১
পুরনো ডায়েরি। ১৯৭২ সালের। মাছের বাজারে কী'ভাবে এলো তা ঈশ্বরই জানেন। শোল মাছ দর করার সময় পায়ের কাছে নজরে এসেছিল। আশেপাশে কারুর নয়। এদিকে ডায়েরির প্রতি আমার একটা বিশেষ টান আছেই। তুলে সামান্য উলটো পালটে দেখলাম যে সে ডায়েরিতে ধোপার হিসেব নয়, বরং রীতিমত রোজনামচা লেখা রয়েছে। বাংলা হাতের লেখাটা মুক্তোর মত। শোল মাছের বদলে ডায়েরি আর হাফ ডজন হাঁসের ডিম নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। বাড়িতে একা মানুষ, খবরের কাগজের বাইরে নতুন কিছু পড়ার পেলে অবজ্ঞা করি না কখনও।
২.
নাহ্। গাঁজাখুরির একটা সীমা আছে। ডায়েরিটা মনোজ মাহাতোর। মনোজবাবু ১৯৭২ সাল জুড়ে এই ডায়েরি লিখেছিলেন। ঝরঝরে নির্ভুল ভাষা। চমৎকার ভাবে গতিশীল। বেশ তরতর করে পড়ে যাওয়া যায়। সে'সবে সমস্যা নেই।
সমস্যা হল মনোজবাবু নিজেকে মাছ বলে মনে করেন। না, গল্প লেখার চেষ্টা নয়। সিরিয়াস আত্মজীবনী। আমতলা গ্রামের হরিহর দাসের পুকুরের বেড়ে ওঠা বাইশ কিলোর রুই মাছের জীবনচরিত।
আপত্তির মূল জায়গা অন্য। আমতলাতেই আমাদের দেশের বাড়ি। হরিহর দাস আমার পিতামহ।
এ'টা কি কারুর বেআক্কেলে ঠাট্টা? কিন্তু তিনকুলে কেউ আর বেঁচে নেই। আমতলা, হরিহর দাসের খবর কেউ পাবে কী করে?
তাছাড়া ডায়েরি বেশ জীর্ণ আর লেখার কালি সত্যি বহু পুরনো।
৩.
এখন রাত দু'টো বেজে কুড়ি মিনিট। ঘুম গায়েব। মূল অসোয়াস্তি অন্য জায়গায়। ঠাকুমা গল্প করতেন যে আমার জন্মের দিন ঠাকুরদা আনন্দে আত্মহারা হয়ে পুকুরের সবচেয়ে বড় মাছটা পাকড়াও করেছিলেন।
আমার জন্মে তেইশে ডিসেম্বর। ১৯৭২।
এ ডায়েরির শেষ এন্ট্রি বাইশে ডিসেম্বর।
এ'দিকে ঘরময় মাছের আঁশটে গন্ধ বেড়ে চলেছে।
বারান্দায় বসেও দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
৪.
অজ্ঞান হয়েছিলাম বোধ হয় ভোর চারটে নাগাদ। জ্ঞান যখন ফেরে তখন আমার ঘর বারান্দা সব হাওয়া। দিন তিনেক লেগে গেল বুঝতে যে আমি মাছে পেটের এক কোণে রয়েছি।
মারা গেছি বলে মনে হচ্ছে না তবে খিদে তৃষ্ণা বিলকুল গায়েব। ঘুমটুমও পাচ্ছে না।
এ'খানে আসবাব বলতে একটা টেবিল আর চেয়ার। সে টেবিলে রাখা একটা ডায়েরি আর খান চারেক কলম।
এই ডায়েরিটা অবিকল মাছের বাজারে খুঁজে পাওয়া ডায়েরিটার মত। শুধু এ'টা আনকোরা নতুন।
এখানে আমার ডায়েরি লেখা ছাড়া কোনও কাজ নেই। আর এক অবাক কাণ্ড! মাছের পেটে এসে আমার হাতের লেখাটা দিব্যি শুধরে গেছে।
No comments:
Post a Comment