১
- আরে এই যে, দত্তবাবু যে! আসুন আসুন আসুন। খুব ভালো সময়ে এসেছেন। আজকেই আমরা লঞ্চ করলাম আম রাবড়ি।
- রাবড়ি ফর আমজনতা না ম্যাঙ্গো ফ্লেভার?
- আজ্ঞে, ফ্লেভার। ফ্লেভার।
- অ।
- দেই? কিলো তিনেক?
- তিন কিলো?
- আড়াই? নাকি রসোগোল্লাতেই স্টিক করবেন? একশো পিস!
- আমি পাইকারি মেঠাই কিনব কেন?
- আজকের দিনটা আমি খেয়াল রেখেছি। মিষ্টির বাড়তি স্টক মজুত রাখতে সবকটা কর্মচারীকে কাল গোটা রাতের ওভারটাইম দিয়েছি।
- দেখুন, আমি এসেছি চারটে গুজিয়ে নিতে। প্রত্যেক শনিবার যেমন নিই, রিক্সাস্ট্যান্ডের শনিমন্দিরের জন্য। প্লাস দশটাকা দক্ষিণা। কিন্তু ব্যপারটা কী বলুন তো?
- আজ মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরিয়েছে, সকাল থেকে টার্নওভার ডাবল হয়ে গেছে। আপনার মেজছেলে মন্টুও এ'বারে এগজ্যাম দিয়েছে। তাই না?
- মাইরি?
- মানে?
- মাইরি? আজ মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরিয়েছে?
- ইয়ার্কি করছেন স্যার?
- শেষ ইয়ার্কি করেছিলাম নাইন্টি ফাইভে। অফিসের বড়হুজুর মাইনে কাটার হুমকি দিয়েছিলেন বুঝতে না পেরে। সে যাক। আজ মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরিয়েছে মানে নিশ্চিন্দি। তবে ইয়ে, মন্টেটা এ'বার মাধ্যমিক দিয়ে দিল? সেই কবে পড়েছিলাম, টাইম অ্যান্ড টাইড ওয়েটস ফর নান...।
- এই যে আপনার গুজিয়া। আসুন।
২
- হ্যাঁ গো! মন্টের আজ রেজাল্ট বেরিয়েছে?
- বেরোলে বেরিয়েছে, তা'তে তোমার কী?
- এহ হে হে, দেখেছ কাণ্ড! এক্কেবারে গুলিয়ে গেছিল। ডাকো রাস্কেলটাকে। চাবকে দিই।
- ও'মা! চাবকাতে যাবে কেন?
- ওহ্! ভালো নম্বর পেয়েছে? ফার্স্ট ডিভিশন? স্টার? প্রচুর লেটার? বেশ, ঘোষের দোকানে আজই লঞ্চ হয়েছে ফুলকপির রাবড়ি। এইমাত্র জেনে আসলাম। যাই গিয়ে এক কুইন্টাল নিয়ে আসি।
- আমার হাড় না জ্বালালে শান্তি পাও না, তাই না?
৩
- বাবা! তোমায় প্রণাম করা হয়নি।
- আয় আয়। আশীর্বাদ করি তুইও যেন তোর দাদার মত ডাক্তারিতে চান্স পাস।
- বাবা, ইয়ে। মানে। দিদির মত ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। তাই তো?
- ওই হল। আরে আমি তো ভুলেই মেরে দিয়েছিলাম। সেই ভোর ভোর ডিউটিতে বেরিয়ে যাওয়া, মাথায় খালি ছ'টা ছাপ্পান্নর লোকালের হুইসল ঘুরপাক খায়। আজ নেহাত ফেরার পথে গুজিয়া নেওয়ার সময়...।
- বাবা! ইঞ্জিনিয়ারিং আমার দ্বারা হবে না বোধ হয়। ইলেভেনে সায়েন্স আমি নিচ্ছি না। আর্টস নেব।
- তবে রে? ফ্যামিলির নাম ডুবোতে চাস? ফক্করবাজি? আর্টস নিবি? আজ তোরই একদিন কি আমারই একদিন।
- অঙ্ক ফিজিক্স আমি ঠিক ম্যানেজ করতে পারব না।
- অঙ্কে কি এমন হাতি ঘোড়া আছে বল? এ প্লাস বি হোল স্কোয়্যার ইজ ইকুয়াল টু এ স্কোয়্যার প্লাস ট্যু এ বি প্লাস বি স্কোয়্যার। জলবৎ। আর ফিজিক্স? ম্যাগনেটিক ফিল্ড। একবার ঢুকে পড়তে পারলেই...।
- বাবা, তোমারও ইয়ে...আর্টস ছিল।
- আমার?
- আর্টস। ব্যাচেলর অফ আর্টস!
- মাইরি?
- আলমারির ফোলিও ব্যাগে তোমার মার্কশিট রাখা আছে। আমি দেখেছি।
- বলিস কী! তাহলে তো সন্তুটাই দেখছি ফ্যামিলির ব্ল্যাকশিপ। কোন সাহসে ও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে গেছে?
- সন্তু ক্লাস এইটে। দিদি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে।
- মিতুলটা এমন বিট্রে করল রে! ডাক ওকে।
- ও খড়গপুরে থাকে। হস্টেলে।
- তাই তো রে। মাকে কদ্দিন দেখিনা। কাল তো রোববার, যাবি? দিদির সঙ্গে দেখা করতে?
- দিদি কাল আসছে। ফোন করেছিল।
- মার দিয়া কেল্লা। কাল তিন কিলো পেঁপের রাবড়ি আনব।
- পেঁপের? রাবড়ি? হয় নাকি? ধুস!
- বিপুলা এ ব্যারাকপুরের কতটুকু জানিস তুই? ঘোষবাবুর মেঠাইরের দোকানটা একটা অত্যাধুনিক ল্যাবোরেটরি। অসাধ্য সাধন হতে পারে সে'খানে।
- ও।
- মন্টে।
- কিছু বলবে? বাবা?
- সরি।
- এ মা! কেন?
- এই। ভুলে যাই। তুই জানিস তো। আমি বরাবরই...।
- জানি! আচ্ছা বাবা, তুমি শনিবারের গুজিয়া কেনার কথা কোনওদিন ভোলো না, তাই না?
- কারণ ভুতোকে মেঠাই খাওয়ানোর আর কেউ নেই।
- ভুতো?
- বিশুর ছেলে। যে রিক্সা চালায়, সেই বিশু। এত্তটুকুন বয়স ভুতোর। মা নেই। বাপও তো সেই উড়ো খই গোবিন্দায় নমঃ। ছেলেটা শনি মন্দিরের চাতালেই পড়ে থাকে গোটাদিন। সে ব্যাটা ওই সামান্য গুজিয়ার ছোট বাক্স দেখলে যা লাফালাফি শুরু করে। আর দিই দশটাকা, ঘুগনি পাউরুটি কেনে ব্যাটা। কোনওদিন আবার পুরিসবজি। বা দিলুর দোকান থেকে মামলেট।
- হেহ হে। তুমি লাজওয়াব বাবা।
- বলছিস?
- একশো বার।
- যাক, ডাক্তারিতে চান্স পেয়ে নিশ্চিন্ত করলি। আজকাল যা মেডিক্যাল খরচ বেড়েছে রে বাপ।
- বাবা, আমি মাধ্যমিক পাশ করেছি।
- ওহ হো! সরি। মাধ্যমিক। রাইট। যাক, সোজা সায়েন্স নিয়ে বসে যাবি।
- আর্টস!
- আমার ছেলে হয়ে তুই আর্টা নিবি রে ব্যাটা?
- বেশ। আজ শুতে যাই?
- অফ কোর্স। গুড নাইট।
- আমার একটা ক্রিকেট ব্যাট ভাবছি তোমার ভুতোকে দিয়ে দেব।
- তুই লাজওয়াব মন্টে। লাজওয়াব।