মামাবাড়ির পিছনের দিকে আধ-জংলি বাগান। জামরুল, গন্ধরাজ, টগর, জবা, সুপুরি, কাঁঠাল গাছে ঢাকা। নয়নতারার ঝোপ আর আগাছাও। গরমের দুপুরেও ছায়াছায়া ভালো লাগা। আর সেসে সমস্ত ছাপিয়ে হিমসাগরের গাছ। দু'মরসুমে একবার ফল ধরত গাছে, তখন নুয়ে পড়ত। সে অঞ্চলে হাওয়ার সুবাস পালটে যেত।
তখন বেশ ছোট, আমের প্রতি হাভাতেপনায় রাশটানার দরকার ছিল না। আমে কামড় দিয়ে লাফিয়ে উঠেছি "খুউউউব মিষ্টি"! দাদু শিখিয়েছিল "কন্যোসারের ভাষায় বলো। খুব মিষ্টির বদলে বলো সুমিষ্ট"।
মাঝেমধ্যেই হনুমানের উপদ্রবে গাছের আম নষ্ট হত, বিশেষত দুপুরের দিকে। ধুপধাপ শব্দ শুনলেই দিদা ছুটে যেত ছড়ি হাতে, পিছুপিছু আমি। ছড়ি ঘুরিয়ে খানিকক্ষণ তম্বি করলেই তারা লেজ গুটিয়ে বা না গুটিয়ে পালাতো। একদিন হয়েছে কী, দিদার ছড়ি আর হুঙ্কারে ডাল ছেড়ে তারা যখন শেষ স্টেশনে লোকাল খালি করার মেজাজে দৌড় লাগালে, তখন এক পুঁচকে এত্তটুকুন খোকাহনু ডাল ফসকে ধপাস। চোট তেমন পায়নি, কারণ পরক্ষণেই মায়ের হাত ধরে দুদ্দাড় ভেগে পড়ায় কোনও ঢিলেমি ছিল না। কিন্তু খোকাহনুর হাতের টসটসে হিমসাগরটা ছিটকে মাটিতে গড়িয়ে গেছিল, দিদা নাকি দেখতে পেরেছিল যে খোকা মায়ের হাত ধরে পালানোর সময় সকরুণ চোখে সেই মনমোহিনী আমের দিকে তাকিয়েছিল।
আচমকা দিদার সে কি হাহাকার! "ওইটুকুন বাছা আমার একটু আম খেতে চেয়েছিল"। সে আম হাতে দিদা "আয় আয়" বলে বেদম ডাকাডাকি করেছিল কিন্তু কুকুর ডাকা চুকচুক আহ্বানে হনুমানের গোঁসা কাটে না। শেষে আম গাছ ঘেঁষা পাঁচিলে খান কয়েক আম সাজিয়ে রেখে এসেছিল দিদা, যদি খোকার বাপ অন্তত সাহস করে ফেরত এসে খোকার জন্য খান দুয়েক আম নিয়ে যেতে পারে।
সে হিমসাগর গাছ সাফ হয়ে এখন গ্যারেজ। বাকি গাছপালার জঞ্জাল সরে গিয়ে বাঁধানো চাতাল। দিদা দাদু এখন সুমিষ্টঘ্রাণ স্মৃতি। আমি ব্যর্থ কন্যোসার।
No comments:
Post a Comment