- নমস্কার।
- উঁ?..হুঁ। নমস্কার।
- আপনার সামনের বার্থটায় বসলে অসুবিধে হবে?
- কেন হবে? পুরো কামরাই তো ফাঁকা। যে'খানে ইচ্ছে বসবেন। আপনার মর্জি।
- স্ট্রেঞ্জ ব্যাপার। গোটা কামরায় মাত্র আমরা দু'জন। তাই ভাবলাম...।
- আপনি কদ্দূর?
- ধানবাদ। আপনি?
- লাইকওয়াইজ।
- যা হোক! একজন সঙ্গী জুটলো তাহলে। উম, একটা প্রশ্ন ছিল।
- আপনার কি যাকে তাকে যা খুশি প্রশ্ন করার বদঅভ্যেস আছে?
- আসলে একটা কিউরিওসিটি।
- শুনি।
- আমি কামরায় ঢোকার সময় দেখলাম আপনি ডিনার করছেন।
- রাত এগারোটা, ডিনার সেরে নেওয়াটা আনন্যাচুরাল কিছু কি? এ'বার ট্রেন ছাড়লেই দু'চোখের পাতা এক। তখন আবার কোনও প্রশ্ন করে বসবেন না। ঘুমে ব্যাঘাত এ বয়সে সহ্য হয় না।
- নাহ্। মানে...।
- মানে?
- মানে...আপনি ডিনারে ছোলাসেদ্ধ খেলেন। সে'টা কি এক্সেপশন?
- নর্ম। আমি ভাত আর ভাজাভুজি ছুঁয়ে দেখি না। স্ট্রিক্ট ডায়েট।
- ডায়েট!
- ডায়েট। সামান্য বাড়তি মেদ এ শরীরে দেখবেন না। আনলাইক...যাক গে। আপনাকে লজ্জা দিতে চাই না।
- লাশকে লজ্জা দেওয়া যায় না।
- এক্সকিউজ মি?
- মড়া কি লজ্জার ভয় পায় মিস্টার দাসগুপ্ত?
- মড়া? ইয়ার্কি হচ্ছে? আর আপনি আমার নাম জানলে কী করে? ওহ্, আই সী! চার্ট দেখে।
- চার্ট তৈরির অনেক আগে থেকেই আপনাকে আমি চিনি মিস্টার দাসগুপ্ত। গায়ে পড়ে আলাপ করতে আসাও সেই জন্যেই। আমি আপনাকে সাবধান করে দিতে এসেছি।
- স্কাউন্ড্রেল। ওপর চালাকি? ওল্ড চ্যাপ ভেবে ভয় দেখিয়ে লুট করতে আসা? ভদ্রলোকের চেহারা অথচ...।
- ভূতকে লোক বলছেন কেন মিস্টার দাসগুপ্ত?
- গেট আউট।
- মড়া যেহেতু, চলন্ত ট্রেন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়লেও মরার চান্স নেই। তবে শুধু এইটুকু জানুন, এ ডায়েট ব্যাপারটা সুবিধের নয়।
- হোয়াট ডু ইউ মীন?
- আই মীন, ডায়েট ক্যান কিল। আমি নিজে ডায়েটে খুন হয়েছি।
- বাজে মিথ্যে বলতে হয় বলুন কিন্তু প্লীজ গুছিয়ে বলুন।
- এই ডায়েটই আমায় খুন করেছে মিস্টার দাসগুপ্ত।
- বেশ, ডায়েট করতে গিয়ে আপনি মারা পড়েছেন...সম্ভবত বাড়াবাড়ি...।
- ও কী! আমি ডায়েট করতে যাব কেন?
- ননসেন্স। এই মাত্র তো বললেন...।
- ডায়েটে মারা গেছি? ওই যে! আপনি ডায়েটে গিয়ে আমায় মারলেন।
- আপনি মারা গেছেন কারণ আমি ডায়েট করছি?
- প্রিসাইসলি।
- আপনি উন্মাদ।
- ভূত। উন্মাদ নই। কী লাভ আমাদের মত সরলকে খুন করে দাসগুপ্তবাবু?
- কে আপনি?
- আমার গা থেকে যে মনমাতানো সুবাস বেরোচ্ছে, তা'তেও ধরতে পারছেন না?
- আপনার গা থেকে তো..। আপনার গা থেকে..।
- আমিই লুচি দাসগুপ্তবাবু। মরে ভূত হয়ে পড়ে আছি আপনার ডায়েটের ঠেলায়।
একবার রেগে গেলে দাসগুপ্তবাবুর ভালোমন্দ জ্ঞান লোপ পায়। একেই ঘুম চোখ, তার ওপর এই অচেনা ভদ্রলোকের বাজে গপ্প আর বেয়াদপি। সোজা একটা জব্বর ঘুষি চালালেন উল্টো দিকের ভদ্রলোকের সুবিশাল ভুঁড়ি তাক করে।
দাসগুপ্তবাবুকে চমকে দিয়ে তাঁর মুঠো করা হাত সপাটে সেঁধিয়ে গেল সে ভদ্রলোকের ভুঁড়ির ভিতরে। কী কান্ড, তবুও রক্তপাত হল না। বেরিয়ে এলো না নাড়িভুঁড়ি।
চুপসে যাওয়া ভঁড়ির মধ্যে থেকে শুধু গলগল করে বেরিয়ে এলো একরাশ মন ভালো করা ধোঁয়া।
No comments:
Post a Comment