- বস!
- কী মুশকিল সাঁতরাবাবু।
- মুশকিল? সে কী! আমি তো কিছুই বলিনি এখনও।
- আপনার এই গলার টোন আমি চিনি।
- টোন?
- গদগদে। ধান্দাবাজ। কী চাই?
- ছুটি।
- সে কী! কোয়ার্টারের অবস্থা দেখেছেন? সমস্ত হিসেব ল্যাজেগোবরে। আগামী তিন মাস ছুটির আশা ভুলে যান।
- জরুরী। এমার্জেন্সি।
- কবে চাই?
- পয়লা।
- ফার্স্ট জানুয়ারি ছুটি চাইছেন? আপনি সোমবার অফিস ডুব দিতে চাইছেন?
- ক্রিটিকাল বস। ভেরি ক্রিটিকাল।
- অক্টোবর থেকে পইপই করে বলে আসছি কোয়ার্টারলি টার্গেটে মন দিন, ক্রিটিকাল। অথচ ডিসেম্বরে এসে সেই মুখ থুবড়ে পড়লেন। আপনার লজ্জা করছে না পয়লা জানুয়ারি ছুটি চাইতে?
- আমার বৌ বলেছিল "লজ্জা করে না বসের ফেউ হয়ে ঘুরতে"?
- আপনি জরু কা গুলাম!
- জরুরী কা গুলাম স্যার।ছুটিটা মাস্ট।
- বললাম তো হবে না।
- নিউটন আপেলকে যদি বলতেন "হবে না", তাহলে গ্র্যাভিটির কিছু এসে যেত?
- গ্র্যাভিটি আপনার বৌ?
- হেহ্। আর আমি আপেল। বৌ আমায় আপনার নিউটনি মাথায় টেনে হিঁচড়ে নামাবেই। পাত্তা না দিয়ে যাবেন কোথায়?
- কেসটা কী?
- নিউ ইউয়ার্স ইভে পার্টি। মদ! মোহ! উদ্দাম নৃত্য। হনি সিং। রাতভর। পরের দিন সকালে বমি বমি ভাব।
- অফিসে এসে বমি করবেন 'খন। ফার্স্ট জানুয়ারি পরের কোয়ার্টারের প্ল্যানিং শুরু করুন। মাস্ট।
- আপনার ধমককে পাত্তা দেওয়া বারণ! মিসেসের।
- পয়লা জানুয়ারি আপনি অফিসে আসছেন না?
- কলার ধরে টেনে আনলেও না।
- আমি আপনার বস।
- বস পেরেক। বৌ হামানদিস্তা।
- আই সী! ইন দ্যাট কেস, মঙ্গল বুধ বিস্যুদ লেট নাইট! সোমবারের ছুটি কম্পেন্সেট করতে।
- রাজী!
- ফাইনাল সেলস প্ল্যানিং আমার টেবিলে চাই, বাই ফ্রাইডে মর্নিং।
- ডান! প্রমিস বস। না পারলে আমার নামে জিরাফ পুষবেন।
- আপনার নামে বাড়িতে এক পিস বর পুষেই ঢের শিক্ষা হয়েছে। জিরাফে কাজ নেই।
- হে হে।
- আর মিস্টার সাঁতরা, অফিসে আমায় চোরাগোপ্তা ভাবে মিস গ্র্যাভিটি বলে আওয়াজ দেওয়া বন্ধ করুন, অফিস ডিসিপ্লিন নষ্ট হয়।
- সরি।
- প্রডাক্ট পার্ফমেন্সে ফাইলটা নিয়ে আসুন।
- তুরন্ত। আজ ফেরার পথে হাফ কিলো পাটালি নিয়ে ফিরবে? প্লীজ? আমার হবে না। সুমন্ত টুয়েন্টি নাইন খেলতে ডেকেছে!
- মিস্টার অভিরূপ সাঁতরা!
- সরি বস। ফাইল নিয়ে আসছি। চটপট!
Saturday, December 30, 2017
সাঁতরাবাবুর বস
Saturday, December 23, 2017
দার্জলিঙের ৮
২
৩
৪
৫
৭
৮
Saturday, December 16, 2017
মৃদুলবাবু ও মশা
শোওয়ার ঘরের মশারির বাইরে একটা মশা ঘুর ঘুর করছে অনেকক্ষণ থেকে। নতুন ফ্ল্যাটে প্রায় বছর খানেক হতে চলল, মশার উপদ্রব এই প্রথম।
মৃদুলবাবু অবশ্য মশারির ভিতরেই।
মঁমঁমঁমঁ গোছের একটা গা শিরশিরানি শব্দ। আর পাঁচটা মশার প্যানপ্যানানির মত বিরক্তিকর শব্দ নয়, বরং খানিকটা যান্ত্রিক এবং অস্বস্তিকর।
ঘণ্টাখানেক ধরে চলছে এই মঁমঁমঁমঁ। রাত পৌনে একটা বাজতে চলল। এ'বার একটা হেস্তনেস্ত না করলেই নয়।
মশারির আবডাল ছেড়ে বেরিয়ে এসে ঘরের আলো জ্বাললেন মৃদুলবাবু।
অদ্ভুত। গোটা ঘর জরীপ করেও মশা নজরে পড়ল না, অথচ মঁমঁমঁমঁ শব্দটা কিছুতেই থামছিল না।
গেলাস দুয়েক জল খেয়ে ফের মশারির মধ্যে ফেরত এসে লম্বা হলেন তিনি।
তখনও একটানা মঁমঁমঁমঁ।
মৃদুলবাবুর অস্বস্তিটা চড়চড় করে বাড়তে থাকল। আচমকা টের পেলেন ডান কনুইতে সামান্য জ্বালা। হাত দিয়ে টের পেলেন ফুলে গেছে। কামড়েছে ব্যাটাচ্ছেলে রাস্কেল।
মশাটাকে আরও খান দুই গাল পাড়তে যাবেন কিন্তু তখনই মঁমঁমঁমঁ শব্দটা গেল থেমে। আর বালিশের পাশে রাখা মোবাইল টুং শব্দে বেজে উঠল।
স্ক্রিন অন করে মৃদুলবাবু দেখলেন ব্যাঙ্কের এসএমএস।
**
*বছরখানেক আগে*
- মিস্টার মৃদুল, এই রইল আপনার হাউস লোনের অ্যাপ্রুভাল।
- থ্যাঙ্ক ইউ। আপনাদের ব্যাঙ্কের ইএমআই স্কীম কিন্তু বেশ সস্তা। লোভনীয়।
- মানুষের জন্যই আমাদের ব্যবসা। আগে মানুষ, মুনাফা পরে। আর ইএমাআইয়ের প্রসঙ্গে বলি, মাঝেমধ্যে পেমেন্ট পুরোপুরি করতে না পারলেও চাপ নেবেন না।
- নেব না? হাউজিং লোনের মাসের ইএমআই না পেলে আপনারা বাড়ি থেকে বের করে দেবেন না?
- নেভার।
- গুণ্ডা লেলিয়ে দেবেন না?
- তউবা তউবা। আমাদের অনেক সহজ টেকনিক আছে। ইএমআই উশুলও হবে, অথচ আপনি টেরটি পাবেন না।
- মাইরি? পেনলেস ইএমআই আদায়? টোটালি যন্ত্রণাহীন?
- অলমোস্ট পেনলেস।
- কী'রকম?
- আরে সে'সব পাতি টেকনিকাল ব্যাপার। তবে বললাম তো স্যার, আপনি প্রায় টেরই পাবেন না। দেখছেন না, অল্পদিনেই আমাদের কাস্টোমার বেস কতটা বেড় গেছে!
- আপনারা অনবদ্য।
- আপনারাই আমাদের ভাতরুটি স্যার।
- তা এমন জনদরদী ব্যাঙ্ক আপনাদের, এমন বিটকেল নাম কেন? ড্রাকুলা ব্যাঙ্ক, এ'টা কোনও নাম হল?
Tuesday, December 12, 2017
সৈনিক ও পোস্টমাস্টার
Friday, December 8, 2017
যুক্তি তর্ক গল্প
Wednesday, December 6, 2017
অঙ্কের ছ্যাঁত, ছ্যাঁতের অঙ্ক
Saturday, November 18, 2017
কাগজের টুকরো
অন্তত পনেরো বছর পর বাপ্পাদার সঙ্গে দেখা।
দক্ষিণ পাড়ার সর্বকালের সেরা অফ স্পিনার বাপ্পাদা। বিনি পয়সায় পাড়ার কুচেকাঁচাদের অঙ্ক আর আঁকা শেখানো বাপ্পাদা। বুল্টিদির এক ধমকে চেনস্মোকার থেকে চুইংগাম সর্বস্ব বাপ্পাদা। পুজোয় ধুনুচি নাচ, ভোগ বিতরণ আর লক্ষ্মী পুজোয় আলপনা স্পেশালিস্ট বাপ্পাদা। ছোটদের থিয়াটারের ডিরেক্টর বাপ্পাদা।
সব ঠিকঠাক ছিল। ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টে একটা চাকরী পেয়েছিল, বুল্টিদির সঙ্গে বিয়ে ঠিক। সাজানো গোছানো ছিমছাম। রঙ ওঠা ফ্যাকাসে গোলাপি বালিশের ওয়াড়ের মত ভালোলাগা চারদিকে। আমরা মাঝেমধ্যেই বাপ্পাদার কাছে বৌভাতের মেনুর খোঁজখবর নিচ্ছি আর ওর থেকে "ডেঁপো ছেলের দল" মার্কা এন্তার কানমলা খাচ্ছি। ইন্টার-পাড়া ক্রিকেটে বাপ্পাদা উইকেট নিলেই বুল্টিদির ফর্সা কান দুটো টকটকে লাল হয়ে উঠছে।
আমরা সবাই বাপ্পাদা হতে চাইতাম। আমরা সবাই স্বপ্ন দেখতাম আমাদের লেখা কবিতার চিরকুট বুল্টিদির মত কারুর কেমিস্ট্রির বইয়ের বুকমার্ক হবে।
বাপ্পাদা-বুল্টিদির বিয়ে জানুয়ারিতে হবে বলে ঠিক ছিল। নভেম্বরের শেষের দিকে বাপ্পাদার বাবা স্বদেশ জ্যেঠু মারা গেলেন। সেরিব্রাল। আমরা বাপ্পাদাকে কাঁদতে দেখিনি; আগেও না, সে'দিনও না।
স্বদেশ জ্যেঠুকে পোড়ানো শেষ হয়েছিল সন্ধে সাতটা নাগাদ। বাপ্পাদা গোটা রাত গঙ্গার ধারে কাটিয়েছিল। সঙ্গে ছিলাম আমরা দু'তিনজন।
মাঝরাতের পর বাপ্পাদা গেম থিওরি নিয়ে ঘণ্টাখানেক আলোচনা করেছিল। ভোর তিনটে নাগাদ "চলি" বলে ঘাট ছেড়ে গেছিল, তারপর থেকে পনেরো বছর পাড়ার কেউ ওর দেখা পায়নি।
সেই বাপ্পাদা। হঠাৎ আবার। হাড় জিরজিরে চেহারা, একমুখ দাড়িগোঁফ। গলার স্বর ক্ষীণ।
আমায় চিনতে ওকে নিশ্চয়ই বেগ পেতে হয়নি। তবু প্রথম ঘণ্টাখানেক কোনও কথা বলেনি। দু'জনে চা খেলাম, ডিমভাজা কিনে অফার করতেও আপত্তি করলে না। বাড়ি ফিরেছে কিনা জিজ্ঞেস করাতে মাথা নেড়ে না বললে।
অনেকক্ষণ পর জিজ্ঞেস করল "তুই কেমন আছিস"?
সেই বাপ্পাদা। আমায় অঙ্কে ঠেলেঠুলে পাশ করানো বাপ্পাদা। সোমাকে লেখা গোপন চিঠির বানান ঠিক করে দেওয়া বাপ্পাদা। "তুই কেমন আছিস"টুকুতে গলার কাছে দলা পাকিয়ে ওঠাটা অস্বাভাবিক নয়।
অথচ বাপ্পাদার চোখে যেন কাচ বসানো। স্থির, অবিচল।
নিজের চাকরীর কথা জানালাম। ঘাড় নাড়া দেখে মনে হল অখুশি হয়নি।
"ট্যাক্স ফাঁকি দিস না কোনওদিন", বেমক্কা জোর দিয়ে বলে ডিমভাজার প্লেটটা খটাস করে নামিয়ে রাখল মধুদার দোকানের বেঞ্চিতে।
"কোথায় চললে বাপ্পাদা? বৃষ্টি পড়ছে তো। অন্তত আমাদের বাড়ি চলো আজ"।
"উপায় নেই"।
"বাপ্পাদা প্লীজ, একবার ক্লাবে যাবে না? রুরু, তপুরা তোমায় দেখলে..."।
"চারদিকে ফড়ফড়িয়ে টেবিল ফ্যান চলছে রে"।
"টে...টেবল ফ্যান"?
"টেবিল ফ্যান। ফুলস্পীডে ঘুরছে। আর আমি...কাগজের টুকরো। যা বুঝলাম, বাবা পেপারওয়েট ছিল রে। বাবা যাওয়ার পর, আমার ভেসে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না"।
"বুল্টিদি এখন ক্যানাডায়। ওর বর ওখানে..."।
"পেপারওয়েট। বুল্টি বেচারিও চিরকুট, তবে সে কাগজের গায়ে দামী ফাউন্টেন পেনে দরদী হাতের লেখায় কীটস কোট করা। আমার মত হিজিবিজি বাজারের ফর্দ নয়। আর যে'টা বললাম মনে রাখিস, ট্যাক্স ফাঁকি দিস না কোনওদিন। আর বানান ভুল নৈবচ। ডিমটা বড় ভালো ভেজেছিল মধুদা। তোর অ্যালজেব্রা আর ব্যাটিং স্টান্সের ঋণ শোধ হল। আসি, কেমন"?