দেখুন। পয়সাকড়ির বড় অভাব।
বেশ কিছুদিন ধরে নিজেকে ক্রমশ গরীব গরীব মনে হচ্ছে। আর এই মনে হওয়াটা উত্তরোত্তর
বাড়ছে। বেড়েই চলেছে। দিস এভার গ্রোয়িং সেন্স অফ পকেটখালিনেস্, বুঝলেন, মাঝেমধ্যেই
পেট খালি করে দিচ্ছে।
আহ্। পয়সার অভাবে না খেয়ে
আছি তা নয়। মাঝেমধ্যেই চপকাটলেট জুটছে। হাটারির চাউমিন। আরসালানের বিরিয়ানি।
কিন্তু অভাবের ডেফিনিশনটা এইবেলা ফ্লেক্সিবল না করলে চলছে না। এ যুগে দাঁড়িয়ে বুর্জোয়া-অভাবকে
অস্বীকার করার কোনও মানে হয় না। স্যালারি, ইনক্রিমেন্ট, বোনাস, মিউচুয়াল ফান্ড; সব
চটকেও হচ্ছে না। অনটন প্রতিনিয়ত টনটন করে চলেছে।
ফ্লুরিজ্কে নাক সিঁটকে “ওভারপ্রাইসড”
না বলে কোনও উপায় থাকছে না। তিনশো টাকার ওমলেট। প্লাস ট্যাক্স বোধ হয়। শেষ সেই দু’হাজার
তেরোয় খেয়েছিলাম। এখন ট্র্যাডিশনের ভাঁওতা দিয়ে লোকজনকে বসন্ত কেবিনে ডাকতে হয়।
বুর্জোয়াগরীবদের বন্ধুরাও বুর্জোয়াগরীবই হয়। অতএব কেউ আমায় বড় একটা ফ্লুরিজে
খাওয়াতে ডাকে না। ফ্লুরিজে গিয়ে ডাচ করতে হলেও চুঁচুড়া হয়ে যেতে হবে। এইসব খুচখাচ
দুঃখ বড় প্রবল হয়ে দাঁড়াচ্ছে আজকাল।
তারপর ধরুন কোনও পেল্লায়
শপিং মলের লিকার শপে ঢুকলাম। সমস্ত ঝকমকে ব্র্যান্ড। সিঙ্গল মল্ট। দামী ওয়াইন।
ইত্যাদি। আমার দৌড় ওই ওল্ডমঙ্ক। বুর্জোয়াগরীব। ইউজার ম্যানুয়ালে ভাঙার ইন্সট্রাকশন
আছে কিন্তু মচকানোর কোনও রেফারেন্স নেই। অতএব ওল্ডমঙ্কটুকুও গিলতে হবে “ট্র্যাডিশন
আর ঐতিহ্য” বলে বুক বাজিয়ে। পকেটের সঙ্গে গলা কাটলেও সিঙ্গল মল্টের বোতল ছুঁয়ে
দেখার ধক্ নেই। আর ধক্ দেখাতে গেলে একটানা দেড়মাস রাতে মাছ ভাতের বদলে এক ছিপি
সিঙ্গল মল্টে চারটে রুটি চুবিয়ে চুবিয়ে খেতে হবে।
টরেন্টের ওপর নিষেধাজ্ঞা
শুনে আমার বুক ফেটে যায় আমি এত গরীব। রিয়েলি। বিশ্বাস করুন।
ইলিশের সিজন এলে ভয় লাগে।
ফেসবুকে স্বাদে ভেসে যাওয়ার কথা লিখতেই হবে, পীয়ার প্রেশার। অথচ এ’দিকে হপ্তায় দু’দিন
এক কিলো সাইজের আসল পদ্মার ইলিশ কিনতে হলে সিটিসির অর্ধেক মাছের বাজারে হরির লুঠ
হিসেবে ফেলে আসতে হবে। অতএব পাতে স্রেফ ডায়মন্ড হারবারের বিস্বাদ খোকা ইলিশ, আর
ফেসবুকে বাতেলা; ইলিশ ইজ লাভ (লাল রঙের হার্টসাইন সহ)।
টাকা নেই স্যার। অরিজিনাল
স্ক্রিনগার্ড বা ফোনকভার কিনবো, সে দুঃসাহস আমার নেই। আমাদের মত বুর্জোয়া-গরীবদের
সে বারফাট্টাই থাকতে নেই। গড়িয়াহাটের ফুটপাথ ছিল তাই ফোনের জামাকাপড় জুটছে। টাকা
নেই।
“এয়ারইন্ডিয়া বাপের জন্মে
টাইমে থাকে না” বলে যে সামান্য দুঃখ করব তার উপায় নেই। ছ’মাসে ন’মাসে কখনও হয়তো
অফিসের ঘাড় ভেঙে ফ্লাইটে চড়ার সুযোগ আসে। এবং একবার প্লেনে উড়তে পারলে আগামী দেড়
বছর সুটকেস থেকে এয়ারলাইনের ট্যাগ ছেঁড়া হয়ে ওঠে না। “বম্বে মেল কত নম্বরে” খোঁজ
করেই কেত শেষ হবে। এর বেশি আর স্টেপআউট এই মাইনেতে হয় না।
তাছাড়া আমি নিশ্চিত ইউরোপ
অপূর্ব জায়গা। একবার ঘুরে আসতে পারলে ধন্য হয়ে যাব। অথচ দাড়ি চুলকে লোকজনকে বলতে
হয় “ক্যাশ্মের টু কন্যাকুমারী, কী নেই আমাদের দেশে”? ব্যাঙ্কে ছড়ানোর মত পয়সা
থাকলে লোলেগাঁও ছেড়ে সুইজারল্যান্ড যাবো, বিশ্বাস করুন। খুব যেতে চাই। যদ্দিন টাকা
না আসে তদ্দিন অবশ্য পুরুলিয়াতে বসে জিওর ফোরজি কনেকশনে মাসাইমারার ভিডিও দেখা
ছাড়া বিশেষ উপায় নেই।
সবচেয়ে বড় কথা। বুর্জোয়াগরীব
না হলে সঞ্জীব সঞ্জীব হাওয়া তুলে ছাতে গিয়ে প্রেম করতে হত না। এস্পারওস্পার হত
ফাইন ডাইনিঙে। দামী পারফিউমে। গেঞ্জি পাজামা পরে বাড়ি কাঁপিয়ে ঘোষণা করতে হত না “তোমার
বার্থডে স্পেশ্যাল চিকেনটা যা কষিয়েছি না! জিভে লেগে থাকবে টু থাউজ্যান্ড নাইনটিন
পর্যন্ত। আর ইয়ে, গিফটে কথোপকথনের সেটটা পছন্দ হয়েছে তো? পূর্ণেন্দুবাবু তোমারই
জন্য লিখে গেছিলেন বোধ হয়”। পূর্ণেন্দুবাবুর থেকে বাইশ ক্যারাটের রেফারেন্স দেওয়াটা
বেশি অভিপ্রেত। বিশ্বাস করুন। কিন্তু ওই। বুর্জোয়াগরীব মানুষ, সাহিত্যপ্রেমের বাব্লর্যাপে
নিজেকে মুড়ে না রেখে উপায় আছে?
No comments:
Post a Comment