- বসতে পারি?
- শিওর। প্লীজ।
- ক্লাবে নতুন মনে হচ্ছে?
- শহরে এসেছি এই মাস খানেক হয়েছে।
- আমার পরিচয় দিই। আমি মনোজ দত্তগুপ্ত। রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা।
- আমি সঞ্জয় মুখার্জি। বিজ্ঞাপনের কাজকর্ম করি। বম্বেতে ছিলাম বছর কুড়ি। একটা নতুন চাকরী নিয়ে এই রিসেন্টলি...।
- অ্যাডভার্টাইসমেন্টের মানুষ, বম্বে ছেড়ে ক্যালক্যাটা? দিল্লি হলে তাও...সে যাকগে। ইউ মাস্ট হ্যাভ ইওর ওউন রিজনস। দেখলাম আপনি একা বসে আছেন, তাই ভাবলাম যাই যেচে একটু আলাপ করে আসি।
- এ ক্লাবে আমায় নিয়ে আসেন মিস্টার আগরওয়াল...। দিন দুয়েক আগে।
- মুকেশ? দ্য ব্যাঙ্কার?
- হ্যাঁ।
- আরে সে তো আমার গলফ পার্টনার। প্রতি শনিবার উই মীট আপ।
- ওহ আই সী। আসলে আমি একলা মানুষ, ঘর সংসার নেই। আর এদ্দিন পর কলকাতায় ফিরে তেমন পরিচিত কাউকে বিশেষ...।
- নাউ দ্যাট ইউ আর হিয়ার মিস্টার মুকর্জি, ইউ উইল নট ফীল অ্যালোন। আমার তো মশাই প্রতি সন্ধ্যেয় এখানে এসে দু পেগ গলায় না ঢাললে শান্তি হয় না। আর শনিবার তো ভোর থেকে এখানে। দুপুরের লাঞ্চ সেরে তারপর ওয়াপসি। রোববারটা অবশ্য ফ্যামিলির জন্যে রাখতেই হয়। তা আপনি গল্ফ খেলেন নাকি?
- ওই। কুছ নহি তো থোড়া থোড়া।
- ভেরি গুড। তাহলে নেক্সট শনিবার জয়েন করুন না। কিটের ব্যবস্থা হয়ে যাবে। সকলের সঙ্গে আলাপ করে ভালোও লাগবে। নাথিং ব্রেক্স দ্য আইস লাইক গলফ অ্যান্ড বিয়ার।
- বেশ তো।
- আচ্ছা মিস্টার দত্তগুপ্ত...।
- আমায় ডিজি বলে ডাকতে পারেন। ক্লাবে ওটাই চলে। দত্তগুপ্ত ইজ টু লং।
- আচ্ছা মিস্টার ডিজি, আপনি বরাবরই এ শহরে...।
- ইয়েস স্যর। তিন পুরুষের বাড়ি সাউথে। দুই পুরুষের ব্যবসা। অবিশ্যি, রিয়েল এস্টেট এখন মাফিয়াদের হাতে চলে যাচ্ছে। আমাদের মত চুনোপুঁটিরা কোনও রকমে টিকে আছে। জলে কুমির আর ডাঙায় বাঘ, দু'দিকেই রিকনসাইল করে চলতে হয়। মাঝেমধ্যে মনে হয় এর চেয়ে আপনাদের মত চাকরী করলেই ভালো হত...।
- বিজ্ঞাপনের জগতটাও...।
- অফ কোর্স নাথিং ইজ ইজি।
- মিস্টার ডিজি...আপনার সঙ্গে কি আগে কখনও দেখা হয়েছে?
- স্ট্রেঞ্জ। দূর থেকে আপনাকে দেখে আমারও ঠিক সে'টাই মনে হচ্ছিল। কিন্তু এগজ্যাক্টলি ঠিক...।
- হয়তো মুম্বইতে কখনও...।
- হতে পারে। ব্যবসার কাজে মাঝেমাঝেই...।
- আমারও অবশ্য কলকাতায় মাঝেমধ্যে আসা হত...এখানেও কোথাও হয়ত।
- আফটার অল ইট ইজ আ স্মল ওয়ার্ল্ড, কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছি না...। সে যাক গে, আজ উঠতে হবে মিস্টার মুকর্জি, ডার্মাটোলজিস্ট দত্তের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়ার চেয়ে বিষ্ণুর দেখা পাওয়া সহজ ...। এই রইলো আমার কার্ড, শনিবারের গল্ফটা তাহলে কনফার্ম রইলো, কেমন?
- শিওর। দাঁড়ান, আমার কার্ডটা আপনাকে দিই। আর ডার্মাটোলজিস্ট যদি রিল্যায়েব্ল হয় তাহলে ডিটেইল একটু শেয়ার করবেন প্লীজ। আমারও শরীরে মাঝেমধ্যেই কেমন ছুঁচের ফুটোর মত দাগ তৈরি হচ্ছে...উইয়ার্ড প্রব্লেম।
- বলেন কী?
- কেন?
- স্ট্রেঞ্জ। আমারও সে'টাই ইস্যু। কোনও নতুন এপিডেমিক নাকি? এনিওয়ে, ডাক্তার দত্ত ইজ দ্য বেস্ট ইন ক্যালক্যাটা। আমি আপনার অ্যাপয়েন্টমেন্ট করিয়ে দেব। আজ আসি। তাহলে নেক্সট শনিবার গল্ফে, কেমন?
- অবশ্যই। কিন্তু আপনাকে যে কেন এত...।
- অসোয়াস্তিটা আমারও লাগছে...যেন খুব কাছ থেকে আপনাকে দেখেছি কখনও...কিন্তু কিছুতেই ঠিক...।
- এগজ্যাক্টলি...খুব কাছ থেকে...অথচ কিছুতেই...।
- যাক, পরে কখনও কনেক্ট করা যাবে না হয়...আজ আসি...।
**
সাড়ে সাতটার মধ্যে ডিনার সেরে নেওয়াটা এখন অভ্যাস হয়ে গেছে সুতপার। তারপর এক কাপ চা নিয়ে তাঁর গোপন আঁকার খাতা ওলটানো। কবেকার খাতা।
অন্তত খান তিরিশেক আঁকা। পুরুষের নগ্নতা।
বিশ্রী, লোভী, ঠকানো নগ্নতা।
ঘেন্না বড় বিশ্রী ব্যাপার। ভালোবাসা ইউটার্ন নেওয়া ঘেন্না আরও ভয়ানক। অজস্র ভালোবাসার ভেঙ্গে যাওয়া দেখেছেন সুতপা, এ ব্যাপারে তাঁর শুচিবাই ছিল না কোনোদিন। প্রতিটা ভেঙে যাওয়াই সমৃদ্ধ করেছে তাঁকে।
আর যেখানে ঘৃণা এসেছে, সে'খানে আরও নিবিড় হয়ে উঠেছেন সুতপা। ম্যাসোচিসম? হয়তো বা। তিরিশটা ঘেন্নার পুরুষকে এই গোপন ডায়েরীতে এঁকে রেখেছেন সুতপা। ডিটেইলিং দেখে নিজেরই গর্ববোধ হয়।
সবচেয়ে ভয়ানক দু'জনের মুখোশ ছিঁড়ে যাওয়া প্রায় একই সঙ্গে টের পেয়েছিলেন সুতপা। সে কবেকার কথা। কবেকার। দু'টো আঁকাই তাই এক সঙ্গে বেড়ে উঠেছিল। অদ্ভুত ভাবে সেই দু'জনেই সুতপার এ গোপন আঁকার ডায়েরী আবিষ্কার করে উলটেপালটে দেখেছিল। অপ্রস্তুত হয়ে সঙ্গে সঙ্গে দু'টো সম্পর্কই ভেস্তে দিতে হয়েছিল।
ডিনারের পর এ'সব স্মৃতি ঘেঁটে খানিক সময় কাটান সুতপা। আর ছুঁচ নিয়ে ক্রমাগত বিঁধে যান প্রত্যেকটা আঁকায়।
1 comment:
Noir story.
Post a Comment