- বুঝলি বাবাই, প্রেম হবে দুড়ুম
করে। তুই হয়তো ডিফারেনশিয়েশন করছিস। অথবা ডেল্টা ফোর্স খেলছিস। অথবা উইকেট কীপিংয়ে
ঝপাঝপ বল গলাচ্ছিস। হঠাৎ টের পাবি এক ধরণের বুক খালি করা গন্ধ, অনেক উঁচু থেকে ঝাঁপ দেওয়া পেট খালি গোছের ভালো লাগা অস্বস্তি।
- কী'রকম?
- এই যেমন ধর, আমি গত পরশু
রামমন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে আলুকাবলি খাচ্ছিলাম। এক্সট্রা ঝাল, টক কম। হঠাৎ করে সেই গন্ধটা বুকে এলো। অমনি পেট খালি ভাব।
অস্বস্তি। ব্যাস। ক্লীয়ার হয়ে গেল ব্যাপারটা কী।
- ব্যাপারটা কী বান্টুস?
- প্রেম। তুই এখনও ঠিক যে'টা গ্রিপ করতে পারছিস না। কিন্তু আমি পেরেছি। আলুকাবলি খেতে
খেতে।
- কী গ্রিপ করেছিস?
- এই যে সুদীপ্তাই হচ্ছে আমার রিয়েল ডেস্টিনেশন।
- সুদীপ্তা?
- ইলেভেন। সেকশন বি।
- জুনিয়র?
- পার্টনার জুনিয়র সিনিয়র হয় না।
- ও জানে?
- হনুমান জানতো ওর পোটেনশিয়াল?
- সুদীপ্তা হনুমান?
- তুই হনুমান। অখাদ্য মাইরি।
- বান্টুস।সাবধানে। সামনে টেস্ট।
- তুই এত নেদু কেন রে?
**
দিল ভি কহি হ্যায় পহাড়ো মে
থোড়া সা কহি হ্যায় কিনারো মে
ফির কে চলি হ্যায় ঠন্ডি হাওয়ায়ে
কেয়া তুম মিলোগে হম সে যহা লেকে যায়ে
ভিগি ভিগি পলকে, কমসিন অদায়ে
মাসুম চেহরা তেরা নহি ভুল পায়ে
**
একটা বিকট খয়েরী রঙের হিরো ইম্প্যাক্ট সাইকেল ছিল।ছিল অজস্র
বিকেল। আর ছিল মফস্বলি ফাঁকা রাস্তা। তার মাত্র কিছুদিন আগে বাটি বসানো ছাঁট বন্ধ
হয়েছে, চুলের ফুরফুরে সাইকেলে অ্যাক্সিলারেট করে, প্যাডেল হালকা হয়ে আসে। পিচ রাস্তার দু'পাশে ইউক্যালিপটাস, বিকেলের নরম রোদ
মাখানো হাওয়া আর কাপ্তানি প্যাডেল।
তখনও কানের ইয়ারফোন এসে পড়েনি, সাইকেলের গতি গুনগুনে ওঠা নামা করে। পিঠের টিউশানির ব্যাগ
আদতে গোপন ভিসা।
তেমনই একটা বিকেলে টের পাওয়া গেছিল যে বান্টুস মন্দ বলেনি।
দুড়ুম করেই স্বাদটা জিভে ঠেকে যায়। পেট খালি করা অস্বস্তি। ভালো লাগা। ওদিকে
সুদীপ্তায় বান্টুশ ডেস্টিনেশন খুঁজে পেয়েছিল। আর এদিকে বিকেল আর ইউক্যালিপটাস
মেশানো গন্ধে লাকি আলির সুর ঠেকেছিল আমার কানে। বছর তিন চারেকের পুরনো সুর, দুম
করে টেনে ধরেছিল।
বিকেল ভেজা রুমালের মত মুখ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল।
**
তুমহে ভি কভি ইয়ে সতাতে হ্যায়
মুস্কুরাকে দিল কো চুরাতে হ্যায়
জিনে কো তো দিল ইয়ে চাহতা হ্যায়
জানে ফির ক্যিউ শরমাতা হ্যায়
রুকতা নহি হ্যায়, সব কুছ বতায়ে
ছুপতা নহি হ্যায়, দিল জান যায়ে
অব রেহনা কিসকো ইহা
**
গানের হিসেব বুঝতে ক্ষমতা লাগে। সাইকেল আর টিউশনানি ফাঁকিতে
সঙ্গীত নেই। তবে বান্টুশ গুরমন্ত্র দিয়ে গেছিল, হঠাৎ সে সুবাস
এসে আটক করবে সমস্তটুকু। সেই আটকে পড়াটুকুতে ছিলেন লাকি আলি। ক্লাস সেভেনে ইংরেজি
স্যার "প্যাথোস" শব্দটা বোঝাতে চেষ্টা করেছিলেন। সে'টার সমঝ হয়েছিল বেশ কয়েক বছরের মাথায়; লাকি আলি, সাইকেল আর বিকেল মিলে।
**
কিতনি হসিন জিন্দেগি হ্যায় ইয়ে
হোঠো পে য্যায়সে কহানী হ্যায়
সদা ইহা কিসকা ঠিকানা হ্যায়
উন কি রওয়ানি মে জানা হ্যায়
বহারো নে হর শও রং হ্যায় বিখেরা
রেত কা সেহরা, এক পল কা ঘেরা
ইকদিন বিখরনা ইহা
**
"ইকদিন বিখরনা ইহা"। এ'টুকু বুকে অনবরত প্যাডেল করে চলে। নিশ্চিন্দি আনে। এখনও।
গুনগুন পিষে ফেলে ইউটিউব এসেছে। কিন্তু এ গানখানা এখনও বিকেল বয়ে আনে। যে বিকেলে
হিরোইম্প্যাক্ট সাঁইসাঁই ছুটে চলে। যে বিকেলে ইউক্যালিপটাসের সুবাসে ভরপুর। পেট ফাঁকা হয়ে আসে। তবে বান্টুস বলে গেছে সে'টা ভালো লাগার অস্বস্তি। বান্টুসটা যে কোথায় গেল। ফেসবুকের
জমানায় নিখোঁজ হতে পারার অসাধ্য সাধন একজন আলুকাবলিস্টের পক্ষেই সম্ভব।
সবাই ডেস্টিনেশন চিনে নিতে পারে না তাই সে বয়সের প্রেম না
হওয়াটুকু আছে। আর আছে সুরটুকু।
রেত কা সেহরা, এক পল কা ঘেরা;
ইকদিন বিখরনা ইহা।
No comments:
Post a Comment