দিব্যি জনসন ইয়ারবাড দিয়ে টিটেবিলে রাখা কোস্টারের ওপরের কফির দাগ নিয়ে আঁকিবুঁকি কাটছিলেন অমিয়বাবু। মনের মধ্যে অরেঞ্জ স্কোয়্যাশের মত একটা বেলেল্লা প্রশান্তি ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো।
এমন সময় স্ফিঙ্ক্সের মত বিদঘুটে চেহারার একটা নারী প্রশ্ন দুলতে দুলতে চোখের সামনে এসে দাঁড়ালো। "এই কানের দুলটা ভালো লাগছে না এইটা"?
সন্ধ্যের শিউলিতে কেউ চিলি সস্ ঢেলে দিল যেন।
চাঁদে নামতেই যেন আর্মস্টংয়ের সামনে জ্যোতিষশ্রেষ্ঠ গুণময় লাহিড়ী এসে দাঁড়ালেন।
চন্দননগরের বদলে মগরায় এসে ট্রেনঘুম ভাঙলো যেন।
দুল?
দুল?
আচমকা অমিয়বাবুর মাথার স্ক্রুগুলো মচরমচর করে উঠলো।
দুল।
কানের দুল।
পাঁচ সেকেন্ড দোলে দো দুল দোলে দুলোনা গাইলেন অমিয়বাবু। অবশ্যই মনে মনে। পান সকলের পাতে দেওয়া চলে না। দুলে দোল খাওয়া বৌকে তো নয়ই।
দুল তাঁর জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ? মনে মনে চট করে সাতাত্তর হাজার পাঁচশো বিরানব্বইটা দরকারি জিনিসের কথা মনে পড়লো অমিয়বাবুর। সে লিস্টে দুল ছিল না।
ভালো দুল খারাপ দুল?
বলিভিয়ায় আমসত্ত্ব পাওয়া যায় কিনা তার চেয়ে বেশি দরকারি প্রশ্ন।
তিমি মাছের গাদা পেটির টেস্ট আলাদা কিনা তার চেয়ে জরুরী প্রশ্ন।
কলমিশাক দিয়ে বাটার নান কেমন লাগবে জেনে তাও মানুষের সামান্য উপকার হতে পারে।
কিন্তু দুল?
মন কেমন হয়ে আসে অমিয়বাবুর। কই, কেউ তো এসে শুধোলো না ডাবল এগ চিকেন রোল নাকি স্পেশ্যাল মাটন রোল?
যা হোক্। এড়িয়ে গেলে চলবে না। পাশ কাটালে চলবে না। গতকালই বাজার গিয়ে কিছু একটা আনতে ভুলে গেছিলেন ভদ্রলোক। কী ভুলেছিলেন, সে'টা আজও মনে পড়েনি অবশ্য। তবে মরমে মরে রয়েছেন। আজকের ভুলের ছুঁচ আজ থেকে বাইশ বছর পর ফলা হয়ে ঢুকতে পারে। ঢুকবেও।
এখন হাতে একটা সুযোগ এসেছে দুলের চয়েসে ঝাঁপিয়ে পড়ে সিচুয়েশন কন্ট্রোলে আনার।
সোফায় সোজা হয়ে বসলেন অমিয় সামন্ত।
"কই দেখি"! দুল দেখে কেন, চিবিয়ে খেয়েও তার ভালোমন্দ বিচার করার দম নেই অমিয়বাবুর। তবু। এ'টা হচ্ছে টিমস্পিরিট জাহির করা।
"আরেকটু কাছে এসো, ভালো করে দেখি"। খাটাখাটনি করে জলের খুব কাছে গেলে হাইড্রোজেন আর অক্সিজেনের অ্যাটম আলাদা করে ঠাহর করা যেতে পারে হয়তো। তাই বলে দুল?
কিন্তু ডিসিশিন একটা দিতেই হবে। আবার দায়সারা হলে চলবে না।
"ডানদিকেরটায় একটা বেশ দারুণ ইয়ে আছে বুঝলে, কিন্তু তোমায় বাঁদিকেরটাই বেশি স্যুট করছে। মানে বাঁদিকেরটাতেই তোমার যে ইনহেরেন্ট ইয়ে, সে'টা বেশি এক্সপ্রসড হচ্ছে"।
ইয়ে। ইয়ের মত মজবুত শব্দ আর হয় না। ফ্লোটারের মত ব্যবহার করা যায়। রামের পিঠে, রাবণের ল্যাজে; সর্বত্র ইয়ে বসে আর উতরে যায়।
বাঁদিকের দুল। কেমন একটা গুয়েভারা গোছের ফ্লেভার আছে। বলেও তৃপ্তি পেলেন অমিয়বাবু। আর তক্ষুনি সাইকেলের আড়াল থেকে ফায়ার করা মিঠুন চোক্কোত্তির ছোঁড়া পিস্তলের গুলিতে ঘায়েল হলেন তিনি।
"আমার বাপের বাড়ি থেকে দেওয়া যে কোনও জিনিসের প্রতি তোমার বরাবরই চরম অনীহা। ওরা তোমার কোন ক্ষতিটা করেছে বলতে পারো"?
বুকের ভিতর একটা প্রকাণ্ড "যাহ্চ্চলে" বয়ে গেল অমিয়বাবুর। কীসের দুল, কীসের ডান বাঁ। চারদিকে অন্ধকার, ধুলোঝড়।
"আসলে এ ঘরের টিউবলাইটই হয়েছে যাবতীয় গড়বড়ের কারণ, তোমার মুখের ডান দিক তো এক্কেবারে অন্ধকারে। আমি কালই সিএফেল লাগানোর ব্যবস্থা করছি। এ'দিকে এসো। এই এ'দিকে। এইবার। এইবার দেখতে পাচ্ছি। স্পষ্ট। ডান দিকের দুলের কারিগরির ফিনেস্ দেখেছ? এর ইয়েই আলাদা। বাঁদিকের দুলটা ইমপ্রেসিভ, নো ডাউট। কিন্তু তোমার মায়ের দেওয়া দুলটা তোমার এই কাঞ্জিভরমটাকে যা কমপ্লিমেন্ট করছে না! জাস্ট মার্ভেলাস। মাই ভোট গোজ্ টু ডানদিকের দুল"।
শাড়িটা কাঞ্জিভরম ছিল না।
অমিয়বাবুর ঘাড়ে এক্সট্রা মাথা ছিল না।
No comments:
Post a Comment