Thursday, December 22, 2016

নরহরির দুঃখ

ব্রজলাল সরবতের গেলাসটা টুলের ওপর রেখে ইজিচেয়ারের মাথার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। নরহরি মল্লিক গা এলিয়ে শুয়ে ছিলেন; কপালে চশমা, বুকে ভাঁজ করা বই।

- দাদাবাবু।
- সরবত এনেছিস?
- আজ্ঞে।
- বস।
- আজ্ঞে। একটা কথা ছিল দা'বাবু।
- ছুটি?
- আজ্ঞে।
- ক'দিনের?
- আর ফিরব না।
- ছেড়ে যাবি?
- আর কদ্দিন দাদাবাবু। আমারও বয়স হলো। শ্যামলীর মা রয়েছে, দুলাল রয়েছে। আপনার যত্নের ত্রুটি হবে না।
- সেবাশুশ্রূষার লোকের অভাব নরহরি মল্লিকের হবে না। কিন্তু হ্যাঁ রে ব্রজ, তুই কি শুধু আমার কাজের লোক?
- না, তা কেন?
- পুরনো রাগ এখনও পুষে রেখেছিস ব্রজ?
- না গো দা'বাবু। কিন্তু...।
- কিন্তু কী?
- শ্যামলীর মা আর দুলাল।
- ওরা কিছু বলেছে?
- না। বলেনি। তবে, ওরা আমায় দু'চক্ষে দেখতে পারে না।
- আসলে তুই আমার এতটাই কাছের...যাক। তোর মন যখন চেয়েছে, তখন আর জোর করে আটকে রাখব না। কবে যাবি?
- আজকের দিনটা থাকি। কাল সন্ধ্যের দিকে...।
- যাওয়ার আগে একটা কথা মন থেকে বলে যা ব্রজ, অদ্দিন আগেকার রাগ পুষে রাখিসনি তো?
- কবেকার কথা, সে'সব বাদ দিন দাদাবাবু। তারপর থেকে কত ভালোই না বাসলেন এ চাকরবাকর মানুষটাকে।
- ক্ষমা করতে পেরেছিস তো ব্রজ?
- লজ্জা দেবেন না দাদাবাবু। রাগের মাথায় একটা কাজ করে ফেলেছিলেন, তার জন্য কতদিন আর অনুতাপ করবেন?
- কুড়িটা বছর হয়ে গেছে রে, তবু নিজেকে ক্ষমা করতে পারিনি। 
- আমি ভুলে গেছি দা'বাবু। আপনিও এ'বার ভুলে যান।
- ব্রজ! সামান্য একটা ফুলদানি ভাঙার জন্য খুন হওয়ার দুঃখ তুই ভুলতে পারিস, কিন্তু আমার সে পাপবোধ আগামী বিশ বছরেও যাওয়ার নয়।

1 comment:

Shromana Chatterjee said...

:o