কলিং বেলের স্যুইচটার দিকে বড় মায়া নিয়ে তাকিয়েছিল অনির্বাণ। বছর সাতেক আগে স্যুইচটা ছিল ধবধবে সাদা, বুকে লাল রঙের ঘণ্টি আঁকা। নতুন ফ্ল্যাটের সমস্ত ইলেক্ট্রিকাল জিনিসপত্র চাঁদনির বাজার থেকে কিনেছিল অনির্বাণ, মিতার সঙ্গে। এর টিংটং কর্কশ নয় একদমই, বরং বেড়ালের মত আদুরে। এখন সে কলিং বেল হলেদেটে, তার বুকের ঘণ্টি আবছা। তবে টিংটংটা আগের মতই পশমি নরম।
সেই কলিং বেলটা। গত তিন বছর ধরে রাতের ঠিক এ সময়টা এসে বেল বাজিয়ে অপেক্ষা করে অনির্বাণ। এই, রাত তিনটে নাগাদ। মিনিট দুয়েকের মাথায় মিতা উঠে আসে। এলোমেলো আঁচল আর কপালে উড়ে আসা চুল। মিতা, জুঁই গন্ধের মিতা। কলেজ পালানো দুপুরের মিতা। রেজিস্ট্রি বিয়ের দুপুর আলো করা হাসির মিতা। ঘাসে গা এলিয়ে দেওয়া আলস্যের মিতা। সে রোজ এসে দরজা খোলে।
অনির্বাণ বুঝতে পারে যে মিতা তাঁর উপস্থিতি টের পায়, অনুভব করতে পারে। অথচ মিতার চোখে আজও ভয় দেখেনি অনির্বাণ, এই তিন বছরে একবারও না। রাত আদরতন্ত্রের দিকে এগিয়ে চলে, ক্রমশ মিতার চোখের ছলছলে অনির্বাণের অস্থিরতা কাটে। রাতের বাতাসে মিলিয়ে যেতে মিনিট তিনেক সময় নেয় অনির্বাণ, সেই মিলিয়ে যাওয়াও ছুঁতে পারে বোধ হয় মিতা।
শুধু আজকেই কেমন সমস্ত গুলিয়ে গেল। অনির্বাণ মিলিয়ে যেতে পারছিল না। মিনিট দশেক হয়ে গেল, সে নিজে যেন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছিল রাতের আবছায়ায়। কী হল? মিতা কি এখনও অনুভব করতে পারছে তাকে?
পরক্ষণেই বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো অনির্বাণের। টের পেল যে প্রথমবার মিতা সোজা তার চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে। ওর নীল সাদা ছাপার শাড়ি মেঘ মেঘ হয়ে অন্ধকারে মিশে, ওর কোমর ছাপানো চুল বাতাস নিয়ে ছেলেখেলা করছে।
এক পশলা বৃষ্টির মত রাতের বাতাসে শীত ছড়িয়ে ঝরে পড়ার আগে অনির্বাণ খেয়াল করল যে কলিং বেল বাজানোর পর মিতা যথারীতি বাইরে বেরিয়ে এলেও, সদর দরজাটা খোলা হয়নি আদৌ।
No comments:
Post a Comment