Sunday, April 23, 2017
মনোজবাবু ও দিদি
Thursday, April 20, 2017
সৈন্যদল
Monday, April 17, 2017
অমল তালুকদারের ভাবনা ২.০
১.
অমল তালুকদার ভাবার চেষ্টা করছিলেন যে তিনি আর বেঁচে নেই। দিব্যি লাগছিল তেমনটা ভেবে যেতে। খানিকটা সত্যিই লাগছিল ব্যাপারটা।
২.
ডাক্তার একরাশ বিরক্তি নিয়ে রিতাকে জানালেন "দেখুন ম্যাডাম, আপনি বেঁচে নেই। এই এক অদ্ভুত রোগ। দিব্যি মড়া আপনি, হঠাৎ কেন মনে হবে যে বেঁচে আছেন? এ'টা ভূতের দুনিয়া। জ্যান্ত হলে এ দুনিয়ায় আপনি থাকতে পারতেন? যত্তসব"!
৩.
শনিবার রাত্রে মাছ কিনে বাড়ি ফেরার পথে, গলির অন্ধকারে অমল তালুকদার দেখতে পেলেন দত্তদের ভাঙা বাড়ির কার্নিশে পা ঝুলিয়ে বসে একটি সাদা থান পরা ভূত। ভূত দেখে অমলবাবু বেশ নিশ্চিন্ত বোধ করলেন, যাক এর মাঝে নিশ্চই মরেফরে যাওয়া গেছে। বিশ্বাসে মিলায় বস্তু। তিনি আদতে ভূত বলেই এত সহজে ভূত দেখতে পারছেন।
৪.
মাছের ব্যাগ হাতে ভদ্রলোকের গভীর চাউনিতে এক লহমায় প্রেম চিনে নিয়েছিলেন রিতা। অন্ধকারে ভেসে যেতে ইচ্ছে করছিল তার। একজন মানুষ তার প্রেমে পড়েছে মানে সে নিশ্চই ভূত নয়। হারামজাদা থেরাপিস্টকে পেলে তার মাথার ঘিলু চেটে খাওয়া যেত। যদিও সে ব্যাটা স্কন্ধকাটা।
৫.
ঘেমেনেয়ে অস্থির বোধ করছিলেন অমলবাবু। রিতার সঙ্গে তিন মাস প্রেম করে তিনি মোক্ষম বুঝেছেন যে তিনি বেঁচে আছেন। আর রিতা আদতে ভূত। রিতাকে তিনি সত্যিই ভালোবাসেন, ওর জন্য সুইসাইড করে ভূত হতেও তিনি রাজি। কিন্তু রিতাকে যদি বলা হয় সে ঠিক জ্যান্ত নয়, তাহলে সে রাগেদুঃখে প্রেমট্রেম ভেঙে দেবে। এ'দিকে মানুষে ভূতে প্রেমটা চালানোও সুবিধেজনক মনে হচ্ছে না।
৬.
রিতার নজর এড়িয়ে, আন্তর্জাতিক নোবেল কমিটির তদারকিতে, অতিগোপনে; অমল তালুকদারকে ফিজিক্স আর কেমিস্ট্রির জোড়া নোবেলে ভূষিত করা হয়। তাঁর যুগান্তকারী আবিষ্কার; শ্রডিঙ্গারের প্রেম।
Sunday, April 16, 2017
অমল তালুকদারের ভাবনা
১
অমল তালুকদার ভাবছিলেন। তাঁর ভাবতে ভালো লাগে। ভাবার মত ভালো ব্যাপার আর হয় না। এই কিছুক্ষণ আগেই ভাবছিলেন গলে পড়া নরম মোমে আলপিন ঠুসে দেওয়ার কথা। বেশ লাগছিল। তারপর চট করে একটু ঘাসের ডগা নাকে দিয়ে হাঁচি টেনে বের করার কথা ভেবে মাথা নাড়লেন। এরপর অল্প কিছুক্ষণ পোলাও আর আজহারউদ্দীনের কব্জি মোচড় ভেবে মৌজ করলেন। এরপর একটু আয়েসে গা এলিয়ে দেবেন, এমন সময় একটা তাঁতের আঁচলের ঝাপটা মুখে লেগে ভাবনার সুতোটা গেল ছিঁড়ে।
আঁচলের রঙটা আজ আকাশী ছিল। তা'তে ছোট ছোট কালো ফুল।
ধুস।
২
- অমল তালুকদার।
- রিয়েলি রিতা? তুমি ওর একটা নামও দিয়েছ?
- বার বার কল্পনার মানুষ হিসেবে অ্যাড্রেস করাটা সবিশেষ সুবিধেজনক নয় ডাক্তার।
- উম। আই সী। ডাস হি হেল্প?
- অবশ্যই।
- সে কথা বলে? তোমার সঙ্গে?
- কথা? না। তার কথা বলার সময় কোথায়? সে অনবরত ভেবে চলেছে। আমি ওর ভাবনাগুলো দেখতে পাই। বড় ভালো লাগে।
- আমি ঠিক বুঝতে পারছি না রিতা।
- প্রথম প্রথম আমিও বুঝতে পারতাম না। তবে এখন বোঝার চেষ্টা ছেড়ে দিয়েছি। ওর ভাবনাগুলো আমায় ভালো রাখে। যন্ত্রণা কমায়।
- ভাবনাগুলো তোমার রিতা।
- না। বিশ্বাস করো ডাক্তার! ভাবনাগুলো আমার নয়। আমার ভাবনায় অতটা আলো নেই।
- আমার থেরাপির চেয়ে অমল তালুকদারের থেরাপিতেই তোমার বেশি কাজ হয় বলো।
- হেহ্। আমি একটু ভালো থাকতে চাই ডাক্তার। তুমি তো জানো, আমার সময় বড় কম। নিজের ভাবনাগুলো বড্ড জট পাকিয়ে গেছে। ওর ভাবনাগুলো আমার দরকারি, ওগুলো আমায় ভালো রাখে।
৩
"পাঁচ নম্বরে মনোময় মাইতি, মনোময় মাইতি! আছেন? মনোময় মাইতি আছেন"?
রিসেপশনিস্টের ডাকে ধরফড়িয়ে উঠতে হলো। চিন্তার সুতোটা ফের ছিঁড়ল। ধুস। তবে এ'বার আঁচলের ঝাপটায় নয়। কিন্তু মনোময়বাবুর বুক কাঁপিয়ে থেরাপিস্টের চেম্বারের দরজা খুলে যিনি বেরিয়ে এলেন তাঁর আকাশী আঁচলে কালো কল্কেফুল।
"চার নম্বর বেরোলেন। এরপর আপনি, আপনিই মনোময় মাইতি তো? ভিতরে যান"।
৪
- ভাবনাকে কেউ পিছু করছে?
- হ্যাঁ ডাক্তার। অনবরত। গত মাস দুই ধরে হচ্ছে। কত ভালো ভালো ব্যাপারস্যাপার ভেবে দিন কাটাই, কিন্তু তা'তে এসে গোল পাকাচ্ছেন ইনি।
- ইনি কে?
- জানি না তো। মহিলা। তাঁতের শাড়ি। ঠিক দেখতে পাইনা। তবে আঁচলের ঝাপটা টের পাই মাঝেমাঝেই। আর সেই আঁচলে ভাবনা গুলিয়ে যায়। ভাবনা গুলিয়ে যাওয়াটা বড্ড গোলমেলে ডাক্তারবাবু। এই ভাবনাগুলো আমায় ভালো রাখে। সুস্থ রাখে।
- কেমন ভাবনা?
- ছুঁচের মাথা দিয়ে অবলীলায় সুতোর ডগা এস্পারওস্পার করে চলেছি। সমুদ্রের ঢেউয়ে গোড়ালি ডুবিয়ে আখের সরবত আর মুড়ি চানাচুর খাওয়া হচ্ছে। জ্বরের ঘোরে কানে পান্নালাল আর বুকে ভাঁজ করা সঞ্জীবের বই। এইসব। এই ভাবনাগুলো ছিঁড়ে গেলে বড় মুশকিল ডাক্তারবাবু। আমার সময় বড্ড কম।
- সময় কম কেন?
- সেকেন্ড কেমো আগামী মাসে। অবিশ্যি সিচুয়েশন যা, বিশেষ...।
৫
- রিতা! তাই বলে মন্দিরে বিয়ে? তুমি না নাস্তিক?
- জানি ডাক্তার, ব্যাপারটা অদ্ভুত। আমার দ্যাবাটিও নাস্তিক। তবে বিয়ের অকেশনটা নেহাতই শখের। রেজিস্ট্রি বিয়ের জন্য ডেট পাওয়া অনেক হ্যাপা, আর আমাদের সময় বড় কম। যাই হোক, আগামী শনিবার, তোমায় আসতে হবেই। কালীঘাটে। তোমায় ঘটকবিদেয় না করলে আমাদের ওয়েডলকে গড়বড় রয়ে যাবে।
- ইয়েস ইয়েস। আই ডিসার্ভ দ্যাট।যাক, কঙ্গ্র্যাচুলেশনস। তবে, আগামী শনিবার? সে'দিন তোমার অ্যাডমিশন না?
- হ্যাঁ। থার্ড কেমো। তার আগেই বিয়েটা সেরে নিতে চাইছিলাম দু'জনেই। তাই মন্দিরমুখো হচ্ছি।
- মনোময়ের নম্বরটা দিও। ওকেও কঙ্গ্র্যাচুলেট করি। সে ব্যাটার থেকেও আলাদা করে ঘটকালির ফীজ চেয়ে নেব'খন।
- আমি তোমায় এসএমএস করে দিচ্ছি ওর নাম্বারটা। তবে ও'কে আর মনোময় বলে ডেকোনা। গত সপ্তাহেই সে বেচারি কোর্টে গিয়ে নিজের নাম অ্যাফিড্যাভিট করে পালটে এসেছে। এখন সে শ্রীযুক্ত অমল তালুকদার।
***
এক ফালি মেঘ,এক ফোঁটা জল,
রংধনুকের একটি কণায়,
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে..
আমার এমন কাঙালপনা ।
Saturday, April 15, 2017
দুপুর অ্যান্ড দ্য ট্যু অফ দেম
টুকরোস অফ ভালোবাসা উইল ফ্লোট লাইক টলটলে মেঘস অন আ দুপুর অফ গরম। অল্প অল্প শ্যাডো উইল রিলীভ আস অফ আওয়ার চাকুরীসিয়ান ঘামাচিজ্।
অন ওয়ান সাচ দুপুর,
সাদা কল্কে ফুল অন কালো ব্লাউজ উড এনগেজ ইন অপেক্ষা। বাসন্তী শেড অফ অপেক্ষা। কলুটোলা লাইক ফ্লেভার অফ পুরনো বাড়ি এম্ব্রয়ডারড অল ওভার দ্য শাড়ি অফ তাঁত।
দ্য হাফশার্টিস্ট হাওয়াই চটিয়ান উইল ফ্লাই অন দ্য যাদুকার্পেট অফ নখচিবুনি।
কলেজ স্ট্রিট অফ ছুটি উড রিমঝিমিফাই অন দ্য ছ্যাঁতছ্যাঁত অফ "আজ দেখা হবে" সোলস।
অসুবিধা ইজ, স্নেহ নোস নো ধর-তক্তা-মারো-পেরেক কাইন্ড অফ সলিউশন। দ্য হাফশয়ার্টিস্ট গেটস হোঁচটিফাইড অন দ্য গ্লিম্পস অফ বাসন্তী ফ্রম আ স্বপ্ন স্মিয়ার্ড ডিস্ট্যান্স; "আমি তো কেউ না, তাই না"?
দ্য বাসন্তী ফিজেটস অন দ্য অসোয়াস্তিক্যাল পয়েন্ট অফ ঠোঁটকামড়; "আসবে না, তাই না"?
দ্য মেঘস উড ফ্লোট অ্যাওয়ে টুয়ার্ডস দ্য পোস্টবাক্স দ্যাট উইল নেভার ক্যারি এনি চিঠি, এভার।
Tuesday, April 11, 2017
দাঙ্গা হাঙ্গামা
- গোলপার্ক। একটা।
- আসুন কাকু। টিকিট নিন।
- আজ বাসটা এত ফাঁকা? রাস্তাঘাটেও লোক দেখছি না।
- গণ্ডগোল, তবে এ'দিকে নয়। সেন্ট্রাল এভিনিউর দিকে। র্যাফট্যাফ নেমেছে। তবে গোলমালটা ছড়াচ্ছে। এ বাসও গল্ফগ্রীন যাচ্ছে না। ঢাকুরিয়াতেই শেষ।
- এতটা সিরিয়াস? অথচ সকালেও তো কোনও আভাস ছিল না..।
- এ'সব কী আর পাঁজি দেখে হয় কাকু। হ্যারিসন রোডের দিকে হেবি মারপিট হয়েছে। দু'তিনটে লাশও পড়েছে শুনলাম। ভবানীপুরেও কিছু দোকানপাট জ্বালিয়ে দিয়েছে। অনেক জায়গা থেকে খবর আসছে। রেডিওয় শুনলাম কারফু লাগতে পারে।
- কারফিউ? এদ্দূর?
- এ জিনিস সহজে থামবে না।
- মেন ইস্যুটা কী? জানো কিছু? তোলাবাজদের খেইমেই না কী...ওই আবার মন্দির মসজিদ নিয়ে পড়লো।
- মন্দির মসজিদ নিয়ে ঝ্যামেলা আপনাদের ছেলেবেলায় হত কাকু। এখন আর ও'সব ইস্যু লাগে না। মাইরি আপনি জানেন না কেসটা?
- কী আর করব বাবা, গোটাদিন অফিসের রোবটগুলোকে ম্যানেজ করতে গিয়ে এমন বেহাল অবস্থা হয় যে খবরের দিকে চোখ রাখার সুযোগ পর্যন্ত হয় না। কী হয়েছে বলো দেখি?
- নতুন কিছু নয়। যা নিয়ে ইলেকশন তোলপাড় হল, সেই ব্যাপারই। এগরোলে সস্ পড়বে কি পড়বে না। এই ঝগড়ায় দেশটা রগড়ে গেল।
- সেম ওল্ড ইস্যু? এ'টা নিয়ে শেষে দাঙ্গা লাগলো?
- বিরোধীরা হাতপা ছুড়েই যাচ্ছে এগরোলে সস দেওয়া মানবে না বলে। আর সরকারের এক গোঁ, সস্ ওহি ডালেঙ্গে। মাঝখান থেকে এতগুলো লাশ পড়ে গেল। দোকান জ্বললো। রোলে সস্ আছে না নেই, তা'তে কী এসে গেলো বলুন তো কাকু?
- সবই পলিটিকাল গেম ভাই। আমরা তো ক্যারমের গুটি, স্ট্রাইকারওলারা কাল রোলে কয়লাকুচি দিলে তাও চেটে খেতে হবে।
টলটলে
টলটলে এক জোড়া চোখ।
আর জুঁই। জুঁইয়ের সুবাস বাতাসে। কলকাতার বাতাসে।
বড়রাস্তার হইহইরইরই এই গলির মধ্যে নরম কিচিরমিচির হয়ে ছড়িয়ে পড়ে।
তেমনি একটা দুপুর। আর অপ্রস্তুত হয়ে পড়তে হয় এমন টলটলে এক জোড়া চোখ। মাথার ঝিমঝিমটা কীসের সে'টা কিছুতেই ঠাহর হয় না দীপক চ্যাটার্জীর।
"চোখ বন্ধ"।
চোখ বন্ধ অন্ধকারে একটা মুক্তোদানা ভেসে উঠলো, দানাটা দলা পাকাতে পাকাতে বড় হতে লাগলো। একসময় সেই ড্যালাটা একটা মনমাতানো বিস্ফোরনে ঝিরঝিরি হয়ে পড়ল ছড়িয়ে। সেই স্ফটিক গুঁড়ো দিয়ে কলকাতা আঁকলে যেন কেউ। দীপক চোখ বন্ধ করেও দিব্যি অনুভব করল চোখজোড়ার টলটল।
"এ'বার হাত পাত"।
জুঁই। নরম। চলে যাওয়ার মত নরম। আর চিঠি না লেখার মত নরম। কলকাতাকে ইরেজারে মুছে দেওয়ার মত নরম।
জুঁই।
"এই ভালো বাবু, জুঁইয়ে বানান ভুল থাকে না"।
তারপর সে কী হাসি। চোখ বন্ধের অন্ধকারে ততক্ষণে দীপক টের পেতে শুরু করেছে যে কলকাতা মুছে যাচ্ছে। আবছা হতে হতে শেষে পড়ে রইল একটা মুক্তোদানা।
সে হাসি টপকে চোখের টলটল দীপকের বুক বেয়ে নামতে শুরু করেছিল।
"কী রে, এবার চোখ খোল! দ্যাখ"।
দীপক মনে মনে ভাবছিল
"পর রুচি চোখ বন্ধ করনা, আপ রুচি চোখ খোলার সাহস করনা"।
বিপিনবাবুর মামলেট
- সাড়া দাও।
- ....।
- সাড়া দাও, সাড়া দাও।
- ...।
- সাড়া দাও...সাড়া দাও...সাড়া দাও।
- ...।
- উদাসীন থেকো না, সাড়া দাও।
- ...।
- ডিমা ফাটা লিয়া। পেঁয়াজ কুচো লিয়া। চাটু মে তেল ডাল দিয়া। ফ্রীজে লঙ্কার পাত্রটা খুঁজে পাচ্ছি না। এস ও এস। উদাসীন থেকো না ভাইটি, সাড়া দাও। কিধর হ্যায় মির্চি? কুচিকুচি করনেকা।
এই এক রোগ বিপিনবাবুর। মাঝরাতে ওমলেটের নেশা।আর ভদ্রলোক রান্নাঘরে ঢোকা মানেই রাত মাত করা শোরগোল। অবিশ্যি সুতপার সাড়া ইদানীং পাওয়াই যায় না।
আসলে বিপিনবাবুর এই বিটকেল স্বভাব কোনওদিনই সুতপার বরদাস্ত হয় না। ফটোফ্রেমের এ'পাশে এসেও রাতের বেলা শান্তি নেই সুতপার। বিপিনবাবুর মাঝরাতের মামলেটকে ভূতজ্ঞানে ভয় পেয়ে কাঁপতে থাকেন সুতপা। এ গা কাঁপানো ভয় তাঁর ফ্রেমে সেঁধিয়েও কাটেনি।
ও'দিকে তৃপ্তি সহকারে মামলেট চেবানোর সময় রোজই বিপিনবাবুর মনে হয়; সুতপার ছবির ফ্রেমটা কি আজ একটু বেশি বেঁকে রয়েছে?
Saturday, April 8, 2017
অমুক তমুক আর ক টু ঙ
আধুনিক অনলাইন তর্কক্ষেত্র বিপদসংকুল। চারদিকে ছড়িয়ে ল্যান্ডমাইন। এ'দিক ও'দিক পড়ে ক্ষতবিক্ষত লাশ, ভাঙাচোরা বাড়িঘরদোর।
ক লিখলেন অমুক চিন্তা মন্দ। তমুক ভালো।
খ তর্ক জুড়লেন। অমুককে খণ্ডন করে নয়। তমুকের হয়ে যুক্তি সাজিয়ে নয়। ক'কে হারামজাদা বলে।
গ ঝাঁপিয়ে পড়লেন ক'য়ের হয়ে লড়তে। ক'কে অকারণে "হারামজাদা" খিস্তি শুনতে হয়েছে। ব্যাপারটা মোটেও সমীচীন নয়। গ কী করলেন? খ' হারামজাদা বলে গায়ের ঝাল মেটালেন? না। গ বললেন খ'য়ের বাপ হারামজাদা। স্কেল-আপ না করলে টক্কর দেওয়া যায় না।
এ'বারে ক ফিরে এলেন তর্কে। খ'কে কোণঠাসা করা গেছে গ'য়ের আগুনে। তিনি এসে ঘোষণা করলেন যে অমুক চিন্তার সকল মানুষের বাবা হারামজাদা।
স্যাট করে মাঠে ঘ ঢুকে পড়ে জানালেন যে গোটা তর্কটাই ইনসেনসিটিভ। অমুকও শয়তানি। তমুকও ঢ্যামনামি।
ক, খ, গ মিলে ঘ'কে খিস্তোলেন। ঘ'য়ের হয়ে ঙ এসে ক'কে মেনিমুখো বলে খোঁটা দিলেন। গ সুট করে খবর বের করলেন যে ঙ ১৯৯৬ সালের অমাবস্যায় পাঁচটা ঢেঁকুর তুলেছিলেন ঠাকুরঘরের কুড়ি ফুটের মধ্যে, তাঁর প্রমাণ ফলাও করে সোশ্যাল মিডিয়াময় ছড়িয়ে পড়ল।
এ'দিকে জানা গেল খ সিগারেটে ফিল্টারে পোস্ত মাখিয়ে টানেন। ক সেই প্রসঙ্গ তুলে পোস্তর ইজ্জত বাঁচাতে খ'কে অ্যাসহোল বলে পাইলস প্রসঙ্গ টানলেন। ঘ খ'কে ক'য়ের চেয়ে বেশি ঘেন্না করেন। কাজেই ক খ'য়ের ব্যক্তিগত স্পেস খর্ব করছে বলে রেগেমেগে হাজার শব্দের পোস্ট দিলেন।
এমন ঘুরলি খেতে খেতে ক, খ, গ, ঘ, ঙ'র মধ্যে থেকে অগুনতি হারামজাদা, ক্যারেক্টারলেস, উন্মাদ, চাড্ডি, দেশদ্রোহী বেরিয়ে এলো।
অথচ।
অথচ।
ক নয়নতারার টবের দিকে তাকিয়ে গোটা বিকেল কাটিয়ে দিতে পারেন।
খ মাদুর আর একবাটি মুড়ি বাতাসা পেলে কোটি টাকার লোভ ছাড়তে পারেন।
গ শিব্রামভক্ত।
মশা মারলে ঘ'য়ের মনখারাপ হয়।
ঙ শ্যামল মিত্রে নিজে সঁপে রেখেছেন।
ক টু ঙ; আদতে অমুকে বা তমুকে কারুরই তেমন কিছু এসে যায় না। শুধু সেডিমেন্ট হিসেবে একে অপরের প্রতি ঘেন্নার বালি আর গালের নুড়িপাথর।
খুড়োর চা
১
- খুড়ো, চা ফুটতে ফুটতে একটা গান ধরো দেখি।
- রামপ্রসাদি ধরি?
- ধরো। গানের মাঝে ফুট কাটব না, আগে থেকে বলে রাখি প্রজাপতি বিস্কুট দিয়ো চায়ের সঙ্গে। একটা।
২
খুড়োর দোকান থেকে বেরিয়ে একটা বিড়ি ধরালেন দিবাকর। খুড়োর গানের সুরের একটা মস্ত গুণ হল যে সে সুর মাথায় ঘুরপাক খেয়ে চলে ক্রমাগত।
৩
দিবাকর বেরিয়ে যেতেই দোকানের ঝাঁপ নামালেন খুড়ো। এই রাতে আর বড় কেউ আসবে না। ও'বেলার বাটিচচ্চড়ি পড়ে আছে। এ'বার হাফ কৌটো চাল চাপিয়ে দিলেই ঝামেলা মিটে যায়। বিড়িটা ছুঁড়ে ফেলে চালের ড্রামের দিকে এগিয়ে গেলেন।
৪
বাটিচচ্চড়িটা বেশ ঝাল হয়েছিল। চার গেলাস জল খেয়ে দিবাকরের পেট আইঢাই হল কিন্তুর মুখের জ্বালা গেল না।
৫
- এক কাপ চা দিও খুড়ো।
- এই দিই।
- তোমার দোকান যে আজকাল ফাঁকাই থাকে খুড়ো।
- তা মন্দা যাচ্ছে বইকি। গান শুনতেও আর লোকে আসে না খুব একটা।
- একটা কথা বলি খুড়ো? রাগ করবে না?
- না না, বলো না।
- তোমার নাকি মাথার ব্যমো হয়েছে? নিজের মনেই একটানা বিড়বিড় করে চলো? দিবাকর খুড়ো পাগল এ হাওয়া বাজারে রটেছে। একটু সামলে চলো দিবাকর খুড়ো। নইলে আমাদের মত জনা দুয়েক কাস্টোমারও আর আসতে সাহস পাবে না।
- কী যে বলো দিবাকর। এই নাও চা। এ'বার একটা গান শোনাই?
- রামপ্রসাদি হোক বরং আজ। কেমন খুড়ো?
Friday, April 7, 2017
মায়াবন বিহারিণী
চার বছরের বেগুসরাই মানিব্যাগে রাখা লোকনাথবাবার ছবির মত রয়ে গেছে। বিহারের কারুর সঙ্গে দেখা হলেই জিজ্ঞেস করি "কোন জেলা?"।
সে'খানে কাজের সূত্রে ঘোরাঘুরি কম হত না।
সহরসা, লক্ষ্মীসরাই, পটনা, জমুই, সুপল, পূর্ণিয়া, কটিহার, কিষণগঞ্জ, বেতিয়া, মুজফফরপুর, ভাগলপুর; এই নামগুলো বাতাসে ওড়ে। কত পুরনো মুখ। আড্ডা। জ্বর কপালে হাত।
প্রত্যেকের স্মৃতির ঘরে একটা অরাজনৈতিক আলমারি থাকে। সে'খানে পুরনো রুমাল থেকে খামের গায়ে চায়ের কাপের ছোপ; সমস্ত অপ্রয়োজনীয় স্নেহস্মৃতি গুছিয়ে রাখা থাকে। সে আলমারির ন্যাপথালিনে থিনঅ্যারারুটের গন্ধ।
আমার স্মৃতিঘরের সে আলমারির লকারে বেগুসরাইয়ের সরগরম সযত্নে রাখা।
কত মুখ ব্রাউনিয়ান মেজাজে এখনও দিব্যি মনে ঘোরাঘুরি করে।
অফিস গেস্টহাউসের রাজীবজীর নিজের হাতে কষানো দেশী মুর্গীর ঝোলের স্বাদ ভোলবার নয়। রাজীবজীর গল্পের আন্তরিকতা অবশ্য আরও বেশি সুস্বাদু।
ধর্মেন্দ্রর গাড়ি চালানো আর গার্জেনগিরি। নির্মলির কাছে মাঝরাতে একবার প্রবল বৃষ্টিতে গাড়ি আটকে। চারদিকে আধজঙ্গল, কাছেই কোশী নদী। চোরডাকাতের ভয় আর জন্তুজানোয়ার সাপখোপের আশঙ্কা মনের মধ্যে দিব্যি দাবা খেলছিল। সে খেলা ভেস্তে দিয়েছিল ধর্মেন্দ্র "দো ভাই সাথ মে হ্যায়, তো আপ কাহে লিয়ে চিন্তা করতে হ্যায়?"।
বেগুসরাইয়ের কপাসিয়া চৌকের কাছে এক ভদ্রলোক ঠেলা নিয়ে বসতেন ছোলে ভটুরে বিক্রি করতে। দশটাকায় তিন পিস্। সঙ্গে ফাউ তেঁতুলজল, পেঁয়াজকুচি আর নুনমাখানো ভাজা লঙ্কা। গরমাগরম। পাহাড়ের মত নিষ্ঠা নিয়ে ব্যবসা করতেন ভদ্রলোক্ল। ওঁর "অউর এক'গো লিজিয়ে গা?"র মধ্যে কী অপরিসীম মাথায় হাত বুলোনো স্নেহ ছিল।
বিহারকে ঘিরে এমন কত হাজার হাজার স্মৃতিটুকরো আর মানুষজন। মনকেমন বড় ওজনদার স্মৃতি-পিউরিফাইয়ার।
Thursday, April 6, 2017
চাটুতে খুন্তি
- না। হয়নি।
- হয়নি মানে?
- পরোটাটা ঠিক ভাজা হয়নি। আরও হাফ মিনিটে চাটুতে খুন্তি চেপে ভাজতে হত।
- কেলিয়ে লাট করে দেব। আগের এগরোলটা নাকি বেশি মুচমুচে হয়ে গেছিল। দিলাম আরেক পিস কম ভাজা রোল আনিয়ে। এখন বলছিস ভাজা হয়নি? শুয়ার!
- শুয়োরে খেলেও তাই বলবে। কামড় দিয়ে দেখুন না স্যার।
- চোপ! হারামজাদা! শোন। তোকে কিডন্যাপ করে রাখা হয়েছে। হনিমুনে আসিসনি। বাসি রুটি দিলে তাই খাবি।
- তাই দিন। আপত্তি করব না। সঙ্গে অল্প আচার। প্রেফারেবলি আমের। ঝাল ঝাল। অল্প নুন। আর এক ফালি পেঁয়াজ। অমন হাফ ডজন বাসি রুটি জাস্ট উড়িয়ে দেব। প্রমিস। কিন্তু রোল এনেছেন যখন সঠিক ভাবে ভাজিয়ে আনুন। আরে মশাই আপনি কিডন্যাপার, ভ্যান্ড্যাল তো নন। মহাভারতে ভীষ্ম টু কৃষ্ণ সবাই কিডন্যাপট্যাপ করেছে। রিল্যাক্স। যান, ছেলে পাঠান! ভাজিয়ে আনবে নতুন করে।
- ধুত্তোর। থাক তুই না খেয়ে, ব্যাটা ঢ্যামনা।
- ক্ষতি কি? ডিফেক্টিভ এগরোলের চেয়ে খালি পেটে গান গাওয়া অনেক ভালো। জানেন, আমার মা বড় ভালো গাইত। যত দুঃখ, তত সুর। আমি এই রোলের মত নেতানো হতে পারি, তবে সুরের কাঙাল। খালি পেটে দিব্যি মায়ের কথা ভাবব আর গাইব; "কী মায়া দেয় বুলায়ে, দিল সব কাজ ভুলায়ে, বেলা যায় গানের সুরে জাল বুনিয়ে"। খালি পেটে মনপ্রাণ ঢেলে গাইতে পারলে মায়ের গন্ধ আসে। আর নামতে পারে বৃষ্টি। তাই হোক স্যার। রোলফোল ক্যান্সেল। গান গাইব। কেমন?
- এই শালা দিলু! একটা রোল গুছিয়ে আনতে পারছিস না? পাঁচ মিনিটের মধ্যে রোল চাই। ডাবল ডিম, পরোটা খুব কড়া নয়, আবার ল্যাতপ্যাত যেন না করে। শসা আর সস্ বাদ। ক্যুইক। ক্যুইক। নয়তো রাস্কেলটা যে কোন সময়ে গান গাইতে শুরু করবে।
Saturday, April 1, 2017
স্নেহ ও ঘুম
পুরুষ নারীর দৈহিক মিলন অতি অবৈজ্ঞানিক।
প্রবল অবিজ্ঞানে সভ্যতা, সাহিত্য ও সঙ্গীত এগিয়ে চলেছে এত বছর ধরে।
মিলনোত্তর নারী হৃদয় ভেবে চলে অবিচ্ছেদ্য বন্ধনের কথা,
সোনা গলানো উষ্ণতার কথা,
পূর্ণেন্দু পত্রীর কথা,
তুমি যে আমার ওগো তুমি যে আমারে সুচিত্রার কোলে উত্তমের মাথার কথা,
সবুজ ঘাসে ছড়ানো শিউলির কথা,
মোমের মত গলে পড়া টুপটাপ স্নেহর কথা,
অপার্থিব সমস্ত অনুভূতির কথা।
ভালোবাসার কথা।
মিলনোত্তর পুরুষ মগজ শুধু বোঝে ফ্যানের রেগুলেটরটা এক ঘাট বাড়িয়ে দিলে আর মুখের ওপর থেকে চুলফুল সরিয়ে নিলে ঘুমটা ভালো হত।