সে কয়েক হাজার বছর আগের কথা। গ্রীষ্মের রাতে আচমকা লোডশেডিং হলে মাদুর, বালিশ আর মশারি নিয়ে ছাতে উঠে যাওয়ার রেওয়াজ ছিল।
ছাতের মশারি আলাদা, তার চারদিকে এক্সট্রা-লং নাইলনের দড়ি। সে দড়ি টাঙানোর স্ট্র্যাটেজিক পয়েন্টগুলো জানতো বাপ্টুদা।
এছাড়া বাপ্টুদা ভূতের গল্প জানত। আর চিনত কন্সটেলেশন। চেনাতেও পারত। বাপ্টুদার বকরবকর মিলিয়ে গেলে পড়ে থাকত ওর ঘুমের ফসফসে নিঃশ্বাস। আর আকাশটা অল্প অল্প করে নেমে আসত গায়ে। বাপ্টুদা টের পেত না, আমি পেতাম। মশারির গায়ে ছাতের হাওয়ার সুড়সুড়। নয়নতারার ঝোপের একটা বুনো গন্ধ আছে, তা'তে মনভার হয়ে আসত। আর সব ছাপিয়ে মশারির ভিতর দানাদানা ছাত ছড়িয়ে পড়ত।
ছাতে কোনওদিন ঘুম আসেনি, অথচ ভালোলাগাটুকু বইয়ের মত বুকে মেলে চিৎ হয়ে শুয়ে ভোর পর্যন্ত নটআউট রয়ে যেতাম।
ছাতের রাত আর ভোরের মাঝে যে আবছায়া, সে আবছায়ায় বড় মায়া। যদি মরে কোনওদিন ভূত হতে পারি, তাহলে সেই আবছায়ায় রোজ নেমে আসব; এ ছাদ থেকে ও ছাদ ফুসমন্তরের মত উড়ে বেড়াবো।
সে আবছায়ায় বড় মায়া, আমি নিশ্চিত সে মায়া তাঁদের টানবেই। ঈশ্বরের অবিশ্বাস ভূতেদের দূরে ঠেলে দেয় বটে কিন্তু স্নেহ অতি বিষম বস্তু। স্নেহ ভর করে আত্মারা জমাট হয়। শেষ রাত আর ভোরের মাঝের আবছায়ায় তাঁরা নেমে আসেন, আসতেই হয়। নেহাত ছাতমশারি স্পেশ্যালিস্ট বাপ্টু নেই তাই রাতের ছাতে আর টেনে নিয়ে যায় না কেউ।
গেলে শোনা যেত সেই রাতভোর হওয়া ছাদে ওঁদের ডাক ; "ঘুম আসছে না দাদুভাই?"।
ভূতের ভয় নেই। ঈশ্বর নেই।
ছাত আছে। ভোরের আগের আবছায়া আছে। আর আছে স্নেহ। অপত্য।
No comments:
Post a Comment