- ডুয়েল?
- যদি ধক্ থাকে। তবেই। এই রইলো এক জোড়া রিভলভার। লোডেড।
- শ'দুয়েক বছর আগে সাহেবরা এমন ছেলেমানুষি করে থাকতেন শুনেছি।
- ছেলেমানুষি? তার আর বাকিটা কী আছে বলতে পারিস দাদা?
- দ্যাখ বিনু, পাপ কম করিনি। তবে এই বিকেলবেলা নিজের ভাইকে খুন করতে মন চাইছে না।
- খুব কনফিডেন্ট মনে হচ্ছে তোকে।
- আমার থেকে পঞ্চাশ হাত দূরে রাখা একটা বেড়ালের লেজের ডগাকে বেঁধার ক্ষমতা আমার আছে বিনু। তুই জানিস।
- এত কথা বলছিস কেন? রাজী থাকলে চ' নীচের মাঠে। এখনও আলো আছে। কত ধানে কত চাল...।
- মরতে চাইছিস কেন? বিনু?
- বাজে কথা না বলে নীচে চল।
- কেন?
- কাউকে তো মরতে হবেই। আমার গুণ্ডা তোর ফ্যামিলির পিছনে লেগেছে, তোর গুণ্ডা আমার ফ্যামিলিকে ফলো করছে। কিডন্যাপ খুন হল বলে লোকজন।
- এত সহজে কেঁপে যাওয়ার লোক তো তুই নোস। মনে হচ্ছে সস্তা হুইস্কি শুধু তোর লিভার নয়, নার্ভকেও অ্যাফেক্ট করছে।
- ডুয়েল লড়বি কিনা বল।
- ফের বাজে কথা। তুই বরং সম্পত্তির ওপর সমস্ত দাবী ছেড়ে দে। এ খুনোখুনির খেলাও শেষ হয়ে যাবে।
- তখন আমার বৌ ছেলে খাবে কী? আমি মরলে বরং ইন্স্যুরেন্সে প্রচুর টাকা পেয়ে একটা হিল্লে হয়ে যাবে ওদের। আর তোকে মারতে পারলে তো কথাই নেই।
- ফের বলছি। ছেলেমানুষি করছিস বিনু।
- তুই করছিস না? ছেলেমানুষি? আমার হকের আধাআধি ভাগ দিতে তোর অসুবিধে কোথায়?
- লোভ খুব খারাপ জিনিস বিনু। আর আমি লোকটা সুবিধের নই। তবে লোভ আমার যতই থাক, এ'সব ডুয়েল টুয়েলে আমি নেই।
- বেশ, তাহলে এই রিভলভার নিয়ে আমিই তাহলে...।
- খুন করবি? না সুইসাইড? বিনু?
**
- আমার যা বলার পুরোটাই বলেছি বটুবাবু।
- আজ্ঞে।
- ইন্সপেক্টর দত্ত নিজে এসেছিলেন ইনভেস্টিগেট করতে। উনি নিজে ক্লীন চিট দিয়ে গেছেন।
- শুনেছি।
- লাশের হাতে যে রিভলভার ধরা ছিল..।
- আপনার ভাইয়ের লাশের হাতে...।
- হ্যাঁ। সে রিভলভারেরই গুলিই ওর মগজে পাওয়া গেছে। সে পিস্তলের বাটে ট্রিগারে শুধু বিনুরই হাতের ছাপ পাওয়া গেছিল। এ'সব থানায় গেলেই আপনি জানতে পারতেন।
- জানি তো। সমস্তটাই।
- তাহলে আমার পিছনে লেগেছেন কেন?
- আসলে বিনয়বাবুর স্ত্রীর সন্দেহ যাচ্ছে না। ওঁর স্বামী নাকি সুইসাইড করার মত মানুষ নন। এ কাজটা উনিই আমায় দিয়েছেন।
- ব্যাপারটায় আমিও সারপ্রাইজড হয়েছি বইকি। তবে বিনুর বৌ এবার বাড়াবাড়ি করছে। আর সেই বাড়াবাড়িটা আমি ভালো চোখে দেখছি না।
- এ ঘরেই বিনুবাবু মারা যান, তাই না?
- ও ডুয়েল লড়ার অফার নিয়ে এসেছিল। সাথে দু'টো রিভলভার। ভাবুন কী লেভেলে মাথা খারাপ হয়েছিল ওর।
- অভাবে কার না মাথা খারাপ হয় মিস্টার সান্যাল। তবে মাথা খারাপের বশে সুইসাইড না করে আপনাকে খুন করায় ওর প্রফিট অনেক বেশি ছিল।
- থ্যাঙ্ক গড সে'টা ও করেনি।
- মিস্টার সান্যাল, এ বয়সেও আপনার স্কিনের গ্লো চোখে পড়ার মত।
- হোয়াট?
- স্কিনের গ্লো। চোখের পড়ার মত। শুধুই দামী স্কচের কামাল ভেবেছিলাম প্রথমে। আপনার টেবিলে বোরোলিনের টিউবটা দেখে নিশ্চিন্ত হচ্ছি।
- কলকাতায় শীত পড়ুক না পড়ুক, চামড়া আর ঠোঁট ফাটবেই। আর বোরোলিনে আমার বিশ্বাস সেই ছেলেবেলা থেকে। প্রতি ঘণ্টায় একটু মুখে ঠোঁটে না লাগালেই অসোয়াস্তি বুঝলেন...। বিশেষত এই জানুয়ারিতে।
- আপনার ভাই সে'দিক থেকে কেয়ারলেস। পোস্ট মর্টেমের আগে লাশ যা দেখলাম, ঠোঁট গালের চামড়া ফেটে একাকার।
- পুরুষ প্রসাধনীর আলোচনাটা না হয় অন্য কোনও দিন সেরে নেওয়া যাবে বটুবাবু। এখন আসতে পারেন।
- আসলে...আসলে বোরোলিনের সুবাসটা আমায় বড় টানে মিস্টার সান্যাল।
- আমার সময় নষ্ট হচ্ছে বটুবাবু।
- রিভলভার দু'টো ছিল।
- দু'টোই পুলিশ নিয়ে গেছে। এবং দু'টোর একটাতেও আমার হাতের ছাপ নেই। আছে বিনুর হাতের ছাপ। আর ওর হাতে ধরা রিভলভার থেকেই গুলি ওর মাথায় ঢোকে। এবং আমি এ'সব আপনাকে কেনই বা বলছি...।
- ঠিক। দু'টো বন্দুকেই বিনুবাবুর হাতের ছাপ রয়েছে। হাতের ছাপ অবিশ্যি খুন করার পরেও বন্দুকের বাটে নিয়ে নেওয়া যায়...।
- ননসেন্স।
- আর বন্দুক থেকে আঙুলের ছাপ মুছে ফেলাও শক্ত নয়।
- কী বলতে চাইছেন আপনি?
- আঙুলের ছাপ মোছা গেলেও বোরোলিনের সুবাস মুছে ফেলার উপায় কিছু নেই সান্যালবাবু। আর আমার নাকে এক হপ্তা পুরনো বোরোলিনের গন্ধও পোষা কুকুরছানার মত এসে অল্ফ্যাক্টরি সেলসে বসে লেজ নাড়ে। এ খুন তো গতকালের।
- রামদয়াল, বটু হারামজাদাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দে...।
- আপনার সমস্ত বডি গার্ড ইতিমধ্যেই পুলিশের হেফাজতে। এ বাড়িটাও পুলিশ ঘিরে রেখেছে।
- কিন্তু...কিন্তু...বটুবাবু....আমি...আমার কোনও উপায়...।
- উপায় ছিল না। জানি। ইন্সপেক্টর দত্ত, এবার আপনি সামনে আসতে পারেন। এবার শুনুন দারোগাবাবু।বিনুবাবু ওনার দাদাকে খুন করতে রিভলভার তাক করেন। খুন করতেন না কি শুধু থ্রেট সে'টা আর জানার উপায় নেই। তবে তৎক্ষনাত টেবিল থেকে দ্বিতীয় রিভলভার তুলে ফায়ার করেন সান্যালবাবু। দাদার ক্ষিপ্রতায় বিনুবাবুর মুখ হা হয়ে যায় আর দুরন্ত টিপে সান্যালবাবুর গুলি ওর মুখের মধ্যে ঢুকে যায়। ফরচুনেটলি ফর সান্যালবাবু, পিস্তল হাতে সুইসাইড বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মুখের ভিতর বন্দুকের নল পুরে হয়। বুলেটের ডিরেকশনটা তেমনই ছিল। এরপর মিস্টার সান্যাল বিনুবাবুর হাতের রিভলভারটি টেবিলে রাখেন আর নিজের হাতের বন্দুক লাশের হাতে ধরিয়ে দেন। অবশ্যই তার আগে বন্দুকের বাট থেকে নিজের হাতের ছাপ মুছে। কিন্তু, ট্র্যাজেডি ঘটল অন্যত্র। যে তর্জনীতে বোরোলিনের ফোঁটা নিয়ে ঠোঁটে ক্রমাগত ডলে চলেন সান্যালবাবু, সে তর্জনী দিয়েই তিনি ট্রিগার টেনেছিলেন।
- বটুবাবু, ইন্সপেক্টর দত্ত। আমার কোনও উপায় ছিল না। হি উড হ্যাভ কিল্ড মি।
- সম্ভবত তাই। কিন্তু খুনের প্রমাণ লোপাট করার অপরাধও কোনও অংশে কম নয় মিস্টার সান্যাল। ইন্সপেক্টর দত্ত, অল ওভার টু ইউ। আর ইয়ে মিস্টার সান্যাল, আপনার টেবিলে রাখা বোরোলিন টিউবটা আমি রাখলাম। গালটা সামান্য চড়চড় করছে।
3 comments:
গন্ডগোল বুঝলেন Bongpen শ্রী তন্ময় বাবু। গন্ডগোল!
রিভলবার মুখে পুরলে নলটি স্বাভাবিক ভাবে তা আনুভুমিক থাকে না। ঠোটের দিক থেকে ভেতর দিকে সামান্য উচিয়ে থাকে। ফলে গুলিও আনুভুমিক ভাবে নয়, বরং মাথার খুলির সামনে থেকে পেছনে সামান্য নিচু থেকে উচু হয়ে বেরবে!
কিন্তু এই ভুলটা কার? পোস্টমর্টেমের ডাক্তারের? গোয়েন্দার? না কি কাকতলীয় ভাবে বিনুর দাদা সামান্য বেঁটে ছিল!
HAHAHHAA....darun....superb...
HAHAHHAA....darun....superb...
Post a Comment