রাইট

- আমার গর্ব হচ্ছে আপনার জন্য

- আপনার ঘুম ভাঙ্গালাম?

- নাহ্ ক্রসওয়ার্ড পাজ্ সল্ভ করছিলাম

- একা?

- অবভিয়াসলি এবারে জরুরী ব্যাপারটা বলুন ক্রসওয়ার্ডটা একটা ইন্ট্রিগিং পয়েন্টে ফেলে ফোন ধরেছি তিনের ঘর থেকে ওপর টু নীচটা ক্র্যাক করতে পারলেই চুকেবুকে যাবে

- হ্যাঁ জরুরী কথাটা বলেই ফেলি, হ্যাঁ?

- ইয়েস স্যার

- আমি সুইসাইড করতে চলেছি

- সে'টাই জরুরী ব্যাপার?

- জরুরী নয়?

- অপূর্ববাবু, আপনি জানেন প্রতি বছর প্রায় দশ লাখ মানুষ সুইসাইড করে

- দশ লাখ?

- বেশি বই কম নয় ক্যালকুলেটর আছে হাতের কাছে?

- না

- আমার কাছে আছে শুনুন দশ লাখ ডিভাইডেড বাই তিনশো পঁয়ষট্টি দিনে প্রায় দু'হাজার সাতশো চল্লিশ জন সুইসাইড করছেন

- বলেন কী?

- দু'হাজার সাতশো চল্লিশ ভাগ চব্বিশ মানে ঘণ্টায় একশো চোদ্দ জন মানে প্রতি মিনিটে প্রায় পৌনে দু'জন করে...বুঝলেন? মানে এই মুহূর্তেই আপনারই মত কেউ এক গাদা ঘুমের ওষুধ মুঠো করে বসে আছে

- মাথাটা ঘুরছে রোহণবাবু

- কাজেই আপনার খবরটা আদৌ জরুরী নয়

- নয়, না?

- ডেফিনিটলি নয় তা আপনার সাধারণ শখ হল কেন?

- হবে না কেন বলতে পারেন? দুনিয়ায় মানুষ বেঁচে থাকে কেন কে জানে পলিটিকালি কোরাপ্ট, মরালি ব্যাঙ্করাপ্ট, কাওয়ার্ড সোসাইটি গ্লোবাল ওয়ার্মিং হ্যান। ত্যান। কত ইস্যু আছে আমাদের পালিয়ে যেতে বাধ্য করার জন্য বাড়তি পার্সোনাল ক্যালামিটি থাক বা না থাক সবার উচিৎ সুইসাইডে মন দেওয়া

- পয়েন্ট আপনি কি ওই ঘুমের বড়িই...?

- না না, আমি ভি-তে খেলার মানুষ নড়বড়ে চেয়ার অন খাট দড়ি খলবল করে ঝুলে নেমে আসছে সিলিং ফ্যান থেকে

- কিন্তু ফোনটা করার কী দরকার ছিল? এই যে এদ্দিন ধরে পাগলের মত অপরিচিত সমস্ত নাম্বারে কল করে যাচ্ছেন

- পরিচিত নাম্বার থেকে সিমপ্যাথি আসে মশাই সব ক্রোকোডাইল টিয়ার্স অবশ্য কিন্তু তাই বলে বলেকয়ে যাব না সে'টা হয় না

- হুঁ

- তবে রোহণবাবু, এই আপনাকে বলতে পেরে বেশ রিল্যাক্সড বোধ করছি

- তাহলে রাখি?

- হ্যাঁ রাখতেই পারেন

- মন খারাপ?

- সে কারণেই সুইসাইড করছি তবে কন্সট্যান্ট যারা ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে ঘোরে তারা ইউসুয়ালি লো আই ক্যিউ সেই হ্যাহ্য লেভেলের গাধামো সহ্য হয় না

- ডিপ্রেশনটাই ন্যাচারাল স্টেট বলছেন?

- ইনসিস্ট করছি

- কবি কিন্তু বলেছেন আনন্দধারা বহিছে ভুবনে

- মার্কেট ফোর্সেস কে পাত্তা না দিয়ে তো আর নিজেকে মার্কেট করা যায় না রোহণবাবু ভদ্রলোক প্রফেশনাল কবি ছিলেন, নিজে ইন্টেলিজেন্ট হলেও বাজারের চাহিদাকে দুয়ো দিতে পারবেন কেন? আর বোকা মানুষদের চাহিদাও বেশি

- আর আপনি বোকা নন

- আপনিও বোকা নন নয়তো আমাদের কথা হচ্ছেই বা কেন

- ঠিক অতএব? আপনি অল সেট?

- অল সেট গলায় ফাঁস দিয়ে চেয়ার ঠেলে দেওয়া দিব্যি কপিবুক

- অল দ্য বেস্ট অপূর্ববাবু

- থ্যাঙ্কস তবে আপনার ওই পরিসংখ্যানের কথা শুনে কেমন গা গুলিয়ে উঠেছিল

- মিনিটে পৌনে দু'জন

- ভাবতেই কী ভালো লাগছে যে মুহূর্তে পৃথিবীতে অন্য একজন আমারই মত মরে যাওয়ার চেষ্টা করছে দিব্যি ছিমছাম তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারলে কী থ্রিলিং ব্যাপার হত ভাবুন যাক, আমার কাজটা সেরে ফেলি গিয়ে ওহ হ্যাঁ, আপনার মত খোলতাই মনের একজনের সঙ্গে আলাপ হল বটে কিন্তু মুখোমুখি বসে আড্ডা হলো না সে আফসোসও যাওয়ার নয়।

- তা ঠিক তবে চারদিন যখন ডিলে হলই, তখন আর এক দিন অপেক্ষা করে যাবেন নাকি? রাজি থাকলে আগামীকাল দুপুরের কলকাতার কোন রেস্তোরাঁতে আপনার এক ঢিলে দুই পাখি মারার ব্যবস্থা করতে পারি

- দুই পাখি?

- ওই আমার মত খোলতাই মনের একজনের সাথে আলাপ আর সঙ্গে আপনার সেই পৌনে দুই নম্বরের সঙ্গে দেখা

- পৌনে দুই......আপনি...

রোহণবাবু যখন শুতে গেলেন তখন বাজে রাত পৌনে তিনটে দুই শিশি ঘুমের বড়ি দেরাজে ফেরত রেখে সামান্য জোয়ানের আরক খেয়ে ঘুমোতে গেলেন তিনি কাল আবার কলকাতার পিটার ক্যাট রেস্তোরাঁতে লাঞ্চ করতে যাওয়া আছে