চার বছরের বেগুসরাই মানিব্যাগে রাখা লোকনাথবাবার ছবির মত রয়ে গেছে। বিহারের কারুর সঙ্গে দেখা হলেই জিজ্ঞেস করি "কোন জেলা?"।
সে'খানে কাজের সূত্রে ঘোরাঘুরি কম হত না।
সহরসা, লক্ষ্মীসরাই, পটনা, জমুই, সুপল, পূর্ণিয়া, কটিহার, কিষণগঞ্জ, বেতিয়া, মুজফফরপুর, ভাগলপুর; এই নামগুলো বাতাসে ওড়ে। কত পুরনো মুখ। আড্ডা। জ্বর কপালে হাত।
প্রত্যেকের স্মৃতির ঘরে একটা অরাজনৈতিক আলমারি থাকে। সে'খানে পুরনো রুমাল থেকে খামের গায়ে চায়ের কাপের ছোপ; সমস্ত অপ্রয়োজনীয় স্নেহস্মৃতি গুছিয়ে রাখা থাকে। সে আলমারির ন্যাপথালিনে থিনঅ্যারারুটের গন্ধ।
আমার স্মৃতিঘরের সে আলমারির লকারে বেগুসরাইয়ের সরগরম সযত্নে রাখা।
কত মুখ ব্রাউনিয়ান মেজাজে এখনও দিব্যি মনে ঘোরাঘুরি করে।
অফিস গেস্টহাউসের রাজীবজীর নিজের হাতে কষানো দেশী মুর্গীর ঝোলের স্বাদ ভোলবার নয়। রাজীবজীর গল্পের আন্তরিকতা অবশ্য আরও বেশি সুস্বাদু।
ধর্মেন্দ্রর গাড়ি চালানো আর গার্জেনগিরি। নির্মলির কাছে মাঝরাতে একবার প্রবল বৃষ্টিতে গাড়ি আটকে। চারদিকে আধজঙ্গল, কাছেই কোশী নদী। চোরডাকাতের ভয় আর জন্তুজানোয়ার সাপখোপের আশঙ্কা মনের মধ্যে দিব্যি দাবা খেলছিল। সে খেলা ভেস্তে দিয়েছিল ধর্মেন্দ্র "দো ভাই সাথ মে হ্যায়, তো আপ কাহে লিয়ে চিন্তা করতে হ্যায়?"।
বেগুসরাইয়ের কপাসিয়া চৌকের কাছে এক ভদ্রলোক ঠেলা নিয়ে বসতেন ছোলে ভটুরে বিক্রি করতে। দশটাকায় তিন পিস্। সঙ্গে ফাউ তেঁতুলজল, পেঁয়াজকুচি আর নুনমাখানো ভাজা লঙ্কা। গরমাগরম। পাহাড়ের মত নিষ্ঠা নিয়ে ব্যবসা করতেন ভদ্রলোক্ল। ওঁর "অউর এক'গো লিজিয়ে গা?"র মধ্যে কী অপরিসীম মাথায় হাত বুলোনো স্নেহ ছিল।
বিহারকে ঘিরে এমন কত হাজার হাজার স্মৃতিটুকরো আর মানুষজন। মনকেমন বড় ওজনদার স্মৃতি-পিউরিফাইয়ার।
No comments:
Post a Comment